🌹বি.এ সেমিষ্টার-৪::মেজর বাংলা(পেপার-৩)+মাইনর বাংলা সাজেশন(PART-3)🌹

 

 

 ✍️প্রশ্নের মান-১০:

 📝 ১. মাত্রাবৃত্ত বা ধ্বনি প্রধান ছন্দ কাকে বলে?

অথবা, বাংলা ধ্বনি প্রধান ছন্দের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তরঃ

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ (যাকে ধ্বনিপ্রধান ছন্দ বা কলাবৃত্ত ছন্দও বলা হয়) বাংলা ছন্দের একটি জনপ্রিয় ও প্রাচীন রীতি, যেখানে ছন্দ বিন্যাস মূলত মাত্রা বা ধ্বনির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এখানে ছন্দের কাঠামো গঠনের জন্য অক্ষরের সংখ্যা নয়, বরং প্রত্যেক দল বা পর্বে কত মাত্রা রয়েছে, সেটিই মুখ্য বিষয়।

---

🔷 মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সংজ্ঞা:

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ সেই ছন্দ যেখানে প্রতিটি পঙ্‌ক্তিকে সমসংখ্যক মাত্রা দ্বারা সাজানো হয়, এবং প্রতিটি পর্বে নির্দিষ্ট মাত্রার ধ্বনি থাকে। এই ছন্দে দল বা অক্ষরের ধ্বনি গঠন অনুসারে ছন্দ বিন্যাস হয়।

📌 সংজ্ঞা সূত্রে বলা যায়—
“যে ছন্দে প্রতিটি পঙ্‌ক্তি বা চরণ নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা বিশিষ্ট হয় এবং দলভেদে মাত্রার মান নির্দিষ্ট থাকে, তাকে মাত্রাবৃত্ত বা ধ্বনি প্রধান ছন্দ বলে।”

---

🔷 মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য:

✅ ১. ধ্বনির উপর নির্ভরশীল:
এই ছন্দে কবিতার গঠন নির্ধারিত হয় ধ্বনি বা মাত্রা গণনার মাধ্যমে। অক্ষর বা শব্দের সংখ্যা এখানে মুখ্য নয়।

✅ ২. পর্ব বিভাজন থাকে:
প্রতিটি চরণ বা পঙ্‌ক্তি নির্দিষ্ট পর্বে বিভক্ত থাকে, যেমন— ৮ মাত্রার পর্ব বা ৭ মাত্রার পর্ব। প্রতিটি পর্বে সুনির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখতে হয়।

✅ ৩. রুদ্ধদল ও মুক্তদলের ভিত্তি:
ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—

• মুক্তদল (Free syllable): একমাত্রিক ধ্বনি

• রুদ্ধদল (Closed syllable): দ্বিমাত্রিক ধ্বনি

✅ ৪. অন্ত্যমিল অপরিহার্য নয়:
অনেক সময় অন্ত্যমিল ছাড়াও মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ব্যবহৃত হয়, তবে ছন্দের তাল বা ছন্দময়তা ঠিক থাকে।

✅ ৫. ছন্দের লয় সাধারণত ধীর:
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের গতি বা লয় ধীর ও গভীর হয়। এটি পাঠকের মধ্যে এক ধরনের ভাবগম্ভীরতা সৃষ্টি করে।

✅ ৬. বাংলা সাহিত্যে প্রাচীন ও সমৃদ্ধ রীতি:
মঙ্গলকাব্য, চণ্ডীমঙ্গল, পদাবলী কীর্তনে এই ছন্দের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ কবিরা এই ছন্দ ব্যবহার করেছেন।

---

🔷 📚 উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:

👉 উদাহরণ ১:
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে”
👉 বিশ্লেষণ:
এটি একটি ১৪ মাত্রার চরণ, যার পর্ব বিভাজন ৮+৬। এখানে

• “আমা-দে-র | দে-শে হ-বে” = ৮ মাত্রা

• “সে-ই ছে-লে ক-বে” = ৬ মাত্রা

👉 উদাহরণ ২:
“ঘরে ঘরে আজ গান শোনা যায়, দীপ জ্বলে”

• এটি একটি ৮+৬ মাত্রার ছন্দবিন্যাস।

---

🔷 মাত্রাবৃত্ত ছন্দের নামকরণ:

📌 ‘মাত্রাবৃত্ত’ শব্দটি এসেছে "মাত্রা + বৃত্ত" থেকে।
একে ধ্বনিপ্রধান ছন্দ বলা হয় কারণ এখানে মূল গুরুত্ব ধ্বনির দৈর্ঘ্য বা সময়কাল।

