🌹একাদশ শ্রেণির দর্শন ফাইনাল সাজেশন-২০২৫(দ্বিতীয় সেমিস্টার)🌹

 

 

✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান - ২:

১। বচনের বিরোধিতার শর্তগুলি কী কী?

উঃ
প্রথমত, বচনের বিরোধিতার জন্য দুটি বচন একই বিষয়কে কেন্দ্র করে হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উভয় বচনের মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকতে হবে, যেখানে একটি বচন সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হবে।

২। বিরুদ্ধ বিরোধিতা কাকে বলে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

উঃ👉দুটি বচনের মধ্যে যদি সম্পূর্ণ বিপরীত সম্পর্ক থাকে, যেখানে একটি সত্য হলে অপরটি মিথ্যা হয়, তবে তাকে বিরুদ্ধ বিরোধিতা বলে।
 

👉উদাহরণ:

• "সব মানুষ সৎ।" (মূল বচন)
• "কোনো মানুষই সৎ নয়।" (বিরুদ্ধ বিরোধী বচন)

৩। অসম বিরোধিতা কী? একটি উদাহরণ দাও।

উঃ👉দুটি বচনের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকলে যেখানে একটি সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হয় না, তবে তাকে অসম বিরোধিতা বলে।
 

👉উদাহরণ:

• "কিছু মানুষ সৎ।" (মূল বচন)
• "কিছু মানুষ অসৎ।" (অসম বিরোধী বচন)

৪। বিরুদ্ধ বিরোধিতার প্রধান দুটি শর্ত উল্লেখ করো।

উঃ প্রথমত, উভয় বচনের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকতে হবে যেখানে একটির সত্যতা অপরটির মিথ্যাকে নির্দেশ করবে।
দ্বিতীয়ত, উভয় বচনেই একই বিষয় থাকতে হবে এবং তাদের অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত হতে হবে।

৫। "কোনো কিছু মানুষ সত্যনিষ্ঠ নয়।"-এর বিপরীত বিরোধী বচন কী হবে? এছাড়াও, "কিছু ফল মিষ্টি নয়।"-এর বিরুদ্ধ বিরোধী বচন নির্ণয় করো।

উঃ 👉"কোনো কিছু মানুষ সত্যনিষ্ঠ নয়।" – এর বিপরীত বিরোধী বচন হবে "সব মানুষ সত্যনিষ্ঠ।"
👉"কিছু ফল মিষ্টি নয়।" – এর বিরুদ্ধ বিরোধী বচন হবে "সব ফল মিষ্টি।"

৬। "সকল মানুষ বিবেকবান হয়।" – এর বিপরীত বিরোধী বচন কী হবে? এছাড়া, "মানুষ অসৎ হতে পারে।" – এর অসম বিরোধী বচন নির্ধারণ করো।

উঃ👉"সকল মানুষ বিবেকবান হয়।" – এর বিপরীত বিরোধী বচন হবে "কোনো মানুষই বিবেকবান নয়।"
👉"মানুষ অসৎ হতে পারে।" – এর অসম বিরোধী বচন হবে "মানুষ সৎ হতে পারে।"

৭। ফ্র্যাঙ্কোনা কোন কোন প্রকারের উপযোগবাদ আলোচনা করেছেন?

উত্তর: ফ্র্যাঙ্কোনা উপযোগবাদকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিয়াপদ্ধতি উপযোগবাদ (Act Utilitarianism) এবং বিধানমূলক উপযোগবাদ (Rule Utilitarianism)। তিনি নৈতিক উপযোগবাদ (Ethical Utilitarianism) ও মনস্তাত্ত্বিক উপযোগবাদ (Psychological Utilitarianism) সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন।

৮। ফলমুখী বা উদ্দেশ্যমুখী নৈতিক মতবাদ কী?

উত্তর: ফলমুখী নৈতিক মতবাদ এমন একটি নীতিশাস্ত্র, যেখানে কোনো কাজ নৈতিক কিনা তা নির্ধারণ করা হয় তার ফলাফলের ভিত্তিতে। এই মতবাদ অনুসারে, সঠিক কাজ সেটাই যা সর্বাধিক মঙ্গল বয়ে আনে এবং ক্ষতি কমায়।

৯। সুখবাদের বিভিন্ন প্রকার কী কী?

উত্তর: সুখবাদ প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত—নৈতিক সুখবাদ (Ethical Hedonism), মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ (Psychological Hedonism), সামাজিক সুখবাদ (Social Hedonism) এবং ব্যক্তি সুখবাদ (Individual Hedonism)। এর মধ্যে নৈতিক সুখবাদ নীতিশাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত, আর মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ ব্যক্তির আচরণের সাথে জড়িত।

১০। রলস্ স্বাভাবিক ন্যায়বোধ দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: রলস্ স্বাভাবিক ন্যায়বোধ বলতে বোঝাতে চেয়েছেন সেই অন্তর্নিহিত ধারণা, যা মানুষ জন্মগতভাবে ন্যায়-অন্যায় বিচার করতে পারে। এটি সমাজের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি মৌলিক নীতিগত ভিত্তি প্রদান করে।

১১। কামনা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: কামনা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তি বা ইচ্ছা, যা তাকে কোনো কিছু অর্জনের দিকে পরিচালিত করে। এটি হতে পারে জৈবিক, মানসিক বা সামাজিক চাহিদা সংক্রান্ত।

১২। নীতিবহির্ভূত ক্রিয়া কাকে বলে?

উত্তর: যে সকল ক্রিয়া সমাজের নৈতিক আদর্শের পরিপন্থী, সেগুলোকে নীতিবহির্ভূত ক্রিয়া বলা হয়। যেমন—মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, দুর্নীতি করা ইত্যাদি।

১৩। নৈতিক ক্রিয়া কী?

