✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৫):
📝 1. যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়াগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
শিলার ভৌত ভাঙন: যান্ত্রিক আবহবিকারে শিলা ছোট কণায় ভেঙে যায় কিন্তু রাসায়নিক গঠন অপরিবর্তিত থাকে।
তাপীয় প্রসারণ ও সংকোচন: দিন-রাতের তাপমাত্রা পরিবর্তনে শিলার উপরিভাগ প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে ফাটল সৃষ্টি হয়।
তুষার ক্ষয়: শিলার ফাটলে জমা পানি বরফ হয়ে আয়তন বৃদ্ধি করলে ফাটল প্রশস্ত হয় (Frost Weathering)।
লবণ ক্ষয়: ফাটলে লবণাক্ত জল শুকিয়ে স্ফটিক তৈরি হলে চাপ সৃষ্টি হয়ে শিলা ভেঙে যায়।
উদ্ভিদের শিকড়ের প্রসারণ: শিকড় ফাটলে ঢুকে বৃদ্ধি পেলে শিলা ফাটে।
জীবজন্তুর ক্রিয়া: প্রাণী বা মানুষের খোঁড়াখুঁড়ি শিলাকে দুর্বল করে।
ঘর্ষণ: বাতাস, জল বা বরফের সঙ্গে শিলাখণ্ড ঘষা লেগে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
এই প্রক্রিয়াগুলি ভূ-পৃষ্ঠের রূপ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
📝 2. বিপর্যয় রোধে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ: রাডার, স্যাটেলাইট দ্বারা পূর্বাভাস; সাইরেন, রেডিও, টিভি দ্বারা সতর্কবার্তা।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মহড়া পরিচালনা।
পরিকাঠামো উন্নয়ন: দুর্যোগ সহনশীল ভবন, বাঁধ, রাস্তা নির্মাণ; উপযোগী স্থাপত্য নকশা ব্যবহার।
সচেতনতা ও শিক্ষা: বিদ্যালয় ও প্রচারমাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও প্রচার।
জরুরি পরিষেবা: দ্রুত উদ্ধার, ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা।
পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
পরিবেশ সুরক্ষা: বনায়ন, নদী ও জলাশয়ের রক্ষণাবেক্ষণ।
এই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
📝 3. পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লেখো।
✅ উত্তর:
বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত: জুনের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে এসে বিপুল আর্দ্রতা বহন করে, ফলে সমভূমি, পার্বত্য এলাকা ও উপকূল জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় 175–300 সেমি।
তাপমাত্রা হ্রাস: বর্ষাকালে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও ঘন বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা ২–৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়, গ্রীষ্মের তীব্রতা প্রশমিত হয়।
কৃষিজ উৎপাদনে প্রভাব: মৌসুমি বৃষ্টিই ধান, পাট, চা, আখ প্রভৃতি প্রধান ফসলের উৎপাদনের প্রধান উৎস; বৃষ্টির সময়মতো আগমন ও প্রস্থান ফসলের সাফল্য নির্ধারণ করে।
বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি: অতিবৃষ্টিতে নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বেড়ে বন্যা, নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যা চাষাবাদ ও বসতভিটার ক্ষতি করে।
শীতকালীন শুষ্কতা: অক্টোবরের মাঝামাঝি মৌসুমি বায়ুর প্রস্থান ঘটে; ফলে আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুষ্ক, শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: মৌসুমি বৃষ্টির অনিয়মিততা কৃষি, চা শিল্প, মৎস্যচাষ ও পরিবহন ব্যবস্থায় সরাসরি প্রভাব ফেলে।
📝 4. পশ্চিমবঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও নদনদী সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
✅ উত্তর:
ভূপ্রকৃতি:
-
পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলটি দার্জিলিং হিমালয়ের অংশ।
-
এখানে পরস্পর সংলগ্ন উঁচু-নিচু পাহাড়, খাড়া ঢাল, গভীর গিরিখাত এবং প্রস্তরময় ভূমি রয়েছে।
-
ভূপ্রকৃতি বন্ধুর ও রুক্ষ প্রকৃতির।
নদনদী:
-
এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলি হল তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা ইত্যাদি।
-
নদীগুলি বরফ গলা জলে পুষ্ট, তাই সারা বছর জল থাকে।
-
নদীগুলি পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়।
-
নদীর খাত বেশ চওড়া এবং অনেক ক্ষেত্রে বিনুনি (braided) আকৃতির হয়।
-
তিস্তা নদীর ডানদিকের অংশ তরাই এবং বাঁদিকের অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত।
📝 5. মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি লেখো।
✅ উত্তর:
প্রাকৃতিক কারণ:
জল: বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির কণা আলগা হয়ে যায় এবং জলের স্রোতে ভেসে যায়। নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ এবং বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতেও মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
