✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৮):
📝 1. ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান লেখো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৮শ শতাব্দীতে ইউরোপে এক নতুন চিন্তাধারার স্রোত সৃষ্টি হয়, যাকে "আলোকায়ন" (Enlightenment) বলা হয়। এর ফলে স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব এবং মানবাধিকারের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ভলতেয়ার, রুশো, মন্টেস্কিউ প্রমুখ দার্শনিকেরা তাঁদের চিন্তাধারা ও রচনার মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের বৌদ্ধিক ভিত্তি তৈরি করেন।
🔧 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের প্রধান অবদান
১. ভলতেয়ার (Voltaire):
ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, গোঁড়ামি ও রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কলম ধরেন।
তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন করেন।
২. মন্তেস্কু (Montesquieu):
তাঁর গ্রন্থ The Spirit of Laws এ "ক্ষমতার বিভাজন" (Separation of Powers)-এর তত্ত্ব দেন।
আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের চিন্তা পরবর্তীকালে বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করে।
৩. রুশো (Rousseau):
তাঁর The Social Contract গ্রন্থে জনগণকে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, "মানুষ স্বাধীন জন্মগ্রহণ করেছে, কিন্তু সর্বত্র সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ" — এই ধারণা বিপ্লবের স্লোগানে রূপ নেয়।
৪. ডিডেরো (Diderot):
তিনি Encyclopedia সম্পাদনা করেন, যা জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
এটি জনগণকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বের করে আনে।
৫. অর্থনৈতিক দার্শনিকেরা (Quesnay, Turgot):
তাঁরা ‘লেসে ফেয়ার’ (Laissez-faire) নীতি প্রচার করেন।
রাজস্বনীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের সমালোচনা করে জনগণকে প্রতিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন।
উপসংহার:
ফরাসি বিপ্লব কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণেই নয়, দার্শনিকদের প্রভাবেও সংঘটিত হয়েছিল। তাঁদের স্বাধীনতা, সমতা ও মানবাধিকারের আদর্শই ফরাসি বিপ্লবকে স্লোগান ও দিকনির্দেশনা দেয়। ফলে বলা যায়, এ বিপ্লবের মানসিক চালিকাশক্তি ছিলেন এই দার্শনিকেরা।
📝 2. ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব হল কেন?
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৮শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব ঘটে। এটি শুধু উৎপাদন ব্যবস্থায় নয়, সমাজ ও অর্থনীতিতেও এক নতুন যুগের সূচনা করে। শিল্পবিপ্লবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ইংল্যান্ড বেছে নেওয়া হয়েছিল নানা বিশেষ কারণের জন্য।
🔧 ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব হওয়ার প্রধান কারণসমূহ
১. প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য:
ইংল্যান্ডে প্রচুর কয়লা ও লৌহ আকরিক সহজলভ্য ছিল।
এগুলো শিল্প উৎপাদনের জন্য জ্বালানি ও কাঁচামাল সরবরাহ করত।
২. বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন:
জেমস ওয়াটের বাষ্প ইঞ্জিন, স্পিনিং জেনি, পাওয়ার লুম ইত্যাদি আবিষ্কার উৎপাদনকে যান্ত্রিক করে তোলে।
এর ফলে উৎপাদনের গতি ও পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়।
৩. কৃষি বিপ্লবের প্রভাব:
কৃষি বিপ্লব খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে অতিরিক্ত শ্রমশক্তি সৃষ্টি করেছিল।
এই জনগণ শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে যুক্ত হয়।
৪. পুঁজিবাদী মনোভাব ও বুর্জোয়া শ্রেণি:
ধনী ব্যবসায়ীরা শিল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল।
