🌹বি.এ সেমিষ্টার-৪::মেজর বাংলা(পেপার-৩)+মাইনর বাংলা সাজেশন(PART-2)🌹

  

 

✍️প্রশ্নের মান-৫: 

📝 ১. অক্ষর কাকে বলে এবং কয় প্রকার।
বর্ণ ও অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করো।

✅ উত্তরঃ

---

🔶 অক্ষর কাকে বলে?

অক্ষর হলো এমন একটি ধ্বনিগুচ্ছ যা একবারে উচ্চারিত হয় এবং যার মধ্যে অন্তত একটি স্বরধ্বনি থাকে। এটি উচ্চারণযোগ্য একক, যা কবিতার ছন্দ ও তালের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।

📌 উদাহরণ:

• “বাংলা” শব্দে — বা + ং + লা = ৩টি অক্ষর

• “পাখি” শব্দে — পা + খি = ২টি অক্ষর

---

🔷 অক্ষরের প্রকারভেদ:

অক্ষর প্রধানত ২ প্রকার:

১. রুদ্ধ অক্ষর (রুদ্ধ দল):

যেসব অক্ষর ব্যঞ্জনধ্বনিতে শেষ হয়, অর্থাৎ উচ্চারণের সময় মুখ বন্ধ হয়।
উদাহরণ: বন্, স্ত্র।

২. মুক্ত অক্ষর (মুক্ত দল):

যেসব অক্ষর স্বরধ্বনিতে শেষ হয়, উচ্চারণের সময় মুখ খোলা থাকে।
উদাহরণ: পা, মা, খি।

---

🔷 বর্ণ ও অক্ষরের মধ্যে পার্থক্য:

🔢 দিক	বর্ণ	অক্ষর
১.	ভাষার লিখিত চিহ্ন	ভাষার উচ্চারণযোগ্য একক
২.	নির্দিষ্ট সংখ্যা (৫০টি)	সংখ্যাবিহীন (শব্দভেদে পরিবর্তিত)
৩.	স্বর ও ব্যঞ্জন আলাদা	স্বর-ব্যঞ্জনের মিলিত ধ্বনি
৪.	শব্দ গঠনে ব্যবহৃত	ছন্দ ও উচ্চারণে ব্যবহৃত

📌 উদাহরণ: “শান্তি” শব্দে ৫টি বর্ণ থাকলেও (শ, া, ন, ত, ি), অক্ষর মাত্র ৩টি — শান্ + তি।

---

🔷 উপসংহার:

অক্ষর হলো বাংলা ভাষার ছন্দের ভিত্তি। কবিতা বা গান রচনায় অক্ষর গণনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, বর্ণ ভাষার লিখিত রূপে ব্যবহৃত মৌলিক একক। দু’টির পার্থক্য বুঝলে ছন্দ ও ভাষা বোঝা সহজ হয়।

📝 ২. উপমা অলংকার কাকে বলে? এর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

✅ উত্তরঃ

---

🔶 উপমা অলংকার কাকে বলে?

উপমা অলংকার হলো বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রচলিত অলংকার, যেখানে দুটি বস্তুর মধ্যে তুলনা করা হয়। এই তুলনার মাধ্যমে এক বস্তু বা গুণকে অন্য বস্তুর সাহায্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

📌 সাধারণত চারটি উপাদান থাকে:

1. উপমেয় – যাকে উপমা দেওয়া হচ্ছে

2. উপমান – যার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে

3. উপমাসূচক শব্দ – যেমন: যেমন, তেমনি, মত, সদৃশ, প্রভৃতি

4. সাধারণ ধর্ম – যে গুণ বা বৈশিষ্ট্য দেখে তুলনা করা হচ্ছে

---

🔷 সংজ্ঞা:

“যেখানে উপমেয়ের সঙ্গে উপমানের তুলনা উপমাসূচক শব্দ দিয়ে করা হয়, তাকে উপমা অলংকার বলে।”

---

🔷 উদাহরণ:

📘 ১. “সে বনের হরিণের মতো চঞ্চল।”
➡️ উপমেয়: সে
➡️ উপমান: বনের হরিণ
➡️ উপমাসূচক শব্দ: মতো
➡️ সাধারণ ধর্ম: চঞ্চলতা

