✍️রচনাধর্মী প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৫):
১.পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের একটি চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন করো।
উত্তর:
২. গুরুমণ্ডলের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: গুরুমণ্ডল হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ একটি স্তর, যা ভূত্বক ও কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যে অবস্থিত। এটি প্রায় ২,৯০০ কিমি পুরু।
বৈশিষ্ট্য:
- গলিত ও আধা-গলিত ধাতব পদার্থ (মূলত লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম) নিয়ে গঠিত।
- তাপমাত্রা ১,০০০°C থেকে ৩,৭০০°C পর্যন্ত।
- চাপের মাত্রা অত্যন্ত বেশি।
শ্রেণিবিভাগ:
১) উপরের গুরুমণ্ডল (৬৭০ কিমি পর্যন্ত) - তুলনামূলকভাবে কম ঘনত্ব।
২) নিচের গুরুমণ্ডল (৬৭০ কিমি থেকে ২,৯০০ কিমি) - অধিক ঘনত্ব ও শক্তিশালী।
৩. শিলার রূপান্তরের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: শিলার রূপান্তর ঘটে তাপমাত্রা, চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে।
- তাপমাত্রা: ভূগর্ভের গভীরে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শিলা নরম হয়ে যায় ও গঠন পরিবর্তিত হয়।
- চাপ: ভূ-স্তরের নিচে চাপ বৃদ্ধি পেলে শিলার খনিজ কণাগুলি সংকুচিত হয়ে রূপান্তরিত হয়।
- রাসায়নিক বিক্রিয়া: জলীয় বাষ্প বা গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে শিলা নতুন খনিজ গঠনে পরিবর্তিত হয়।
- প্লেট টেকটনিক গতি: প্লেটের সংঘর্ষ ও নিমজ্জনের ফলে শিলার কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে।
৪. আগ্নেয় শিলা কাকে বলে? উৎপত্তি অনুযায়ী আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর:
আগ্নেয় শিলা:
ভূত্বকের গভীরে গলিত ও উত্তপ্ত পদার্থ ম্যাগমা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে শিলা তৈরি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। ম্যাগমা যদি ভূত্বকের উপরে এসে জমাট বাঁধে, তবে তাকে লাভা বলে। পৃথিবীর মোট শিলার প্রায় ৯৫% আগ্নেয় শিলা।
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ:
প্রথমত, নিঃসারী আগ্নেয় শিলা: ভূ-পৃষ্ঠের ওপর লাভা বের হয়ে দ্রুত শীতল ও কঠিন হয়ে তৈরি হয়। উদাহরণ: ব্যাসল্ট।
দ্বিতীয়ত, উদবেধী আগ্নেয় শিলা: ভূ-গর্ভে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে কঠিন হয়। উদাহরণ: গ্রানাইট।উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা আবার দুটি ভাগে বিভক্ত: পাতালিক শিলা (যেমন: গ্রানাইট) এবং উপপাতালিক শিলা (যেমন: ডোলেরাইট, পরফাইরি)।
৫. শিলাচক্র বলতে কী বোঝো?
উত্তর:
শিলাচক্র:
শিলাচক্র হলো পৃথিবীর ভূত্বকের শিলাগুলির ধারাবাহিক রূপান্তর প্রক্রিয়া, যেখানে শিলাগুলি এক ধরনের থেকে অন্য ধরনের শিলায় পরিণত হয়। এটি একটি চক্রাকার প্রক্রিয়া যা চলমান এবং কখনো শেষ হয় না।
শিলাচক্রের ধাপগুলি:
আগ্নেয় শিলা: ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বা ভূত্বকের উপরে লাভা থেকে তৈরি হয়।
অবসাদী শিলা: আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবসাদ জমে সঙ্কুচিত ও কঠিন হয়ে তৈরি হয়।
রূপান্তরিত শিলা: আগ্নেয় বা অবসাদী শিলা চাপে ও তাপমাত্রার পরিবর্তনে গঠিত হয়।
শিলাচক্রের উদাহরণ:
গ্রানাইট (আগ্নেয় শিলা) → অবক্ষয় → বালুকণা (অবসাদী শিলা) → চাপ ও তাপমাত্রার প্রভাবে কোয়ার্টজাইট (রূপান্তরিত শিলা)।
শিলাচক্রের মাধ্যমে শিলার প্রকারভেদ একে অপরের মধ্যে রূপান্তরিত হয় এবং পৃথিবীর ভূত্বক চিরকাল পরিবর্তিত হতে থাকে।
৬. রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: রূপান্তরিত শিলা এমন শিলা যা তাপ, চাপ এবং রাসায়নিক ক্রিয়ার প্রভাবে পূর্বের আগ্নেয় বা অবসাদী শিলা থেকে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়।
বৈশিষ্ট্যগুলি:
প্রথমত, রূপান্তরিত শিলার ঘনত্ব সাধারণত বেশি হয় কারণ তাপ ও চাপে শিলার কণাগুলি সঙ্কুচিত ও সজ্জিত হয়।
দ্বিতীয়ত, এই শিলাগুলি সাধারণত কঠিন ও শক্ত হয়।
তৃতীয়ত, অনেক রূপান্তরিত শিলায় স্তর বিন্যাস দেখা যায়।
চতুর্থত, এতে নতুন খনিজের গঠন হতে পারে।
পঞ্চমত, রূপান্তরিত শিলাগুলি ক্রিস্টালাইন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
ষষ্ঠত, সাধারণত এই শিলাগুলির মধ্যে ফসিল পাওয়া যায় না।
উদাহরণ: মার্বেল (চুনাপাথর থেকে), কোয়ার্টজাইট (বেলেপাথর থেকে)।
৭. পাললিক শিলার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো এবং চারটি পাললিক শিলার উদাহরণ দাও।
উত্তর: পাললিক শিলার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি:
প্রথমত, পাললিক শিলা স্তরে স্তরে গঠিত হয় যা পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত, এই শিলাগুলি সাধারণত নরম এবং কম ঘনত্বের হয়।
তৃতীয়ত, পাললিক শিলায় জল ও বায়ুর সংস্পর্শের কারণে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ জমা হয়।
চতুর্থত, ফসিল বা জীবাশ্ম এই শিলায় পাওয়া যায়।
পঞ্চমত, পাললিক শিলার রঙ সাধারণত হালকা থেকে গাঢ় হয়।
উদাহরণ: বেলেপাথর, কংগ্লোমারেট, চুনাপাথর, শেল।
৮.পাললিক শিলার তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো। জীবাশ্ম কাকে বলে ?
