✍️সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রশ্নের মান-২):
📝 ১। কয়েকজন নরমপন্থী কংগ্রেস নেতার নাম লেখো।✅ উত্তর: কয়েকজন নরমপন্থী কংগ্রেস নেতা হলেন দাদাভাই নওরোজি, গোখলে এবং ফিরোজশাহ মেহতা। তারা সাংবিধানিক উপায়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বশাসন লাভে বিশ্বাসী ছিলেন।
📝 ২। ‘সূর্যাস্ত আইন' কী ?
✅ উত্তর: ‘সূর্যাস্ত আইন’ ছিল ব্রিটিশদের তৈরি একটি ভূমি-সংক্রান্ত আইন, যা ১৮৫৯ সালে প্রবর্তিত হয়। এই আইনে জমির কর সূর্যাস্তের পূর্বে না দিলে জমি নিলামে তোলা হত।
📝 ৩। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকাটির নাম কী? এই পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন?
✅ উত্তর: বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকার নাম ছিল ‘দিগ্দর্শন’। এর সম্পাদক ছিলেন রামরাম বসু।
📝 ৪। 'আমিনি কমিশন' কী?
✅ উত্তর: ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করার পর প্রশাসনিক দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা রোধে ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস 'আমিনি কমিশন' গঠন করেন। এর মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থার দুরবস্থা মূল্যায়ন করা হয়।
📝 ৫। আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
✅ উত্তর: আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ ১৮৭৫ সালে স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরবর্তীতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।
📝 ৬। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ সমর্থনকারী দুজন ব্যক্তির নাম লেখো।
✅ উত্তর: অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ সমর্থনকারী দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন দাদাভাই নওরোজি এবং আর সি দত্ত। তারা ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন।
📝 ৭। ডিরোজিওর শিষ্যদের ‘নব্যবঙ্গ' বলা হয় কেন?
✅ উত্তর: ডিরোজিওর শিষ্যরা যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা ও সমাজসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন। তাদের চিন্তা-চেতনায় নতুনত্ব ছিল, তাই তাদের 'নব্যবঙ্গ' বলা হয়।
📝 ৮। শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে স্বামীজি কী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন?
✅ উত্তর: স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, ভারত একটি সহিষ্ণু, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রাচীন জ্ঞানের ভাণ্ডার। তিনি বিশ্ববাসীর সামনে হিন্দুধর্মের উদারতা তুলে ধরেন।
📝 ৯। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
✅ উত্তর: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে ৭২ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
📝 ১০। সূর্যাস্ত আইন কী ?
✅ উত্তর: সূর্যাস্ত আইন ছিল ব্রিটিশদের ভূমি-সংক্রান্ত একটি নিয়ম, যা ১৮৫৯ সালে প্রণীত হয়। এই আইনে বলা হয়, জমির কর সূর্যাস্তের আগে না দিলে জমি নিলামে তোলা হবে।
📝 ১১। 'অবশিল্পায়ন' বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: 'অবশিল্পায়ন' বলতে একটি দেশে শিল্পের ধ্বংস বা হ্রাস পাওয়াকে বোঝানো হয়। ব্রিটিশ শাসনের ফলে ভারতীয় হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়।
📝 ১২। কংগ্রেসের আদিপর্বের অধিবেশনগুলিকে ব্যঙ্গ করে 'তিন-দিনের তামাশা' বলা হত কেন?
✅ উত্তর: কংগ্রেসের আদিপর্বে সভাগুলো খুব সীমিত দাবি নিয়ে এবং নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে অনুষ্ঠিত হত। ফলে ব্রিটিশরা এগুলোকে গুরুত্ব দিত না এবং ব্যঙ্গ করে ‘তিন-দিনের তামাশা’ বলত।
📝 ১৩। কারা, কবে কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ নেন?