তাদের পুঁজিই শিল্প স্থাপনের প্রধান ভিত্তি হয়।
৫. উপনিবেশ ও আন্তর্জাতিক বাজার:
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তৃত উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল সরবরাহ এবং প্রস্তুত পণ্যের বাজার পাওয়া যেত।
এটি শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানিতে সুবিধা আনে।
৬. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:
সংসদীয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুরক্ষা দেয়।
সরকার শিল্পোন্নয়নে উৎসাহ জোগায়।
৭. পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি:
নদীপথ, খাল, সড়ক ও পরবর্তীতে রেলপথ পণ্য পরিবহনে গতি আনে।
এতে কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য দ্রুত সরবরাহ সম্ভব হয়।
৮. শ্রমিক শ্রেণির অভ্যাস ও কষ্টসহিষ্ণুতা:
ইংল্যান্ডের শ্রমিকরা দীর্ঘ সময় কাজ করতে অভ্যস্ত ছিল।
তারা নতুন যন্ত্র শিখে নিয়ে শিল্পবিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
উপসংহার:
প্রাকৃতিক সম্পদ, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা, উপনিবেশিক বাজার—এই সব মিলিয়েই ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লবের জন্ম হয়। এর মাধ্যমে আধুনিক শিল্পসভ্যতার ভিত্তি রচিত হয়।
📝 3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, যা ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে ভয়াবহতম সংঘর্ষ, যেখানে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অসমাপ্ত সমস্যা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও অর্থনৈতিক মন্দাই এই যুদ্ধে প্রধান ভূমিকা রাখে।
🔧 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণসমূহ
১. ভার্সাই চুক্তির অযৌক্তিক শর্ত:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানির উপর ভার্সাই চুক্তি কঠোর শর্ত চাপিয়ে দেয়।
ভূমি হ্রাস, সামরিক শক্তি কমানো ও ক্ষতিপূরণ প্রদানে জার্মানরা ক্ষুব্ধ হয়।
২. জার্মানির নাৎসি শাসন ও হিটলারের আগ্রাসন:
হিটলার ক্ষমতায় এসে "Versailles চুক্তি" ভঙ্গ করে সেনাবাহিনী গঠন ও ভূখণ্ড দখল শুরু করে।
তার আগ্রাসী জাতীয়তাবাদ ইউরোপে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে।
৩. জাতিসংঘ (League of Nations)-এর ব্যর্থতা:
আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় লীগ অব নেশনস সম্পূর্ণ অকার্যকর প্রমাণিত হয়।
ইতালি, জার্মানি ও জাপানের আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।
৪. জাপানের সাম্রাজ্যবাদী নীতি:
জাপান এশিয়ায় "Greater East Asia Co-Prosperity Sphere" গড়ার পরিকল্পনা করে।
চীন, কোরিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরে দখল নীতি যুদ্ধকে তীব্র করে।
৫. ইতালির আগ্রাসী নীতি:
মুসোলিনি আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরে সাম্রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হয়।
এটি আন্তর্জাতিক সংঘাতকে বাড়িয়ে তোলে।
৬. মহামন্দা (Great Depression) 1929:
অর্থনৈতিক মন্দার ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেড়ে যায়।
এটি ইউরোপ ও জাপানে সামরিকতাবাদ ও আগ্রাসী নীতিকে উৎসাহ দেয়।
৭. তুষ্টিকরণ নীতি (Appeasement Policy):
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স শুরুতে হিটলারের আগ্রাসনকে উপেক্ষা করে।
তাদের এই নীতি হিটলারকে আরও সাহসী করে তোলে।
৮. জাতীয়তাবাদ ও প্রতিশোধপরায়ণতা:
ইউরোপের অনেক জাতি অতীত পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে আগ্রহী ছিল।
এটি আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলে।
উপসংহার:
ভার্সাই চুক্তির অবিচার, জার্মানির নাৎসি আগ্রাসন, জাপান-ইতালির সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার ব্যর্থতাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ। এটি প্রমাণ করে যে অন্যায় চুক্তি ও আগ্রাসী রাজনীতি বিশ্বশান্তিকে ধ্বংস করে।