📘 ২. “তোমার হাসি যেন পূর্ণিমার চাঁদ।”
➡️ উপমেয়: তোমার হাসি
➡️ উপমান: পূর্ণিমার চাঁদ
➡️ উপমাসূচক শব্দ: যেন
➡️ সাধারণ ধর্ম: সৌন্দর্য ও শান্তি

---

🔷 উপমা অলংকারের বৈশিষ্ট্য:

• সহজ ও স্পষ্ট রূপে তুলনার মাধ্যমে বিষয়টি বোঝানো হয়

• কবিতা ও গদ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত

• ভাবের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

• পাঠকের কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করে

---

🔷 উপসংহার:

উপমা অলংকার বাংলা সাহিত্যের অলংকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে সহজবোধ্য এবং জনপ্রিয়। এটি সাহিত্যকে প্রাণবন্ত করে তোলে এবং পাঠকের মনে একটি চিত্রময় অনুভূতি সৃষ্টি করে।

 📝৩. পর্ব ও পর্বাঙ্গ বলতে কী বোঝো ? উদাহরণসহ তা আলোচনা করো।

---

✅ উত্তরঃ

🔷 পর্ব (Pôrbô) কাকে বলে?

সংজ্ঞা:
ছন্দে একটি চরণকে মাত্রার ভিত্তিতে যেসব সমান-সমান ভাগে ভাগ করা হয়, প্রতিটি ভাগকে পর্ব বলে।

🔸 ছন্দে গতি ও তাল আনার জন্য একেকটি চরণকে সাধারণত ৪, ৬ বা ৮ মাত্রার পর্বে বিভক্ত করা হয়।

🔹 পর্বের মাধ্যমে কবিতার ছন্দগত ছন্দপতন বোঝা সহজ হয়।

---

🔷 পর্বাঙ্গ (Pôrbônggô) কাকে বলে?

সংজ্ঞা:
প্রত্যেকটি পর্বকে আরও ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করলে যে অংশগুলি পাওয়া যায়, সেগুলোকে বলা হয় পর্বাঙ্গ।

🔹 অর্থাৎ পর্ব একটি বৃহৎ একক, আর তার ভিতরের অংশগুলি হল পর্বাঙ্গ।

---

🔶 উদাহরণসহ ব্যাখ্যা:

📝 উদাহরণঃ
"আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি"

এই চরণটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা এবং এখানে আমরা যদি ৮ মাত্রার পর্ব ধরি, তাহলে চরণটি পর্ব অনুযায়ী বিভক্ত হবে:

• ১ম পর্ব: আমার সোনার (৮ মাত্রা)

• ২য় পর্ব: বাংলা আমি (৮ মাত্রা)

• ৩য় পর্ব: তোমায় ভালোবাসি (৮ মাত্রা)

🔸 এই প্রতিটি ৮ মাত্রার অংশই পর্ব।
🔸 যদি একেকটি পর্বকে আবার ৪ + ৪ মাত্রার ভাগে ভাগ করি, তাহলে প্রতি পর্বের দুটি ভাগই হবে পর্বাঙ্গ।

---

🔷 উপসংহার:

ছন্দের সৌন্দর্য ও সংগীতধর্মিতা তৈরি করতে পর্ব ও পর্বাঙ্গ অপরিহার্য। ছন্দে তাল, গতি ও সুর বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই গঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলা ছন্দশাস্ত্রে ছন্দ বিশ্লেষণ করতে গেলে পর্ব ও পর্বাঙ্গ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক।

---

📝৪. সাদৃশ্যমূলক অলংকার কাকে বলে?
সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

---

✅ উত্তরঃ

সাদৃশ্যমূলক অলংকার হল সেই অলংকার যেখানে দুটি বস্তুর মধ্যে কোনো একটি বা একাধিক দিক থেকে সাদৃশ্য বা সাম্যতা নির্দেশ করা হয়। কবি যখন কোনো ভাব, বস্তু বা চরিত্রের সঙ্গে অন্য কোনো পরিচিত ও চিত্রময় উপমা বা তুলনার মাধ্যমে সাদৃশ্য স্থাপন করেন, তখন সেখানে সাদৃশ্যমূলক অলংকারের উদ্ভব ঘটে।

---

🔷 সংজ্ঞা:

“কবিতা বা সাহিত্যে যখন দুটি বা ততোধিক বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য নির্দেশ করে ভাবের সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে সাদৃশ্যমূলক অলংকার বলে।”