উত্তর: নৈতিক ক্রিয়া হলো সেই সব কাজ, যা সমাজ ও ব্যক্তির দৃষ্টিতে ন্যায়সংগত এবং মূল্যবোধসম্পন্ন। উদাহরণস্বরূপ, সত্য বলা, দান করা, সহানুভূতিশীল হওয়া ইত্যাদি।

১৪। ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ব্যবহারিক নীতিবিদ্যা হলো নীতিশাস্ত্রের সেই শাখা, যা বাস্তব জীবনে নৈতিক নীতিগুলোর প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে। এটি ব্যবসা, চিকিৎসা, আইন এবং পরিবেশের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা দেয়।

১৫। 'Ethics' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তর: 'Ethics' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'ethos' থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো 'চরিত্র' বা 'প্রকৃতি', যা মানুষের নৈতিক আচরণ নির্দেশ করে।

১৬। নীতিবিদ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তর: নীতিবিদ্যা মানুষের আচরণ ও তার নৈতিক ভিত্তি বিশ্লেষণ করে। এটি ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করে।

১৭। 'Moral' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী?

উত্তর: 'Moral' শব্দটি লাতিন শব্দ 'moralis' থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো 'চরিত্রগত' বা 'নৈতিক আচরণ সম্পর্কিত'।

১৮। চার্বাক নীতিতত্ত্বের মূল সূত্র কী?

উত্তর: চার্বাকদের মতে, "যতক্ষণ জীবন ততক্ষণ সুখভোগ করা উচিত"—এটাই তাদের নীতিতত্ত্বের মূল সূত্র। তারা আত্মা, পুনর্জন্ম এবং পরকালকে অস্বীকার করে এবং শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সুখকে গুরুত্ব দেয়।

১৯। সুখবাদ কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: সুখবাদ প্রধানত দুই প্রকার—আত্মকেন্দ্রিক সুখবাদ (Egoistic Hedonism) এবং সমাজকেন্দ্রিক সুখবাদ (Altruistic Hedonism)। আত্মকেন্দ্রিক সুখবাদে ব্যক্তি নিজের সুখকে অগ্রাধিকার দেয়, আর সমাজকেন্দ্রিক সুখবাদে সামগ্রিক কল্যাণকে গুরুত্ব দেয়।

২০। চার্বাক দর্শনকে লোকায়তিক দর্শন বলা হয় কেন?

উত্তর: চার্বাক দর্শন বাস্তবজগতের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়। এটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যুক্তিনির্ভর চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়।

২১। সুখবাদ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সুখবাদ হলো সেই দার্শনিক মতবাদ, যেখানে সুখকে জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের সুখের ওপর গুরুত্ব দেয়।

২২। চার্বাকদের সুখবাদী বলা হয় কেন?

উত্তর: চার্বাকরা বিশ্বাস করতেন যে, ইহজাগতিক সুখই মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য। তারা আত্মত্যাগ, পুনর্জন্ম ও পরকালকে অস্বীকার করে ইন্দ্রিয়সুখকে সর্বোচ্চ মূল্যবান বলে মনে করতেন।

২৩। চার্বাকরা কেন জন্মান্তর স্বীকার করেন না?

উত্তর: চার্বাকরা কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানকেই সত্য বলে মানতেন। যেহেতু জন্মান্তরের কোনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণ নেই, তাই তারা এটিকে অবাস্তব বলে মনে করতেন।

২৪। কর্তব্যবাদ কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: কর্তব্যবাদ প্রধানত দুই প্রকার—কর্ম কর্তব্যবাদ ও নীতি কর্তব্যবাদ। কর্ম কর্তব্যবাদে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কোনো কাজ করা নৈতিক কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়, আর নীতি কর্তব্যবাদে সার্বজনীন নৈতিক নীতির ভিত্তিতে কর্তব্য নির্ধারণ করা হয়।

২৫। কর্ম কর্তব্যবাদ কী?

উত্তর: কর্ম কর্তব্যবাদ এমন একটি নৈতিক তত্ত্ব, যেখানে ব্যক্তির কার্যকলাপকে তার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়। এই মতবাদ অনুযায়ী, কোনো কাজ সঠিক কিনা তা নির্ধারণ করা হয় দায়িত্ববোধ ও বাস্তব অবস্থার আলোকে।

২৬। নীতি কর্তব্যবাদ কাকে বলে?

উত্তর: নীতি কর্তব্যবাদ হলো সেই নৈতিক মতবাদ, যেখানে কিছু নীতি সর্বজনীন ও চিরন্তন বলে বিবেচিত হয় এবং প্রতিটি ব্যক্তিকে সেই নীতির ভিত্তিতে তার কর্তব্য পালন করতে বলা হয়। ইমানুয়েল কান্ট এই মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন।

২৭। নিম্নলিখিত বাক্যগুলোর বচন নির্ধারণ করো এবং তাদের গুণ ও পরিমাণ বিশ্লেষণ করো।

• দার্শনিকরা কখনোই সুখী হয় না।
  
• একমাত্র পরিশ্রমীরাই সফল হয়।
  
• সৈন্যরা কখনো বিশ্বাসঘাতক হয় না।
  
• কেবলমাত্র ছাত্ররাই সৎ।
  
• বেশিরভাগ মানুষ জ্ঞানী।
  
• খুব কম সংখ্যক স্বার্থপর ব্যক্তি অন্যকে সাহায্য করে।
  
• কখনো সখনো কবিরা সুবক্তা হন।
  
• কালো হাতি বলে কিছু নেই।
  
• সকল সৎ ব্যক্তি সুখী নয়।
  
• সাধারণভাবে মানুষ অশান্তি পছন্দ করে না।
  
• কেবল মেয়েরাই এই পদে উপযুক্ত।
  
• খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তি স্বার্থপর নয়।
  
• উটপাখি উড়তে পারে না।
• সকল মানুষই প্রতারক নয়।
• কুকুর বিড়াল নয়।
• যেখানে ধোঁয়া আছে সেখানে আগুন আছে।
• কিছু লেখক অর্থের জন্য লেখেন না
• মানুষ মাত্রই ভুল করে।
  

