✍️সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-২):
১. 'দ্য স্পিরিট অব লজ' গ্রন্থে কী বলা হয়েছে ?
উত্তর: 'দ্য স্পিরিট অব লজ' গ্রন্থে মন্টেস্কিউ আইন বিভাগের কার্যপ্রণালী ও নীতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি আইন ব্যবস্থার তিনটি শাখা - আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ, এবং আইন বিচার - আলাদা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
২. ধর্মমীমাংসা চুক্তিতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: ধর্মমীমাংসা চুক্তি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ও পোপের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এতে ফ্রান্সের ক্যাথলিক গির্জার অবস্থান ও স্বাধীনতা পুনঃস্থাপন করা হয় এবং রাষ্ট্রের সাথে গির্জার সম্পর্ক পুনর্গঠিত হয়।
৩. স্পেনীয় ক্ষত কী ?
উত্তর: স্পেনীয় ক্ষত বলতে ইংল্যান্ডের সাথে স্পেনের বাণিজ্যিক ও সামরিক বিরোধকে বোঝায়। এটি বিশেষ করে আমেরিকায় স্পেনের বাণিজ্যের উপর ইংল্যান্ডের হস্তক্ষেপের ফলে সৃষ্ট সমস্যাকে নির্দেশ করে।
৪. লিজিয়ন অব অনার কী ?
উত্তর: লিজিয়ন অব অনার ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক ও সামরিক পুরস্কার, যা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ব্যক্তিদের অসামান্য সেবা ও কৃতিত্বের জন্য প্রদান করা হয়।
৫. ফিজিওক্র্যাট গোষ্ঠীর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর: ফিজিওক্র্যাট গোষ্ঠীর মূল বক্তব্য ছিল যে কৃষিই হল প্রকৃত সম্পদের উৎস এবং কৃষিক্ষেত্রের উন্নতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি সম্ভব। তারা অর্থনীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করত।
৬. রাজা ষোড়শ লুই কেন স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন ?
উত্তর: রাজা ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন রাজকোষের সংকট মেটানোর জন্য। তিনি নতুন কর আরোপের উদ্দেশ্যে এই অধিবেশন ডেকেছিলেন।
৭. ফরাসি বিপ্লবে নারীসমাজ কী কী দাবি করেছিল ?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবে নারীসমাজ ভোটাধিকার, শিক্ষার অধিকার, সরকারি চাকরির সুযোগ ও আইনের সামনে সমান অধিকার দাবি করেছিল।
৮. নেপোলিয়ন কোন্ কোন্ রাজ্যাংশ নিয়ে ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য গঠন করেন ?
উত্তর: নেপোলিয়ন পশ্চিম জার্মানির বিভিন্ন ছোট ছোট রাজ্যাংশ নিয়ে ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য গঠন করেন। এটি ছিল নেপোলিয়নের অধীনস্ত একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র।
৯. কী কারণে নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়?
উত্তর: ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ষষ্ঠ জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কারণে নেপোলিয়নকে এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়।
১০. ফ্রান্সের বাইরে ইউরোপের কোন্ কোন্ দেশে জুলাই বিপ্লবের প্রভাব পড়ে?
উত্তর: জুলাই বিপ্লবের প্রভাব ফ্রান্সের বাইরে বেলজিয়াম, পোল্যান্ড ও ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ে।
১১. ‘অভ্রান্ত কর্তৃত্ববাদ’ বা ‘ঐশ্বরিক রাজতন্ত্র’ কী ?
উত্তর: ‘অভ্রান্ত কর্তৃত্ববাদ’ বা ‘ঐশ্বরিক রাজতন্ত্র’ হলো এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করা হয়। এই মতবাদ অনুযায়ী, রাজাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে এবং তার নির্দেশ অমান্য করা পাপের সমান।
১২. ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ (1789 খ্রিস্টাব্দে) কী ?
উত্তর: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের সময় সাধারণ জনগণের প্রতিনিধি সভা, স্টেটস জেনারেল থেকে বেরিয়ে এসে টেনিস কোর্টে শপথ গ্রহণ করে যে তারা একটি নতুন সংবিধান রচনা না করা পর্যন্ত ছাড়বে না। এটি ফরাসি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
১৩. ‘কোড নেপোলিয়ন’ কী ?