📌 আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এই ছন্দের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করেন প্রবোধচন্দ্র সেন। তিনি একে "কলাবৃত্ত" নামেও অভিহিত করেন।

---

🔷 উপসংহার:

মাত্রাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ বাংলা কবিতার এক শক্তিশালী ছন্দরীতি। এটি বাংলা কাব্যসাহিত্যে সৌন্দর্য ও তাল যোগ করে। ধ্বনির মাধুর্য, গভীরতা এবং গম্ভীরতা বজায় রেখে আবেগঘন কবিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এই ছন্দ অতুলনীয়। তাই প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত এই ছন্দের প্রচলন ও জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে।

---

📝 ২. অক্ষরবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দ কাকে বলে?
অথবা, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলতে কী বোঝো? এর বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তরঃ

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ (যাকে তানপ্রধান ছন্দ বলা হয়) বাংলা ছন্দের একটি জনপ্রিয় রীতি, যেখানে ছন্দের গঠন অক্ষরের সংখ্যা বা তান (গায়নভিত্তিক ছন্দগতি) অনুসারে নির্ধারিত হয়। এখানে ছন্দের সৌন্দর্য নির্ভর করে মূলত অক্ষর বিন্যাস, তালের গতি এবং সঙ্গীতধর্মিতার উপর।

---

🔷 অক্ষরবৃত্ত ছন্দের সংজ্ঞা:

“যে ছন্দে চরণের গঠন নির্দিষ্ট সংখ্যক অক্ষর দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং প্রতি চরণে একই সংখ্যক অক্ষর থাকে, তাকে অক্ষরবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দ বলে।”

📌 এখানে ছন্দের তাল, লয় ও সংগীতধর্মিতা মুখ্য বিষয়। অক্ষরের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকলেও, তাদের মাত্রা বা ধ্বনির দৈর্ঘ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।

---

🔷 অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য:

✅ ১. অক্ষরের সংখ্যা নির্দিষ্ট:
প্রত্যেক চরণে নির্দিষ্ট সংখ্যক অক্ষর থাকে। যেমন, ১৬ অক্ষরের ছন্দ, ১৮ অক্ষরের ছন্দ ইত্যাদি।

✅ ২. গীতিময়তা বা তান-ভিত্তিক ছন্দ:
এই ছন্দে তান বা ছন্দের গায়নগত তাল গুরুত্বপূর্ণ। এটি গান বা পাঠে তাল, মাত্রা ও গীতিময় গতি তৈরি করে।

✅ ৩. পর্ব বিভাজন স্পষ্ট নয়:
স্বরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মতো এখানে পর্ব বিভাজন নির্দিষ্ট না হলেও, গানের মতো “তান” অনুযায়ী স্বাভাবিক বিরতি থাকে।

✅ ৪. উচ্চারণের স্বাভাবিক ছন্দ গঠন করে:
অক্ষরের উপর নির্ভর করায়, এটি স্বভাবসিদ্ধ গঠন ও প্রবাহময় ধ্বনি তৈরি করে।

✅ ৫. অন্ত্যমিল থাকে বা থাকতে পারে:
এই ছন্দে অন্ত্যমিল থাকলে পাঠে আনন্দ বেড়ে যায়, যদিও এটি অপরিহার্য নয়।

✅ ৬. লয় বা গতি অধিকতর দ্রুত:
সাধারণত এই ছন্দে তাল দ্রুত হয় এবং ছন্দোচ্ছ্বাস বেশি থাকে।

✅ ৭. বাংলা নাটক ও গীতিকবিতায় বহুল ব্যবহার:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ এই ছন্দ ব্যবহার করেছেন।

---

🔷 📚 উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:

👉 উদাহরণ ১:
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”
👉 বিশ্লেষণ:
এই লাইনটিতে ১৮টি অক্ষর আছে।
চরণের অক্ষর সংখ্যা = ১৮ (তান ভিত্তিক ছন্দ)

👉 উদাহরণ ২:
“চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।”
👉 এই চরণও একটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দ, যেখানে শব্দ ও অক্ষরের ছন্দযুক্ত গঠন লক্ষণীয়।

---

🔷 নামকরণ ও ছন্দবিশারদদের ব্যাখ্যা:

📌 ‘অক্ষরবৃত্ত’ শব্দটি এসেছে "অক্ষর + বৃত্ত" থেকে, যার অর্থ — অক্ষর ঘিরে গঠিত ছন্দচক্র।
📌 ‘তানপ্রধান’ বলা হয় কারণ এই ছন্দে তান বা গায়নের ছন্দ ও সংগীতগত আবেগ মুখ্য।

📌 সাহিত্য বিশারদদের মতে, এই ছন্দের গঠনকাঠামো উচ্চারণভিত্তিক এবং ছন্দের সৌন্দর্য তৈরি হয় তান ও ছন্দের ঝংকারে।

---

🔷 উপসংহার:

অক্ষরবৃত্ত বা তানপ্রধান ছন্দ বাংলা সাহিত্যের একটি স্বাভাবিক ও আবেগময় ছন্দরীতি।
এই ছন্দে অক্ষর সংখ্যা ও তানের গতি ছন্দ সৃষ্টি করে, যা পাঠে এবং শ্রবণে মাধুর্য এনে দেয়।
বিশেষ করে নাট্য, গান, আবৃত্তি, গীতিকবিতা এবং শিশুতোষ ছড়ায় এই ছন্দ অধিক ব্যবহৃত হয়।
তাই বাংলা কাব্যসাহিত্যে এই ছন্দের গুরুত্ব অপরিসীম।

---

📝 ৩. উদাহরণসহ স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দের পরিচয় দাও (বৈশিষ্ট্য লেখ)

✅ উত্তরঃ

স্বরবৃত্ত ছন্দ (বা শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ) হলো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রুতিমধুর ছন্দরীতি। এই ছন্দে প্রতি অক্ষর একমাত্রার হয় এবং ছন্দের গঠন নির্ভর করে উচ্চারণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, ও তালের গতির উপর। ছড়া, গীতিকবিতা, নাটকের সংলাপ ইত্যাদিতে এটি অধিক ব্যবহৃত হয়।

---

🔷 স্বরবৃত্ত ছন্দের সংজ্ঞা:

“যে ছন্দে প্রতিটি অক্ষর একমাত্রার হয় এবং প্রতিটি চরণ নির্দিষ্ট মাত্রার হয়, তাকে স্বরবৃত্ত বা শ্বাসাঘাত প্রধান ছন্দ বলে।”

📌 এখানে সকল অক্ষর একমাত্রার ধরা হয়, এমনকি হলন্ত ও সংযুক্ত অক্ষরও।

---

🔷 স্বরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য:

✅ ১. একমাত্রার অক্ষর:
প্রত্যেক অক্ষর ১ মাত্রা হিসেবে গণ্য হয়। চরণে ৬, ৮, ১০, ১২ ইত্যাদি মাত্রা নির্ধারিত থাকে।

✅ ২. অন্ত্যমিল:
সাধারণত প্রতিটি চরণে মিল থাকে যা কবিতাকে মাধুর্যময় করে তোলে।

✅ ৩. গীতিময় ও ছন্দোবদ্ধ:
এই ছন্দ সহজে মুখস্থ হয়, শ্রুতিমধুর এবং আবৃত্তিযোগ্য।

✅ ৪. উচ্চারণভিত্তিক গঠন:
ছন্দের গঠন মুখের শ্বাসপ্রশ্বাস ও উচ্চারণের ধরণ অনুসরণ করে। ছন্দ তালময় হয়।

✅ ৫. পর্ব বিভাজন কম:
অন্য ছন্দের মতো নির্দিষ্ট পর্ব না থাকলেও, স্বাভাবিক উচ্চারণগত ভাঁজে ছন্দ বিভাজিত হয়।

✅ ৬. শিশুতোষ ও লোকসাহিত্যে প্রচলিত:
এই ছন্দ শিশুদের ছড়া, লোককবিতা, লালনগীতি ইত্যাদিতে বহুল ব্যবহৃত।

---

🔷 📚 উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:

উদাহরণ ১:
“আয়রে ছুটে আয় | খুকি খুকি খুকি ||”

• প্রথম চরণে = ৬ মাত্রা

• দ্বিতীয় চরণে = ৬ মাত্রা
  👉 প্রতিটি অক্ষর একমাত্রার, স্পষ্ট স্বরবৃত্ত ছন্দ।

উদাহরণ ২:
“টুনটুনি টুনটুনি | উঠলি কোন বেলা?”