 

 ✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩:

১। অমাধ্যম অনুমান কী?
উত্তর: অমাধ্যম অনুমান হলো এমন একটি অনুমান যা নির্দিষ্ট প্রমাণ বা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি হয় না, এটি সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা বা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, "সে আজ অফিসে যাবে"—এটি একটি অমাধ্যম অনুমান, কারণ এখানে কোনো সঠিক প্রমাণ বা তথ্য নেই। এটি শুধুমাত্র ধারণা বা পূর্বশর্তের ওপর নির্ভরশীল।

২। সত্যতা ও বৈধতার মধ্যে পার্থক্য কী? বৈধ শক্তির সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে, এ কথা কী বোঝায়?
উত্তর: সত্যতা হলো কোনো বচন বা দাবির সঠিকতা যাচাই করা, যেখানে তথ্য সঠিক এবং প্রমাণিত হতে হবে। বৈধতা হলো যুক্তির কাঠামো, যেখানে premise থেকে conclusion এর সম্পর্ক সঠিকভাবে তৈরি হয়। বৈধ শক্তির সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে, কারণ এমনকি বৈধ যুক্তিতেও premise যদি মিথ্যা হয়, তবে conclusion ভুল হতে পারে।

৩। বৈধ যুক্তির আকার কী?
উত্তর: বৈধ যুক্তির আকার হলো এমন একটি কাঠামো যা premise থেকে সঠিকভাবে conclusion তৈরি করতে সহায়তা করে। এর মধ্যে premise এবং conclusion-এর সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, "সব মানুষ মর্ত্য, সুতরাং সোরেন মর্ত্য"—এটি একটি বৈধ যুক্তির আকার।

৪। বৈধ যুক্তি বলতে কী বোঝা যায়? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বৈধ যুক্তি হলো এমন একটি যুক্তি যেখানে premise থেকে সঠিকভাবে conclusion এ পৌঁছানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, "সব মানুষ মর্ত্য, সুতরাং সোরেন মর্ত্য"—এটি একটি বৈধ যুক্তি, কারণ premise থেকে conclusion ঠিকভাবে বেরিয়ে এসেছে।

৫। বৈধ ও অবৈধ যুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: বৈধ যুক্তি হলো এমন একটি যুক্তি যেখানে premise থেকে সঠিকভাবে conclusion এ পৌঁছানো হয়। অবৈধ যুক্তি হলো এমন যুক্তি যেখানে premise সঠিক না হলেও, conclusion তাতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। বৈধ যুক্তিতে premise সত্য হলে conclusion অবশ্যই সঠিক হবে, কিন্তু অবৈধ যুক্তিতে premise মিথ্যা হলেও conclusion ভুল হতে পারে।

৬। বচনের সত্যতা কত প্রকার এবং কী কী? সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: বচনের সত্যতা দুটি প্রকারে বিভক্ত: আংশিক সত্যতা এবং সম্পূর্ণ সত্যতা। আংশিক সত্যতা হলো এমন একটি বচন যা কিছুটা সত্য হলেও পুরোপুরি সঠিক নয়। সম্পূর্ণ সত্যতা হলো এমন বচন যা পুরোপুরি সঠিক এবং প্রমাণিত সত্যের ওপর নির্ভর করে। আংশিক সত্যতার মধ্যে কিছু ভুল থাকতে পারে, কিন্তু সম্পূর্ণ সত্যতায় সব কিছু সঠিক এবং যাচাইযোগ্য।

৭। নিরপেক্ষ পচনের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করো। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নিরপেক্ষ পচন হলো যুক্তির এক প্রকার বিশ্লেষণ, যেখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "সে একজন ছাত্র, ছাত্ররা সাধারণত ভালো হতে চায়, তাই সে ভালো ছাত্র হবে"—এখানে premise হলো "সে একজন ছাত্র" এবং "ছাত্ররা সাধারণত ভালো হতে চায়", আর conclusion হলো "সে ভালো ছাত্র হবে"।

৮। অবরোহ যুক্তি এবং আরোহ যুক্তি কী? উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অবরোহ যুক্তি হলো একটি যুক্তি যেখানে সাধারণ সত্য থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, "সব মানুষ মর্ত্য, সুতরাং রাহুল মর্ত্য"—এটি অবরোহ যুক্তির একটি উদাহরণ। আরোহ যুক্তি হলো বিশেষ থেকে সাধারণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পদ্ধতি। উদাহরণস্বরূপ, "সে একজন ভালো ছাত্র, সুতরাং সমাজে তার ভালো অবস্থান থাকতে পারে"—এটি আরোহ যুক্তি।

৯। অনুমান ও যুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? অনুমান এবং যুক্তি কি সমার্থক? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অনুমান হলো একটি ধারণা যা প্রমাণ বা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি হয় না, এটি সাধারণত অভিজ্ঞতা বা পূর্বজ্ঞান থেকে উদ্ভূত হয়। অন্যদিকে, যুক্তি হলো তথ্য ও প্রমাণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর একটি পদ্ধতি। অনুমান ও যুক্তি সমার্থক নয়, কারণ অনুমান মূলত অনুমানযোগ্য বিষয় বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি হয়, তবে যুক্তি সবসময় নির্ভরযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে থাকে।