উত্তর: ‘কোড নেপোলিয়ন’ হলো নেপোলিয়নের তৈরি করা আইন সংহিতা, যা ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত হয়। এতে সম্পত্তির অধিকার, নাগরিক সমানাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
১৪. নেপোলিয়নের জনহিতকর কার্যাবলিগুলির উল্লেখ করো।
উত্তর: নেপোলিয়নের জনহিতকর কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে:
প্রথমত, আইনসংহিতা (কোড নেপোলিয়ন) প্রবর্তন।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার।
তৃতীয়ত, আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রবর্তন।
চতুর্থত, ধর্মমীমাংসা চুক্তির মাধ্যমে গির্জা ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন।
১৫. নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রাশিয়া কর্তৃক গৃহীত ‘পোড়ামাটির নীতি’ টি কী ?
উত্তর: নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে রাশিয়া ‘পোড়ামাটির নীতি’ গ্রহণ করেছিল, যার অর্থ হলো রুশ সেনারা পশ্চাদপসরণের সময় তাদের অঞ্চলগুলিতে সমস্ত খাদ্য, সম্পদ ও ভবন ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলে নেপোলিয়নের সৈন্যরা খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
১৬. ‘টেনিস কোর্টের শপথ'-এর তাৎপর্য কী?
উত্তর: ‘টেনিস কোর্টের শপথ’ ফরাসি বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেখানে তৃতীয় স্তরের প্রতিনিধিরা নতুন সংবিধান রচনা না করা পর্যন্ত অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়। এটি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রতীক।
১৭. ফরাসি বিপ্লবে ফিজিওক্র্যাটস তত্ত্বের ভূমিকা কী ?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবে ফিজিওক্র্যাটস তত্ত্ব ভূমিকা রেখেছিল অর্থনৈতিক মুক্তির ধারণা প্রচারের মাধ্যমে। তারা কৃষিকে প্রকৃত সম্পদের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং শাসকশ্রেণির ওপর চাপানো কর ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিল।
১৮. উপদ্বীপের যুদ্ধে নেপোলিয়ন জড়িয়ে পড়েছিলেন কেন?
উত্তর: নেপোলিয়ন উপদ্বীপের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন স্পেন ও পর্তুগালে ব্রিটেনের প্রভাব খর্ব করার জন্য। এটি নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ নীতির অংশ ছিল।
১৯. লিপজিগের যুদ্ধ তাৎপর্যপূর্ণ কেন?
উত্তর: লিপজিগের যুদ্ধ (১৮১৩) ছিল নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ জোটের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ। এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় ঘটে এবং তার ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা হয়।
২০. ভিয়েনা কংগ্রেস কেন প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েছিল ?
উত্তর: ভিয়েনা কংগ্রেস প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েছিল কারণ এটি পুরনো রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। এটি ফরাসি বিপ্লব ও নেপোলিয়নের সময়ের উদারনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী ধারণাগুলিকে দমন করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।
২১. ক্রিমিয়ার যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
উত্তর: ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৩-১৮৫৬) রাশিয়া এবং অটোমান সাম্রাজ্য, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও সার্ডিনিয়ার মধ্যে হয়েছিল। এটি মূলত রাশিয়ার দক্ষিণ দিকে প্রভাব বিস্তার এবং ধর্মীয় অধিকার নিয়ে সংঘটিত হয়।
২২. ‘Fories of change' বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘Fories of change’ বলতে বোঝানো হয় হঠাৎ করে সংঘটিত বিপ্লব, পরিবর্তন বা সংস্কার, যা প্রচলিত ব্যবস্থা বা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। এটি সাধারণত রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
২৩. রোবসপিয়র কে ছিলেন?
উত্তর: রোবসপিয়র ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং জ্যাকোবিন দলের প্রধান। তিনি সন্ত্রাসের রাজত্বের সময় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে বিপ্লবীদের শত্রুদের নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালান।
২৪. সন্ত্রাসের রাজত্ব বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সন্ত্রাসের রাজত্ব (১৭৯৩-১৭৯৪) ছিল ফরাসি বিপ্লবের এক পর্যায় যখন রোবসপিয়রের নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার সন্দেহভাজন রাজতন্ত্রী ও বিপ্লব-বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
২৫. ভিয়েনা সম্মেলনের মূল চালিকা শক্তি কারা ছিল?
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল ব্রিটেন, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও প্রুশিয়া। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নেপোলিয়নের পরাজয়ের পর ইউরোপে স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করা।
২৬. মার্কেনটাইলবাদ কী?