📝 4. মুসোলিনির উত্থানের কারণগুলি পর্যালোচনা করো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেনিতো মুসোলিনি (Benito Mussolini) একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর উত্থান শুধু ইতালির ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
🔧 মুসোলিনির উত্থানের প্রধান কারণসমূহ
১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অসন্তোষ:
যুদ্ধ শেষে ইতালি প্রত্যাশিত ভূখণ্ড ও সুবিধা লাভ করতে পারেনি।
এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়।
২. অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্ব:
যুদ্ধোত্তর ইতালিতে শিল্প ও কৃষি দু’দিকেই মন্দা নেমে আসে।
বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
৩. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা:
ইতালির সংসদীয় গণতন্ত্র দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পড়ে।
প্রতিনিয়ত সরকার পরিবর্তন ও দুর্বল নেতৃত্ব জনগণকে হতাশ করে।
৪. সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভয়:
যুদ্ধোত্তর ইতালিতে শ্রমিক আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আশঙ্কা তৈরি হয়।
ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুসোলিনির সমর্থনে এগিয়ে আসে।
৫. জাতীয়তাবাদী আবেগ:
মুসোলিনি “রোমান সাম্রাজ্যের গৌরব ফিরিয়ে আনার” প্রতিশ্রুতি দেন।
এই জাতীয়তাবাদী স্লোগান জনগণকে তাঁর পক্ষে টেনে আনে।
৬. ফ্যাসিবাদী দলের শক্তি:
মুসোলিনি ‘ব্ল্যাকশার্ট’ বাহিনী গঠন করে সহিংস উপায়ে প্রতিপক্ষকে দমন করে।
তাঁর সংগঠিত শক্তি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল করে দেয়।
৭. রাজা ভিক্টর এম্যানুয়েলের সমর্থন:
১৯২২ সালে "March on Rome"-এর পর রাজা মুসোলিনিকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন।
রাজপরিবার ও সেনাবাহিনীর সমর্থন তাঁর উত্থানকে সহজ করে।
৮. ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও প্রচার কৌশল:
মুসোলিনি একজন দক্ষ বক্তা ও প্রচারক ছিলেন।
তিনি গণমানুষকে আবেগ দিয়ে প্রভাবিত করতে সক্ষম হন।
উপসংহার:
ইতালির অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক দুর্বলতা, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভয় এবং জনগণের জাতীয়তাবাদী আবেগই মুসোলিনির উত্থানের মূল কারণ। তাঁর উত্থান দেখায় যে সংকটকালীন সময়ে শক্তিশালী নেতৃত্ব জনগণকে সহজেই আকৃষ্ট করতে পারে।
📝 5. বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতির পরিচয় দাও।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
উনবিংশ শতাব্দীতে জার্মান একীকরণে অটো ভন বিসমার্ক (Otto von Bismarck)-এর ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি প্রুশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে "রক্ত ও লৌহ নীতি" (Blood and Iron Policy) গ্রহণ করেন। এই নীতি ছিল সামরিক শক্তি ও যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে একত্রিত করার কৌশল।
🔧 বিসমার্কের রক্ত ও লৌহ নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. যুদ্ধ ও সামরিক শক্তির উপর নির্ভরতা:
বিসমার্ক বিশ্বাস করতেন জাতীয় সমস্যার সমাধান সংসদে নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে হবে।
তাঁর মতে, রক্ত (যুদ্ধ) ও লৌহ (অস্ত্রশক্তি) দিয়েই একীকরণ সম্ভব।
২. সংসদীয় রাজনীতির প্রতি অবিশ্বাস:
তিনি সংসদ ও গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেননি।
সংসদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সেনাবাহিনী সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেন।
৩. তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মান একীকরণ:
-
ডেনমার্ক যুদ্ধ (1864): প্রুশিয়া ও অস্ট্রিয়া মিলে ডেনমার্ককে পরাজিত করে।
-