১০। অবরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: অবরোহ যুক্তি এমন একটি যুক্তির পদ্ধতি যেখানে সাধারণ সত্য থেকে বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়। এটি বৃহত্তর দাবির উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, "সব মানুষ মর্ত্য, সুতরাং রাহুল মর্ত্য"—এটি একটি অবরোহ যুক্তি। এই প্রক্রিয়াতে সাধারণ সত্যের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়া যায়।

১১। অনুমান ও যুক্তি কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অনুমান হলো একটি ধারণা যা কোনো প্রমাণের ভিত্তিতে তৈরি হয় না, বরং এটি পূর্বের অভিজ্ঞতা বা নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, "আজ বৃষ্টি হতে পারে"—এটি একটি অনুমান, কারণ এখানে কোনো প্রমাণ নেই। অন্যদিকে, যুক্তি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা প্রমাণ বা তথ্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। উদাহরণস্বরূপ, "আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, তাই বৃষ্টি হতে পারে"—এটি যুক্তি, কারণ এতে প্রমাণ বা প্রেক্ষাপট রয়েছে।

১২। যুক্তিবিজ্ঞান বা তর্কবিজ্ঞান কী? যুক্তিবিজ্ঞানে আদর্শ বিজ্ঞান হিসেবে কেন বিবেচিত হয়?
উত্তর: যুক্তিবিজ্ঞান বা তর্কবিজ্ঞান হলো এক ধরনের বিজ্ঞান যা যুক্তি ও চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পদ্ধতি। এটি মানুষের চিন্তাভাবনাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রস্তাব করে। যুক্তিবিজ্ঞানকে আদর্শ বিজ্ঞান হিসেবে দেখা হয় কারণ এটি তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে। এতে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা অনুভূতির প্রভাব থাকে না, বরং এটি খোলামেলা চিন্তা ও বিশ্লেষণকে উৎসাহিত করে।

১৩। অমাধ্যম ও মাধ্যম অনুমানের মধ্যে পার্থক্য দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা করো।
১৪। অমাধ্যম অনুমানের প্রকারভেদ কী কী?
১৫। আবর্তন কী? একে অমাধ্যম অনুমান বলা হয় কেন?
১৬। 'O' বচনের ক্ষেত্রে আবর্তন সম্ভব হয় না কেন?
১৭। কোন পরিস্থিতিতে 'A' বচনের সরল আবর্তন সম্ভব?
১৮। দৃষ্টান্তসহ বিবর্তনের নিয়ম ব্যাখ্যা করো।

১৯। নিচের বাক্যগুলিকে বচনে পরিণত করে বিবর্তন করো:
(ক) সব বিজ্ঞানীরা সৎ নয়।
(খ) সব ভালো যার শেষ ভালো।
(গ) সব মানুষ ধার্মিক নয়।
(ঘ) বর্গাকার বৃত্ত নেই।

২০। সাপেক্ষ ন্যায় কী? এর শ্রেণীবিভাগ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 সাপেক্ষ ন্যায়: যে ন্যায় বা যুক্তি কোনো নির্দিষ্ট শর্ত বা পূর্বশর্তের উপর নির্ভরশীল, তাকে সাপেক্ষ ন্যায় বলা হয়। এটি শর্তযুক্ত বা অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, "যদি বৃষ্টি হয়, তবে রাস্তা ভিজবে"—এই বক্তব্যটি একটি সাপেক্ষ ন্যায়, কারণ এটি শর্তসাপেক্ষ (যদি বৃষ্টি হয়)।

👉 সাপেক্ষ ন্যায়ের শ্রেণীবিভাগ:
সাপেক্ষ ন্যায় সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে—
১. অনুপপাদ্য সাপেক্ষ ন্যায়: যে ন্যায়ের শর্ত পূরণ হলে সিদ্ধান্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে সত্য হয়ে যায়, তাকে অনুপপাদ্য সাপেক্ষ ন্যায় বলে। যেমন, "যদি সূর্য ওঠে, তবে দিন হবে।"
২. উপপাদ্য সাপেক্ষ ন্যায়: যে ন্যায়ের শর্ত পূরণ হলেও সিদ্ধান্তের সত্যতা নির্ভর করে অতিরিক্ত যুক্তির উপর, তাকে উপপাদ্য সাপেক্ষ ন্যায় বলে। যেমন, "যদি সে পড়াশোনা করে, তবে পরীক্ষায় ভালো করবে।"

২১। একটি গঠনমূলক প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ ন্যায় কখন বৈধ হয়? এর একটি বৈধ উদাহরণ দাও।

উত্তর:
👉 গঠনমূলক প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ ন্যায় বৈধ হওয়ার শর্ত:
গঠনমূলক প্রাকল্পিক নিরপেক্ষ ন্যায় তখনই বৈধ হয়, যখন প্রাকল্পিত (hypothetical) শর্ত এবং সিদ্ধান্তের মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ থাকে এবং শর্ত যদি সত্য হয়, তবে সিদ্ধান্তও অবশ্যই সত্য হবে। অর্থাৎ,
১. পূর্বশর্ত (Antecedent) সত্য হলে পরশর্ত (Consequent) অবশ্যই সত্য হতে হবে।
২. পূর্বশর্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো অসঙ্গতি থাকবে না।

👉 বৈধ উদাহরণ:
"যদি কেউ পরিশ্রম করে, তবে সে সফল হয়। রাহুল পরিশ্রম করেছে, সুতরাং সে সফল হয়েছে।"
এখানে পূর্বশর্ত "যদি কেউ পরিশ্রম করে, তবে সে সফল হয়" এবং "রাহুল পরিশ্রম করেছে" সত্য হলে, সিদ্ধান্ত "রাহুল সফল হয়েছে" যৌক্তিকভাবে বৈধ।

২২। কর্মবাদ কী? ভারতীয় নীতিবিদ্যার মূল লক্ষ্য কী?