উত্তর: মার্কেনটাইলবাদ হলো এমন একটি অর্থনৈতিক নীতি যেখানে রাষ্ট্রের সমৃদ্ধিকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মজুদ বৃদ্ধির মাধ্যমে মাপা হয়। এটি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি হ্রাস করার মাধ্যমে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত অর্জনের উপর জোর দেয়।
২৭. প্যারি কমিউন কী ?
উত্তর: প্যারি কমিউন ছিল ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সংঘটিত এক বিপ্লবী সরকার যা মাত্র দুই মাস ধরে টিকেছিল। এটি শ্রমিকদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ছিল।
২৮. ভিয়েনা সম্মেলনের গৃহীত নীতিগুলি কী ছিল?
উত্তর: ভিয়েনা সম্মেলনের গৃহীত নীতিগুলি ছিল –
প্রথমত, ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা।
দ্বিতীয়ত, পুরনো রাজবংশগুলিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
তৃতীয়ত, জাতীয়তাবাদ ও উদারনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
চতুর্থত, ইউরোপের মানচিত্র পুনর্গঠন করা।
পঞ্চমত, যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইউরোপে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।
২৯. কারা, কাদেরকে অর্থলোলুপ নেকড়ে বলত ?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের সময় সাধারণ জনগণ কর আদায়কারী ও শাসকশ্রেণিকে অর্থলোলুপ নেকড়ে বলত। কারণ তারা সাধারণ জনগণের ওপর অত্যাধিক কর আরোপ করত এবং তাদের সম্পদ লুট করত।
৩০. বুরবোঁ বংশের দুজন রাজার নাম লেখো।
উত্তর: বুরবোঁ বংশের দুজন রাজা হলেন –
প্রথমত, রাজা চতুর্দশ লুই (লুই দ্য গ্রেট)।
দ্বিতীয়ত, রাজা ষোড়শ লুই।
৩১. ফ্রান্সে ‘তৃতীয় সম্প্রদায়’ (Third Estate) কাদের বলা হত ?
উত্তর: ফ্রান্সে ‘তৃতীয় সম্প্রদায়’ বলা হত সাধারণ জনগণকে, যার মধ্যে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরা দেশের প্রায় ৯৮% জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করত।
৩২. নেপোলিয়ন কেন স্পেন দখল করতে উদ্যত হয়েছিলেন ?
উত্তর: নেপোলিয়ন স্পেন দখল করতে উদ্যত হয়েছিলেন ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার উদ্দেশ্যে মহাদেশীয় অবরোধ নীতি কার্যকর করার জন্য। এছাড়াও, স্পেনকে ফ্রান্সের অধীনস্থ রাষ্ট্রে পরিণত করাই তার উদ্দেশ্য ছিল।
৩৩. লিপজিগের যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয় কেন ?
উত্তর: লিপজিগের যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয় কারণ এতে প্রায় সব প্রধান ইউরোপীয় শক্তি – রাশিয়া, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া এবং সুইডেন – নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল।
৩৪. ‘কিংডম অব ওয়েস্টফেলিয়া' কে গঠন করেন এবং এর শাসক কে হন ?
উত্তর: নেপোলিয়ন ‘কিংডম অব ওয়েস্টফেলিয়া’ গঠন করেন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে। এর শাসক হিসেবে তিনি তার ভাই জেরোম বোনাপার্টকে নিযুক্ত করেন।
৩৫. একশত দিবসের রাজত্ব কী ?
উত্তর: একশত দিবসের রাজত্ব বলতে নেপোলিয়নের এলবা দ্বীপ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর (১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে) ফ্রান্সে তার পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ১০০ দিনের শাসনকালকে বোঝানো হয়। এটি ওয়াটারলুর যুদ্ধে তার পরাজয়ের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
৩৬. কোড নেপোলিয়নের দুটি ত্রুটি লেখো।
উত্তর: কোড নেপোলিয়নের দুটি ত্রুটি হলো –
প্রথমত, এটি নারীদের অধিকার উপেক্ষা করেছিল এবং পুরুষদের ওপর সম্পত্তি ও পারিবারিক নিয়ন্ত্রণের বিশেষ অধিকার প্রদান করেছিল।
দ্বিতীয়ত, এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সীমিত করেছিল।
৩৭. ওয়াটারলুর যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
উত্তর: ওয়াটারলুর যুদ্ধ হয়েছিল ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জুন। এই যুদ্ধ নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী এবং ব্রিটেন ও প্রুশিয়ার যৌথ বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।
৩৮. ‘ব্রান্সউইক ঘোষণা' বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘ব্রান্সউইক ঘোষণা’ ছিল ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রুশিয়া ও অস্ট্রিয়ার দ্বারা প্রকাশিত একটি হুমকিমূলক ঘোষণা। এতে বলা হয়েছিল যে, ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই এবং তার পরিবারকে কোনো ক্ষতি করা হলে প্যারিস শহর ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
৩৯. নেপোলিয়নকে কেন ‘বিপ্লবের ধ্বংসকরী' বলা হয়?