অস্ট্রিয়া যুদ্ধ (1866): প্রুশিয়া অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে জার্মান কনফেডারেশনে আধিপত্য বিস্তার করে।
-
ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়া যুদ্ধ (1870-71): ফ্রান্সকে পরাজিত করে দক্ষিণ জার্মান রাজ্যগুলো প্রুশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।
৪. বাস্তববাদী কূটনীতি (Realpolitik):
বিসমার্ক রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে বাস্তব অবস্থাকে গুরুত্ব দিতেন।
তিনি প্রয়োজনে শত্রুদের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলতেন।
৫. জার্মান জাতীয়তাবাদের সদ্ব্যবহার:
তিনি জার্মান জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আবেগকে কাজে লাগান।
এই আবেগ যুদ্ধকে সফল করতে সহায়ক হয়।
৬. একীকরণের ফলাফল:
১৮৭১ সালে ভার্সাই প্রাসাদে জার্মান সাম্রাজ্যের ঘোষণা হয়।
প্রুশিয়ার রাজা উইলহেম প্রথম জার্মান সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হন।
উপসংহার:
বিসমার্কের "রক্ত ও লৌহ নীতি" জার্মান একীকরণের মূল চালিকা শক্তি ছিল। সংসদীয় বিতর্কে সময় নষ্ট না করে তিনি সামরিক শক্তি ও যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর এই নীতি শুধু জার্মান ইতিহাসেই নয়, ইউরোপীয় ইতিহাসেও এক যুগান্তকারী অধ্যায় সৃষ্টি করে।
📝 6. রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণগুলি কী কী?
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ছিল ২০শ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। জারের একনায়কতান্ত্রিক শাসন, দুর্বল অর্থনীতি, কৃষক ও শ্রমিকদের অসন্তোষ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা মিলেই এই বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর ফলে রোমানোভ বংশের অবসান ঘটে এবং সোভিয়েত রাশিয়ার জন্ম হয়।
🔧 রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণসমূহ
১. কৃষকদের দারিদ্র্য:
রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ ছিল কৃষক, যারা ভূমিহীন ও চরম দরিদ্র ছিল।
জার সরকার তাদের সমস্যার সমাধান না করায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
২. শিল্প শ্রমিকদের দুরবস্থা:
কারখানায় শ্রমিকদের দীর্ঘ সময় অল্প মজুরিতে কাজ করতে হতো।
শ্রমিকরা ধর্মঘট ও আন্দোলনে ক্রমশ সংগঠিত হয়।
৩. জমিদারি প্রথার শোষণ:
ভূস্বামীদের হাতে কৃষকদের শোষণ চলত।
ভূমি সংস্কারের অভাব কৃষকদের বিপ্লবী করে তোলে।
৪. অর্থনৈতিক বৈষম্য:
একদিকে রাজপরিবার ও অভিজাত শ্রেণির বিলাসিতা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য।
এই বৈষম্য জনগণের ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে।
৫. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:
যুদ্ধে রাশিয়ার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, খাদ্যাভাব ও বেকারত্ব তৈরি হয়।
অর্থনীতি ভেঙে পড়ে এবং সাধারণ মানুষ ভয়াবহ দুর্দশায় পড়ে।
🔧 রুশ বিপ্লবের রাজনৈতিক কারণসমূহ
১. জার শাসনের একনায়কতন্ত্র:
জার নিকোলাস দ্বিতীয় সংসদ ও জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করেন।
একনায়কতান্ত্রিক শাসনে জনগণের ক্ষোভ চরমে ওঠে।
২. রাজনৈতিক দলের উত্থান:
বলশেভিক, মেনশেভিক, সমাজতান্ত্রিক দলগুলো জনগণকে সংগঠিত করতে শুরু করে।
বিশেষত লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিকরা বিপ্লবে প্রধান ভূমিকা নেয়।
৩. ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতা:
১৯০5 সালের বিপ্লব দমন করা হলেও জারের প্রতি বিশ্বাস কমে যায়।
এটি ভবিষ্যৎ বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করে।
৪. সংসদের অকার্যকারিতা (Duma):
ডুমা গঠিত হলেও তার ক্ষমতা সীমিত ছিল।
জনগণ মনে করেছিল এটি কেবল প্রহসন।
৫. দুর্বল নেতৃত্ব:
যুদ্ধ ও প্রশাসনে জার অদক্ষ প্রমাণিত হন।
তার ভুল সিদ্ধান্ত জনগণের আস্থা নষ্ট করে।
উপসংহার:
রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক কারণ ছিল কৃষক ও শ্রমিকদের শোষণ ও দারিদ্র্য, আর রাজনৈতিক কারণ ছিল জারের একনায়কতন্ত্র ও গণঅধিকারের অভাব। অর্থনীতি ও রাজনীতির এই দ্বৈত সংকটই ১৯১৭ সালের বিপ্লবকে অনিবার্য করে তোলে।
📝 7. ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ কীভাবে ঘটে তার বিবরণ দাও।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় শক্তিগুলি আফ্রিকাকে দখল করার জন্য প্রতিযোগিতায় নামে। সাম্রাজ্যবাদী লোভ ও ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে আফ্রিকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সম্পূর্ণ বদলে যায়। ইতিহাসে এই ঘটনাকে “Scramble for Africa” বলা হয়।
🔧 আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদের প্রধান ধাপসমূহ
১. প্রাথমিক অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক স্বার্থ:
আফ্রিকার স্বর্ণ, হাতির দাঁত, দাস ব্যবসা ও কাঁচামালের প্রতি ইউরোপীয়দের আকর্ষণ ছিল প্রবল।
এই কারণে তারা ধীরে ধীরে আফ্রিকার উপকূলে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে।
২. শিল্প বিপ্লবের প্রভাব:
শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে কাঁচামাল ও বাজারের প্রয়োজন বেড়ে যায়।
আফ্রিকার সম্পদ ইউরোপীয়দের কাছে এক বিশাল সম্পদভাণ্ডার হিসেবে দেখা দেয়।
৩. সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশ আফ্রিকার ভূখণ্ড দখলে প্রতিযোগিতা শুরু করে।
প্রতিটি শক্তি চাইত সর্বাধিক উপনিবেশ অধিকার করতে।
৪. বেলজিয়ামের কঙ্গো দখল:
রাজা লিওপোল্ড দ্বিতীয় কঙ্গোকে ব্যক্তিগত উপনিবেশ হিসেবে অধিকার করেন।
এটি অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিকে আফ্রিকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে উসকে দেয়।
৫. বার্লিন সম্মেলন (1884-85):
জার্মান চ্যান্সেলর বিসমার্কের উদ্যোগে বার্লিনে আফ্রিকা ভাগাভাগির জন্য সম্মেলন হয়।
এখানে ইউরোপীয় শক্তিগুলি কূটনৈতিকভাবে আফ্রিকাকে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত করে নেয়।
৬. উপনিবেশ স্থাপন:
সম্মেলনের পর ইউরোপীয় শক্তিগুলি দ্রুত সেনা পাঠিয়ে আফ্রিকার বিশাল ভূখণ্ড দখল করে নেয়।
ফলে আফ্রিকা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ইউরোপীয় শক্তির অধীনে চলে যায়।
৭. আফ্রিকার জনগণের উপর প্রভাব:
জমি ও সম্পদ ইউরোপীয়দের হাতে চলে যায়।
আফ্রিকার প্রথাগত সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং তারা অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়।
উপসংহার:
ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদী লোভের ফলে আফ্রিকার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক মানচিত্র ইউরোপীয় শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। বার্লিন সম্মেলনই আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়, যা পরবর্তী কালে মহাদেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।
📝 8. 1917 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে জার শাসনের অবসান ঘটে এবং বলশেভিকদের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। বিপ্লবের পেছনে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা কারণ কাজ করেছিল, যার ফলাফল শুধু রাশিয়ার ইতিহাস নয়, সমগ্র বিশ্বের গতিপথকেই প্রভাবিত করে।
🔧 রুশ বিপ্লবের কারণসমূহ
১. জার শাসনের একনায়কতন্ত্র:
জার নিকোলাস দ্বিতীয় জনগণের গণতান্ত্রিক দাবি উপেক্ষা করে স্বৈরাচার চালাতেন।
জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও বিদ্রোহ প্রবল হয়ে ওঠে।
২. কৃষক ও শ্রমিকদের দুরবস্থা:
কৃষকরা ভূমিহীন ও শোষণের শিকার ছিল।
শিল্পশ্রমিকদের দীর্ঘ সময় কম মজুরিতে কাজ করতে হত।
৩. ১৯০৫ সালের বিপ্লবের ব্যর্থতা:
১৯০৫ সালের বিপ্লব দমন হলেও জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
