✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রশ্নের মান-৫):
📝 1. ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রতিপাদ্যের প্রধান দুটি বিষয় বর্ণনা করো। হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান কীভাবে অভিব্যক্তি মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে?
✨ উত্তর
ল্যামার্কের অভিব্যক্তি সংক্রান্ত তত্ত্বের প্রধান দুটি বিষয় হলো—
অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: ল্যামার্কের মতে, কোনো জীবের কোনো অঙ্গ যদি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার হয়, তবে সেটি ধীরে ধীরে সবল ও কার্যক্ষম হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, যদি কোনো অঙ্গ ব্যবহৃত না হয়, তাহলে সেটি দুর্বল হয়ে অবশেষে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলো জীবের শরীরে ঘটে এবং পরবর্তী প্রজন্মে উত্তরাধিকারসূত্রে স্থানান্তরিত হয়।
অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সূত্র: জীবদেহে জীবনকালে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয় বা পরিবর্তিত হয়, সেগুলো বংশপরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ, জীব নিজের চেষ্টায় বা পরিবেশের প্রভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্য তার বংশধরদের দেয়, যা বিবর্তনের জন্য সহায়ক হয়।
✔️ উদাহরণ: জিরাফের লম্বা গলা তাদের প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয়েছে এবং তা বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়েছে।
❤️ হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান
হৃৎপিণ্ডের তুলনামূলক অঙ্গসংস্থান ল্যামার্কের অভিব্যক্তি মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে কারণ মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিণ্ড ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে, যা পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের পরিচায়ক।
-
উদাহরণস্বরূপ, মাছের হৃৎপিণ্ডে একটি অলিন্দ ও একটি নিলয় থাকে।
-
উভচর ও সরীসৃপের হৃৎপিণ্ডে তুলনামূলকভাবে আরও উন্নত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
-
পক্ষী ও স্তন্যপায়ীদের হৃৎপিণ্ডে দুটি অলিন্দ ও দুটি নিখুঁত নিলয় থাকে।
এই ক্রমবিকাশ ও জটিলতা থেকে বোঝা যায় যে প্রাণীরা একই উদ্বংশীয় জীব থেকে উদ্ভূত হয়ে পরিবেশের প্রভাবে ক্রমান্বয়ে তাদের গঠন ও কার্যকারিতায় পরিবর্তন এনেছে, যা ল্যামার্কের তত্ত্বকে সমর্থন করে।
📝2. সিংহ সংরক্ষণের জন্য ভারতবর্ষের গির জাতীয় উদ্যানে যে যে ইনসিটু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে একটি অঞ্চলে কি কি পরিবেশগত সমস্যা ঘটতে পারে? (২+৩=৫)
উত্তরঃ👉 সিংহ সংরক্ষণের জন্য ভারতবর্ষের গির জাতীয় উদ্যানে যে যে ইনসিটু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা হল –
(i) বেআইনি শিকার ও চোরা শিকার বন্ধ করা হয়েছে।
(ii) প্রয়োজনীয় পানীয় জলের সরবরাহ বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(iii) সিংহের বসতি অঞ্চল বৃদ্ধি, বনের সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে সিংহের প্রজননের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
(iv) যথাযথ ও পর্যায়ক্রমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সিংহের সংক্রমণ প্রবণতা কমানো সম্ভব হয়েছে।
(i) কৃষিজমির সংকোচন।
(ii) অরণ্য ধ্বংস এবং বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হওয়া।
(iii) মিষ্টি জলের অভাব।
(iv) বায়ু ও জল দূষণ, জলাভূমি ধ্বংস হওয়া।
(v) খাদ্যের অভাব।
(vi) প্রাকৃতিক সম্পদের অতি আহরণ এবং পরিমাণ হ্রাস হওয়া।
📝 3. একটি কোষ চক্রের ইন্টারফেজ এর বিভিন্ন দশায় কি কি ধরনের রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়? একটি কোষ চক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কি ঘটতে পারে? (৩+২=৫)