উত্তর: নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকরী’ বলা হয় কারণ তিনি ফরাসি বিপ্লবের গণতান্ত্রিক আদর্শকে উপেক্ষা করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও তিনি বিপ্লবের কিছু মূল্যবোধ সংরক্ষণ করেন, তবে সম্রাট হয়ে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
৪০. ‘ধর্মমীমাংসা চুক্তি’ (১৮০১ খ্রি)-এর শর্ত লেখো।
উত্তর: ‘ধর্মমীমাংসা চুক্তি’ (১৮০১ খ্রি) অনুযায়ী –
প্রথমত, ক্যাথলিক চার্চকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।
দ্বিতীয়ত, পোপ সপ্তম পিয়াস এবং নেপোলিয়নের মধ্যে একমত হওয়া হয় যে, পোপ ফরাসি বিশপদের নিয়োগ দেবেন, তবে তাদের বেতন দেবে ফরাসি সরকার।
তৃতীয়ত, বিপ্লবের সময় বাজেয়াপ্ত চার্চ সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা হবে না।
৪১. লিপজিগের যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয় কেন?
উত্তর: লিপজিগের যুদ্ধকে ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ’ বলা হয় কারণ এতে ইউরোপের প্রায় সমস্ত প্রধান শক্তি – রাশিয়া, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া এবং সুইডেন – নেপোলিয়নের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল।
৪২. পোশাকি আভজাত কাদের বলা হত?
উত্তর: ফ্রান্সের বিপ্লবের আগে পোশাকি আভজাত বলা হত জমিদার ও অভিজাত শ্রেণিকে, যারা রাজকীয় অধিকারভোগী ছিল এবং রাজকীয় পদমর্যাদা, সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করত।
৪৩. বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটেছিল কেন?
উত্তর: বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই। এটি ঘটে সাধারণ জনগণের ক্ষোভের কারণে, যারা অত্যাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য দুর্গ আক্রমণ করে।
৪৪. ‘থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া' কী ?
উত্তর: ‘থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া’ বলতে রোবসপিয়রের পতন ও সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসানকে বোঝানো হয়। এটি ঘটে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই (থার্মিডোর মাসের ৯ তারিখে), যখন রোবসপিয়রকে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৪৫. কবে, কার উদ্যোগে জোলভেরাইন গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: জোলভেরাইন গড়ে উঠেছিল ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রুশিয়ার উদ্যোগে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে শুল্ক বাধা দূর করে অর্থনৈতিক একীকরণ ঘটানো।
৪৬. ফরাসি সংবিধান সভার ধর্মীয় সংস্কার লেখো।
উত্তর: ফরাসি সংবিধান সভা ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দ্য ক্লার্জি’ চালু করে। এর মাধ্যমে গির্জার জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হয়, গির্জার কর্মীদের নির্বাচিত করার অধিকার জনগণকে দেওয়া হয় এবং তাদের বেতন সরকার প্রদান করত।
৪৭. থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া বলতে কী বোঝো ?
উত্তর: থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়া বলতে রোবসপিয়রের পতন এবং সন্ত্রাসের রাজত্বের সমাপ্তি বোঝানো হয়। এটি ঘটে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই (থার্মিডোর মাসের ৯ তারিখে), যখন রোবসপিয়রকে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৪৮. ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ বলতে কী বোঝো ?
উত্তর: ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ ছিল রাজকীয় আদেশপত্র, যার মাধ্যমে ফরাসি রাজা কাউকে বিচার ছাড়াই বন্দি করতে পারতেন। এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি চরম হস্তক্ষেপের নিদর্শন ছিল।
৪৯. বাস্তিল দুর্গের পতনের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: বাস্তিল দুর্গের পতন (১৪ই জুলাই, ১৭৮৯) ছিল ফরাসি বিপ্লবের সূচনাপর্ব। এটি রাজতান্ত্রিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় নির্দেশ করে এবং ফরাসি বিপ্লবের মূল প্রতীক হয়ে ওঠে।
৫০. শ্বেত সন্ত্রাস কী ?