উত্তর:
👉 কর্মবাদ: কর্মবাদ হল সেই দার্শনিক মতবাদ, যা বলে যে প্রতিটি কাজের (কর্মের) একটি ফল থাকে এবং জীবনের বর্তমান অবস্থা অতীত কর্মের ফলস্বরূপ। এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মবাদ অনুযায়ী, মানুষের কর্ম তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে এবং এটি পুনর্জন্ম ও মুক্তির (মোক্ষ) সঙ্গে জড়িত।

👉 ভারতীয় নীতিবিদ্যার মূল লক্ষ্য:
ভারতীয় নীতিবিদ্যার মূল লক্ষ্য হল মোক্ষ বা চূড়ান্ত মুক্তি অর্জন। এটি নৈতিক ও আত্মিক উন্নতির মাধ্যমে অর্জিত হয়। নীতিবিদ্যার মাধ্যমে মানুষ ধর্ম (নৈতিকতা), অর্থ (সমৃদ্ধি), কাম (ইচ্ছাপূরণ), এবং মোক্ষ (মুক্তি) —এই চারটি পুরুষার্থ সাধন করতে পারে।

২৩। ভারতীয় শাস্ত্রে 'ধর্ম' বলতে কী বোঝ?

উত্তর:
👉 ভারতীয় শাস্ত্রে 'ধর্ম' বলতে যা বোঝানো হয়:
ভারতীয় শাস্ত্রে 'ধর্ম' বলতে নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্বের সমষ্টিকে বোঝায়। এটি শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা, ন্যায়বোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতা অনুসরণ করার বিধান।

👉 ধর্মের বৈশিষ্ট্য:
১. নৈতিকতা ও ন্যায়বোধ: সত্য, অহিংসা, দয়া, ও ন্যায়পরায়ণতা ধর্মের অন্তর্ভুক্ত।
২. সামাজিক শৃঙ্খলা: সমাজে সুস্থ ও সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রার নিয়মাবলি ধর্ম নির্ধারণ করে।
৩. আধ্যাত্মিক মুক্তি: ধর্ম পালন মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষলাভের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৪. ব্যক্তিগত কর্তব্য: ব্যক্তি তার বর্ণ, আশ্রম ও অবস্থার ভিত্তিতে ধর্ম পালন করে।

ভারতীয় দর্শনে ধর্ম চার পুরুষার্থের (ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ) অন্যতম, যা মানুষের সামগ্রিক উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত করে।

২৪। মোক্ষ বা মুক্তি কয় প্রকারের হয়? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর:
👉 মোক্ষ বা মুক্তির প্রকারভেদ:
ভারতীয় দর্শনে মোক্ষ বা মুক্তি প্রধানত চার প্রকারের হয়—

১. সালোক্য মুক্তি: ভগবানের একই লোক বা ধামে অবস্থান করা।
২. সামীপ্য মুক্তি: ভগবানের নিকটবর্তী হওয়া।
৩. সরূপ্য মুক্তি: ভগবানের মতো রূপ ধারণ করা।
৪. সায়ুজ্য মুক্তি: ভগবানের সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্ম হয়ে যাওয়া।

এগুলোর মাধ্যমে আত্মা চূড়ান্ত মুক্তি লাভ করে এবং পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়।

২৫। নিষ্কাম কর্মের মূল সূত্রগুলি কী কী?

উত্তর:
👉 নিষ্কাম কর্মের মূল সূত্রগুলি:
নিষ্কাম কর্ম হল এমন কর্ম, যা কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ফলের আশা ছাড়াই করা হয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় এই ধারণা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এর মূল সূত্রগুলি হল—

১. ফলের আকাঙ্ক্ষাহীনতা: কর্ম করতে হবে, কিন্তু তার ফলের প্রতি আসক্ত হওয়া যাবে না।
২. কর্তব্যপরায়ণতা: শুধু নিজের কর্তব্য পালন করতে হবে, ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাব না করে।
৩. সমদৃষ্টি বা সমত্ববোধ: সফলতা বা ব্যর্থতা, সুখ বা দুঃখ—সবকিছুকে সমানভাবে গ্রহণ করতে হবে।
৪. ভগবান বা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ: সকল কর্ম ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে করতে হবে, যাতে অহংবোধ জন্ম না নেয়।
৫. আসক্তিহীনতা: পার্থিব বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় আসক্তি না রেখে নির্লিপ্তভাবে কর্ম করতে হবে।

এই সূত্রগুলোর মাধ্যমে নিষ্কাম কর্ম যোগের আদর্শ অনুসরণ করে আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষ লাভ সম্ভব।

২৬। ত্রিপিটক কী? এটি কয় ভাগে বিভক্ত এবং সেগুলো কী কী?

উত্তর:
👉 ত্রিপিটক:
ত্রিপিটক হল বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা পালি ভাষায় রচিত হয়েছে। এটি মূলত ভগবান গৌতম বুদ্ধের উপদেশ, শিষ্যদের নিয়ম ও দর্শনের সংকলন। "ত্রিপিটক" শব্দের অর্থ "তিনটি পিটক" বা "তিনটি ঝুড়ি", যা বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিক শিক্ষাগুলিকে সংরক্ষিত রাখে।

👉 ত্রিপিটকের বিভাগ:
ত্রিপিটক তিন ভাগে বিভক্ত—

১. বিনয় পিটক: এটি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের (ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীদের) জন্য নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলার বিধান সংরক্ষণ করে।
২. সুত্ত পিটক: এতে গৌতম বুদ্ধের ভাষণ, ধর্মীয় আলোচনা ও নীতিশিক্ষামূলক উপদেশ সংকলিত হয়েছে।
৩. অভিধর্ম পিটক: এটি দর্শন ও মনোবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে বৌদ্ধ ধর্মের গভীর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রদান করে।