• প্রথম চরণ = ৬ মাত্রা

• দ্বিতীয় চরণ = ৬ মাত্রা
  👉 সহজ উচ্চারণ, অন্ত্যমিল ও তালবদ্ধ গঠন — স্বরবৃত্তের আদর্শ উদাহরণ।

---

🔷 ব্যবহারের ক্ষেত্র:

📌 এই ছন্দে কাজ করেছেন —
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকুমার রায়, জসিমউদ্দিন, লীলেন চক্রবর্তী প্রমুখ।
📌 বিশেষ করে শিশুদের ছড়া, লোকসঙ্গীত, নাট্যগীতি প্রভৃতিতে এর ব্যবহারে স্বরবৃত্ত ছন্দ অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে।

---

🔷 উপসংহার:

স্বরবৃত্ত ছন্দ বাংলা সাহিত্যে একটি সহজ, আবেগপ্রবণ ও প্রবাহময় ছন্দরীতি।
এই ছন্দে গীতিময়তা ও ছন্দের শুদ্ধতা পাঠক ও শ্রোতার মনে আনন্দ জাগায়।
এর সরলতা ও শ্রুতিমাধুর্য একে বাংলা ছন্দের জগতে একটি শ্রেষ্ঠ রূপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

---

📝 ৪. অলংকার কাকে বলে? অলংকারের বিভিন্ন প্রকারগুলি প্রধানসহ ব্যাখ্যা কর।

✅ উত্তরঃ

অলংকার শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “অলঙ্কার” শব্দ থেকে, যার অর্থ—শোভা বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। যেমন গয়না শরীরকে সাজায়, ঠিক তেমনি অলংকার কবিতাকে করে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও চিত্তাকর্ষক। সাহিত্যে অলংকার হলো সেইসব রূপকল্প, উপমা, রীতি ও ভাষার ব্যবহার, যা কাব্যের ভাব, ভাষা ও ছন্দকে আরও রসোত্তীর্ণ করে তোলে।

---

🔷 অলংকারের সংজ্ঞা:

“যে রীতি বা উপায়ে কাব্যকে আরও শোভন ও শ্রুতিমধুর করে তোলা হয়, তাকে অলংকার বলে।”

অথবা,
“যে শব্দ বা ভাবের বিশেষ প্রয়োগে কবিতা শ্রোতা বা পাঠকের মনে আনন্দের সৃষ্টি করে, সেটাই অলংকার।”

---

🔷 অলংকারের প্রকারভেদ:

প্রাচীন অলংকার শাস্ত্র অনুসারে, অলংকার প্রধানত দুই প্রকার:

1. শব্দ অলংকার

2. অর্থ অলংকার

---

🔶 ১. শব্দ অলংকার (যেখানে শব্দের ধ্বনি ও গঠনই প্রধান):

এ ধরনের অলংকারে শব্দের রূপ, ধ্বনি ও ছন্দময়তা মুখ্য হয়। শ্রুতিমাধুর্যই এদের বৈশিষ্ট্য।

প্রধান শব্দ অলংকার:

🔹 যমক: একই শব্দ বা বাক্যাংশ একাধিকবার ব্যবহার করে ভিন্ন অর্থ বোঝানো।
উদাহরণ:
“কমল ফুলে কমল মুখে হাসে কমল বালা।”
— এখানে 'কমল' শব্দটি তিনবার ব্যবহার হয়েছে তিন অর্থে।

🔹 অনুপ্রাস: সমধ্বনির পুনরাবৃত্তি।
উদাহরণ:
“চঞ্চল চপল চপলা চম্পা।”
— এখানে ‘চ’ ধ্বনির পুনরাবৃত্তি আছে।

🔹 শ্লেষ: এক শব্দ বা বাক্যের মধ্যে একাধিক অর্থ লুকিয়ে থাকা।
উদাহরণ:
“রাম প্রেমে রাম রামে রামরাম রটে।”
— এখানে 'রাম' শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

---

🔶 ২. অর্থ অলংকার (যেখানে ভাব ও কল্পনা মুখ্য):

এতে কবিতার অর্থগত সৌন্দর্য গড়ে তোলে অলংকার। চিত্রকল্প, তুলনা, অতিশয়োক্তি প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত।

প্রধান অর্থ অলংকার:

🔹 উপমা: তুলনার মাধ্যমে একটি ভাব প্রকাশ।
উদাহরণ:
“সে বীর ছিল সিংহের মতো।”
— এখানে বীরকে সিংহের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