উত্তর: শ্বেত সন্ত্রাস বলতে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে থার্মিডোরীয় প্রতিক্রিয়ার পর র্যাডিকাল বিপ্লবীদের উপর রক্ষণশীল ও রাজতান্ত্রিকদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিশোধমূলক অত্যাচার বোঝানো হয়।
৫১. কনফেডারেশন অব দ্য রাইন কী?
উত্তর: কনফেডারেশন অব দ্য রাইন ছিল ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সংযুক্তি, যা ১৬টি জার্মান রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এটি পবিত্র রোম সাম্রাজ্যের অবসানের সূচনা করে।
৫২. গ্র্যান্ড আর্মি কী ?
উত্তর: গ্র্যান্ড আর্মি ছিল নেপোলিয়নের নেতৃত্বাধীন বৃহৎ ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, যা ইউরোপের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি বিশেষত ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া আক্রমণের সময় বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
৫৩. নেপোলিয়ন কীভাবে বিপ্লবকে ধ্বংস করেন ?
উত্তর: নেপোলিয়ন বিপ্লবকে ধ্বংস করেন একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও তিনি আইনের শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমতা বজায় রাখেন, তবে তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত করেন এবং রাজতন্ত্রের ধাঁচে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
✍️সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৪):
১. মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা কী ? কীভাবে তা কার্যকর করা হয় ?
উত্তর: মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা ছিল নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দ্বারা ১৮০৬ সালে জারি করা একটি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটেনের সাথে ইউরোপীয় দেশগুলির সমস্ত বাণিজ্য বন্ধ করে ব্রিটেনকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করা। ইউরোপের বিভিন্ন বন্দর ব্রিটিশ জাহাজের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইউরোপীয় দেশগুলিকে ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য না করার জন্য বাধ্য করা হয়। এই প্রথার মাধ্যমে নেপোলিয়ন ব্রিটেনের শিল্প ও বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে চেয়েছিলেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করা হয়। রাশিয়া অবরোধ মেনে চলতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ১৮১২ সালে রাশিয়া আক্রমণ করেন। তবে, এই প্রথা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি এবং ব্রিটেনের অর্থনীতি অক্ষত থাকে।
২. নেপোলিয়ন কেন রাশিয়া আক্রমণ করেন?
উত্তর: নেপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন কারণ রাশিয়া মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা মানতে অস্বীকার করে। ১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা চালু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপীয় দেশগুলিকে ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য করা। রাশিয়া এই অবরোধ মেনে চলেনি এবং ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে থাকে। নেপোলিয়ন রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এবং অবরোধ প্রথা কার্যকর রাখার জন্য ১৮১২ সালে রাশিয়া আক্রমণ করেন। তিনি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে রাশিয়া অভিযান শুরু করেন। তবে রাশিয়ার কঠিন আবহাওয়া ও খাদ্য সংকটের কারণে নেপোলিয়নের অভিযান ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা নেপোলিয়নের শক্তি ও প্রতাপকে দুর্বল করে দেয়।
৩. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের কর ব্যবস্থার বিবরণ দাও।
উত্তর: বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের কর ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। ফ্রান্সের সমাজ তিনটি এস্টেটে বিভক্ত ছিল— প্রথম এস্টেট (পাদ্রি), দ্বিতীয় এস্টেট (অভিজাতরা), এবং তৃতীয় এস্টেট (সাধারণ জনগণ)। প্রথম ও দ্বিতীয় এস্টেট কর প্রদানে সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি পেত। সমস্ত ধরনের কর তৃতীয় এস্টেটকেই প্রদান করতে হত। করের মধ্যে ছিল টেল (মাথাপিছু কর), গ্যাবেল (লবণের কর), এবং টিথ (পাদ্রিদের জন্য প্রদত্ত কর)। তৃতীয় এস্টেটের জনগণের উপর করের বোঝা অত্যন্ত বেশি ছিল। এই বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে। এই অসন্তোষ ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে।
৪. বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের সামাজিক কাঠামো কেমন ছিল?
