🌹একাদশ শ্রেণির ইতিহাস ফাইনাল সাজেশন-২০২৫(দ্বিতীয় সেমিস্টার)🌹

 

 

 

✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩:

১। ‘দ্য স্পিরিট অফ লজ’-এর লেখক কে? এই বইয়ের মূল বক্তব্য কী?

উঃ
👉 ‘The Spirit of Laws’ বইটির লেখক হলেন Montesquieu (মন্টেস্কু)।

👉 এই বইটির মূল বক্তব্য হল বিচার, নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতার পৃথকীকরণ, যা ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মন্টেস্কু যুক্তি দেন যে রাষ্ট্রের এই তিনটি ক্ষমতা যদি একক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তাহলে স্বৈরতন্ত্র জন্ম নেবে। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতার বিভাজন (Separation of Powers) অত্যাবশ্যক।

২। ম্যাকিয়াভেলির লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো। তাঁর রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্র ও সরকারের স্বরূপ কীভাবে বর্ণিত হয়েছে?

উঃ
👉 ম্যাকিয়াভেলির লেখা একটি বইয়ের নাম হলো The Prince (দ্য প্রিন্স)।

👉 তাঁর রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্র ও সরকারকে ক্ষমতা অর্জন ও তা রক্ষা করার একটি মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি নৈতিকতা থেকে পৃথক একটি বাস্তববাদী রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করেন, যেখানে শাসকের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষমতা ধরে রাখা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, শাসকের জন্য নৈতিকতার চেয়ে কার্যকারিতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনে চালাক ও কঠোর হওয়া উচিত।

৩। ‘গৌরবময় বিপ্লব’ কী? এটি কবে সংঘটিত হয়েছিল?

উঃ
👉 ‘গৌরবময় বিপ্লব’ (Glorious Revolution) হলো ১৬৮৮ সালে ইংল্যান্ডে সংঘটিত এক রক্তপাতহীন বিপ্লব, যার মাধ্যমে রাজা দ্বিতীয় জেমসকে সিংহাসনচ্যুত করে উইলিয়াম তৃতীয় ও ম্যারি দ্বিতীয়কে ইংল্যান্ডের নতুন শাসক করা হয়।

👉 এটি ১৬৮৮-১৬৮৯ সালে সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবের ফলে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজশক্তির পরিবর্তে সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৪। সপ্তম হেনরি কে ছিলেন? টিউডর স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উঃ
👉 সপ্তম হেনরি ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা (১৪৮৫-১৫০৯) এবং টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বোসওয়ার্থ যুদ্ধের মাধ্যমে রাজা তৃতীয় রিচার্ডকে পরাজিত করে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেন।

👉 টিউডর স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সপ্তম হেনরি। তিনি শাসনকালে রাজশক্তি কেন্দ্রীভূত করেন, সামন্ততন্ত্র দুর্বল করেন এবং অভিজাতদের শক্তি সীমিত করেন, যা ইংল্যান্ডে এক শক্তিশালী রাজতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

৫। দাগ ও হুলিয়া কী? মোগল দরবারের প্রধান তিনটি অভিজাত গোষ্ঠীর নাম লেখো।

উঃ
👉 দাগ: মোগল সাম্রাজ্যে অশ্বারোহী সৈন্য ও ঘোড়ার তালিকা প্রস্তুত করার একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সেনাদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা হতো এবং প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হতো।

👉 হুলিয়া: এটি ছিল সৈন্যদের ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র বা বর্ণনা, যেখানে তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও চিহ্নিত করার অন্যান্য বিবরণ উল্লেখ থাকত, যাতে ভূয়া সৈন্য অন্তর্ভুক্তি প্রতিরোধ করা যায়।

👉 মোগল দরবারের প্রধান তিনটি অভিজাত গোষ্ঠী হল:
১. তুরানি (মধ্য এশিয়ান অভিজাত)
২. ইরানি (পারস্য বংশোদ্ভূত অভিজাত)
৩. হিন্দু রাজপুত (ভারতীয় রাজপুত অভিজাত)

৬। চিনে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা কেন চালু হয়েছিল?

উঃ
👉 চিনে ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল দক্ষ প্রশাসক তৈরি ও রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য। এটি ছিল একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যেখানে যোগ্য ব্যক্তিদের কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো।

এই ব্যবস্থা কনফুসিয়ান নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, যা দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নৈতিকতাকে গুরুত্ব দিত। এর ফলে সামন্ততান্ত্রিক নিয়োগ প্রথার পরিবর্তে মেধাভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়, যা চিনের দীর্ঘমেয়াদি শাসনব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করে।

৭। ‘ম্যান্ডারিন’ বলতে কী বোঝানো হয়?

উঃ
👉 ‘ম্যান্ডারিন’ বলতে মূলত চীনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা আমলাদের বোঝানো হয়, যারা রাজকীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হতো এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত।

এছাড়া, ‘ম্যান্ডারিন’ শব্দটি চীনা ভাষার একটি প্রধান উপভাষাকেও নির্দেশ করে, যা ম্যান্ডারিন চীনা বা স্ট্যান্ডার্ড চীনা (Putonghua) নামে পরিচিত এবং এটি আধুনিক চীনের সরকারি ভাষা।

৮। ‘স্যাট্রাপ’ (Satrap) বলতে কী বোঝানো হয়?

উঃ
স্যাট্রাপ (Satrap) ছিল প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের একটি প্রশাসনিক পদ, যার অধিকারীরা প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করত।

পারস্য সম্রাট দারিউস প্রথম সাম্রাজ্যকে প্রায় ২০টি স্যাট্রাপিতে বিভক্ত করেন, যা প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

স্যাট্রাপদের প্রধান দায়িত্ব ছিল রাজস্ব সংগ্রহ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামরিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা।

তারা সম্রাটের প্রতি আনুগত্যশীল থাকলেও কখনো কখনো স্বাধীনভাবে শাসন করার চেষ্টা করত।

 

৯। ‘পিলগ্রিমেজ অব গ্রেস’ কী?

উঃ ‘পিলগ্রিমেজ অব গ্রেস’ (Pilgrimage of Grace) ছিল ১৫৩৬ সালে ইংল্যান্ডে একটি কৃষক বিদ্রোহ, যা হেনরি অষ্টমের ধর্মীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে উঠেছিল।

 এই বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল রাজা কর্তৃক ভ্যাটিকান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ধর্মীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

বিদ্রোহীরা তাদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় এবং রাজা কর্তৃক ধর্মীয় সংস্কারের বিরোধিতা করে ঐক্যবদ্ধ হয়।

 যদিও এই বিদ্রোহটি দমন করা হয়, তা ইংল্যান্ডের ধর্মীয় পরিবর্তনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১০। অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি কী?

উঃ অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি (Act of Supremacy) ছিল ১৫३৪ সালে ইংল্যান্ডে গৃহীত একটি আইন, যার মাধ্যমে ইংল্যান্ডের রাজাকে গির্জার সর্বোচ্চ প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এই আইনের মাধ্যমে হেনরি অষ্টম পোপের অধিকারকে অস্বীকার করে নিজেকে ইংল্যান্ডের গির্জার প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 এর ফলে ইংল্যান্ড ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রোটেস্টান্ট আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়।

অ্যাক্ট অফ সুপ্রিমেসি ছিল ইংল্যান্ডে ধর্মীয় সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ, যা রাজ্যের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কাঠামো পরিবর্তন করে।

১১। ‘দ্য রিপাবলিক’ গ্রন্থের রচয়িতা কে? প্রজাতান্ত্রিক রোমের রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিকদের শ্রেণিবিভাগ কীভাবে করা হয়েছিল?

উঃ
👉 ‘দ্য রিপাবলিক’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন প্লেটো।

👉 প্রজাতান্ত্রিক রোমের রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিকদের শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছিল তিনটি প্রধান শ্রেণিতে:

• প্যাট্রিশিয়ানস (অভিজাত বা উঁচু শ্রেণী)
• প্লেবিয়ানস (সাধারণ নাগরিক)
• স্লেভস (দাস বা অধীনস্থ শ্রেণী)

এই শ্রেণীবিভাগ তাদের সামাজিক অবস্থান, অধিকার এবং দায়িত্বের ওপর নির্ভর করত।

১২। খলিফা কারা? জিম্মি কাদের বলা হয়?