🔹 রূপক: সরাসরি উপমা না দিয়ে একটি কল্পনার রূপে বাস্তবকে তুলে ধরা।
উদাহরণ:
“জীবন এক মহাসমর।”
— এখানে জীবনকে সরাসরি যুদ্ধ বলা হয়েছে।

🔹 অতিশয়োক্তি: কল্পনার মাধ্যমে বাস্তবকে অনেক বেশি করে দেখানো।
উদাহরণ:
“একটি ফুলের জন্য বাগান বিলিয়ে দিলাম।”
— এখানে ফুলের মূল্য বাড়াতে অতিরঞ্জন করা হয়েছে।

🔹 চিত্রকল্প: রঙিন বা জীবন্ত ছবি তৈরি করে পাঠকের মনে প্রভাব সৃষ্টি।
উদাহরণ:
“চাঁদের আলোর মত হাসি তোমার মুখে।”

🔹 বিদ্রূপ (ব্যঙ্গ): উল্টো কথার মাধ্যমে মজার বা কটাক্ষমূলক মন্তব্য।
উদাহরণ:
“খুব ভালো ছাত্র, পরীক্ষায় প্রতিবারই ফেল করে!”

---

🔷 উপসংহার:

সাহিত্যে অলংকার শুধু শব্দের খেলাই নয়, এটি কবির ভাব, কল্পনা ও সৌন্দর্যপ্রবণতার বহিঃপ্রকাশ। শব্দ অলংকার পাঠে আনন্দ দেয়, আর অর্থ অলংকার পাঠকের কল্পনাকে আন্দোলিত করে। কবিতা, নাটক, গান – সব সাহিত্যের রস উপলব্ধিতে অলংকার একটি অপরিহার্য উপাদান।

---

📝 ৫. ধ্বনি-প্রধান বা সরল কলাবৃত্ত ছন্দ ও শ্বাসাঘাত-প্রধান বা দলবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
✅ উত্তরঃ

বাংলা ছন্দের প্রধান দুই শ্রেণি হলো — ধ্বনি-প্রধান (মাত্রাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত) ছন্দ এবং শ্বাসাঘাত-প্রধান (স্বরবৃত্ত বা দলবৃত্ত) ছন্দ। এ দুটি ছন্দ প্রকৃতি, গঠন এবং পাঠরীতির দিক থেকে একে অপরের থেকে আলাদা। নিচে এই দুই ছন্দের বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য বিশদভাবে আলোচনা করা হলো।

---

🔷 ধ্বনি-প্রধান বা কলাবৃত্ত ছন্দ (মাত্রাবৃত্ত ছন্দ)

সংজ্ঞা:
যে ছন্দে প্রতিটি চরণ নির্দিষ্ট সংখ্যক “মাত্রা” (ধ্বনির দৈর্ঘ্য) নিয়ে গঠিত হয় এবং মাত্রা সংখ্যা অনুযায়ী ছন্দের ছন্দোবদ্ধতা আসে, তাকে মাত্রাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত ছন্দ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

1. ✅ মাত্রা নির্দিষ্ট:
   প্রতিটি চরণে নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে, যেমন ৮+৮, বা ৮+৮+১০ ইত্যাদি।

2. ✅ রুদ্ধ ও মুক্ত দল:
   ধ্বনির প্রকৃতি অনুযায়ী রুদ্ধ দল (১ মাত্রা) ও মুক্ত দল (২ মাত্রা) ব্যবহার করে ছন্দ গঠিত হয়।

3. ✅ পর্ব বিভাজন থাকে:
   চরণ বিভক্ত করা হয় পর্ব অনুযায়ী — যেমন ৮+৮ বা ৮+৬+১০।

4. ✅ লয় ধীর:
   এই ছন্দের লয় তুলনামূলক ধীর এবং তালবদ্ধ।

5. ✅ আবৃত্তির উপযোগী:
   নাট্যকাব্য, আবৃত্তিযোগ্য কবিতা ইত্যাদিতে এই ছন্দ বেশি ব্যবহৃত হয়।

📌 উদাহরণ:
“চাঁদের হাসি মুখে তার / শিশির জলে ভেজা পার।”
(৮ + ৮ মাত্রা)

---

🔷 শ্বাসাঘাত-প্রধান বা দলবৃত্ত ছন্দ (স্বরবৃত্ত ছন্দ)

সংজ্ঞা:
যে ছন্দে শব্দের শ্বাসাঘাত অনুযায়ী ধ্বনি বা শব্দদল গঠন করে ছন্দের তাল তৈরি হয়, এবং প্রতিটি শব্দদলে সমান মাত্রা থাকে, তাকে স্বরবৃত্ত বা দলবৃত্ত ছন্দ বলে।