✅ উত্তর: ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি ১৯০৮ সালে কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বোমা ছুঁড়ে আক্রমণ করেন। যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান, এই ঘটনায় একটি ইউরোপীয় মহিলা ও তার কন্যার মৃত্যু হয়।
📝 ১৪। হস্তশিল্প ধ্বংসের দুটি ফলাফল লেখো।
✅ উত্তর: (১) বহু হস্তশিল্পী ও কারিগর কাজ হারিয়ে দারিদ্র্যসীমায় চলে যায়। (২) গ্রামীণ শিল্প ভিত্তি ভেঙে পড়ায় কৃষির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হয়।
📝 ১৫। রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়েছিল?
✅ উত্তর: রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে ফেলা হয়, ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়। এছাড়া জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং স্থানীয় পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
📝 ১৬। হিন্দুমেলার অপর নাম কী? হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য কী ছিল?
✅ উত্তর: হিন্দুমেলার অপর নাম ছিল ‘জাতীয় মেলা’। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বদেশি চেতনা জাগানো, দেশীয় পণ্যের প্রচার ও জাতীয় ঐক্য গঠন।
📝 ১৭। 'হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' কী?
✅ উত্তর: এই তত্ত্ব অনুযায়ী কংগ্রেস গঠনের নেপথ্যে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডাফরিন ও এ ও হিউমের মধ্যে ষড়যন্ত্র ছিল। তারা চেয়েছিলেন ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে একটি নিরাপদ উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ করে দিতে।
📝 ১৮। কার আমলে, কত খ্রিস্টাব্দে রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প শুরু হয়?
✅ উত্তর: লর্ড ডালহৌসির আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম রেলপথ মুম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত চালু হয়। এটি ছিল ৩৪ কিমি দীর্ঘ।
📝 ১৯। নীল বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখো।
✅ উত্তর: নীল বিদ্রোহের দুজন বিশিষ্ট নেতা হলেন দিগাম্বর বিশ্বাস এবং বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস। তারা কৃষকদের স্বার্থে সাহসী নেতৃত্ব দেন।
📝 ২০। অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন এমন দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ কর।
✅ উত্তর: দাদাভাই নওরোজি এবং আর সি দত্ত অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা ব্রিটিশ শোষণের অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরেন।
📝 ২১। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল লেখো।
✅ উত্তর: জমিদাররা কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করে এবং রাজস্ব আদায়ে কঠোরতা দেখায়। কৃষকেরা জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে এবং উৎপাদন ব্যাহত হয়।
📝 ২২। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় প্রকাশিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের নাম লেখো।
✅ উত্তর: ‘বঙ্গদর্শন’, ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ প্রভৃতি সংবাদপত্র ঔপনিবেশিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
📝 ২৩। স্বদেশি আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?
✅ উত্তর: স্বদেশি আন্দোলন ছিল দেশীয় পণ্যের ব্যবহার এবং বিদেশি পণ্যের বর্জনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই আন্দোলন ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে শুরু হয়।
📝 ২৪। 'স্বরাজ' বলতে কী বোঝায় ?
✅ উত্তর: ‘স্বরাজ’ শব্দের অর্থ হলো ‘নিজস্ব শাসন’। ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনে এটি স্বশাসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
📝 ২৫। বাগিচা শিল্প বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: চা, কফি, রবার ইত্যাদি চাষকে বাগিচা শিল্প বলা হয়। এটি মূলত রপ্তানিনির্ভর ও ব্রিটিশদের মুনাফাভিত্তিক কৃষি ছিল।
📝 ২৬। পণ্ডিতা রমাবাঈ কেন স্মরণীয়?
✅ উত্তর: পণ্ডিতা রমাবাঈ নারী শিক্ষার পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি বিধবা মহিলাদের পুনর্বাসনের জন্য ‘শারদাসদন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
📝 ২৭। নরমপন্থী কাদের বলা হয় ?
✅ উত্তর: যারা ব্রিটিশদের সঙ্গে সমঝোতা করে ধাপে ধাপে স্বরাজ অর্জনের পক্ষে ছিলেন, তাদের নরমপন্থী বলা হয়। তারা প্রার্থনা, আবেদন ও প্রতিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।
📝 ২৮। ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের 'রত্ন' বলা হয় কেন?