উঃ
👉 খলিফা (Caliph) ছিলেন ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা, যিনি মুহাম্মদ (স.)-এর পর মুসলিম সম্প্রদায়ের শাসক হিসেবে ভূমিকা পালন করতেন। খলিফা ইসলামের সোনালী যুগে সঙ্গতিপূর্ণভাবে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

👉 জিম্মি (Dhimmi) শব্দটি মুসলিম শাসিত অঞ্চলে অমুসলিম নাগরিকদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, যারা ইসলামের অধীনে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত। তারা ধর্মীয় স্বাধীনতা লাভ করলেও বিশেষ কর কর দিতে হতো এবং কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হতো।

১৩। দিল্লির কোন সুলতান সর্বপ্রথম খলিফার স্বীকৃতি লাভ করেন? ‘খুৎবা’ ও ‘সিকা’ কী?

উঃ
👉 দিল্লির কুতুবুদ্দিন আইবেক সুলতান ছিলেন প্রথম দিল্লি সুলতান, যিনি খলিফার স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি ১২১০ সালে খলিফা আন নাসিরুদ্দিন থেকে শাসকের স্বীকৃতি গ্রহণ করেন।

👉 খুৎবা (Khutba) ছিল মসজিদে নামাজের সময় ইমাম বা খতিবের দ্বারা পাঠিত একধরনের ধর্মীয় উপদেশ বা প্রার্থনা, যা সাধারণত শাসকের নাম উল্লেখ করে পাঠ করা হতো।

👉 সিকা (Sikka) ছিল মুদ্রা, যা সুলতান বা শাসকের নাম ও খলিফার নাম দ্বারা সজ্জিত হতো এবং এটি শাসক কর্তৃক নিজস্ব শক্তি ও কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

১৪। অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি কে, কবে আবিষ্কার করেন? কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাজস্বব্যবস্থা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উঃ
👉 অর্থশাস্ত্র (Arthashastra) গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন কৌটিল্য, যাকে চাণক্যও বলা হয়। এটি প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতি, রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার বিষয়ে একটি মৌলিক গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩ষ্ঠ শতকে রচিত হয়।

👉 কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী, রাজস্বব্যবস্থা ছিল একটি সুশৃঙ্খল, কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা, যেখানে রাজস্ব সংগ্ৰহের জন্য শাসককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কৃষি, বাণিজ্য, খনিজ এবং শিল্প থেকে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য পৃথক বিভাগের ব্যবস্থা ছিল। তিনি রাজ্য পরিচালনার জন্য রাজস্বের সঠিক ব্যবহার এবং শোষণমুক্ত নীতি অনুসরণের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

১৫। জিজিয়া কর কী? এটি কারা প্রদান করত এবং কে এই কর বিলোপ করেছিলেন?

উঃ
👉 জিজিয়া কর ছিল এক ধরনের ধর্মীয় কর, যা মূলত অমুসলিমদের উপর আরোপিত হত মুসলিম শাসকদের দ্বারা। এটি মূলত অমুসলিম নাগরিকদের শিরস্ত্রাণের বদলে আরোপিত হয়েছিল, যা তাদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিত।

👉 জিজিয়া কর প্রদান করত: অমুসলিম নাগরিকরা, বিশেষত হিন্দুরা, যারা মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে বাস করত।

👉 এটি বিলোপ করেছিলেন: আকবর মুঘল সম্রাট, যিনি ১৫৭৯ সালে জিজিয়া কর বিলোপ করেছিলেন এবং তার শাসনামলে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করেন।

১৬। ‘মনসব’ শব্দের অর্থ কী? মনসবদার কীভাবে নিয়োগ পেতেন?

উঃ
👉 মনসব শব্দটির অর্থ হলো একটি উপাধি বা পদবী, যা মুঘল সাম্রাজ্যে অফিসার বা সেনাপতিদের জন্য ব্যবহৃত হত। এটি বিশেষ ধরনের পদমর্যাদা বা র‍্যাঙ্ক নির্দেশ করত, যা কর্মকর্তার কার্যকলাপ, কর্তব্য ও পদমর্যাদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো।

👉 মনসবদার হলেন সেই কর্মকর্তা, যাদের শাসক কর্তৃক মনসব প্রদান করা হত। তারা নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা ও ভূমি পরিচালনার জন্য নিযুক্ত হতেন, এবং তাদের কর্তব্য ছিল সামরিক, প্রশাসনিক ও রাজস্ব কার্যক্রম সম্পাদন করা। মনসবদারদের নিয়োগ ছিল ক্ষমতাশালী শাসকের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল, এবং তাদের মনসবের মান ছিল পদমর্যাদা অনুযায়ী।

১৭। মনসবদারি প্রথা কী?

উঃ মনসবদারি প্রথা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের একটি প্রশাসনিক ও সামরিক ব্যবস্থা, যেখানে মনসবদাররা (বিশেষ কর্মকর্তা বা সেনাপতি) মর্যাদা ও পদমর্যাদা অনুযায়ী পদ লাভ করতেন।

 এই প্রথায় মনসবদারের র‍্যাঙ্ক (মনসব) সেনা, অফিস ও প্রশাসনিক দায়িত্ব অনুসারে নির্ধারিত হতো। মনসবদাররা নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য বা সামরিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তাদের কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে বেতন বা অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্ত হতেন।

এই ব্যবস্থা রাজস্ব সংগ্ৰহ, সামরিক প্রস্তুতি, ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করেছিল এবং শাসক কর্তৃক নির্ধারিত র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব নির্ধারিত হত।

১৮। ইকতা ব্যবস্থা বলতে কী বোঝানো হয়?

উঃ ইকতা ব্যবস্থা ছিল মুঘল শাসনকালীন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যেখানে রাজস্ব সংগ্ৰহ ও শাসন ব্যবস্থাপনায় একাধিক আধিকারিককে একত্রিত করে একযোগভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া বোঝানো হয়।

এই ব্যবস্থায় রাজস্বের হিসাব এবং ব্যবস্থাপনা এককভাবে একটি কেন্দ্রীভূতভাবে পরিচালিত হত, এবং বিশ্বস্ত কর্মকর্তারা রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকতেন।

ইকতা শব্দটি মূলত বিভিন্ন প্রদেশ বা অঞ্চলের প্রশাসনিক একক সমন্বয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে, যার মাধ্যমে রাজ্য পরিচালনার কার্যক্রমকে আরো সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত করা হত।

১৯) তাওবাদ কী?

উঃ তাওবাদ (Taoism) হল চীনের একটি প্রাচীন দার্শনিক ও ধর্মীয় মতবাদ, যা তাও বা দেনা সত্ত্বা (Tao) এর অনুসরণে বিশ্বাসী। তাওবাদে প্রকৃতির সাথের সুষম জীবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে তাও হল সেই অদৃশ্য শক্তি যা সৃষ্টির সাথেও যুক্ত, এবং জীবনের প্রকৃত পথ অনুসরণের মাধ্যমে মনের শান্তি লাভ করা সম্ভব।

 এই মতবাদের প্রধান রচয়িতা ছিলেন লাউজি, যার তাও তে চিং গ্রন্থে তাওবাদী দর্শন বর্ণিত হয়েছে।

তাওবাদে আন্তরিকতা, স্বাভাবিকতা, শান্তি এবং বিশ্রাম অর্জনের উপায় হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক গতি অনুসরণ ও স্বাভাবিক জীবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

২০) সিলসিলা কী? সংক্ষেপে লেখো।

উঃ
👉 সিলসিলা (Silsila) শব্দটি ইসলামী mysticism বা সুফিবাদ-এর পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা আধ্যাত্মিক উত্থান ও গুরুর মাধ্যমে শিক্ষার একটি ধারাবাহিক শৃঙ্খলা বোঝায়।

👉 এটি একটি আধ্যাত্মিক পরম্পরা যেখানে একজন গুরু তার শিষ্যদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা, দীক্ষা ও আধ্যাত্মিক অভ্যাস প্রদান করেন এবং এই শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মের শিষ্যদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।

 সিলসিলা মূলত সুফি সংগঠনের আধ্যাত্মিক গুরুকুলের একটি ধারাবাহিক পরম্পরা যা আধ্যাত্মিক উৎকর্ষের লক্ষ্য রাখে।

২১) চিনে কনফুসীয় মতবাদের প্রভাব কতখানি ছিল?

উঃ চীনে কনফুসীয় মতবাদের প্রভাব ছিল বিকাশশীল সমাজের সব দিকেই, বিশেষত নৈতিকতা, রাজনীতি, শিক্ষা, এবং সমাজবদ্ধতার ক্ষেত্রে। কনফুসিয়াসের শিক্ষা অনুসারে, পরিবার ও সমাজে আদর্শ আচরণ, ন্যায়, এবং সম্মান প্রতিপালন করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

কনফুসীয় মতবাদ চীনে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সামাজিক সম্পর্কের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতো এবং শাসকদের প্রতি জনগণের আনুগত্য ও কর্তব্য পালন করা ছিল অপরিহার্য।

এই মতবাদ চীনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামাজিক কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং কনফুসিয়াসের শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা দীর্ঘকাল ধরে চীনের সংস্কৃতির অংশ হয়ে রয়ে গেছে।

২২) হিউগনট ও অ্যানাব্যাপটিস্ট কারা ছিলেন?