বৈশিষ্ট্য:

1. ✅ শ্বাসাঘাতভিত্তিক গঠন:
   ছন্দ গঠিত হয় শব্দের উচ্চারণের দম (শ্বাসাঘাত) অনুযায়ী।

2. ✅ দল নির্ধারণ:
   প্রতিটি দল = ১ মাত্রা, এবং প্রতিটি চরণে নির্দিষ্ট সংখ্যক দল থাকে।

3. ✅ লয় দ্রুত:
   এই ছন্দের গতি ও লয় দ্রুত এবং ছন্দোচ্ছ্বাসপূর্ণ।

4. ✅ ছড়া ও গীতিকবিতায় উপযোগী:
   শিশুতোষ ছড়া, গীতিকবিতা, লোককবিতায় এই ছন্দ বেশি দেখা যায়।

📌 উদাহরণ:
“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর / নদে এল বান।”
— এখানে প্রতিটি শব্দদল একমাত্রার মূল্য পায়।

---

🔶 ধ্বনি-প্রধান ও শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দের পার্থক্য:

📚বিষয়	🎼ধ্বনি-প্রধান ছন্দ	💨শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দ
১. গঠনের ভিত্তি	ধ্বনির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী (১/২ মাত্রা)	শ্বাসাঘাত বা উচ্চারণভিত্তিক দল
২. একক	মাত্রা (১ বা ২ মাত্রার)	দল (প্রতিটি দল ১ মাত্রার সমান)
৩. লয় ও গতি	ধীর ও গাম্ভীর্যপূর্ণ	দ্রুত ও সজীব
৪. ব্যবহার	নাট্যকাব্য, আবৃত্তিযোগ্য কবিতা	ছড়া, গান, লোকগীতি, শিশুতোষ কবিতা
৫. পর্ব বিভাজন	থাকে (যেমন ৮+৮ বা ৮+৬+১০)	সাধারণত স্পষ্ট পর্ব বিভাজন থাকে না
৬. মাত্রা গণনার পদ্ধতি	রুদ্ধদল (১ মাত্রা), মুক্তদল (২ মাত্রা)	প্রতিটি শব্দদল ১ মাত্রা হিসেবে গণনা করা হয়

---

🔷 উপসংহার:

ধ্বনি-প্রধান ছন্দ যেখানে পরিমিত ও ধ্বনিময় ছন্দের প্রতিফলন ঘটায়, সেখানে শ্বাসাঘাত-প্রধান ছন্দ শ্রুতিমধুর ও সরল ধারায় গড়ে ওঠে। দুটি ছন্দেরই বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান আছে — একদিকে নাটক, গীতিকবিতা, আবৃত্তিতে মাত্রাবৃত্ত, অন্যদিকে শিশু-কবিতা, লোকগীতি, ছড়ায় দলবৃত্ত ছন্দ জনপ্রিয়।

---

📝 ৬. বাংলা ছন্দরীতিতে সংজ্ঞা ও উদাহরণসহ ছন্দ ও যতির গুরুত্ব নির্ণয় করো।
✅ উত্তরঃ

বাংলা কাব্যরীতিতে ছন্দ এবং যতি—এই দুটি উপাদান কাব্যিক সৌন্দর্য সৃষ্টি ও শ্রুতিমাধুর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছন্দ ও যতির যথাযথ প্রয়োগ একটি কবিতাকে সংগীতময় করে তোলে এবং পাঠকের বা শ্রোতার মনে ছন্দোবদ্ধতার এক অপূর্ব অনুভূতি সৃষ্টি করে। নিচে ছন্দ ও যতির পৃথক পরিচয় ও তাদের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো।

---

🔷 ছন্দ কাকে বলে?