ডুমা প্রতিষ্ঠিত হলেও কার্যকর ক্ষমতা ছিল না।
৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব:
যুদ্ধে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, খাদ্যাভাব, বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি জনগণের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।
সেনাদের পরাজয় জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে।
৫. বলশেভিকদের নেতৃত্ব:
লেনিন, ট্রটস্কি প্রমুখ বলশেভিক নেতারা জনগণকে স্লোগান দেন –
“শান্তি, রুটি ও ভূমি।”
এটি বিপ্লবকে গতি দেয়।
🔧 রুশ বিপ্লবের ফলাফল
১. জার শাসনের অবসান:
রোমানোভ বংশের পতন ঘটে।
নিকোলাস দ্বিতীয় সিংহাসন ত্যাগ করেন।
২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পতন:
প্রথমে কেরেনস্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও তা ব্যর্থ হয়।
বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে।
৩. সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা:
লেনিনের নেতৃত্বে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয়।
কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রে আসে।
৪. ভূমি ও শিল্পের জাতীয়করণ:
কৃষকদের হাতে ভূমি বিতরণ করা হয়।
শিল্প, ব্যাংক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসে।
৫. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে প্রত্যাহার:
বলশেভিক সরকার জার্মানির সঙ্গে ব্রেস্ট-লিটভস্ক চুক্তি করে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসে।
৬. বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব:
এই বিপ্লব সারা বিশ্বের শ্রমিক ও উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।
পুঁজিবাদ বনাম সমাজতন্ত্র দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটে।
উপসংহার:
১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক একনায়কতন্ত্র ও যুদ্ধজনিত দুর্দশা। এর ফলশ্রুতিতে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম হয়, যা শুধু রাশিয়াই নয়, গোটা বিশ্ব রাজনীতির গতিপথকে পাল্টে দেয়।
📝 9. নেপোলিয়নের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ইউরোপের ইতিহাসে এক কিংবদন্তি সেনাপতি ও শাসক। ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তিনি ক্ষমতা দখল করে সমগ্র ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করেন। কিন্তু অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক ভুলনীতি ও সামরিক পরাজয়ের কারণে তাঁর পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।
🔧 নেপোলিয়নের পতনের প্রধান কারণসমূহ
1. অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা:
নেপোলিয়ন সমগ্র ইউরোপকে ফ্রান্সের অধীনস্থ করতে চাইতেন।
অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে তিনি একের পর এক যুদ্ধ শুরু করেন, যা পরিশেষে তাঁর পতন ডেকে আনে।
2. ইংল্যান্ড-বিরোধী নীতি ও নৌ-পরাজয়:
ট্রাফালগারের যুদ্ধে (1805) ইংরেজ নৌবাহিনী নেপোলিয়নকে পরাজিত করে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে "কন্টিনেন্টাল সিস্টেম" ব্যর্থ হয় এবং ফরাসি অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
3. স্পেন অভিযান ব্যর্থতা:
স্পেনে গেরিলা যুদ্ধের মুখে নেপোলিয়নের সেনারা দুর্বল হয়ে পড়ে।
এটি তাঁর সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়।
4. রাশিয়া অভিযান (1812) ব্যর্থতা:
নেপোলিয়ন বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন।
কঠোর শীত ও রুশদের "স্কর্চড আর্থ" নীতি তাঁর সেনাদের ধ্বংস করে দেয়।
এটি তাঁর ক্ষমতার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
5. ইউরোপীয় শক্তিগুলির ঐক্য:
প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও ইংল্যান্ড একত্রিত হয়ে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে জোট বাঁধে।