বায়ু: শক্তিশালী বাতাসের কারণে মাটির উপরের স্তর উড়ে যায়, বিশেষ করে শুষ্ক ও বালুকাময় অঞ্চলে।
ভূমিধস: পাহাড়ী অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে মাটি স্থানচ্যুত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
মানবসৃষ্ট কারণ:
বৃক্ষচ্ছেদন: গাছপালা মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে, তাই বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে মাটি আলগা হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
কৃষিকাজ: জমিতে অতিরিক্ত চাষাবাদ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং শস্য আবর্তনের অভাবে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
নির্মাণকার্য: রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও অন্যান্য নির্মাণ কাজের জন্য মাটি খনন করা হলে ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
শিল্পায়ন: কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত পদার্থ মাটিতে মিশে উর্বরতা নষ্ট করে এবং ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে ঘাস ও উদ্ভিদের শিকড় আলগা হয়ে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
ফলাফল: মৃত্তিকা ক্ষয় পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।
📝 6. মানবজীবনে পর্বতের প্রভাব লেখো।
✅ উত্তর:
জলবায়ু:
-
পর্বতমালা বাতাসের গতিপথ পরিবর্তন করে এবং বৃষ্টিপাত প্রভাবিত করে।
-
উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে তাপমাত্রা হ্রাস পায়, যা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য আলাদা আবাসস্থল তৈরি করে।
-
শীতল বাতাস থেকে নিম্নভূমি রক্ষা পায়।
বাস্তুতন্ত্র:
-
বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায়।
-
কিছু প্রজাতি শুধুমাত্র পর্বতমালায়ই সীমাবদ্ধ থাকে।
-
পর্বতমালা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থনীতি:
-
পর্যটন, খনিজ সম্পদ আহরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষি কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
-
পর্বতমালা থেকে আহরিত সম্পদ স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
সংস্কৃতি:
-
অনেক সংস্কৃতি ও লোককাহিনীতে পর্বতমালার উল্লেখ রয়েছে।
-
কিছু সংস্কৃতিতে এটি পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত।
-
শিল্পী ও লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
📝 7. প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
✅ উত্তর:
বৈশিষ্ট্য | প্রচলিত শক্তি | অপ্রচলিত শক্তি |
---|---|---|
উৎস | কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস। | সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, জৈবপদার্থ শক্তি। |
পরিবেশ প্রভাব | দূষণ সৃষ্টি করে। | পরিবেশবান্ধব, দূষণ কমায়। |
প্রযুক্তি ও ব্যবহার | বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহজে ব্যবহারযোগ্য। | বিশেষ প্রযুক্তি প্রয়োজন, প্রাথমিক খরচ বেশি। |
সীমাবদ্ধতা | সীমিত উৎস; অতিরিক্ত ব্যবহার হলে ঘাটতি দেখা দেয়। | উৎস সীমাহীন; সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে চিরস্থায়ী শক্তি সরবরাহ সম্ভব। |
খরচ | প্রাথমিকভাবে কম, দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ক্ষতি। | প্রাথমিক খরচ বেশি, দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী। |
📝 8. হুগলি নদীর উভয় তীরে পাটশিল্পের একদেশীভবনের কারণগুলি লেখ।
✅ উত্তর:
উপযুক্ত জলবায়ু: হুগলি অঞ্চলে আর্দ্র, উষ্ণ জলবায়ু পাটের চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উপযোগী।
উপযুক্ত মাটি: উপত্যকা ও নদীতীরের উর্বর মাটি পাট চাষের জন্য আদর্শ।
জলপথ সুবিধা: হুগলি নদীর ধারে নদীপরিবহন সহজ হওয়ায় কাঁচামাল আনা এবং পণ্য বহন সহজ।
শ্রমিক প্রাচুর্য: স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন সুবিধাজনক।
বাজার ও বাণিজ্য: কলকাতা ও আশেপাশের বাজারের কাছাকাছি হওয়ায় পাটজাত পণ্য সরাসরি বিক্রি বা রপ্তানি করা যায়।
ঐতিহ্য ও দক্ষতা: প্রাচীনকাল থেকে পাটশিল্পের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিদ্যমান।
এই কারণে হুগলি নদীর উভয় তীরে পাটশিল্পের একদেশীভবন বা কেন্দ্রীকরণ লক্ষ্য করা যায়।
📝 9. পূর্ব ভারতে অধিক সংখ্যায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে কেন?