ছন্দ হল ধ্বনি, শব্দ, মাত্রা ও গতি-প্রকৃতির সুশৃঙ্খল বিন্যাস, যা কবিতাকে ছন্দোবদ্ধতা দেয় এবং গদ্য থেকে পৃথক করে।

📌 সংজ্ঞা:
“ছন্দ হল কবিতার অন্তর্নিহিত ছন্দবিন্যাস, যা ধ্বনি ও তালের অনুপাতে গঠিত।”

ছন্দ একাধারে ধ্বনিময়, তালময় ও গীতিময় হওয়ায় কাব্যের গঠন ও আবেগ প্রকাশের প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে।

---

🔷 যতির পরিচয়:

যতি শব্দের অর্থ বিরাম বা থেমে যাওয়া। কবিতার চরণ বা পংক্তিতে ছন্দের গতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে বিরাম বা থেমে যাওয়াকেই ‘যতি’ বলা হয়।

📌 সংজ্ঞা:
“যে ছন্দবদ্ধ চরণে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে কিছুক্ষণের জন্য উচ্চারণ বন্ধ রাখা হয়, তাকে যতি বলে।”

যতি কেবলমাত্র বিশ্রামের জন্য নয়, অর্থের গাম্ভীর্য প্রকাশ, শ্রুতিমাধুর্য সৃষ্টি এবং পাঠে গতি আনার জন্যও অপরিহার্য।

---

🔷 বাংলা ছন্দে ছন্দ ও যতির গুরুত্ব:

✅ ১. কবিতাকে ছন্দোবদ্ধ করে:

• ছন্দ কবিতাকে নির্দিষ্ট মাত্রা ও ছন্দরীতির ভিতরে এনে একটি কাঠামো প্রদান করে।

• যতির সাহায্যে সেই ছন্দে তাল ও বিরামের সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

✅ ২. শ্রুতিমাধুর্য সৃষ্টি:

• কবিতা আবৃত্তি বা পাঠে ছন্দ ধ্বনির সৌন্দর্য আনে।

• যতি ছন্দের মধ্যে ছন্দোবিন্যাস তৈরি করে শ্রোতার কানে মধুরতা এনে দেয়।

✅ ৩. আবেগ ও ভাবপ্রকাশে সাহায্য:

• ছন্দ একটি আবেগকে ছন্দোবদ্ধ রূপে উপস্থাপন করে।

• যতি যথাস্থানে ব্যবহৃত হলে কবির বক্তব্যে নাটকীয়তা ও গভীরতা আসে।

✅ ৪. বক্তব্যের গতি ও ছন্দ-অনুশাসন বজায় রাখে:

• ছন্দ কবিতার গতিপথ নির্ধারণ করে।

• যতি ছন্দে গতি-বিরতির সঠিক দিশা দেখায়।

✅ ৫. কবিতার অন্ত্যমিল ও তাল ঠিক রাখতে সাহায্য করে:

• ছন্দ ও যতি মিলিয়ে কবিতায় তাল, ছন্দ ও অন্ত্যমিল সুষ্ঠু রূপ পায়।

✅ ৬. আবৃত্তি ও পাঠে সহায়ক:

• ছন্দ ও যতির সঠিক অনুশীলন ছাড়া আবৃত্তি নিখুঁত হয় না।

• সঠিক যতি পাঠের প্রকাশভঙ্গিকে নাটকীয় ও জীবন্ত করে তোলে।

---

🔷 উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:

📌 পংক্তি:
“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে।”

• এখানে 'আমাদের ছোট নদী / চলে বাঁকে বাঁকে'—এই বিভাজন যতি নির্দেশ করে।

📌 বিশ্লেষণ:

• ছন্দের বিন্যাস অনুযায়ী প্রতিটি অংশে যতি এনে পাঠে সৌন্দর্য ও শ্রোতামুগ্ধতা তৈরি হয়েছে।

---

🔷 উপসংহার:

ছন্দ কাব্যের কাঠামো তৈরি করে, আর যতি সেই কাঠামোর নিয়ন্ত্রিত প্রবাহ বজায় রাখে। ছন্দ ছাড়া কবিতা কল্পনা করা যায় না, আর যতির অনুপস্থিতি পাঠকে ক্লান্তিকর করে তোলে। ছন্দ ও যতির সঠিক সমন্বয়ে বাংলা কবিতা পায় তার ছন্দোবদ্ধতা, গীতিময়তা ও আবেগঘন প্রভাব। তাই বাংলা সাহিত্যে ছন্দ ও যতির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

---

📝 ৭. অমিত্রাক্ষর ছন্দ কাকে বলে?
এই ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

✅ উত্তরঃ

অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছন্দধর্মী কাব্যরীতি। এ ছন্দের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—অন্ত্যমিলের অনুপস্থিতি, অথচ চরণগুলির মধ্যে একটি প্রবাহ, ছন্দ এবং শৃঙ্খলা বজায় থাকে। এটি মূলত ইংরেজি Blank Verse-এর বাংলা রূপ। ইংরেজি সাহিত্যে মিলটন, শেক্‌সপিয়র, টেনিসন প্রমুখ লেখক এই ছন্দে মহাকাব্য ও নাট্যকাব্য রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ এই ছন্দে কাব্য রচনা করেছেন।