উত্তর: বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সের সামাজিক কাঠামো ছিল অত্যন্ত বৈষম্যমূলক এবং ত্রিস্তরীয়। সমাজটি তিনটি এস্টেটে বিভক্ত ছিল— প্রথম এস্টেট (পাদ্রি), দ্বিতীয় এস্টেট (অভিজাতরা), এবং তৃতীয় এস্টেট (সাধারণ জনগণ)। প্রথম ও দ্বিতীয় এস্টেটের সদস্যরা বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করত এবং কর প্রদানে সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি পেত। তৃতীয় এস্টেটের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন অন্তর্ভুক্ত ছিল, যারা সমস্ত ধরনের কর প্রদান করত। তৃতীয় এস্টেটের জনগণ ছিল সংখ্যায় অধিক হলেও তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত সীমিত। এই বৈষম্যমূলক সামাজিক কাঠামো সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে, যা ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।
৫. মানুষ ও নাগরিকদের অধিকারের ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়েছিল ?
উত্তর: মানুষ ও নাগরিকদের অধিকারের ঘোষণাপত্র ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রকাশিত হয়। এতে সকল মানুষের সমানাধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়। আইনগত সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বলা হয় যে, প্রত্যেক নাগরিক আইনের চোখে সমান। ব্যক্তি স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়। শাসকের ক্ষমতা জনমতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করার অধিকারও উল্লেখ করা হয়। নির্যাতন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্ষার অধিকার প্রদান করা হয়। এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপিত হয়। এটি আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬. নেপোলিয়ন কর্তৃক প্রবর্তিত ‘কোড নেপোলিয়ন'-এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: কোড নেপোলিয়ন বা নেপোলিয়নিক কোড ১৮০৪ সালে প্রবর্তিত হয়। এটি ফ্রান্সের আইনবিধি হিসেবে গৃহীত হয়। আইনবিধিটি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ও আইনগত সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা করে। এতে ধর্ম, জন্ম বা সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে বৈষম্যের অবসান ঘটানো হয়। সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ম এবং বাণিজ্যিক ও নাগরিক অধিকার নির্ধারণ করা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই আইন অনুসরণ করা হয়। এটি আধুনিক আইন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে। নেপোলিয়ন কোডের মাধ্যমে আইনের শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালানো হয়।
৭. টীকা লেখো : মেটারনিখ্ ব্যবস্থা।
উত্তর: মেটারনিখ্ ব্যবস্থা ছিল ইউরোপে ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসের পর গৃহীত একটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নীতি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে রাজতান্ত্রিক শাসন পুনঃস্থাপন করা। মেটারনিখ্ ব্যবস্থা বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করার জন্য গৃহীত হয়। এই ব্যবস্থায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ একত্রে কাজ করত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য রাজতন্ত্রকে সমর্থন দেওয়া হতো। এ ব্যবস্থার ফলে ইউরোপে সাময়িকভাবে শান্তি বজায় থাকে। তবে এটি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মেটারনিখ্ ব্যবস্থার পতন ঘটে ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের সময়।
৮. ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ কী ছিল?
উত্তর: ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক অসন্তোষ। রাজা লুই ফিলিপের শাসন ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি উপেক্ষা করেছিল। খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। সরকার বিরোধী সমাবেশ ও জনসভা নিষিদ্ধ করেছিল। এই কারণে জনগণের অসন্তোষ আরও তীব্র হয়। ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনগণ সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে লুই ফিলিপকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
৯. টীকা লেখো : সন্ত্রাসের রাজত্ব (Reign of Terror)।
উত্তর: সন্ত্রাসের রাজত্ব (Reign of Terror) ছিল ফরাসি বিপ্লবের এক অস্থির ও হিংসাত্মক সময়কাল (১৭৯৩-১৭৯৪)। জ্যাকবিনদের নেতৃত্বে রোবেস্পিয়ার এই সময়ে ক্ষমতায় আসেন। বিপ্লববিরোধী ও সন্দেহভাজনদের নির্মমভাবে দমন করা হয়। বিপ্লবকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বহু মানুষকে গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ প্রতিষ্ঠার নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিশ্বাসঘাতকদের নির্মূল করা হয়। এই সময়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ওপর গুরুতর আঘাত আসে। সন্ত্রাসের রাজত্ব রোবেস্পিয়ারের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়।
১০. টীকা লেখো : ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক ঘোষিত ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’।
উত্তর: ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ সালে ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করে। এই ঘোষণাপত্রে সকল মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতার কথা বলা হয়। আইনগত সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বলা হয় যে, সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়। শাসকের ক্ষমতা জনমতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করার অধিকার উল্লেখ করা হয়। এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তি স্থাপন করে। এই ঘোষণাপত্রের আদর্শ পরবর্তী বিপ্লব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে।
১১. টীকা লেখো : নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার।
উত্তর: নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল ফ্রান্সের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ। তিনি একটি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক (Bank of France) প্রতিষ্ঠা করেন। কর ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত করেন। শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশে সমর্থন প্রদান করা হয়। সরকারি ব্যয়ের হিসাব নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নিয়ম চালু করা হয়। অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ফ্রান্সের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা হয়। নেপোলিয়নের অর্থনৈতিক সংস্কার ইউরোপের অন্যান্য দেশেও প্রভাব বিস্তার করে।
১২. স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের বিপর্যয়ের কারণ কী ছিল ?