 উঃ
👉 হিউগনট (Huguenots) ছিলেন ফ্রান্সের প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায়, যারা ১৫৬০-১৭০০ শতকের মধ্যে ফ্রান্সে ক্যালভিনবাদী ধর্মমতের অনুসারী ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক গির্জার অত্যাচার ছিল এবং তারা ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করত।

👉 অ্যানাব্যাপটিস্ট (Anabaptists) ছিলেন একটি প্রোটেস্টান্ট ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা বিশ্বাস করতেন যে, শিশুদের প baptism়ানোর পরিবর্তে শুধু বয়সকালে বিশ্বাসী হলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা উচিত। তাদের ধর্মবিশ্বাস ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির সমান অধিকার, এবং শান্তির নীতি অনুসারে।

২৩) ক্যাথোলিক ও প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলি লেখো।

উঃ
ক্যাথোলিক ও প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টানদের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

ধর্মীয় কর্তৃত্ব:

• ক্যাথোলিক গির্জায় পোপ হলেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রধান এবং তিনি গির্জার নীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
• প্রোটেস্টান্ট গির্জায় পোপের কর্তৃত্ব অস্বীকার করা হয় এবং সেখানে শাস্ত্র (বাইবেল) ও ব্যক্তিগত বিশ্বাস প্রধান হয়।

বিশ্বাসের বিষয়:

• ক্যাথোলিকরা বিশ্বাস করেন যে, পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুধু ঈশ্বরের করুণা নয়, বরং গির্জার উপাসনা, ভালো কাজ ও একাধিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও অপরিহার্য।
• প্রোটেস্টান্টরা সাধারণত বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই পাপ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় এবং বাইবেলই একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ।

মৃত্যুর পর জীবন:

• ক্যাথোলিকরা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবী পরবর্তী জীবনে স্বর্গে যাওয়ার জন্য পাপ থেকে মুক্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকে, যার জন্য পিউরগেটরি (Purgtory) থাকে।
• প্রোটেস্টান্টরা মনে করেন, বিশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি স্বর্গে প্রবেশ করা সম্ভব।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পার্থক্য:

• ক্যাথোলিকদের গির্জায় একমাত্র সেন্টস ও মেরির পূজা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এবং মিশন বড় ভূমিকা পালন করে।
• প্রোটেস্টান্টদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাইবেল পাঠ, প্রার্থনা ও পবিত্র উপাদান গুরুত্ব পায়।

২৪) মার্টিন লুথার কীভাবে রোমান ক্যাথোলিক চার্চের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন?

উঃ  মার্টিন লুথার ছিলেন একজন জার্মান ধর্মগুরু এবং প্রোটেস্টান্ট রিফর্মেশন এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রোমান ক্যাথোলিক চার্চের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, বিশেষ করে চলতি সময়ের ধর্মীয় ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ও বিশ্বাসের অপব্যবহার নিয়ে।

মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালে "নাইনটিন থিসিস" (Ninety-Five Theses) প্রকাশ করে তাঁর প্রতিবাদ শুরু করেন, যেখানে তিনি পোপের ক্ষমতা, পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্য পাপমুক্তির শংসাপত্র (Indulgences), এবং চার্চের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন।

 লুথারের দাবি ছিল যে, ঈশ্বরের কাছে পাপের ক্ষমা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল খোদ বাইবেল এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাস, আর চার্চের শাসকরা এই বিষয়ে অতিউৎসাহী ও বিকৃত নীতির প্রবর্তন করছেন। তার এই আন্দোলন ক্যাথোলিক চার্চের বিরুদ্ধে বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, যা পরবর্তীতে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের উৎপত্তি ঘটায়।

২৫) ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ কাকে বলা হয়? লোলার্ড কারা ছিলেন?

উঃ
👉 ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা বলা হয় জন উইক্লিফ (John Wycliffe)কে। তিনি ইংল্যান্ডের একজন ধর্মীয় নেতা এবং দার্শনিক, যিনি ক্যাথোলিক চার্চের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করেছিলেন। উইক্লিফের মূল দাবি ছিল, বাইবেল সকলের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত, এবং তিনি বাইবেলকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, যা তখনকার যুগে বিপ্লবী ছিল। তিনি বিশ্বাসী জনতার উপর চার্চের একচ্ছত্র আধিপত্য ও চূড়ান্ত ধর্মীয় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

👉 লোলার্ড (Lollards) ছিলেন জন উইক্লিফের অনুসারী একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা উইক্লিফের ধর্মসংস্কারের ধারণা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতেন। তারা পোপের ক্ষমতা ও চার্চের অযাচিত প্রভাব বিরোধিতা করত, এবং বাইবেলকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করতে চেয়েছিল।

২৬) ভক্তিবাদের প্রধান আদর্শগুলি কী ছিল?

উঃ ভক্তিবাদের প্রধান আদর্শগুলি ছিল ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ প্রেম, আনুগত্য এবং আত্মসমর্পণ। এই ধর্মীয় আন্দোলনে ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি ও ধর্মীয় ত্যাগের মাধ্যমে আত্মার মুক্তির পথ অনুসরণ করা হতো। কিছু প্রধান আদর্শ:

 ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি: ভক্তিবাদে বিশ্বাসীরা ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ প্রেম এবং আনুগত্য প্রদর্শন করতেন, যা তাদের জীবনকে আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণ করে।

সাধনা ও উপাসনা: ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের নাম স্মরণ এবং কীর্তন, পুজা, আরাধনা এর মাধ্যমে ধর্মীয় আত্মউন্নয়ন এবং অন্তরীণ শান্তি লাভের চেষ্টা করা হতো।

ধর্মীয় শাস্ত্র ও গ্রন্থের প্রতি বিশ্বাস: ভক্তিবাদীরা সাধারণত ধর্মীয় গ্রন্থ (যেমন ভাগবদ গীতা, রামায়ণ) এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা রাখতেন এবং তার শিক্ষাকে অনুসরণ করতেন।

মুক্তি বা মোক্ষ লাভ: ভক্তিবাদী ধারণা অনুসারে, ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরতা ও আনুগত্যের মাধ্যমে পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি এবং আধ্যাত্মিক মুক্তি লাভ সম্ভব ছিল।

ভক্তির সবার জন্য উন্মুক্ততা: ভক্তিবাদ ছিল সামাজিক স্তরের কোনও বাধা না রেখে সকল মানুষের জন্য সমান — এটি সমাজে শ্রেণী বৈষম্য ও অদ্বিতীয়তার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্দোলন ছিল।

২৭) মার্টিন লুথার কে ছিলেন? ইনডালজেন্স কী?

উঃ
👉 মার্টিন লুথার ছিলেন একজন জার্মান ধর্মগুরু, দার্শনিক, এবং প্রোটেস্টান্ট রিফর্মেশন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা। তিনি ১৫১৭ সালে "নাইনটিন থিসিস" (Ninety-Five Theses) প্রকাশ করে ক্যাথোলিক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন। তার আন্দোলন ইংল্যান্ডে প্রোটেস্টান্ট ধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বাইবেলের অনুবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক ছিল।

👉 ইনডালজেন্স (Indulgence) ছিল ক্যাথোলিক চার্চের একটি ধর্মীয় অনুশীলন, যেখানে মানুষদের তাদের পাপের জন্য অর্থ প্রদান করে পাপের ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ দেয়া হতো। এই ইনডালজেন্সের শংসাপত্র (Indulgence Certificate) ছিল একটি পাপমুক্তির প্রমাণপত্র, যা চার্চের একান্ত অনুমতির অধীনে কার্যকর হত। মার্টিন লুথার এই প্রথাকে পাপের বিরুদ্ধে সঠিক পথ হিসেবে অস্বীকার করেন এবং তার প্রতিবাদে এটি ছিল অন্যতম বড় কারণ।

২৮) রেনেসাঁস সংস্কৃতি মানবতাবাদী সাহিত্যে কী প্রভাব ফেলেছিল?