উত্তর: প্রথমত, পাললিক শিলা স্তরে স্তরে গঠিত হয়।
দ্বিতীয়ত, এগুলি সাধারণত নরম ও কম ঘনত্বের হয়।
তৃতীয়ত, এই শিলায় প্রায়শই জীবাশ্ম পাওয়া যায়।
জীবাশ্ম: প্রাচীন প্রাণী ও উদ্ভিদের অবশেষ বা ছাপ যা পাললিক শিলায় সংরক্ষিত থাকে, তাকে জীবাশ্ম বলে।
৯.শিলাচক্র কাকে বলে? যে-কোনো তিনটি পাললিক শিলার নাম ও তাদের রূপান্তরিত শিলার নাম লেখো।
উত্তর: শিলাচক্র: শিলাচক্র হল শিলাগুলির এক অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, যেখানে এক প্রকারের শিলা ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অন্য প্রকারের শিলায় রূপান্তরিত হয়।
তিনটি পাললিক শিলা ও তাদের রূপান্তরিত শিলা:
প্রথমত, চুনাপাথর → স্ফটিক
দ্বিতীয়ত, শেল → স্লেট
তৃতীয়ত, বেলেপাথর → কোয়ার্টজাইট
১০. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয়শিলার শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর:
আগ্নেয় শিলা তাদের উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে প্রধানত দুইভাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়:
উৎপত্তি অনুসারে:
প্রথমত, নিঃসারী আগ্নেয় শিলা: ভূ-পৃষ্ঠের ওপর লাভা বের হয়ে দ্রুত শীতল ও কঠিন হয়ে তৈরি হয়। উদাহরণ: ব্যাসল্ট।
দ্বিতীয়ত, উদবেধী আগ্নেয় শিলা: ভূ-গর্ভে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে কঠিন হয়। উদাহরণ: গ্রানাইট।উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা আবার দুটি ভাগে বিভক্ত:
প্রথমত, পাতালিক শিলা: ভূ-পৃষ্ঠের অনেকটা নিচে ধীরে ধীরে শীতল হয়ে গঠিত হয়। উদাহরণ: গ্রানাইট।
দ্বিতীয়ত, উপপাতালিক শিলা: ভূ-ত্বকের নীচে দ্রুত শীতল হয়ে গঠিত হয়। উদাহরণ: ডোলেরাইট।
গঠন অনুসারে:
প্রথমত, লাভা শিলা: লাভা শীতল হয়ে কঠিন হওয়ার ফলে তৈরি হয়। উদাহরণ: ব্যাসল্ট।
দ্বিতীয়ত, পাইরোক্লাস্টিক শিলা: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় নির্গত ছোট ছোট শিলাখণ্ড দিয়ে তৈরি হয়। উদাহরণ: টাফ।
১১.অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার কী? এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার পৃথিবীর অভ্যন্তরের একটি স্তর, যা লিথোস্ফিয়ারের ঠিক নিচে অবস্থিত। এটি প্রধানত উষ্ণ এবং আংশিক গলিত শিলার সমন্বয়ে গঠিত, যা প্লাস্টিকের মতো আচরণ করে এবং খুব ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়।বৈশিষ্ট্য:
-
এটি প্রায় ১০০ কিমি থেকে ৩৫০ কিমি গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।
-
উচ্চ তাপমাত্রার কারণে শিলা আংশিক গলিত অবস্থায় থাকে।
-
এতে কনভেকশন প্রবাহ সৃষ্টি হয়, যা ভূ-গঠনতাত্ত্বিক কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
এটি নমনীয় এবং প্লাস্টিকের মতো আচরণ করে, যা টেকটোনিক প্লেটগুলোর চলাচলে সহায়তা করে।
গুরুত্ব:
-
টেকটোনিক প্লেটগুলোর চলাচল: লিথোস্ফিয়ার এই স্তরের উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে এবং এর চলাচলের ফলে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও মহাদেশীয় সঞ্চালন ঘটে।
-
ভূ-গঠনতাত্ত্বিক পরিবর্তন: পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তি পৃষ্ঠের দিকে পৌঁছানোর জন্য অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের কনভেকশন প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
ভূত্বকের বিকৃতি: ভূত্বকের বিভিন্ন পরিবর্তন, যেমন পর্বত গঠন ও ভূমির উত্থান-পতন, এই স্তরের গতিশীলতার কারণে ঘটে।
অতএব, অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ও ভূ-প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>>>