✅ উত্তর:
কয়লার প্রাচুর্য: পূর্ব ভারত (ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা) কয়লার বড় খনিজ ভান্ডার রয়েছে, যা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি।
উপযুক্ত জলবায়ু ও প্রযুক্তি: সমভূমি ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক।
পরিবহন ও বাজার সুবিধা: নদী, সড়ক ও রেলপথের সহজ সংযোগ থাকায় কয়লা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সহজ।
শ্রমিক প্রাচুর্য: স্থানীয় শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম হয়।
চাহিদা: শিল্পাঞ্চল ও নগরায়ণের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেশি, যা এই অঞ্চলে কেন্দ্র স্থাপনের মূল কারণ।
📝 10. পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য ও মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির তুলনা করো।
✅ উত্তর:
বৈশিষ্ট্য | পার্বত্য অঞ্চল | মালভূমি অঞ্চল |
---|---|---|
অবস্থান | উত্তরের দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং। | দক্ষিণ-পূর্বের নদী উপত্যকা ও উপকূলীয় এলাকা। |
উচ্চতা | ২০০০–৩৬৫৮ মিটার। | সমভূমি বা সামান্য ঢালু। |
ঢাল ও ভূমিক্ষয় | খাড়া ঢাল, ভূমিক্ষয় প্রবণ। | সমতল বা অল্প ঢাল, ভূমিক্ষয় কম। |
নদী ও জলপ্রপাত | দ্রুত স্রোত, ঝরনা ও জলপ্রপাত রয়েছে। | নদী ধীরগতিতে প্রবাহিত, জলপ্রপাত কম। |
বনভূমি | ঘন চিরহরিৎ বন, পাইন, দেবদারু, বাঁশ। | নাতিশীতোষ্ণ বন, আত্রাই, শীতকালীন বন কম। |
কৃষি | ধাপচাষ, চা, আলু, সবজি। | ধান, আখ, সবজি প্রধান ফসল। |
প্রাকৃতিক সম্পদ | বনজ সম্পদ, জল, খনিজ। | মাটি উর্বর, সমুদ্র ও নদী থেকে জ্বালানি সহজলভ্য। |
📝 11. তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নতির কারণ কী?
✅ উত্তর:
উচ্চ প্রযুক্তি শিক্ষা ও দক্ষ জনবল: পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলোতে কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার সুব্যবস্থা থাকায় দক্ষ কর্মী সহজলভ্য।
শহুরে অবকাঠামো: কলকাতা, সিলিগুড়ি, হাওড়া ইত্যাদি শহরে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।
বাজার ও বিনিয়োগ সুবিধা: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সহজে সেবা প্রদান করতে পারে, পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের কাছে সংযোগ সহজ।
সরকারি নীতি ও প্রণোদনা: তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে উৎসাহিত করতে সরকারের কর সুবিধা, বিনিয়োগ ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা প্রদান।
ভৌগোলিক সুবিধা: সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও রেলপথের সহজ যোগাযোগ ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে দ্রুততর করে।
উদ্ভাবনী পরিবেশ: বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় নতুন প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ও উদ্ভাবনী প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।