এই তিনটি পিটকের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের মূল উপদেশ, শৃঙ্খলা ও দার্শনিক ব্যাখ্যা সংরক্ষিত রয়েছে।

২৭। নীতিবিদ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তর:
👉 নীতিবিদ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি:

১. নৈতিকতার বিশ্লেষণ: এটি নৈতিকতা, ন্যায়-অন্যায়, এবং সঠিক-ভুলের ধারণাগুলোর বিশদ বিশ্লেষণ করে।
২. মানব আচরণের নির্দেশনা: মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে কীভাবে আচরণ করা উচিত, সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
৩. আদর্শ ও মূল্যবোধ: এটি ন্যায়, সত্য, সততা, এবং মানবিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়।
৪. নৈতিক দ্বিধার সমাধান: বিভিন্ন জটিল নৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজে।
৫. সর্বজনীনতা: নীতিবিদ্যার অনেক তত্ত্ব সর্বজনীন, যা জাতি, ধর্ম, ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে প্রযোজ্য।
৬. দার্শনিক ভিত্তি: এটি নৈতিকতার বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ ও যুক্তির সাহায্যে ন্যায়বোধ ব্যাখ্যা করে।
৭. ব্যবহারিক প্রয়োগ: ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি, আইন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।

নীতিবিদ্যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চাকে উৎসাহিত করে।

২৮। নৈতিক ও নীতিবহির্ভূত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্যগুলি কী কী?

উত্তর:

বিষয়	নৈতিক ক্রিয়া	নীতিবহির্ভূত ক্রিয়া
সংজ্ঞা	যে ক্রিয়া ন্যায়, সত্য ও সৎ মূল্যবোধ অনুসারে সম্পন্ন হয়।	যে ক্রিয়া অন্যায়, অসততা ও অনৈতিকতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।
প্রভাব	ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি করে।	সমাজ ও ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মূল্যবোধ	সত্য, সততা, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।	মিথ্যা, প্রতারণা, দুর্নীতি, অসততা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।
উদাহরণ	অসহায়দের সাহায্য করা, প্রতারণা না করা, যথাযথ কর্তব্য পালন করা।	ঘুষ গ্রহণ, মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা।
ফলাফল	ইতিবাচক ও সম্মানজনক প্রতিফলন আনে।	নেতিবাচক পরিণতি ও শাস্তির কারণ হতে পারে।

 

✍️প্রতিটি প্রশ্নের মান-৬:

১। নিরপেক্ষ বচন কী? উদাহরণসহ নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। বচনে সংযোজকের ভূমিকা কী?

উত্তর:

👉 নিরপেক্ষ বচন:
যে বচনে কোনো নির্দিষ্ট শর্ত বা নির্ভরতা থাকে না এবং যা সর্বদা সত্য বা মিথ্যা হতে পারে, তাকে নিরপেক্ষ বচন বলে। এটি কোনো শর্ত বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে না।

উদাহরণ:

• "সূর্য পূর্ব দিক থেকে ওঠে।" (এটি সর্বদা সত্য)
• "২ একটি মৌলিক সংখ্যা নয়।" (এটি সর্বদা মিথ্যা)

👉 সাপেক্ষ বচন:
যে বচনের সত্যতা বা মিথ্যাতা নির্দিষ্ট শর্তের ওপর নির্ভর করে, তাকে সাপেক্ষ বচন বলে।

উদাহরণ:

• "যদি বৃষ্টি হয়, তবে আমি ছাতা নিয়ে যাব।"
• "তুমি যদি কঠোর পরিশ্রম করো, তবে সফল হবে।"

👉 নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচনের মধ্যে পার্থক্য:

বিষয়	নিরপেক্ষ বচন	সাপেক্ষ বচন
সংজ্ঞা	যে বচন শর্তবিহীনভাবে সত্য বা মিথ্যা হয়।	যে বচনের সত্যতা বা মিথ্যাতা শর্তের ওপর নির্ভর করে।
নির্ভরতা	কোনো শর্তের ওপর নির্ভর করে না।	নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে সত্য হয়।
উদাহরণ	"পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।"	"যদি বর্ষাকাল হয়, তবে নদী পূর্ণ থাকবে।"

👉 বচনে সংযোজকের ভূমিকা:
সংযোজক (Conjunction) হলো এমন শব্দ বা প্রতীক, যা দুটি বা ততোধিক বচনকে যুক্ত করে এবং তাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এটি সত্য-মিথ্যার মূল্যায়ন নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রধান সংযোজক ও তাদের ভূমিকা:

1. ঔপপত্তিক সংযোজক (Logical Connective):

   • "এবং" (∧): দুটি বচন একসাথে সত্য হলে পুরো বচন সত্য হয়।
   • "অথবা" (∨): যেকোনো একটি সত্য হলে পুরো বচন সত্য হয়।
   • "যদি... তবে" (→): পূর্বশর্ত পূরণ হলে ফলাফল সত্য হয়।
   • "যদি এবং কেবল যদি" (↔): উভয় বচন একই হলে সত্য হয়।

2. ব্যাকরণগত সংযোজক:

   • যেমন: এবং, অথবা, কিন্তু, কারণ, যদিও ইত্যাদি।
   • "আমি পড়াশোনা করছি এবং গান শুনছি।"

👉 উপসংহার:
নিরপেক্ষ বচন শর্তবিহীন সত্য বা মিথ্যা হয়, কিন্তু সাপেক্ষ বচনের সত্যতা নির্দিষ্ট শর্তের ওপর নির্ভর করে। সংযোজক বচনের বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, যা তাদের সত্য-মিথ্যা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২। বচন কী? বচন ও বাক্যের মধ্যে পার্থক্য করো। নিরপেক্ষ বচনের পদের ব্যাপ্যতা কী?