উত্তরঃ 👉একটি কোষ চক্রের ইন্টারফেজ এর বিভিন্ন দশায় যে ধরনের রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয় তা হল –
(i) DNA
(ii) RNA
(iii) ATP
(iv) হিস্টোন প্রোটিন
(v) নন হিস্টোন প্রোটিন
(vi) নলাকার প্রোটিন
(vii) উৎসেচক ।
(i) অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন দেখা যাবে যার ফলে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে ।
(ii) এইভাবে সৃষ্ট টিউমারগুলি বিনাইন অথবা ম্যালিগন্যান্ট প্রকৃতির হতে পারে ।
(iii) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শরীরে ক্যানসার রোগ সৃষ্টি করে ।
📝 4. পরিবেশগত কি কি কারণে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে? বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা অধিক বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের মানুষ ও জীব বৈচিত্রের কি কি সমস্যা হতে পারে? (৩+২=৫)
উত্তরঃ
👉 পরিবেশগত কারণে মানুষের ক্যান্সার হওয়ার কারণসমূহ –
(i) প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত অধিবিষ (যেমন আফলাটক্সিন)।
(ii) তেজস্ক্রিয় যৌগ।
(iii) অ্যাসবেস্টস, কোল-টার, ক্রোমিয়াম।
(iv) অতি বেগুনি রশ্মি।
(v) বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ।
(vi) প্লাস্টিক।
(vii) অ্যাসিড বৃষ্টি ও ভারি ধাতু।
👉 বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের মানুষ ও জীব বৈচিত্র্যের সমস্যা –
(i) বসতি অঞ্চলের সংকোচন।
(ii) রোগের প্রাদুর্ভাব।
(iii) কৃষিজমি ধ্বংস ও জীবিকা হারানো।
(iv) পানীয় জলের স্বল্পতা।
(v) প্রাণহানি।
📝 5. মানুষের লাগামছাড়া অনেক কাজই পরিবেশ দূষিত করে – এর স্বপক্ষে তিনটি উদাহরণ দিয়ে উক্তিটি সমর্থন করো। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এর উদাহরণ দাও। (৩+২=৫)
উত্তরঃ
👉 মানুষের লাগামছাড়া কাজের ফলে পরিবেশ দূষণের উদাহরণ –
(i) কারখানা, যানবাহন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ধোঁয়া থেকে বায়ু দূষণ।
(ii) শিল্পকারখানার বর্জ্য ও নর্দমার জল নদী-নালায় ফেলে জল দূষণ।
(iii) বনভূমি নির্বিচারে ধ্বংস করার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট।
👉 পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত উদাহরণ –
-
ন্যাশনাল পার্ক : জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক
-
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ : সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ
📝 6. একটি উপযুক্ত উদাহরণের সাহায্যে ডারউইন প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। রুই মাছের জলজ অভিযোজনে পটকা এর ভূমিকা কি কি? (৩+২=৫)
উত্তরঃ
👉 ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতি (Natural Selection) –
-
ডারউইনের মতে, প্রকৃতির প্রতিযোগিতায় যে জীব পরিবেশের সাথে বেশি খাপ খাইয়ে নিতে পারে, তারাই বেঁচে থাকে (Survival of the Fittest)।
-
যারা পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না, তারা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
উদাহরণ : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সময় গাছের গায়ে হালকা রঙের গুবরে পোকা সহজেই ধরা পড়ে শিকার হতো, আর কালো রঙের গুবরে পোকা শিল্পের ধোঁয়ায় কালো হয়ে যাওয়া গাছের গায়ে আড়াল পেত—ফলে কালো গুবরে পোকা বেশি দিন টিকে থাকে।
👉 রুই মাছের জলজ অভিযোজনে পটকার ভূমিকা –
(i) পটকার সাহায্যে রুই মাছ সহজে ভেসে থাকতে পারে।
(ii) জলতলের গভীরতা পরিবর্তনের সময় ভারসাম্য রক্ষা করে।
(iii) শ্বাস-প্রশ্বাস ও ভেসে চলায় সাহায্য করে।
📝 7. উটের অতিরিক্ত জল সহন ক্ষমতার সাথে এদের লোহিত রক্তকণিকার (RBC) বিশেষ চরিত্রটির কিভাবে সম্পর্কযুক্ত? খাদ্য সংগ্রহ ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জিরা যেভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে সমস্যার সমাধান করে তার উদাহরণ দাও। (২+৩=৫)
উত্তরঃ
👉 উটের RBC-এর বিশেষ চরিত্র ও জল সহন ক্ষমতার সম্পর্ক –