✅ উত্তর: ভারত ছিল ব্রিটিশদের জন্য বিশাল লাভজনক উপনিবেশ। এখান থেকে তারা বিপুল সম্পদ, কাঁচামাল ও বাজার লাভ করত, তাই একে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন’ বলা হয়।
📝 ২৯। পণ্ডিতা রমাবাঈ বিখ্যাত কেন?
✅ উত্তর: পণ্ডিতা রমাবাঈ নারী শিক্ষার অগ্রদূত ও সমাজসংস্কারক ছিলেন। তিনি বিধবাদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনের জন্য আজীবন কাজ করেন।
✅ উত্তর: সম্পদের বহির্গমন বলতে ভারত থেকে ব্রিটিশদের নিজ দেশে সম্পদ ও মুনাফা স্থানান্তর করাকে বোঝায়। এটি দাদাভাই নওরোজির ‘ড্রেন থিয়োরি’ নামে পরিচিত।
📝 ৩১। কে, কবে বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন? কবে এটি বাস্তবায়িত হয় ?
✅ উত্তর: লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ২০ জুলাই বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এটি ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।
✍️সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৩):
📝 ১। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বোঝো?
✅ উত্তর: কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে খাদ্য উৎপাদনের পরিবর্তে নগদ অর্থ লাভের জন্য পণ্য ফসল চাষকে বোঝায়। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় কৃষকদের indigo, চা, কফি, আফিম প্রভৃতি চাষে বাধ্য করা হত। এর ফলে কৃষকেরা আত্মনির্ভরতা হারায়। বাজারে দামের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ে।
📝 ২। আলিগড় আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
✅ উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদের নেতৃত্বে মুসলমান সমাজকে শিক্ষিত ও আধুনিক করে তোলাই ছিল এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। ইংরেজি শিক্ষা, বিজ্ঞান চর্চা ও পাশ্চাত্য ধ্যানধারণার প্রবর্তন এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এটি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণি গঠনে সহায়ক ছিল। পাশাপাশি এই আন্দোলন রাজনৈতিকে মুসলমানদের আলাদা পরিচয় তৈরি করে দেয়।
📝 ৩। টীকা লেখো : ইলবার্ট বিল বিতর্ক।
✅ উত্তর: ১৮৮৩ সালে আইন মন্ত্রী স্যার ইলবার্ট একটি বিল প্রস্তাব করেন, যাতে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার দেওয়া হয়। ইউরোপীয়রা এর তীব্র বিরোধিতা করে এবং বর্ণগত বৈষম্যের প্রকাশ ঘটে। বিলটি পরবর্তীতে সংশোধিত হয় এবং ভারতীয়দের অধিকার খর্ব হয়। এই বিতর্ক ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে উসকে দেয়।
📝 ৪। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমালোচনা লেখো।
✅ উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে কৃষক শোষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, জমিদাররা চিরকালীন মালিকানা পেয়ে অলস ও শোষক হয়ে ওঠে। কৃষকরা জমির উন্নয়নের কোনও উৎসাহ পায় না। এই ব্যবস্থায় কৃষকের দারিদ্র্য চরমে পৌঁছে যায়। তাই তিনি একে ‘একটি অবিচারমূলক ব্যবস্থা’ বলে সমালোচনা করেন।
📝 ৫। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
✅ উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্ত্রীশিক্ষাকে সমাজোন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হিসেবে মনে করতেন। তিনি বহু বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। অনেক দরিদ্র ছাত্রীকে তিনি নিজ খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেন। সমাজের প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও তিনি নারীশিক্ষা প্রচারে অটল ছিলেন। তার কর্মফলে বাংলায় নারীশিক্ষার নতুন দিগন্ত সূচিত হয়।
📝 ৬। স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলায় কীভাবে স্বদেশি শিল্পের বিকাশ হয়েছিল?