উঃ রেনেসাঁস সংস্কৃতি মানবতাবাদী সাহিত্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কারণ এটি মানুষের স্বাধীনতা, নৈতিকতা, এবং আত্ম-উন্নতির দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। রেনেসাঁস একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের যুগ, যেখানে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমান সভ্যতার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও দর্শনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।

 মানবতাবাদী সাহিত্য রেনেসাঁসের এই প্রভাবকে গ্রহণ করে মানব জীবনের মূল্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা, এবং বিশ্বের প্রতি মনুষ্য সত্ত্বার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা সৃষ্টি করে। এটি ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এবং পবিত্র জীবন ছেড়ে মানুষের বিশ্ব এবং তার জীবনের প্রতি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিল।

সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, পশ্চিমী মানবিক মূল্যবোধ, এবং বিশ্বের প্রতি অনুভবশীলতা বিষয়ক আলোচনা করতেন। ডানতে, শেক্সপিয়র, চসার এর মত লেখকরা সেই সময়ের সাহিত্যে এই মানবতাবাদী আদর্শ প্রচার করেন, যা সমাজে ব্যক্তির চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির মুক্তির পথ খুলে দেয়।

২৯) কনফুসীয়বাদের তিনটি তাত্ত্বিক নীতি লেখো।

উঃ
কনফুসীয়বাদের তিনটি তাত্ত্বিক নীতি হল:

রেন (Ren) বা মানবিকতা: এটি হল অন্যের প্রতি সদ্ভাবনা, সহানুভূতি, এবং ভালবাসা। রেন এমন একটি গুণ যা একটি ব্যক্তির চরিত্রে এবং তার সম্পর্কের মধ্যে গুণমান আনতে সাহায্য করে। এটি মানব সমাজের জন্য এক ধরনের আদর্শ আচরণ।

লি (Li) বা আচার-আচরণ: লি হল সামাজিক নীতি ও আচরণের নিয়ম যা মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা, শ্রদ্ধা এবং সম্মান আনতে সাহায্য করে। এটি সামাজিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে।

শু (Shu) বা সক্ষমতা বা অযথা ক্ষতি না করা: শু মানে হল, অন্যের প্রতি আচরণে সমবেদনা ও তাদের প্রতি অযথা ক্ষতি না করা। এটি মানবতাবাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্যের অধিকার ও অনুভূতিকে সম্মান করে।

এই তিনটি নীতি কনফুসীয়বাদে সামাজিক সম্পর্ক এবং নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তি গড়ে তোলে।

৩০) অষ্টাদশ শতাব্দীর নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা কী ছিল?

উঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর নবজাগরণের (১৮শ শতাব্দীর) সীমাবদ্ধতা ছিল বেশ কিছু দিক থেকে:

সামাজিক স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধতা: নবজাগরণের আদর্শগুলি মূলত উচ্চবর্গ ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের লোকেরা বা নিম্নবর্গের মানুষরা এর সুফল লাভ করতে পারেনি। তাই, নবজাগরণের প্রভাব সাধারণ সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছায়নি।

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ: অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক শাসকগণ নবজাগরণের চিন্তাধারাকে বাধা দিয়েছিলেন। যেমন, খ্রিস্টান গির্জা এবং রাজার শাসন নবজাগরণের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীদের মুক্ত চিন্তার প্রতি বিরোধিতা করেছিল। এর ফলে কিছু চিন্তাবিদ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা দমিত হয়েছে।

পুঞ্জিভূত অর্থনৈতিক বৈষম্য: নবজাগরণে প্রভাবিত সমাজের উচ্চবর্গ বা ধনী শ্রেণী লাভবান হলেও, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে তেমনভাবে প্রভাবিত করেনি।

অলিখিত জাতীয়তা ও ঔপনিবেশিকতা: নবজাগরণের চিন্তাভাবনাগুলি অনেকাংশে ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদ ও ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের জন্য উপকারী ছিল, যা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বা মানবাধিকারকে সীমিত করেছিল।

এভাবে, নবজাগরণের সাফল্য ও প্রতিফলন সব ক্ষেত্রে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েনি।

৩১) ইউরোপীয় নবজাগরণ কি শুধুমাত্র ইতালির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল?

উঃ ইউরোপীয় নবজাগরণ শুধুমাত্র ইতালির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। যদিও নবজাগরণের শুরু ইতালিতে, বিশেষ করে ফ্লোরেন্স ও রোম শহরে ছিল, এটি দ্রুত বাকি ইউরোপের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। নবজাগরণের আদর্শগুলি, যেমন মানবতাবাদ, বিজ্ঞান ও শিল্পের উন্নতি, বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পুঁজিবাদী সমাজ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সহায়তা করেছিল।

ইতালির বাইরে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন ইত্যাদি দেশে নবজাগরণের প্রভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে রেনেসাঁস শিল্প, সাহিত্য, এবং আর্কিটেকচারের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনে। একইভাবে, ইংল্যান্ডে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের নাটক এবং টমাস মোরের "ইউটোপিয়া" এই নবজাগরণের গুরুত্বপূর্ণ ফলস্বরূপ।

এর ফলে, নবজাগরণের প্রভাব শুধু ইতালিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করে।

৩২) নবজাগরণ-উদ্ভূত মানবতাবাদ সম্পর্কে লেখো।

উঃ নবজাগরণ-উদ্ভূত মানবতাবাদ ছিল একটি চিন্তাধারা যা মানুষের সম্ভাবনা, স্বাধীনতা, এবং স্বাধিকারের উপর জোর দিয়েছিল। এটি ইউরোপীয় নবজাগরণ আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে মানব জীবনের গৌরব এবং বিশ্বের প্রতি মানুষের দায়িত্বকে মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।

 মানবতাবাদের মূল সিধান্তগুলি ছিল:

• মানুষের কেন্দ্রীকত্ব: মানবতাবাদী চিন্তাভাবনা ঈশ্বরের পরিবর্তে মানুষকে কেন্দ্রে রেখে সমাজ এবং সংস্কৃতির উন্নতি চেয়েছিল। তারা বিশ্বাস করেছিল যে, মানুষ নিজের চিন্তা ও প্রচেষ্টায় উন্নতি করতে সক্ষম।
• শিক্ষা ও বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব: শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিগত এবং নৈতিক বিকাশ হওয়া উচিত। এটি বই, সাহিত্য, ইতিহাস এবং কবিতাতে মনোযোগ দেয়, যা মানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক ছিল।
• স্বাধীন চিন্তা ও মুক্তি: মানবতাবাদী আন্দোলন ধর্মীয় শাসনের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি, এবং চিন্তার স্বাধীনতার প্রচারে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এতে বিজ্ঞান, দর্শন এবং শিল্পে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছিল।

মানবতাবাদী চিন্তাধারার মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যতে নতুন যুগের সূচনা হয়, যেমন ডান্তে, শেক্সপিয়র, পেত্রার্ক, এবং ইরাসমাস-এর মত লেখকরা বই ও কাব্য রচনা করেছেন, যেগুলি মানব জীবনের প্রকৃত অর্থ এবং স্বাধীনতার প্রতি মনোযোগ দিত।

এভাবে, নবজাগরণের মানবতাবাদ মানুষের চিন্তা ও কর্মের মধ্যে সামাজিক, নৈতিক, এবং আত্মিক উৎকর্ষ আনার চেষ্টা করেছিল, যা বিশ্বের উন্নতি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

৩৩) ইউরোপে নবজাগরণের কারণ কী ছিল?

উঃ
 ১. ইউরোপে নবজাগরণের কারণ ছিল প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সংস্কৃতির পুনরাবিষ্কার, যা নতুন জ্ঞানচর্চার পথ উন্মুক্ত করে।
২. ক্রুসেড যুদ্ধ ও বাণিজ্যের প্রসার ইউরোপীয় সমাজকে প্রাচ্যের জ্ঞান ও সম্পদের সংস্পর্শে আনে, যা নবজাগরণকে ত্বরান্বিত করে।
৩.গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার শিক্ষা ও নতুন চিন্তার দ্রুত প্রসারে সহায়তা করে, যা মানবতাবাদী ভাবনার বিকাশ ঘটায়।
৪.ক্যাথলিক চার্চের দুর্বলতা ও বিজ্ঞানের উন্নয়ন মানুষকে ধর্মীয় কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে যুক্তিনির্ভর চিন্তাভাবনার দিকে পরিচালিত করে।
৫.ইতালির বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ও ধনী ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা শিল্প, সাহিত্য, ও বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩৪) ইউরোপের নবজাগরণ কি প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ ছিল?