---

🔷 ✅ অমিত্রাক্ষর ছন্দের সংজ্ঞা:

“যে ছন্দে প্রতিটি চরণে সমান বা নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা থাকে কিন্তু অন্ত্যমিল থাকে না, তাকে অমিত্রাক্ষর ছন্দ বলে।”

📌 এই ছন্দে মূলত মাত্রা নির্ধারিত থাকে, তবে মিলের বাধ্যবাধকতা থাকে না।

---

🔷 ✅ অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

🔹 ১. অন্ত্যমিল থাকে না:

• এই ছন্দে চরণগুলির মধ্যে কোনো মিল বা রাইম স্কিম নেই।

• তাই কবিতাটি গদ্যের মতো শুনতে পারে, কিন্তু ছন্দবদ্ধ থাকে।

🔹 ২. প্রতিটি চরণে নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে:

• সাধারণত প্রতি চরণে ১৪ মাত্রা ব্যবহৃত হয়।

• তবে লেখক প্রয়োজনে মাত্রা কম-বেশি করতে পারেন।

🔹 ৩. যতির সুনির্দিষ্ট ব্যবহার:

• প্রতিটি চরণে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যতি বা বিরাম থাকে (প্রায় ৮+৬ মাত্রায়)।

• যতির মাধ্যমে ছন্দের প্রবাহ ও সংগীতধর্মিতা বজায় থাকে।

🔹 ৪. বিষয়বস্তুর স্বাধীনতা:

• এই ছন্দে ব্যাকরণিক কাঠামো কঠোর নয়।

• লেখক স্বাধীনভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন।

🔹 ৫. দীর্ঘ কবিতা বা নাট্যকাব্যের উপযোগী:

• এর গদ্যতুল্য ঢং ও অন্ত্যমিলহীনতা কবিকে দীর্ঘ কবিতা লেখার সুবিধা দেয়।

🔹 ৬. আবেগঘন ভাষার বহিঃপ্রকাশ:

• যেহেতু ছন্দ বাধ্যবাধকতা কম, তাই অন্তর্লৌকিক ভাব ও দর্শন প্রকাশ সহজ হয়।

---

🔷 ✅ উদাহরণসহ বিশ্লেষণ:

📜 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “নির্ঝরের স্বপনভঙ্গ” কাব্য থেকে উদাহরণ:

“প্রকাশে হে নিখিল, প্রকাশে হে!
আলোকে অনন্ত আকাশে হে।”

🔎 বিশ্লেষণ:

• এখানে চরণে মিল নেই (অন্ত্যমিলহীন)।

• কিন্তু ছন্দের গঠন ও যতি রয়েছে — ফলে একটি সংগীতময় ছন্দবদ্ধ গঠন তৈরি হয়েছে।

📜 আরও একটি উদাহরণ:

“চিরদিন কেবল মনে রেখেছি হার মানা,
সকলের পরে থেকেছি।”
— জীবনানন্দ দাশ

🔎 বিশ্লেষণ:

• মিল নেই, কিন্তু ভাষার গঠন ও ছন্দপতনের প্রবাহ বজায় আছে।

---

🔷 ✅ বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের গুরুত্ব:

• কবিদের জন্য এটি ভাবপ্রকাশের স্বাধীন পথ।

• দীর্ঘ কাব্য রচনায় সহজ ও গদ্য-সুলভ হলেও ছন্দ বজায় থাকে।

• চিন্তাভাবনার দার্শনিক ও বিমূর্ত প্রকাশে উপযোগী।

• আধুনিক কবিতায় বহুল ব্যবহৃত।

---

🔷 ✅ উপসংহার:

অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা কবিতার এক আধুনিক ও গভীর ছন্দরীতি। এটি অন্ত্যমিলহীন হলেও ছন্দের গতি, মাত্রা ও যতির মাধ্যমে কবিতাকে সঙ্গীতময় করে তোলে। কাব্যিক স্বাধীনতা, ভাব-প্রকাশের গভীরতা এবং ছন্দের সাবলীলতা এই ছন্দকে করেছে সাহিত্যিকদের একটি প্রিয় ছন্দরূপ। বাংলা কাব্যরচনার ধারায় এই ছন্দের অবদান অনস্বীকার্য।

---

<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>>