উত্তর: 👉 দুটি পদের মধ্যে কোনো একটি সম্পর্কের গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানকে বচন বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ: "সকল মানুষ মরণশীল প্রাণী।"

👉 বাক্য ও বচনের মধ্যে পার্থক্য:

বিষয়	বাক্য	বচন
সংজ্ঞা	অর্থযুক্ত শব্দ বা শব্দের সমষ্টি।	দুটি পদের মধ্যে সম্বন্ধের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি।
গঠন	দুটি অংশ থাকে—উদ্দেশ্য ও বিধেয়।	চারটি অংশ থাকে—পরিমাণ, উদ্দেশ্য, বিধেয় ও সংযোজক।
আকৃতি	নির্দিষ্ট আকার থাকে না।	নির্দিষ্ট আকার থাকে।
প্রকারভেদ	নির্দেশমূলক, প্রশ্নবোধক, আদেশমূলক ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকারের হয়।	কেবল নির্দেশক বা ঘোষক বাক্যের অন্তর্গত।
কাল	অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের হতে পারে।	কেবল বর্তমান কালের হয়।
সত্য-মিথ্যা	সত্য-মিথ্যার প্রশ্ন নেই।	সত্য-মিথ্যা নির্ণয়যোগ্য।
নঙর্থক চিহ্ন	বিধেয়র অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়।	সংযোজকের অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়।
ব্যাপ্তি	ব্যপ্তি বেশি।	ব্যপ্তি কম।
সম্পর্ক	সব বচন বাক্য হয়।	সব বাক্য বচন নয়।
গুণ-পরিমাণ	গুণ-পরিমাণ উল্লেখ থাকে না।	গুণ-পরিমাণ উল্লেখ থাকে।

👉একটি বচনে দুটি পদ থাকে—উদ্দেশ্যপদ ও বিধেয়পদ। এই দুই পদের মধ্যে যেকোনো একটি বা উভয়ই যখন সম্পূর্ণভাবে তার অর্থ বা বাচ্যার্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বলা হয় ব্যাপ্য পদ এবং এই ধর্মকে বলে ব্যাপ্যতা।

ব্যাপ্যতার দুটি নিয়ম:

১. সামান্য বচন (A, E) শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপদকে ব্যাপ্য করে।
২. নঙর্থক বচন (E, O) শুধুমাত্র বিধেয়পদকে ব্যাপ্য করে।

৩। আবর্তন কী? সরল আবর্তন ও সীমিত আবর্তনের মধ্যে পার্থক্য করো।

উত্তর:

আবর্তন (Conversion)

যে অমাধ্যম অনুমানে হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ যথাক্রমে সিদ্ধান্তের বিধেয় ও উদ্দেশ্য পদ হয়, এবং উভয়ের গুণ ও অর্থ অপরিবর্তিত থাকে, তাকে আবর্তন বলা হয়। যে বচন থেকে সিদ্ধান্ত নির্গত হয় তাকে আবর্তনীয় (Convertend) এবং যে সিদ্ধান্ত ওই আবর্তনীয় বচন থেকে নিঃসৃত হয়, তাকে আবর্তিত (Converse) বলে।

উদাহরণ:
আবর্তনীয়: কোনো কোনো ভারতীয় হয় বাঙালি।
আবর্তিত: কোনো কোনো বাঙালি হয় ভারতীয়।

---

সরল ও অ-সরল/সীমিত আবর্তনের পার্থক্য

বিষয়	সরল আবর্তন (Simple Conversion)	অ-সরল আবর্তন (Conversion by Limitation)
সংজ্ঞা	যে আবর্তনে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে পরিমাণগত কোনো পরিবর্তন ঘটে না।	যে আবর্তনে হেতুবাক্যের পরিমাণ সিদ্ধান্তে হ্রাস পায়।
হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের সম্পর্ক	উভয়ই সমার্থক হয়।	উভয়ই সমার্থক নয়।
পরিমাণগত পরিবর্তন	হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্ত একই পরিমাণের হয়।	সিদ্ধান্তের পরিমাণ হেতুবাক্যের তুলনায় কম হয়।
যেসব বচনে প্রযোজ্য	E এবং I বচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।	A বচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
উদাহরণ	হেতুবাক্য: কোনো মানুষ নয় অমর ।(E) সিদ্ধান্ত: কোনো অমর নয় মানুষ ।(E)	হেতুবাক্য: সকল মানুষ হয় মরণশীল। (A) সিদ্ধান্ত: কোনো কোনো মরণশীল জীব হয় মানুষ (I)
পুনরাবর্তন করলে মূল বচন ফিরে পাওয়া যায়?	হ্যাঁ, পুনরাবর্তন করলে মূল বচন ফিরে পাওয়া যায়।	না, পুনরাবর্তন করলে মূল বচন ফিরে পাওয়া যায় না।

৪। বিবর্তন কী? বিবর্তনকে কেন অমাধ্যম অনুমান বলা হয়? দৃষ্টান্তসহ বিবর্তনের নিয়মগুলি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:

👉বিবর্তন বা প্রতিবর্তন:

যে অমাধ্যম অনুমানে প্রদত্ত বচনের গুণ পরিবর্তন করে এবং সেই বচনের বিধেয়ের বিপরীত শব্দকে সিদ্ধান্তের বিধেয় হিসেবে গ্রহণ করে একটি নতুন বচন গঠিত হয়, তাকে বিবর্তন বা প্রতিবর্তন বলা হয়।

বিবর্তনের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

• আশ্রয় বাক্যটিকে বলা হয় বিবর্তনীয়।
• বিবর্তনের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত গঠিত হয়, তাকে বলা হয় বিবর্তিত।

উদাহরণ:
বিবর্তনীয়: সকল মানুষ মরণশীল (A)
বিবর্তিত: কোনো মানুষ নয় অমরণশীল (E)