উঃ ইউরোপের নবজাগরণ প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ ছিল, কারণ এটি মানুষের চিন্তাধারা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির নতুন যুগের সূচনা করেছিল।
প্রাচীন গ্রীক ও রোমান জ্ঞানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে ইউরোপ একটি নতুন দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে।
ধর্মীয় কর্তৃত্বের প্রভাব কমে গিয়ে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদী চিন্তা জনপ্রিয় হয়, যা মানুষকে স্বাধীন চিন্তার সুযোগ দেয়।
শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে, যেমন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, শেক্সপিয়র এবং গ্যালিলিওর অবদান।
যদিও নবজাগরণ সমাজের সব স্তরে পৌঁছায়নি, তবে এটি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে আধুনিক ইউরোপের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

৩৫) শিল্পকলায় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ভূমিকা কী ছিল?

উঃ লিওনার্দো দা ভিঞ্চি নবজাগরণ যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী এবং বহুমুখী প্রতিভাবান ছিলেন। তিনি চিত্রকলায় নতুন প্রযুক্তি ও বাস্তবতার নিখুঁত উপস্থাপনা নিয়ে আসেন, যা শিল্প জগতে বিপ্লব ঘটায়। তার আঁকা "মোনালিসা" ও "দ্য লাস্ট সাপার" চিত্রশিল্পের উৎকর্ষতার অনন্য নিদর্শন। তিনি আলো-আঁধারির (Chiaroscuro) ব্যবহারের মাধ্যমে চিত্রকর্মে গভীরতা ও বাস্তবতা আনেন। তার গবেষণা এবং মানবদেহের অ্যানাটমি বিশ্লেষণ চিত্রশিল্পীদের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা পরবর্তী শিল্পীদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।

৩৬) চতুর্থ ক্রুসেড সম্পর্কে যা জানো তা লেখো।

উঃ চতুর্থ ক্রুসেড (১২০২-১২০৪) মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও তা শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টানদের মধ্যকার সংঘাতে পরিণত হয়। এটি পোপ তৃতীয় ইনোসেন্টের উদ্যোগে সংগঠিত হলেও ভেনিসের বণিকদের প্রভাবের কারণে গন্তব্য পরিবর্তিত হয়। ক্রুসেডাররা অর্থের বিনিময়ে ভেনিসের জন্য জারা দখল করে এবং পরে কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করে। ১২০৪ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল লুণ্ঠিত হয় এবং সেখানে লাতিন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্রুসেড খ্রিস্টানদের ঐক্য নষ্ট করে এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণ হয়ে ওঠে।

৩৭) প্রথম ক্রুসেড কত সালে শুরু হয়েছিল? খ্রিস্টানরা কীভাবে এর মাধ্যমে জেরুজালেম দখল করেছিল?

উঃ প্রথম ক্রুসেড শুরু হয় ১০৯৬ সালে এবং এটি ১০৯৯ সালে জেরুজালেম দখলের মাধ্যমে শেষ হয়।

প্রথম ক্রুসেডের সময় খ্রিস্টান যোদ্ধারা পোপ দ্বিতীয় আরবান-এর আহ্বানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তারা প্রথমে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সমর্থন নিয়ে কনস্টান্টিনোপলে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে আনাতোলিয়া অতিক্রম করে। ১০৯৯ সালে তারা জেরুজালেম অবরোধ করে এবং পাঁচ সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর শহরটি দখল করে।

যুদ্ধের সময় খ্রিস্টান সেনারা মুসলিম ও ইহুদিদের নির্মমভাবে হত্যা করে এবং জেরুজালেমে লাতিন ক্রুসেডার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এটি মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের সূচনা করে।

৩৮) সুফিবাদ ও ভক্তিবাদ তৎকালীন সমাজে কী প্রভাব ফেলেছিল?

উঃ সুফিবাদ ও ভক্তিবাদ তৎকালীন সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করে।

সুফিবাদ ইসলামিক মরমিবাদী ধারা হিসেবে আত্মশুদ্ধি ও ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মিলনের ওপর গুরুত্ব দেয়। এটি ধর্মীয় কট্টরতার বিরোধিতা করে এবং ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রচার করে। সুফিরা সাধারণ মানুষের ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করায় ইসলামের প্রচার সহজ হয় এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ভক্তিবাদ হিন্দু ধর্মের এক বিশেষ ধারার আন্দোলন ছিল, যা জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা করে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও ভক্তিকে প্রধান বলে মনে করত। এই আন্দোলনের ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদী কঠোর নিয়ম শিথিল হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা বৃদ্ধি পায়।

উভয় আন্দোলনই সাম্প্রদায়িক ঐক্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় উদারতার পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করে।

৩৯) পূর্ব ভারতে ভক্তিবাদ প্রসারে শ্রীচৈতন্যদেবের অবদান কী ছিল?

৪০) মানবতাবাদী আন্দোলন বলতে কী বোঝো?

৪১) ষোড়শ শতাব্দীর ইতালীয় রেনেসাঁস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলেছিল?

৪২) রেনেসাঁস যুগের শিল্প ও চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

৪৩) আতসকাঁচ কে আবিষ্কার করেন? প্রযুক্তিবিদ্যার অর্থ কী?

৪৪) পঞ্চদশ শতকে ‘নতুন বিশ্ব’ বলতে কী বোঝায়?

৪৫) ম্যাগেলান কেন বিখ্যাত? প্রশান্ত মহাসাগরের নামকরণ কে করেন?

৪৬) আমেরিগো ভেসপুচি কে ছিলেন? নতুন পৃথিবীর আবিষ্কার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

৪৭) কত সালে, কে ব্রাজিল আবিষ্কার করেন?

৪৮) ভাস্কো-দা-গামা ভারতের কোন বন্দরে এসেছিলেন? আজ চৌম্বক সুচ কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

৪৯) কে, কোন অন্তরীপকে ঝড়ের অন্তরীপ বলেছিলেন? কে এর নাম পরিবর্তন করে উত্তমাশা অন্তরীপ রাখেন?

৫০) গুটেনবার্গ কে ছিলেন? তিনি কীভাবে মুদ্রণযন্ত্র তৈরি করেন?

৫১) অভিকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বল কাকে বলে? কে মাধ্যাকর্ষণ সূত্র আবিষ্কার করেন?

৫২) আধুনিক বিজ্ঞানের জনক নামে কে পরিচিত এবং কেন?

৫৩) আমেরিকা কে, কবে আবিষ্কার করেন? কার নামে ‘নতুন বিশ্ব’-এর নাম হয় আমেরিকা?

৫৪) কে, কবে প্রথম ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন? এটি কীভাবে সম্ভব হয়েছিল?

৫৫) মহাবিশ্বের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব বলতে কী বোঝায়?

৫৬) কৃষিবিপ্লব বলতে কী বোঝো? নিরাপত্তা বাতি (সেফটি ল্যাম্প) কে আবিষ্কার করেন?

৫৭) ‘Two New Sciences’ গ্রন্থের রচয়িতা কে? রহ্মগুপ্ত কে ছিলেন?

৫৮) আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয় এবং কেন?

৫৯) ‘কোপারনিকাস বিপ্লব’ বলতে কী বোঝো?

৬০) ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ ও ‘ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থগুলির রচয়িতাদের নাম লেখো। প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিজ্ঞানী কে ছিলেন?

৬১) জ্যোতিষ থেকে জ্যোতির্বিদ্যার উদ্ভব কীভাবে ঘটেছিল?

উঃ প্রাচীনকালে জ্যোতিষ ও জ্যোতির্বিদ্যা একে অপরের সাথে মিশে ছিল, কারণ উভয় ক্ষেত্রেই আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র এবং তাদের গতির ওপর গভীর মনোযোগ ছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে বিকশিত হয়েছে, যেখানে গণনা, পর্যবেক্ষণ, এবং যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জ্যোতিষ থেকে জ্যোতির্বিদ্যার উদ্ভব ঘটে যখন প্রাচীন সভ্যতাগুলি, বিশেষ করে ভারত, মিশর ও মেসোপটেমিয়া, আকাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির (যেমন সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ, গ্রহের গতিবিধি) দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আকাশের সঙ্কেত অনুসারে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করা, যা পরে গণনা এবং পর্যবেক্ষণের বিজ্ঞান হিসেবে পরিণত হয়।

ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহ-নক্ষত্রের গতির সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে এবং গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবী, সূর্য, এবং চাঁদের গতি ও অবস্থান বিশ্লেষণ করেন। এই সময় থেকেই আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তি তৈরি হয়, যা পরে গ্যালিলিও, কেপলার ও নিউটনের কাজের মাধ্যমে আরও বিকশিত হয়।

৬২) পেন্ডুলাম ঘড়ি কে আবিষ্কার করেন? প্রাচীন ভারতের কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নাম লেখো।

উঃ পেন্ডুলাম ঘড়ি আবিষ্কার করেন ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স ১৬৫৬ সালে। তিনি প্রথম পেন্ডুলাম ব্যবহার করে ঘড়ি তৈরি করেন, যা সময়ের পরিমাপের ক্ষেত্রে যথার্থতা ও নির্ভুলতা এনেছিল।

প্রাচীন ভারতের কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নাম:
১. আর্যভট্ট
২. ব্রহ্মগুপ্ত
৩. ভাস্করাচার্য
৪. বিভুতি
৫. মাধব
এদের মধ্যে আর্যভট্টকে সর্বপ্রথম যুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত করা হয়।

৬৩) বৌদ্ধধর্ম প্রচারকদের হাত ধরে কীভাবে জাপানে মুদ্রণ ব্যবস্থার অগ্রগতি ঘটেছিল?

