🌹বি.এ বাংলা মেজর-৩(পেপার-২)::ভাষাতত্ত্ব:: সেমিস্টার-৩:: সাজেশন(পার্ট-৩)🌹

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-১০:

১. মৌলিক শব্দ কাকে বলে? মৌলিক শব্দ কয় প্রকার ও কি কি? তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উঃ 👉 মৌলিক শব্দ হলো সেই শব্দ, যা অন্য কোনো শব্দ থেকে উদ্ভূত হয় না এবং যার বিভাজন সম্ভব নয়। এই শব্দগুলো ভাষার প্রাথমিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলোর মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করা সম্ভব।

👉মৌলিক শব্দ প্রধানত দুই প্রকার:
প্রথমত, সরল মৌলিক শব্দ – যেসব শব্দ কোনো বিভাজন ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে বিদ্যমান থাকে। যেমন: মাটি, জল, আলো, গাছ, চাঁদ। এ ধরনের শব্দকে ভেঙে আরও ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করা যায় না।
দ্বিতীয়ত, যৌগিক মৌলিক শব্দ – দুটি বা ততোধিক মৌলিক শব্দ একত্রে মিলিত হয়ে নতুন অর্থ গঠন করলে তাকে যৌগিক মৌলিক শব্দ বলে। যেমন: জলপান (জল + পান), পথচারী (পথ + চারী), রক্তচক্ষু (রক্ত + চক্ষু)।

👉সরল মৌলিক শব্দ বাংলা ভাষার মূল ভিত্তি গঠন করে এবং সাধারণত প্রকৃতি, অনুভূতি, বা মৌলিক বস্তুর নাম প্রকাশ করে। যেমন: সূর্য, বাতাস, আগুন, সুখ, দুঃখ।

অন্যদিকে, যৌগিক মৌলিক শব্দ ভাষার ব্যবহারকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে এবং নতুন নতুন অর্থের প্রকাশ ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, ‘অরণ্যচারী’ শব্দটি ‘অরণ্য’ (জঙ্গল) ও ‘চারী’ (ভ্রমণকারী) শব্দের সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে, যার অর্থ ‘যে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়’।

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার গঠনে মৌলিক শব্দের গুরুত্ব অনেক। এদের মাধ্যমেই ভাষা সমৃদ্ধ হয় এবং নতুন শব্দ তৈরি করা সম্ভব হয়। ভাষার শুদ্ধতা রক্ষার জন্য মৌলিক শব্দের যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য।

২. মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।

উঃ মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা (MIA) হল প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা (সংস্কৃত) ও আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার মধ্যবর্তী ধাপ। এটি মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে খ্রিস্টীয় ১০০০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষাগুলি এর অন্তর্ভুক্ত।

ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

প্রথমত, সংস্কৃত ধ্বনির সরলীকরণ – মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় অনেক কঠিন ধ্বনি সরল হয়ে যায়। যেমন, সংস্কৃতের "स्त्य" → প্রাকৃতে "त्त" (অস্ত্য → अत्त)।

দ্বিতীয়ত, সংযুক্ত ব্যঞ্জনের পরিবর্তন – যুক্ত ব্যঞ্জনগুলোর সহজীকরণ ঘটে। যেমন, "कर्म" → "कम्म"।

তৃতীয়ত, দীর্ঘ স্বরধ্বনির হ্রাস – দীর্ঘ স্বরধ্বনি ছোট হয়ে যায়। যেমন, "गो" → "गउ"।

চতুর্থত, নাসিক্য ধ্বনির বৃদ্ধি – কিছু ক্ষেত্রে নাসিক্য ধ্বনি বৃদ্ধি পায়। যেমন, "संध्या" → "सइंधा"।

পঞ্চমত, র' ও ল' ধ্বনির রূপান্তর – সংস্কৃতের "र" ও "ल" ধ্বনি অনেক সময় পরস্পর বিনিময় হয়। যেমন, "राजा" → "लाजा"।