এই শক্তি-সংঘবদ্ধ বিরোধিতা তাঁর পরাজয় নিশ্চিত করে।
6. অর্থনৈতিক সংকট:
অবিরাম যুদ্ধ ফ্রান্সের অর্থনীতি দুর্বল করে দেয়।
সাধারণ জনগণ যুদ্ধক্লান্ত হয়ে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে।
7. ব্যক্তিগত একনায়কতন্ত্র:
ফরাসি বিপ্লবের গণতান্ত্রিক আদর্শকে উপেক্ষা করে নেপোলিয়ন একনায়কতন্ত্র চালু করেন।
এতে অনেক ফরাসি নাগরিক তাঁর বিরোধিতা করতে শুরু করে।
8. লিপসিকের যুদ্ধ (1813) ও ওয়াটারলুর পরাজয় (1815):
লিপসিকের "Battle of Nations"-এ তিনি পরাজিত হন।
অবশেষে ওয়াটারলুর যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি ওয়েলিংটনের হাতে নেপোলিয়নের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
উপসংহার:
অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সামরিক পরাজয়, অর্থনৈতিক সংকট ও ইউরোপীয় শক্তির ঐক্য—এই সব মিলিয়ে নেপোলিয়নের পতন ঘটে। তাঁর পতন প্রমাণ করে যে একক শক্তি দিয়ে সমগ্র ইউরোপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
📝 10. বিশ্ব ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব আলোচনা করো।
✅ উত্তর:
ভূমিকা:
১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে এই যুদ্ধ বিস্তার লাভ করে। এর প্রভাব শুধু যুদ্ধকালীন সময়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর ছাপ রেখে গেছে।
🔧 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান প্রভাবসমূহ
1. বিপুল প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ:
এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
শহর, শিল্প ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়।
2. ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের পতন:
হিটলার ও মুসোলিনির পতনের মাধ্যমে ইউরোপে ফ্যাসিবাদী ও নাৎসি মতাদর্শের অবসান ঘটে।
3. জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা (UNO):
জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
4. যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান:
এই যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় শক্তিগুলির দুর্বলতা স্পষ্ট হয়।
আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
5. ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা:
যুদ্ধোত্তর সময়ে পুঁজিবাদী আমেরিকা ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে “Cold War” দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে।
6. উপনিবেশবাদী শক্তির দুর্বলতা:
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি ঔপনিবেশিক শক্তি যুদ্ধের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
7. অর্থনৈতিক প্রভাব:
মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে আমেরিকা ইউরোপের পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
জাপান ও জার্মানি অর্থনৈতিকভাবে পুনর্গঠিত হয়ে আধুনিক শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
8. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি:
যুদ্ধকালীন সময়ে পরমাণু বোমা, রাডার, জেট ইঞ্জিন ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়।
পরবর্তীকালে এগুলো শান্তিকালীন প্রযুক্তি উন্নয়নেও কাজে লাগে।
9. সমাজ ও মানবাধিকারে প্রভাব:
হলোকাস্টের ভয়াবহতা বিশ্বকে নাড়া দেয়।
মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ (1948) গৃহীত হয়।
উপসংহার:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্ব রাজনীতির শক্তির ভারসাম্য বদলে দেয়, উপনিবেশবাদী যুগের অবসান ঘটায় এবং নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। এই যুদ্ধ প্রমাণ করে, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ রক্ষায় শান্তি, সহযোগিতা ও মানবাধিকারের সুরক্ষা অপরিহার্য।
<<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>