উঃ বৌদ্ধধর্ম প্রচারকদের হাত ধরে জাপানে মুদ্রণ ব্যবস্থার অগ্রগতি ঘটেছিল মূলত বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থসমূহের প্রচার এবং ধর্মীয় উপকরণের ছাপানোর জন্য।

৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে চীন থেকে বৌদ্ধধর্মের গ্রন্থ ও ধর্মীয় পুস্তক জাপানে আসা শুরু করে, এবং এই গ্রন্থগুলি ছাপাতে মুদ্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ৭ম শতাব্দীতে চীনে মুদ্রণ ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং তারপর বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সাহায্যে সেই প্রযুক্তি জাপানে আসে। জাপানের প্রথম মুদ্রণ বই হিসেবে পরিচিত "প্রথম বৌদ্ধ মন্ত্রগ্রন্থ" চীনা প্রভাবের অধীনে তৈরি হয়েছিল। এটি ছাপানোর প্রক্রিয়া, বিশেষ করে কাঠের ছাঁচ ব্যবহার করে বই ছাপানো, জাপানে মুদ্রণ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা করে।

এইভাবে, বৌদ্ধধর্মের গ্রন্থ ও ধর্মীয় শাস্ত্রের প্রচার ও চর্চার জন্য মুদ্রণ প্রযুক্তি জাপানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬৪) আধুনিক ছাপাখানা কে আবিষ্কার করেন? কোথায় ও কবে প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল?

উঃ আধুনিক ছাপাখানা আবিষ্কার করেন জোহান গুটেনবার্গ।

প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল জার্মানির মাইনজ শহরে, ১৪৫০ সালে। গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র দ্রুত বই ছাপানোর প্রক্রিয়া সহজ করে এবং এটি ইউরোপে মুদ্রণ বিপ্লবের সূচনা করেছিল, যার ফলে বইয়ের ছাপানো সংস্করণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে।

৬৫) অ্যালকেমি বা অপরসায়নবিদ্যা বলতে কী বোঝো?

উঃ অ্যালকেমি বা অপরসায়নবিদ্যা একটি প্রাচীন রসায়নবিদ্যার শাখা, যা মূলত ধাতু ও কেমিক্যাল পদার্থের রূপান্তর, বিশেষত সোনায় পরিণত করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে ছিল। অ্যালকেমিস্টরা ধারণা করতেন যে, সব ধাতু একটি নির্দিষ্ট সোনার আদর্শে রূপান্তরিত হতে পারে। এছাড়া, তারা জীবনকে চিরস্থায়ী করতে পারে এমন "অমৃত" বা "এলিক্সির" সন্ধানও করতেন।

অ্যালকেমির উদ্দেশ্য ছিল না শুধুমাত্র ধাতু পরিবর্তন, বরং জীবনের রহস্য এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা অনুসন্ধান করা। এই প্রাচীন বিজ্ঞানটি আধুনিক রসায়নবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যদিও এটি আজও বিজ্ঞানী সমাজে একটি প্রাচীন এবং মিথ্যাচারের প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য হয়।

৬৬) কোন দেশ প্রথম কাগজ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে? পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের মুদ্রণ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উঃ
👉চীন প্রথম কাগজ তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে। চীনের প্রাচীন সভ্যতায়, ২নং শতাব্দী বা হান রাজবংশের সময় চীনা বিজ্ঞানী ত্সাই লুন কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন।

👉পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের মুদ্রণ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
১. গুটেনবার্গ প্রিন্টিং প্রেস – জোহান গুটেনবার্গ ১৪৫০ সালে মুদ্রণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন, যা বই এবং অন্যান্য প্রকাশনার দ্রুত উৎপাদন সম্ভব করে তোলে।
২. সুলভ বইপ্রকাশন – মুদ্রণ যন্ত্রের আগমনে বই তৈরির খরচ কমে যায়, ফলে বইয়ের ছাপানো সংস্করণ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে।
৩. জ্ঞানের বিস্তার – মুদ্রণ বিপ্লবের ফলে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয়, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক লেখাপত্রের ব্যাপক প্রচার ঘটে, যা মানুষের চিন্তাধারায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
৪. ভাষা ও শিক্ষার উন্নতি – বইয়ের অধিক প্রকাশনার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষার সুযোগ পায়, যা সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে।
৫. ধর্মীয় সংস্কারের প্রভাব – মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে ধর্মীয় মতবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মার্টিন লুথারের ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন দেয়।

৬৭) কে, কবে অক্সিজেন গ্যাস আবিষ্কার করেন? কোন রসায়নবিদ প্রমাণ করেন যে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন তার ওপর প্রযুক্ত চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়?

উঃ
👉অক্সিজেন গ্যাস আবিষ্কার করেন জোসেফ প্রিস্টলি ১৭৭৪ সালে। তিনি পারদ অক্সাইডকে উত্তপ্ত করে অক্সিজেন গ্যাস সংগ্রহ করেন এবং এটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন। যদিও সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল উইলহেলম শিলেও ১৭৭২ সালে অক্সিজেন গ্যাস প্রস্তুত করেছিলেন, তবে প্রিস্টলি এটিকে প্রথম ব্যাখ্যা করেন এবং প্রকাশ করেন।

👉রসায়নবিদ রবার্ট বয়েল প্রমাণ করেন যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন তার ওপর প্রযুক্ত চাপের সঙ্গে ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। এটি বয়েলের সূত্র (Boyle’s Law) নামে পরিচিত, যা গ্যাসের আচরণ ব্যাখ্যা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬৮) সূর্যসিন্ধান্ত গ্রন্থের রচয়িতা কে? জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার তিনটি ফলাফল উল্লেখ করো।

উঃ 👉 সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থের রচয়িতা আর্যভট্ট বা লল্লাচার্য বলে মনে করা হয়, তবে এর প্রকৃত লেখকের বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ নেই। এটি প্রাচীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রন্থ।

👉জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হল:

১. গ্রহ ও নক্ষত্রের গতিবিধি নির্ধারণ – জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে মানুষ গ্রহ, নক্ষত্র ও চন্দ্রের গতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করে, যা সময় নির্ধারণ ও ক্যালেন্ডার প্রণয়নে সাহায্য করে।

2. নতুন আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ – জ্যোতির্বিদরা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে চাঁদের গঠন, সূর্যের কলঙ্ক ও অন্যান্য মহাকাশীয় ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন জ্ঞান প্রদান করে।

3. নৌপরিবহন ও মানচিত্রবিদ্যা উন্নয়ন – জ্যোতির্বিজ্ঞান নৌপরিবহন ও ন্যাভিগেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে নাবিকরা নক্ষত্র দেখে দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে শিখেছিল।

৬৯) ‘অভিকর্ষ সূত্র’ কে আবিষ্কার করেন? কীভাবে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়েছিল?

উঃ 👉অভিকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। তিনি ১৬৮৭ সালে তাঁর গ্রন্থ "প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমাটিকা"-তে অভিকর্ষ শক্তির সূত্র ব্যাখ্যা করেন, যা বস্তুগুলোর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ শক্তি ব্যাখ্যা করে।

👉আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও মতবাদ দ্বারা সম্ভব হয়েছিল। নিকোলাস কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রমাণ করে যে সূর্য মহাবিশ্বের কেন্দ্র, যা পূর্বের ভূকেন্দ্রিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। জোহানেস কেপলারের গ্রহগতি সম্পর্কিত সূত্র দেখায় যে গ্রহগুলি উপবৃত্তাকার কক্ষে পরিভ্রমণ করে। গ্যালিলিও গ্যালিলেইর টেলিস্কোপের আবিষ্কার চাঁদের পৃষ্ঠ, বৃহস্পতির উপগ্রহ ও নক্ষত্রপুঞ্জ পর্যবেক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

এই সমস্ত আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও গণিতের ভিত্তিতে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে, যার ফলে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে।

 

✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান-৪:

১) মুদ্রণ বিপ্লব কী? ইউরোপে মুদ্রণ বিপ্লবে আরবদের কী অবদান ছিল?