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

প্রথমত, বহুবচনের সরলীকরণ – মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় বহুবচন গঠনের জটিলতা হ্রাস পায়। যেমন, "पुत्राः" → "पुत्ता"।

দ্বিতীয়ত, পদান্বিত ক্রিয়ার পরিবর্তন – সংস্কৃতের জটিল ক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে সহজতর হয়। যেমন, "गच्छामि" → "गच्छामि" (পালি) → "गच्छामि" (প্রাকৃত)।

তৃতীয়ত, লিঙ্গের সরলীকরণ – কিছু ভাষায় স্ত্রীলিঙ্গ ও পুংলিঙ্গের পার্থক্য কমে যায়। যেমন, "नारी" → "नाइ"।

চতুর্থত, অব্যয় পদ সহজীকরণ – কিছু অব্যয় পদ পরিবর্তিত হয়ে সহজ রূপ ধারণ করে। যেমন, "अत्र" → "एत्त"।

মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার এই পরিবর্তনগুলোর ফলেই আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলি গঠিত হয়েছে। এর ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলি ভাষার বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. আধুনিক বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।

উঃ আধুনিক বাংলা ভাষা ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং এটি মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বাংলা ভাষার বিকাশের ধারায় বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটেছে, যা একে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।

ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

প্রথমত, সংস্কৃত ধাতুর সরলীকরণ – বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত ধাতু সহজ ও সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। যেমন, "गच्छति" → "যায়", "लभते" → "পায়"।

দ্বিতীয়ত, ধ্বনিগত পরিবর্তন – বাংলা ভাষায় কিছু ধ্বনি পরিবর্তিত হয়েছে, যেমন:

• যুক্ত ব্যঞ্জনের সরলীকরণ: "पुत्र" → "পুত্র" → "পোত্র" → "পোতা"।
• "র" ও "ল"-এর পরিবর্তন: "राजा" → "রাজা", "लोक" → "লোক"।

তৃতীয়ত, নাসিক্য ধ্বনির সংযোজন – কিছু শব্দে নাসিক্য ধ্বনি যুক্ত হয়েছে, যেমন: "अस्मि" → "আমি", "तम" → "তাঁম"।

রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

প্রথমত, পদরূপের সরলীকরণ – আধুনিক বাংলায় সংস্কৃতের কঠিন শব্দরূপগুলো সহজ হয়েছে। যেমন, "नरस्य" → "নরের", "स्त्रियः" → "নারীরা"।

দ্বিতীয়ত, বহুবচনের সহজীকরণ – বহুবচন গঠনে বাংলা ভাষায় "রা", "গুলি", "সমূহ" ব্যবহার করা হয়। যেমন, "মানুষ" → "মানুষেরা", "গাছ" → "গাছগুলি"।

তৃতীয়ত, ক্রিয়ার রূপান্তর – বাংলা ভাষায় ক্রিয়ার রূপ তুলনামূলকভাবে সহজ। যেমন, "কর" → "করে", "খাই" → "খায়"।

চতুর্থত, লিঙ্গ পার্থক্যের অভাব – বাংলায় পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গের পার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম। যেমন, "শিক্ষক" শব্দটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পঞ্চমত, উপসর্গ ও প্রত্যয়ের বিস্তৃত ব্যবহার – বাংলা ভাষায় বহু উপসর্গ ও প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, যেমন: "দেখা" → "দেখানো", "লেখা" → "লেখিকা"।

আধুনিক বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে ভাষাটি আরও সহজ, গতিময় ও বহুল ব্যবহৃত হয়েছে।

৪. বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।

উঃ বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইন্দো-আর্য শাখার অন্তর্ভুক্ত। এর উৎপত্তি খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৫০০ অব্দে সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি প্রচলিত সাধারণ মানুষের ভাষা প্রাকৃত থেকে হয়েছে। পরবর্তীতে, প্রাকৃত থেকে অপভ্রংশ এবং তারপর বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে।