---

🔷 সাদৃশ্যমূলক অলংকারের প্রকারভেদ:

সাহিত্যে সাদৃশ্যমূলক অলংকার প্রধানত তিনটি রূপে দেখা যায়:

1. উপমা অলংকার:

   • সরাসরি তুলনা থাকে।

   • উপমেয়, উপমান, উপমাসূচক শব্দ ও সাধারণ ধর্ম থাকে।

   • 🔸 উদাহরণ: “সে বীরের মত অচল, পাহাড়ের মতো স্থির।”

2. রূপক অলংকার:

   • উপমান ও উপমেয় মিশে একাকার হয়ে যায়।

   • 🔸 উদাহরণ: “পাহাড়টি দাঁড়িয়ে আছে প্রহরীর মতো।”

3. উপমিতি অলংকার:

   • সরাসরি উপমার ভঙ্গিতে তুলনা করা হয়।

   • 🔸 উদাহরণ: “সে যেন বনের সিংহ।”

---

🔷 বিশেষত্ব:

• সাদৃশ্যমূলক অলংকারের মাধ্যমে কবি বা লেখক ভাবের গাঢ়তা, সৌন্দর্য এবং প্রভাব বাড়াতে পারেন।

• পাঠকের মনে দ্রুত ছবির মতো একটি বস্তুর ভাব ধারণা তৈরি হয়।

---

🔷 উপসংহার:

সাদৃশ্যমূলক অলংকার কেবল একটি অলংকার নয়; এটি সাহিত্যিক প্রকাশভঙ্গির একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। ভাবের গভীরতা ও দৃষ্টিনন্দনতা বাড়াতে এই অলংকার অপরিহার্য। বাংলা কাব্যে উপমা ও রূপকের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়, তা সাহিত্যকে জীবন্ত করে তোলে।

📝৫. যমজ অলংকার কাকে বলে?
এর সম্পর্কে যা জানো লেখো।

---

✅ উত্তরঃ

যমজ অলংকার হল বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অলংকার, যেখানে একই শব্দ বা বাক্যাংশ বারবার পুনরাবৃত্তি করে কবি কাব্যের সৌন্দর্য, গুরুত্ব ও ছন্দময়তা বৃদ্ধি করেন। ‘যমজ’ শব্দের অর্থ দ্বৈত বা জোড়া। এই অলংকারে কবিতার পংক্তিতে এক বা একাধিক শব্দ যমজের মতো পাশাপাশি বা কাছাকাছি স্থানেও ব্যবহার হয়।

---

🔷 সংজ্ঞা:

“কবিতায় কোনো শব্দ বা শব্দসমষ্টি বারবার পুনরাবৃত্ত হয়ে কাব্যিক ছন্দ, আবেগ বা অর্থগভীরতা বাড়ালে তাকে যমজ অলংকার বলে।”

---

🔷 বৈশিষ্ট্য:

• একই শব্দ বারবার ব্যবহৃত হয়।

• ছন্দে তাল ও গীতিময়তা সৃষ্টি করে।

• শব্দের পুনরাবৃত্তির ফলে তীব্রতা বা জোর বৃদ্ধি পায়।

• এই অলংকারে আবেগ, নাটকীয়তা এবং সুরমাধুর্য প্রকাশ পায়।

---

🔷 উদাহরণ:

১. “চল রে চল, দিন ফুরালো, আলো হল ক্ষীণ।”
👉 এখানে “চল রে চল” — যমজ অলংকার।

২. “আমি জানি, আমি জানি, আমি জানি হে।”
👉 এখানে “আমি জানি” শব্দের পুনরাবৃত্তি যমজ অলংকারের নিদর্শন।

---

🔷 যমজ অলংকারের প্রভাব:

• পাঠকের মনে দৃঢ় প্রভাব ফেলে।

• আবেগের তীব্রতা ও গম্ভীরতা প্রকাশ করে।

• কাব্যে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

---

🔷 উপসংহার:

যমজ অলংকার হল এক প্রকার শব্দশৈলী যেখানে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ভাবের গভীরতা ও ছন্দময়তা বৃদ্ধি পায়। কবিতা, নাটক ও সংগীতে এই অলংকার পাঠকের মন আকর্ষণ করে এবং বাক্যের তাৎপর্যকে দ্বিগুণ করে তোলে।

---

<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>>