-
উটের RBC গুলো ডিম্বাকার (oval) আকৃতির, ফলে অতিরিক্ত জল গ্রহণের সময় কোষ ফেটে যায় না।
-
জল স্বল্পতায়ও এগুলো সহজে সঙ্কুচিত হতে পারে এবং শরীরে রক্তপ্রবাহ সচল রাখে।
➡️ তাই উট প্রচুর জল একসাথে পান করলেও বা দীর্ঘদিন জল না খেলেও বেঁচে থাকতে পারে।
👉 শিম্পাঞ্জির বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ –
(i) খাদ্য সংগ্রহে – শিম্পাঞ্জিরা লম্বা ডাল ব্যবহার করে গর্ত থেকে পিঁপড়া বা উইপোকা বের করে খায়।
(ii) রোগ প্রতিরোধে – অসুস্থ হলে তারা ঔষধি গাছের পাতা বা তিতা ভেষজ খেয়ে রোগ সারায়।
➡️ এভাবে শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতোই বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমস্যার সমাধান করে।
📝 8. মেন্ডেল মটর গাছের ফুলের যে যে চরিত্রগুলো নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন তাদের প্রত্যেকটি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করো। বংশগতির বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে তুলতে মেন্ডেলের মটর গাছ সংক্রান্ত পরীক্ষা গুলি যুগান্তকারী – এই পরীক্ষাগুলো তার সাফল্যের তিনটি কারণ উল্লেখ করো। (২+৩=৫)
উত্তরঃ
👉 মেন্ডেল মটর গাছের ফুলের চরিত্র ও বিপরীত বৈশিষ্ট্য –
-
ফুলের রঙ : বেগুনি × সাদা
-
ফুলের অবস্থান : অক্ষীয় (Axial) × প্রান্তীয় (Terminal)
👉 মেন্ডেলের পরীক্ষার সাফল্যের কারণ –
(i) তিনি এক সময়ে একটিমাত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন (monohybrid cross), ফলে ফলাফল স্পষ্ট ছিল।
(ii) বিপুল সংখ্যক গাছ নিয়ে পরীক্ষা করে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছিলেন।
(iii) নির্বাচিত বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল সুস্পষ্ট ও সহজে চেনা যায় এমন বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য।
📝 9. মটর গাছের বীজের বর্ণ ও বীজের আকার — এই বৈশিষ্ট্য দুটি নিয়ে মেন্ডেলের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা করেছিলেন। এই পরীক্ষার F₂ জনুতে যে ক’টি হলুদ ও গোলাকার যুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়, তাদের জিনোটাইপ গুলো লেখ। মেন্ডেলের স্বাধীন সঞ্চারনের সূত্রটি বিবৃত করো। (২+৩=৫)
উত্তরঃ
👉 হলুদ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছের জিনোটাইপ (F₂ জনুতে) —
(i) YYRR
(ii) YYRr
(iii) YyRR
(iv) YyRr
👉 মেন্ডেলের স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্র —
-
যখন দুটি বা ততোধিক বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের উপাদান (alleles) জনিতৃ থেকে অপত্যে সঞ্চারিত হয়, তখন তারা একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয় না।
-
বরং জনন কোষ (gamete) তৈরির সময় প্রতিটি বৈশিষ্ট্য পরস্পর থেকে পৃথক হয় এবং সম্ভাব্য সব রকম সমন্বয়ে স্বাধীনভাবে গ্যামেটে সঞ্চারিত হয়।
➡️ একেই মেন্ডেলের Independent Assortment Law বলা হয়।
📝 10. একটি কোষ চক্রের ইন্টারফেজ এর বিভিন্ন দশায় কি কি ধরনের রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয়? একটি কোষ চক্রের বিভিন্ন বিন্দুতে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে কি ঘটতে পারে? (৩+২=৫)
উত্তরঃ
👉 ইন্টারফেজের বিভিন্ন দশায় রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষণ —
-
G₁ দশা: প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষিত হয়।
-
S দশা: DNA ও হিষ্টোন প্রোটিনের সংশ্লেষণ হয়।
-
G₂ দশা: মাইক্রোটিউবিউল ও মাইটোটিক স্পিন্ডল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষিত হয়।
👉 কোষচক্রের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হলে ফলাফল —
(i) কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে ক্যান্সারজনিত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
(ii) কোষচক্র থেমে গিয়ে কোষমৃত্যু বা অঙ্গের কার্যহানি হতে পারে।