বাংলা ভাষার উদ্ভব:

প্রথমত, ইন্দো-আর্য ভাষার প্রভাব – বাংলা ভাষার মূল ভিত্তি ইন্দো-আর্য ভাষা হলেও এর বিকাশে দ্রাবিড়, অস্ট্রিক, ও চীন-তিব্বতি ভাষার প্রভাব রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, প্রাকৃত থেকে অপভ্রংশ – প্রাকৃত ভাষার একটি শাখা মাগধী প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার সূচনা ঘটে। মাগধী প্রাকৃতের পরিবর্তিত রূপ মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষা গঠিত হয়।

তৃতীয়ত, বাংলা ভাষার আত্মপ্রকাশ – ১০ম থেকে ১২শ শতাব্দীতে বাংলা ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বিকশিত হয়। এই সময় বাংলা ভাষায় ব্যাকরণগত পরিবর্তন ঘটে এবং তা ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশ:

বাংলা ভাষার বিকাশকে তিনটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

১. প্রাচীন বাংলা (৯৫০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ):

• এই সময়ে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ও অপভ্রংশের প্রভাব ছিল প্রবল।
• চর্যাপদ প্রাচীন বাংলার প্রথম সাহিত্য নিদর্শন।
• শব্দ গঠনে অপভ্রংশ ভাষার ধ্বনিগত পরিবর্তন দেখা যায়।

২. মধ্য বাংলা (১৩৫০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ):

• এই সময়ে বাংলা ভাষায় ফারসি ও আরবি শব্দের প্রবেশ ঘটে।
• কৃত্তিবাসী রামায়ণ, মঙ্গলকাব্য এবং বৈষ্ণব পদাবলী মধ্য বাংলার প্রধান সাহিত্যকর্ম।
• ব্যাকরণগতভাবে এ সময় বাংলা ভাষা আরও স্থিতিশীল হয়।

৩. আধুনিক বাংলা (১৮০০-বর্তমান):

• ১৮০০ সালের পর বাংলা ভাষার বানান ও ব্যাকরণ নিয়মতান্ত্রিক হয়।
• ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের বিকাশ ঘটান।
• বাংলা ভাষায় ইউরোপীয় ভাষার প্রভাব পড়ে এবং মুদ্রণযন্ত্রের প্রচলন ভাষাকে সমৃদ্ধ করে।

বর্তমানে বাংলা ভাষা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা এবং এর প্রচলন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। ভাষার ক্রমবিকাশের ফলে বাংলা একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ভাষায় পরিণত হয়েছে।

৫. ধ্বনি আগম কাকে বলে? দৃষ্টান্তসহ ধ্বনি আগম আলোচনা কর।

উঃ ধ্বনি আগম (Phonetic Assimilation) হল একটি ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যেখানে দুটি বা তার অধিক ধ্বনি একত্রিত হওয়ার সময় তাদের উচ্চারণ একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়। এটি সাধারণত শব্দের মধ্যে ধ্বনিগত সংমিশ্রণের ফলস্বরূপ ঘটে। যখন একে অপরের পার্শ্ববর্তী ধ্বনির প্রভাবে ধ্বনির গঠন বা উচ্চারণে পরিবর্তন ঘটে, তখন তাকে ধ্বনি আগম বলা হয়। এটি ভাষার অভ্যন্তরীণ একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া, যা ভাষার শব্দ গঠন ও উচ্চারণকে আরও সহজ এবং মসৃণ করে তোলে। ধ্বনি আগম একে অপরের সঙ্গে মিলিত ধ্বনির মধ্যে সাদৃশ্য তৈরি করে এবং ভাষার অভ্যন্তরীণ গঠনকে শুদ্ধ ও সুগম রাখে।

ধ্বনি আগমের শ্রেণীবিভাগ:

ধ্বনি আগম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

১. স্বরধ্বনি আগম (Vowel Assimilation):
এটি ঘটে যখন দুটি বা তার অধিক স্বরধ্বনি একত্রিত হওয়ার ফলে একটি স্বরধ্বনি অন্য স্বরধ্বনির উচ্চারণের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়।
উদাহরণ:

• ‘অঁ’ শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে ‘অ’ হয়ে যায়।
• ‘এঁরা’ উচ্চারণে ‘এরা’ হয়ে যায়। এখানে প্রথম ধ্বনিটি ‘ঁ’ স্বরধ্বনি দ্বিতীয় ধ্বনি ‘এ’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।

২. ব্যঞ্জনধ্বনি আগম (Consonant Assimilation):
এটি ঘটে যখন একটি ব্যঞ্জনধ্বনি অন্য ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে তার উচ্চারণ পরিবর্তন করে। ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে এমন পরিবর্তন ঘটে যা তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কারণে আরও সঠিক বা সহজ হয়।
উদাহরণ:

• 'অন্তর' (antar) শব্দটির উচ্চারণে ‘ত’ ব্যঞ্জনধ্বনি ‘ন’ ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে 'অন্ত' হয়ে যায়। এখানে ‘ন’ ধ্বনি ‘ত’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
• ‘সম্মান’ (samman) শব্দের উচ্চারণে প্রথম ‘ম’ ধ্বনি দ্বিতীয় ‘ম’ ধ্বনির সাথে মিলিত হয়ে ‘সম্মান’ হয়ে ওঠে।

৩. সংযুক্ত ধ্বনি আগম (Coalescent Assimilation):
এটি ঘটে যখন দুটি ধ্বনি একত্রিত হয়ে একটি নতুন ধ্বনি গঠন করে। এই ধরনের আগমে দুটি ধ্বনি একত্রিত হয়ে এক ধরনের নতুন ধ্বনির সৃষ্টি করে, যা ভাষার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ।
উদাহরণ:

• 'পছন্দ' (pochhondo) শব্দটির উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে ‘পচন্দ’ হয়ে যায়, যেখানে ‘ছ’ ধ্বনি ‘চ’ ধ্বনির সাথে মিলিত হয়ে একটি নতুন ধ্বনির সৃষ্টি করেছে।

৪. সম্বন্ধধ্বনি আগম (Contextual Assimilation):
এটি ঘটে যখন কোনো ধ্বনি তার পার্শ্ববর্তী ধ্বনির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে সে ধ্বনি তার মূল আকার বা রূপ বজায় রাখে না।
উদাহরণ:

• ‘হতাশ’ (hatash) শব্দটির উচ্চারণ পরিবর্তিত হয়ে ‘হতাস’ হয়ে যায়। এখানে ‘শ’ ধ্বনি ‘স’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে এবং শব্দটি পরিবর্তিত হয়েছে।

ধ্বনি আগমের গুরুত্ব:

ধ্বনি আগম ভাষার প্রাকৃতিক গঠন প্রক্রিয়া এবং এটি ভাষার উচ্চারণের ধারাবাহিকতা এবং সুগমতা বজায় রাখে। ধ্বনি আগমের কারণে ভাষায় উচ্চারণ সহজ হয়, যেমন দ্রুত উচ্চারণের জন্য বা শব্দের মাঝে ধ্বনির প্রাকৃতিক পরিবর্তন। এটি ভাষার এক ধরনের গতিশীলতা প্রদর্শন করে, যা ভাষাকে গতিশীল এবং মানুষের কথা বলার সহজ উপায়ে রূপান্তরিত করে।

উপসংহার:

ধ্বনি আগম ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক প্রক্রিয়া যা শব্দের উচ্চারণ এবং ধ্বনির সংমিশ্রণকে সহজতর এবং স্বাভাবিক করে তোলে। ভাষার মধ্যে ধ্বনির পরিবর্তন, যেগুলি ধ্বনিগত মিল বা সাদৃশ্য তৈরি করে, তা ভাষার বিকাশের একটি প্রাকৃতিক অংশ।