২) প্রথম মুদ্রণযন্ত্র কোথায় আবিষ্কৃত হয়? ইউরোপে মুদ্রণ ব্যবস্থার সূচনা কীভাবে হয়েছিল?

৩) আধুনিক মুদ্রণের বিকাশে গুটেনবার্গের অবদান কী ছিল? কে প্রথম বাইবেল মুদ্রণ করেন?

৪) আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার বিকাশ ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আলোচনা করো।

৫) আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার উন্নতিতে গ্যালিলিয়ো গ্যালিলেই-এর ভূমিকা কী ছিল?

৬) পৃথিবীর প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থের নাম কী? জাপানে মুদ্রণ বিপ্লবের ফলাফল কী হয়েছিল?

৭) কলম্বাস কবে সমুদ্রযাত্রা করেন? ভাস্কো-দা-গামার ভৌগোলিক আবিষ্কারের গুরুত্ব কী?

৮) রেনেসাঁস কী?

৯) ইটালিতে রেনেসাঁস কেন ঘটেছিল?

১০) কেন ইটালিকে ইউরোপের রেনেসাঁসের কেন্দ্র বলা হয়?

১১) রেনেসাঁস যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী কী?

১২) ক্রুসেড সংঘটিত হওয়ার কারণ আলোচনা করো।

১৩) সুফিবাদ কী? এর মূল বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।

১৪) ভক্তিবাদের গুরুত্ব কী ছিল?

১৫) সুফিবাদ ও ভক্তিবাদের মধ্যে পার্থক্য কী?

১৬) মানবতাবাদী চিন্তাধারার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

১৭) কনফুসিয়াস কে ছিলেন? কনফুসীয়বাদের মূল ধারণাগুলি কী?

১৮) ভক্তিবাদী আন্দোলনে গুরু নানকের অবদান কতখানি?

১৯) সুফি আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?

২০) ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের মধ্যে মিল কোথায়?

২১) মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে খ্রিস্টানদের অংশগ্রহণের পেছনে ধর্মীয় কারণ কী ছিল?

২২) ক্রুসেড কী? এর প্রধান ফলাফল ব্যাখ্যা করো।

২৩) ক্রুসেডের গুরুত্ব আলোচনা করো।

২৪) ক্রুসেড সংঘটিত হওয়ার অর্থনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা করো।

২৫) টীকা লেখো: রাফায়েল।

২৬) ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করো।

২৭) ইংল্যান্ডে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রথম উদ্যোগ কে নিয়েছিলেন?

২৮) ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনে মার্টিন লুথারের অবদান কী ছিল?

২৯) ভক্তিবাদী আন্দোলনের উত্থানের কারণ কী?

৩০) ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম সাধক কবিরের ভূমিকা কী ছিল?

৩১) মধ্যযুগে ভারতে ভক্তি আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

৩২) তাওবাদ কীভাবে চিনা সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিল?

৩৩) টীকা লেখো: শিন্টো ধর্ম।

৩৪) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ধারণা প্রথম কে প্রকাশ করেছিলেন? জাঁ বোঁদার রাষ্ট্রচিন্তার মূল্যায়ন করো।

৩৫) জন লকের রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ ব্যাখ্যা করো।

৩৬) দিল্লির সুলতানি শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি আলোচনা করো।

৩৭) ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

৩৮) বরনির ‘ফতোয়া-ই-জাহান্দারি’ গ্রন্থে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে কী ধারণা দেওয়া হয়েছিল?

৩৯) ‘আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক’ হিসেবে কাকে গণ্য করা হয় এবং কেন?

৪০) গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অ্যারিস্টটলের মতে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা কেমন ছিল?

৪১) সিসেরোর রাষ্ট্রনৈতিক দর্শনের মূল অবদান আলোচনা করো।

৪২) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

৪৩) ইকতা ব্যবস্থার প্রধান ত্রুটিগুলি কী ছিল?

৪৪) বরনির মতে দিল্লির সুলতানি শাসনব্যবস্থা কি ধর্মনিরপেক্ষ ছিল? ব্যাখ্যা করো।

৪৫) ‘উলেমা’ কারা? ‘হিন্দুস্তানের তোতাপাখি’ বলে কাকে উল্লেখ করা হয় এবং কেন?

৪৬) সপ্তম হেনরি প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে কেন ‘নতুন রাজতন্ত্র’ বলা হয়?

৪৭) মনসবদারি প্রথা চালুর প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

৪৮) মোগল শাসনব্যবস্থায় মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব কী ছিল?

৪৯) ম্যান্ডারিনদের ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

 

✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮:

১) ইউরোপে সূর্যকেন্দ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশের বিবরণ দাও।

২) সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে কোপারনিকাসের মতবাদ আলোচনা করো। প্রাচীন ভারতে জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে কী জানো?

৩) ভৌগোলিক আবিষ্কারে স্পেন ও পর্তুগালের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

৪) ভৌগোলিক অভিযানে বার্থেলোমিউ দিয়াজ ও ভাস্কো-দা-গামার অবদান আলোচনা করো।

৫) ভৌগোলিক আবিষ্কারের পটভূমি ব্যাখ্যা করো এবং এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

৬) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রনৈতিক ধারণা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভূমিকা: নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) একজন ইতালীয় দার্শনিক, ইতিহাসবিদ এবং কূটনীতিক ছিলেন, যিনি আধুনিক রাষ্ট্রনীতির অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা বাস্তববাদী ও কার্যকরী নীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত। রাষ্ট্র শাসনের ক্ষেত্রে তিনি নৈতিকতার চেয়ে কার্যকারিতা ও শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

রাষ্ট্রনীতির মূল ধারণা:
প্রথমত, ম্যাকিয়াভেলি মনে করতেন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শক্তিশালী ও কৌশলী শাসক প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, তিনি ‘রাজনীতি ও নৈতিকতা পৃথক’ এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তৃতীয়ত, শাসকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ক্ষমতা অর্জন ও তা সংরক্ষণ করা। চতুর্থত, জনগণের কল্যাণের চেয়ে শাসকের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শাসকের গুণাবলী:
প্রথমত, শাসককে সিংহের মতো শক্তিশালী ও শিয়ালের মতো চতুর হতে হবে। দ্বিতীয়ত, শাসককে তার প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার জন্য প্রয়োজন হলে নৈতিকতা ভঙ্গ করতেও দ্বিধা করা উচিত নয়। তৃতীয়ত, প্রয়োজনে নিষ্ঠুরতা দেখানো যেতে পারে, তবে তা এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে জনগণ ভয় পেলেও ঘৃণা না করে। চতুর্থত, শাসকের উদারতা ও দয়া দেখানো উচিত, তবে তা তার ক্ষমতাকে দুর্বল না করে।

শক্তি ও প্রতারণার ভূমিকা:
প্রথমত, ম্যাকিয়াভেলি মনে করতেন, শাসনের জন্য কেবল শক্তি যথেষ্ট নয়; বুদ্ধিমত্তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন, রাজনীতি মূলত প্রতারণার খেলা এবং শাসকের উচিত পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের অবস্থান পরিবর্তন করা। তৃতীয়ত, শাসককে অবশ্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে জনগণ তাকে প্রয়োজন মনে করে। চতুর্থত, শাসকের উচিত তার শত্রুদের নির্মূল করা, তবে তা এমনভাবে করা যাতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।

উপসংহার: নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে। যদিও তার মতবাদ সমালোচিত হয়েছে, তবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তার বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি এখনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৭) কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রাষ্ট্রনীতির মূল ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:

ভূমিকা: কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র প্রাচীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও প্রশাসনিক গ্রন্থ। এতে রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি এবং সামরিক নীতির বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রকে এক সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো হিসেবে দেখেছেন এবং এর কার্যকরী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করেছেন।

রাষ্ট্রনীতির মূল ধারণাগুলি:

👉 ১. স্বামী (রাজা) ও তার দায়িত্ব: কৌটিল্য একটি শক্তিশালী ও আদর্শ শাসকের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছেন। রাজা ন্যায়পরায়ণ, প্রজাহিতৈষী ও কঠোর প্রশাসক হতে হবে।