উত্তর: স্পেনের যুদ্ধে নেপোলিয়নের বিপর্যয়ের কারণ ছিল বিভিন্ন কৌশলগত ও সামরিক ভুল। স্পেনের জনগণ নেপোলিয়নের দখলদারিত্বকে মেনে নিতে চায়নি এবং ব্যাপক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলে। গেরিলা যুদ্ধ কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে স্থানীয় বিদ্রোহীরা ফরাসি বাহিনীকে চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। স্থানীয় জনগণের বিরোধিতা ও ভৌগোলিক অসুবিধাও নেপোলিয়নের বিপর্যয়ের কারণ ছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ডিউক অব ওয়েলিংটনের নেতৃত্বে স্পেনের বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনী দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালাতে সক্ষম ছিল না। যুদ্ধের ফলে ফরাসি সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
১৩. রাশিয়ার অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল ?
উত্তর: রাশিয়ার অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার কারণ ছিল শীতপ্রধান আবহাওয়া ও কৌশলগত ভুল। রাশিয়ার সেনাবাহিনী যুদ্ধ না করে পিছু হটে এবং ‘পোড়ামাটি নীতি’ (Scorched Earth Policy) গ্রহণ করে। খাদ্য ও সরবরাহের অভাবে নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। চরম শীতের কারণে বহু সৈন্যের মৃত্যু ঘটে। স্থানীয় জনগণের সহায়তা না পাওয়া এবং দীর্ঘ যুদ্ধের ক্লান্তি সৈন্যদের মনোবল ভেঙে দেয়। যোগাযোগ ও সরবরাহের অভাবও ব্যর্থতার কারণ ছিল। রাশিয়া থেকে পিছু হটার সময়ও প্রচুর সৈন্য মারা যায়। এই ব্যর্থতা নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের পতনের দিকে নিয়ে যায়।
১৪. ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি সংক্ষেপে মূল্যায়ন করো।
উত্তর: ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ সালে গঠিত হয় এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবিধান সভা কর্তৃক 'ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার'-এর ঘোষণা প্রণয়ন করা হয়। পুরনো সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো হয়। নতুন সংবিধানের মাধ্যমে নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার ব্যবস্থার পৃথকীকরণ করা হয়। শাসনক্ষমতার উৎস হিসেবে জনগণের ক্ষমতা স্বীকৃত হয়। চার্চের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জাতীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভোটাধিকার সীমিত করা হলেও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সংবিধান সভা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৫. মেটারনিতন্ত্রের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: মেটারনিতন্ত্রের উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং রাজতন্ত্র পুনঃস্থাপন করা। ফরাসি বিপ্লব ও নেপোলিয়নের যুদ্ধের পর ইউরোপে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনা এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল। বিপ্লবী আন্দোলন ও উদারপন্থী চিন্তাধারার প্রসার রোধ করা হয়। বিভিন্ন দেশের শাসকদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং যৌথভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপ দমন করার চেষ্টা করা হয়। মেটারনিখ্ এই ব্যবস্থার নেতৃত্ব দেন এবং রাজতান্ত্রিক শাসনের সমর্থনে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে একত্রিত করার উদ্যোগ নেন। ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসের মাধ্যমে মেটারনিতন্ত্র কার্যকর হয়।
১৬. টীকা লেখো : নতুন ফরাসি সংবিধান।
উত্তর: নতুন ফরাসি সংবিধান ১৭৯১ সালে প্রণীত হয়। এটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। রাজা নির্বাহী ক্ষমতা পেলেও তার ক্ষমতা সীমিত ছিল। আইনসভা নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। আইনসভা, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ করা হয়। নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ভোটাধিকার সম্পত্তির ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ ছিল। এই সংবিধান গণতন্ত্রের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
১৭. “ফরাসি বিপ্লব’কে কি বুর্জোয়া বিপ্লব বলা যায়?