✅ উত্তর: স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের বয়কট করা হয়। ফলে দেশীয় শিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বাংলায় চরকায় সুতা কাটা, দেশি কাগজ, সাবান, মোমবাতি প্রভৃতি উৎপাদন শুরু হয়। শিক্ষিত যুবক ও নারী-পুরুষ দেশি শিল্পে যুক্ত হন। এইভাবে স্বদেশি শিল্প আত্মনির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
📝 ৭। ঊনবিংশ শতকে সমাজসংস্কারে রামমোহন রায়ের ভূমিকা কী ছিল?
✅ উত্তর: রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ভারতীয় সমাজসংস্কারের অগ্রদূত। তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্ত্রীশিক্ষা, বিধবা বিবাহ, এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। তিনি ব্রাহ্ম সমাজ গঠন করে ধর্মে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের প্রচলন করেন। তাঁর সংস্কারমূলক কাজ আধুনিক ভারতের ভিত্তি নির্মাণে সহায়ক হয়।
📝 ৮। বঙ্গভঙ্গের পশ্চাতে লর্ড কার্জনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
✅ উত্তর: বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে লর্ড কার্জন বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন এটি প্রশাসনিক সুবিধার জন্য করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল “Divide and Rule” নীতির বাস্তবায়ন। বঙ্গভঙ্গের ফলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরও তীব্র হয়। জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে।
📝 ৯। মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ লেখো।
✅ উত্তর: মহাবিদ্রোহের অন্যতম প্রত্যক্ষ কারণ ছিল এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ। এতে গরু ও শূকরের চর্বি ব্যবহারের গুজবে ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়। সিপাহিরা এ কারণে অসন্তোষে ফেটে পড়ে। ১৮৫৭ সালে মঙ্গল পাণ্ডে প্রথম বিদ্রোহ শুরু করেন। এরপর এটি সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
📝 ১০। ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে লেখো।
✅ উত্তর: ফরাজি আন্দোলন ছিল একটি ইসলামিক সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। এটি শুরু করেন হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং পরে তাঁর পুত্র দুদু মিয়া। তাঁরা মুসলমানদের শরিয়ত অনুযায়ী জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করেন। জমিদার ও ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেন। কৃষক সমাজে এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল বিস্তর।
📝 ১১। নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে কী পার্থক্য ছিল তা লেখ।
✅ উত্তর: নরমপন্থীরা ধাপে ধাপে স্বরাজ চাইতেন এবং ব্রিটিশদের প্রতি নমনীয় ছিলেন। তারা প্রার্থনা, আবেদন ও যুক্তির মাধ্যমে স্বাধিকার দাবি করতেন। চরমপন্থীরা আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করতে চাইতেন। তাঁরা বয়কট, প্রতিবাদ, স্বদেশি ও আত্মত্যাগে বিশ্বাস করতেন। তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল ও অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন চরমপন্থী।
📝 ১২। নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ করো।
✅ উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন নারীশিক্ষা প্রসারের অগ্রদূত। তিনি প্রথম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজের বাধা অগ্রাহ্য করে বহু মেয়েকে পড়াশোনার সুযোগ দেন। তিনি নারীশিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে সমাজকে বারবার সচেতন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা নারী শিক্ষায় নতুন যুগে প্রবেশ করে।
📝 ১৩। 'দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা' কেন হয়েছিল?
✅ উত্তর: 'দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা' হয়েছিল ব্রাহ্মণদের আধিপত্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে অ-ব্রাহ্মণদের মধ্যে অসন্তোষ জন্মে। অ-ব্রাহ্মণ লীগ গঠিত হয় ১৯১৬ সালে। এর ফলে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভক্তি স্পষ্ট হয়। এই ঘটনাকে ‘দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা’ নামে অভিহিত করা হয়।
📝 ১৪। ভারতে রেলপথ নির্মাণের উদ্দেশ্য কী ছিল?
✅ উত্তর: ব্রিটিশরা রেলপথ নির্মাণ করে তাদের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। কাঁচামাল পরিবহন ও বিদেশে রপ্তানি সহজ হয়। সেনাবাহিনী দ্রুত চলাচল করতে পারত। রেলপথ ভারতের জন্য নয়, বরং ব্রিটিশ স্বার্থে নির্মিত হয়। এটি উপনিবেশিক শোষণের বড় মাধ্যম ছিল।
📝 ১৫। মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো? রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কারা প্রবর্তন করেন?