৬. ধ্বনি লোপ বলতে কী বোঝায়? দৃষ্টান্ত সহ আলোচনা কর।

উঃ ধ্বনি লোপ (Elision) হল ভাষাবিজ্ঞানের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে শব্দের কোনো একটি বা একাধিক ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাদ পড়ে বা লোপ পায়। এটি সাধারণত ভাষার উচ্চারণের সহজতা বা তরলতা বাড়ানোর জন্য ঘটে, এবং অনেক সময় ভাষার প্রবাহকে ত্বরান্বিত করার জন্য শব্দে কিছু ধ্বনি বাদ যায়। ধ্বনি লোপ উচ্চারণের একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা বিশেষত কথ্য ভাষায় বেশি পরিলক্ষিত হয়।

ধ্বনি লোপের ফলে শব্দের মূল রূপ পরিবর্তিত হয় না, তবে উচ্চারণে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এটি ভাষার ইতিহাসে পরিবর্তন এবং ভাষার শব্দভাণ্ডারের আকারে সংকোচন সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। অনেক সময়, ধ্বনি লোপ একটি সাধারণ বা দ্রুত উচ্চারণের ফলে ঘটে, যেখানে কিছু ধ্বনি সহজে বাদ পড়ে যায়।

ধ্বনি লোপের উদাহরণ:

ধ্বনি লোপের প্রক্রিয়া বাংলা ভাষার কথ্য উচ্চারণে বেশ প্রচলিত। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হল:

১. 'যত' (Joto) শব্দের উদাহরণ:
বাংলা শব্দ ‘যত’ (Joto) সাধারণত কথ্য ভাষায় ‘জত’ (Jot) হিসাবে উচ্চারণ করা হয়, যেখানে ‘অ’ ধ্বনি লোপ পায়। এটি ধ্বনি লোপের একটি স্পষ্ট উদাহরণ, যেখানে শব্দের মধ্যে অতিরিক্ত ধ্বনি বাদ পড়ে।

২. 'কলম' (Kolom) শব্দের উদাহরণ:
বাংলা ভাষায় ‘কলম’ (Kolom) শব্দটি সাধারণত কথ্য ভাষায় ‘কল’ (Kol) হিসাবে উচ্চারিত হয়, যেখানে ‘ম’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় লোপ পায়। এটি একটি প্রচলিত ধ্বনি লোপের উদাহরণ।

৩. 'আমি' (Ami) শব্দের উদাহরণ:
‘আমি’ (Ami) শব্দটি সাধারণত কথ্য ভাষায় ‘আই’ (Ai) হিসেবে উচ্চারিত হয়, যেখানে ‘ম’ ধ্বনি লোপ হয়ে যায়। এটি একটি সাধারিত ধ্বনি লোপের উদাহরণ, যা ভাষার স্বাভাবিক পরিবর্তনের অংশ।

ধ্বনি লোপের কারণ:

ধ্বনি লোপ সাধারণত কিছু কারণে ঘটে:

1. উচ্চারণের সহজতা: কোনো শব্দ দ্রুত বা সহজভাবে উচ্চারণ করতে হলে, অতিরিক্ত ধ্বনির লোপ ঘটে।
2. ভাষার প্রবাহ: কথ্য ভাষায় শব্দের মধ্যে ধ্বনি লোপ ঘটলে ভাষার প্রবাহ অনেক বেশি মসৃণ হয়।
3. প্রাকৃতিক ভাষাগত পরিবর্তন: ভাষার দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে কিছু ধ্বনি লোপ ঘটে, যা ভাষার ঐতিহাসিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যায়।

উপসংহার:

ধ্বনি লোপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া, যা ভাষার উচ্চারণের গতিশীলতাকে সহায়ক করে এবং ভাষার পরিবর্তনের প্রাকৃতিক অংশ। এটি কথ্য ভাষায় ভাষার স্বাভাবিক উন্নয়ন ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।