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবকে বুর্জোয়া বিপ্লব বলা যায় কারণ এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি নেতৃত্ব দেয়। বিপ্লবের মাধ্যমে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে। বুর্জোয়া শ্রেণির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত হয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। নতুন সংবিধান তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গৃহীত হয়। বিপ্লবের ফলাফল মধ্যবিত্ত শ্রেণির পক্ষে যায়। তাই একে বুর্জোয়া বিপ্লব বলা যুক্তিসঙ্গত।
১৮. ফ্রান্সে সন্ত্রাসের রাজত্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: সন্ত্রাসের রাজত্ব (১৭৯৩-১৭৯৪) ছিল ফরাসি বিপ্লবের রক্তক্ষয়ী সময়। রোবেস্পিয়ারের নেতৃত্বে জ্যাকবিনরা বিপ্লবের শত্রুদের নির্মূলের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়। গিলোটিনের মাধ্যমে বিপ্লববিরোধীদের শাস্তি দেওয়া হতো। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ওপর আঘাত আসে। সন্দেহভাজন কাউকে বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। এই সময়ে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ নিহত হয়। রোবেস্পিয়ারের পতনের মাধ্যমে সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটে। এটি ফরাসি বিপ্লবের অন্ধকারতম অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
১৯. কোড নেপোলিয়ন-এর গুরুত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর: কোড নেপোলিয়ন ১৮০৪ সালে নেপোলিয়নের প্রবর্তিত আইনসংগ্রহ। এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করে। আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান বলে ঘোষণা করা হয়। উত্তরাধিকার, বিবাহবিচ্ছেদ ও চুক্তির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নিয়মাবলি নির্ধারণ করা হয়। সামন্ততান্ত্রিক নিয়মের বিলোপ ঘটে। সমগ্র ফ্রান্সে একক আইনের বিধান কার্যকর হয়। এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও প্রভাব বিস্তার করে। কোড নেপোলিয়ন আধুনিক আইনের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০. ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরবোঁ রাজতন্ত্রের দায়িত্ব লেখো।
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরবোঁ রাজতন্ত্র অনেকাংশে দায়ী। বুরবোঁ রাজারা স্বৈরাচারী শাসন চালাতেন। রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়েছিল, কারণ তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। জনসাধারণের উপর করের বোঝা বৃদ্ধি পায়। রাজতন্ত্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ছিল দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার ছিল না। সামন্ততান্ত্রিক শোষণের কারণে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণি বিপ্লবের পথে অগ্রসর হয়। রাজা ষোড়শ লুই-এর অযোগ্য নেতৃত্বও বিপ্লবের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনগণের দাবি উপেক্ষা করার কারণে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে।
২১. ফরাসি বিপ্লবে নারীদের অবদান লেখো।
উত্তর: ফরাসি বিপ্লবে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। তারা রাস্তায় মিছিল ও বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রতিবাদ করত। নারীরা খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। রাজনৈতিক অধিকার ও সমতার দাবি জানাতে তারা সংগঠন গড়ে তোলে। অলিম্প দ্য গুজ ‘নারী ও নাগরিকদের অধিকার ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন করেন। প্যারিসের বাজারের মহিলারা ভার্সাই অভিমুখে পদযাত্রা করে রাজা ষোড়শ লুইকে বাধ্য করে প্যারিসে ফিরে যেতে। নারীদের সংগ্রামের ফলে শিক্ষার অধিকার ও অন্যান্য অধিকার অর্জনের চেষ্টা হয়। তবে, বিপ্লবের পরও নারীরা রাজনৈতিক সমানাধিকার অর্জন করতে পারেনি।
২২. ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর' বলার কারণগুলি বিবৃত করো।
উত্তর: ফ্রান্সকে ‘ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর’ বলা হয় কারণ সেখানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নানা রকম ভুল ও অব্যবস্থা ছিল। রাজকীয় বিলাসিতা ও যুদ্ধের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল। রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে, যা ঋণগ্রস্ততার কারণ হয়। কর ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অন্যায্য এবং সাধারণ মানুষের উপর বেশি করের বোঝা চাপানো হতো। জমিদার ও ধর্মযাজকরা কর প্রদানে মুক্ত ছিল। বাণিজ্য ও শিল্পের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। কৃষক ও শ্রমিকদের শোষণ করা হতো এবং তাদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্নস্তরে ছিল। অর্থনৈতিক সংকটের সমাধানের কোনো সঠিক নীতি গ্রহণ করা হয়নি।
<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>