✅ উত্তর: মহলওয়ারি বন্দোবস্ত ছিল একটি রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি যেখানে একটি গোটা গ্রাম বা মহলকে কর প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হত। এই বন্দোবস্ত মূলত উত্তর ভারতে চালু হয়। অপরদিকে, রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে কৃষক নিজেই জমির মালিক ছিল ও সরাসরি সরকারের কাছে কর দিত। রায়তওয়ারি পদ্ধতি চালু করেন টমাস মনরো ও রিড। এটি দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত ছিল।
📝 ১৬। নব্যবঙ্গ কাদের বলা হয়? তারা কোন্ কোন্ প্রথার বিরোধিতা করেছিল?
✅ উত্তর: ডিরোজিওর ছাত্রদের ‘নব্যবঙ্গ’ বলা হয়। তাঁরা যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানবতাবাদে বিশ্বাস করতেন। তাঁরা কুলীন বহুবিবাহ, সতীদাহ, বর্ণবিভেদ প্রথার বিরোধিতা করেন। নব্যবঙ্গ যুবসমাজে নবজাগরণ আনে। তারা পশ্চিমি শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে নতুন চিন্তার সৃষ্টি করে।
📝 ১৭। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
✅ উত্তর: ১৯০৭ সালের কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে দলের মধ্যে বিভাজন ঘটে। নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে মতপার্থক্য তীব্র হয়ে ওঠে। লোকমান্য তিলক ও গোপাল কৃষ্ণ গোখলে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলস্বরূপ, তিলককে অধিবেশন থেকে বহিষ্কৃত করা হয়। এই বিভাজনের ফলে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ে।
📝 ১৮। কিংসফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
✅ উত্তর: কিংসফোর্ড ছিলেন মুখ্য ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি বিপ্লবীদের উপর কঠোর দণ্ড দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে বীনায় বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রফুল্লচন্দ্র চাকি তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা মুজাফফরপুরে বোমা নিক্ষেপ করেন, কিন্তু ভুলবশত অন্য দুজন নিহত হন। প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেন এবং বীনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনা বিপ্লবী আন্দোলনে নতুন উদ্দীপনা আনে।
📝 ১৯। ভারতের সমাজ ও শিক্ষাসংস্কার আন্দোলনে বীরেশলিঙ্গম পাণ্ডুলুর অবদান লেখো।
✅ উত্তর: বীরেশলিঙ্গম পাণ্ডুলু ছিলেন দক্ষিণ ভারতের একজন বিশিষ্ট সমাজসংস্কারক। তিনি বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্য সংগ্রাম করেন। স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অনেক স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেন। তাঁর কাজ দক্ষিণ ভারতে সমাজের অন্ধ বিশ্বাস দূর করতে সাহায্য করে।
📝 ২০। সম্পদের বহির্গমন কাকে বলে ?
✅ উত্তর: ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারত থেকে ইউরোপে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ স্থানান্তরিত হয়, তাকে সম্পদের বহির্গমন বলা হয়। এটি ছিল উপনিবেশিক শোষণের অন্যতম রূপ। কর, লভ্যাংশ, বাণিজ্য ঘাটতি এবং প্রশাসনিক খরচের মাধ্যমে এই সম্পদ ইউরোপে যায়। দাদাভাই নওরোজি এই তত্ত্বটি প্রথম উপস্থাপন করেন। তিনি একে "Unrequited Drain" বা একমুখী শোষণ বলেছেন।
📝 ২১। কে, কবে বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন? কবে এটি বাস্তবায়িত হয় ?
✅ উত্তর: লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই বাংলা বিভাজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই বিভাজনের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন ঘটানো। ১৬ অক্টোবর ১৯০৫ সালে এই বিভাজন কার্যকর হয়। এর ফলে বাংলায় প্রবল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। পরে ১৯১১ সালে এই বিভাজন বাতিল করা হয়।
<<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>>