👉 ২. সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব: কৌটিল্যের মতে, রাষ্ট্র সাতটি মূল অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত— রাজা, অমাত্য (মন্ত্রী), জনপদ (প্রজা), দুর্গ (প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা), কোষ (অর্থনীতি), দণ্ড (আইন ও বিচার ব্যবস্থা) এবং মিত্র (কূটনৈতিক সম্পর্ক)।

👉 ৩. রাজধর্ম ও শাসনব্যবস্থা: রাজাকে সর্বদা ধর্মের নীতি মেনে চলতে হবে। শাসন পরিচালনায় শাস্ত্র, নীতি এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয় থাকা উচিত।

👉 ৪. গুপ্তচর ও কূটনীতি: কৌটিল্য গুপ্তচর ব্যবস্থার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করেন, রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং শত্রুর গতিবিধি বুঝতে কার্যকর গুপ্তচর নেটওয়ার্ক থাকা জরুরি।

👉 ৫. অর্থনীতি ও রাজস্ব নীতি: রাজ্যের অর্থনীতি পরিচালনায় কর ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি করা উচিত।

👉 ৬. দণ্ডনীতি (শাস্তি ব্যবস্থা): শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে কৌটিল্য কঠোর শাস্তির পক্ষে ছিলেন। তিনি মনে করেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে কঠোর দণ্ড নীতি অপরিহার্য।

👉 ৭. মিত্রতা ও যুদ্ধনীতি: কৌটিল্য কূটনৈতিক কৌশলের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের পক্ষে ছিলেন, তবে প্রয়োজনে যুদ্ধ করাও রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন।

👉 ৮. বাণিজ্য ও শিল্পনীতি: তিনি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশকে অপরিহার্য বলে মনে করেছেন এবং এই খাতগুলোকে রাজস্বের প্রধান উৎস হিসেবে দেখেছেন।

👉 ৯. ন্যায়পরায়ণ ও শক্তিশালী প্রশাসন: কৌটিল্যের মতে, দুর্নীতি রোধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। সুশাসন বজায় রাখতে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা দরকার।

👉 ১০. সামাজিক ন্যায়বিচার: কৌটিল্য সাম্যের ধারণাকে সমর্থন করেননি, তবে তিনি শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

উপসংহার: কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সুসংগঠিত তাত্ত্বিক কাঠামো প্রদান করে। আধুনিক রাষ্ট্রনীতিতেও তাঁর বিভিন্ন নীতি প্রাসঙ্গিক, যেমন— কূটনীতি, অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কার্যকারিতা।

৮) দিল্লি সুলতানি শাসনে ইকতা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন আলোচনা করো।

উত্তর:

ভূমিকা: দিল্লি সুলতানি শাসনে প্রশাসনিক কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ইকতা ব্যবস্থা। এটি মূলত সামরিক ও রাজস্ব প্রশাসনের জন্য গৃহীত এক ধরনের জমিদারি ব্যবস্থা, যা কালের প্রবাহে বিভিন্ন শাসকের হাতে সংস্কার ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে।

ইকতা ব্যবস্থার সংস্কার ও বিবর্তন:

👉 ১. ইকতার ধারণা: ইকতা শব্দের অর্থ হলো প্রশাসনিক একক, যা শাসকগণ রাজস্ব সংগ্রহ ও সামরিক পরিষেবা প্রদানের বিনিময়ে আমির ও সেনাপতিদের প্রদান করতেন।

👉 ২. কুতুবউদ্দিন আইবকের যুগ: ইকতা ব্যবস্থা প্রথম চালু করেন তুর্কি দাস বংশের শাসক কুতুবউদ্দিন আইবক, যিনি সামরিক নেতাদের বিভিন্ন অঞ্চল শাসনের দায়িত্ব দেন।

👉 ৩. ইলতুৎমিশের সংস্কার: ইলতুৎমিশ ইকতাদারদের সরাসরি নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা নিজের হাতে রাখেন এবং ইকতাকে সাময়িকভাবে প্রদত্ত পদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

👉 ৪. বালবনের শাসন: ইকতাদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কর্তৃত্ব জোরদার করেন এবং ব্যক্তিগত আনুগত্য নিশ্চিত করেন।

👉 ৫. আলাউদ্দিন খলজির সংস্কার: তিনি ইকতাদারদের রাজস্ব ব্যবস্থার কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনেন, স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং ইকতাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা সীমিত করেন।

👉 ৬. মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সংস্কার: তিনি ইকতাদারদের নিয়মিত বদলি করতেন, যাতে তারা কোনো অঞ্চলে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে।

👉 ৭. ফিরোজ শাহ তুঘলকের পরিবর্তন: তিনি ইকতাদারদের উত্তরাধিকারসূত্রে ইকতার মালিকানার অনুমতি দেন, যা ইকতা ব্যবস্থাকে আরও স্থায়ী রূপ দেয়।

👉 ৮. লোদি শাসনামল: লোদি শাসকরা ইকতা ব্যবস্থার ওপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে ফেলেন, যার ফলে জমিদার ও প্রাদেশিক শাসকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

👉 ৯. ইকতার প্রশাসনিক গুরুত্ব: ইকতাদারগণ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও রাজস্ব সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতেন, যা দিল্লি সুলতানির রাজস্ব ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল।

👉 ১০. সামরিক ব্যবস্থার ওপর প্রভাব: ইকতা ব্যবস্থা সামরিক নেতাদের পুরস্কৃত করার একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা দিল্লি সুলতানির সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

👉 ১১. ইকতা ব্যবস্থার দুর্বলতা: ক্রমে ইকতাদাররা স্বাধীন হয়ে উঠতে থাকেন, যা কেন্দ্রীয় শাসনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে এবং দিল্লি সুলতানি শাসনের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।

👉 ১২. মুঘল যুগে ইকতা ব্যবস্থার বিলোপ: মুঘল শাসকরা ইকতা ব্যবস্থার পরিবর্তে মনসবদারি ব্যবস্থা চালু করেন, যা সাম্রাজ্যকে আরও সংগঠিত ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো দেয়।

উপসংহার: ইকতা ব্যবস্থা দিল্লি সুলতানি শাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বৈশিষ্ট্য ছিল, যা বিভিন্ন শাসকের হাতে সংস্কার ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এর দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনার ফলে এটি বিলুপ্ত হয়ে মুঘল আমলে নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়।

৯) মোগল আমলের মনসবদারি ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি বিশদ নিবন্ধ লেখো।

উত্তর:

ভূমিকা: মনসবদারি ব্যবস্থা মোগল শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো ছিল। সম্রাট আকবর এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, যা পরবর্তী শাসকদের আমলেও বিদ্যমান ছিল। এটি সামরিক ও প্রশাসনিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

মনসবদারি ব্যবস্থার সংজ্ঞা ও উদ্দেশ্য:
মনসবদারি শব্দটি ফারসি 'মনসব' থেকে এসেছে, যার অর্থ পদমর্যাদা। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, মনসবদারদের নির্দিষ্ট পরিমাণ সৈন্য নিয়োগ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হতো। এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সামরিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হতো।

মনসবদারি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:
প্রথমত, মনসবদারদের দুটি সংখ্যা নির্ধারণ করা হতো—জাত (পদমর্যাদা) ও সওয়ার (সৈন্যসংখ্যা)। দ্বিতীয়ত, মনসবদারগণ সম্রাট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং পদোন্নতি বা পদাবনতি সম্রাটের ইচ্ছাধীন ছিল। তৃতীয়ত, তাদের বেতন নগদ অর্থ বা জমির রাজস্ব (জাগির) থেকে প্রদান করা হতো। চতুর্থত, মনসবদারদের নির্ধারিত সৈন্য সরবরাহ ও সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করতে হতো।

মনসবদারি ব্যবস্থার বিকাশ:
প্রথমত, আকবর এই ব্যবস্থা চালু করেন এবং মনসবের সংখ্যা নির্ধারণ করেন। দ্বিতীয়ত, জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের সময় মনসবদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। তৃতীয়ত, ঔরঙ্গজেব রাজস্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন, কিন্তু মনসবদারদের অতিরিক্ত ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মনসবদারি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও পতন:
প্রথমত, রাজস্বভিত্তিক বেতন ব্যবস্থা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি করেছিল। দ্বিতীয়ত, মনসবদাররা ব্যক্তিস্বার্থে প্রশাসন পরিচালনা করায় কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, মারাঠা ও শিখদের উত্থান মনসবদারি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। চতুর্থত, ব্রিটিশরা মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে।

উপসংহার: মনসবদারি ব্যবস্থা মোগল সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল। এটি প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর দুর্বলতা প্রকট হয়, যা সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে।

১০) কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও এর প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

 

<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>>>