👉বিবর্তনের নিয়ম:

বিবর্তনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মগুলি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে:

1. উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত থাকবে: আশ্রয় বাক্য ও সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য পদ একই থাকবে।
2. বিধেয়ের বিপরীত শব্দ গ্রহণ করা হবে: আশ্রয় বাক্যের বিধেয়ের বিপরীত শব্দ সিদ্ধান্তের বিধেয় হবে।
3. গুণের পরিবর্তন: আশ্রয় বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত নঙ্গার্থক হবে, আর আশ্রয় বাক্য নঙ্গার্থক হলে সিদ্ধান্ত সদর্থক হবে। এটি গুণের নিয়ম নামে পরিচিত।
4. পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকবে: আশ্রয় বাক্য সামান্য হলে সিদ্ধান্তও সামান্য হবে, আশ্রয় বাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তও বিশেষ হবে। এটিকে পরিমাণের নিয়ম বলা হয়।

বিবর্তনের প্রয়োগ

বিবর্তনের নিয়ম অনুসারে A, E, I, এবং O চার প্রকার বচনের বিবর্তিত রূপ নির্ধারণ করা যায়।

A বচনের বিবর্তন

বিবর্তনীয়: সকল মানুষ মরণশীল (A)
বিবর্তিত: কোনো মানুষ নয় অমরণশীল (E)

E বচনের বিবর্তন

বিবর্তনীয়: কোনো মানুষ নয় পূর্ণ জীব (E)
বিবর্তিত: সকল মানুষ হয় অ-পূর্ণ জীব (A)

I বচনের বিবর্তন

বিবর্তনীয়: কোনো কোনো মানুষ হয় সৎ ব্যক্তি (I)
বিবর্তিত: কোনো কোনো মানুষ নয় অসৎ ব্যক্তি (O)

O বচনের বিবর্তন

বিবর্তনীয়: কোনো কোনো মানুষ নয় স্বার্থপর ব্যক্তি (O)
বিবর্তিত: কোনো কোনো মানুষ হয় অ-স্বার্থপর ব্যক্তি (I)

👉বিবর্তনকে অমাধ্যম অনুমান বলার কারণ:

বিবর্তন এক প্রকার অমাধ্যম অনুমান, কারণ এখানে আশ্রয় বাক্যের ভিত্তিতে সরাসরি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত নির্ধারণের জন্য কোনো তৃতীয় বচনের প্রয়োজন হয় না। তাই এটি অমাধ্যম অনুমানের অন্তর্ভুক্ত।

৫। অমাধ্যম অনুমান কী? উদাহরণসহ মাধ্যম ও অমাধ্যম অনুমানের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 অমাধ্যম অনুমান:
যে অনুমান কেবল প্রত্যক্ষ জ্ঞান (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা) বা উপমার ভিত্তিতে গঠিত হয় এবং যেখানে "মাধ্যম" বা মধ্যস্থকারী উপাদান অনুপস্থিত থাকে, তাকে অমাধ্যম অনুমান বলা হয়। অর্থাৎ, এখানে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কোনো মাধ্যম (Hetu/Reason) ব্যবহৃত হয় না। এটি সরাসরি উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।

উদাহরণ:

• কেউ যদি সমুদ্রের পৃষ্ঠ দেখে এবং বলে "সমুদ্র গভীর", তাহলে এটি অমাধ্যম অনুমান। কারণ এখানে কোনো যুক্তিগ্রাহ্য "মাধ্যম" ব্যবহার করা হয়নি, বরং অভিজ্ঞতা বা সাধারণ উপলব্ধি থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

👉 মাধ্যম অনুমান:
যে অনুমান একটি যুক্তিসিদ্ধ মাধ্যম বা যুক্তিগ্রাহ্য কারণের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়, তাকে মাধ্যম অনুমান বলে। এখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি স্পষ্ট Hetu (কারণ) বা মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ:

• "পর্বতে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, তাই সেখানে আগুন আছে।"
  এখানে ধোঁয়া (Hetu) মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, কারণ আগুন থাকলেই ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।

👉 মাধ্যম ও অমাধ্যম অনুমানের মধ্যে পার্থক্য:

বিষয়	মাধ্যম অনুমান	অমাধ্যম অনুমান
সংজ্ঞা	যুক্তিযুক্ত মাধ্যম বা কারণ ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।	প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা উপমার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উদাহরণ	"ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকে, তাই এই পাহাড়ে আগুন আছে।"	"সমুদ্র গভীর" (কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি অনুমান)
যুক্তির ভিত্তি	কারণ বা Hetu ব্যবহার করা হয়।	অভিজ্ঞতা বা অনুমান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নির্ভরযোগ্যতা	সাধারণত যুক্তিসিদ্ধ এবং প্রমাণযোগ্য।	অনুমানের ওপর নির্ভরশীল, সবসময় যুক্তিসিদ্ধ নাও হতে পারে।

👉 উপসংহার:
মাধ্যম অনুমান যুক্তিসিদ্ধ কারণ ব্যবহার করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যেখানে অমাধ্যম অনুমান কেবল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা উপমার ওপর নির্ভর করে। ফলে মাধ্যম অনুমান বেশি নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণযোগ্য, whereas অমাধ্যম অনুমান তুলনামূলকভাবে দুর্বল কারণ এতে যুক্তিসিদ্ধ মাধ্যম অনুপস্থিত।

।

৬। পুরুষার্থ কী? ভারতীয় নীতিবিদ্যায় কত প্রকার পুরুষার্থ স্বীকৃত হয়েছে? এর ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর:
👉 পুরুষার্থের সংজ্ঞা:
ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ বলতে মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে বোঝানো হয়। এটি এমন কিছু যা একজন ব্যক্তি অর্জন করতে চায় এবং যার মাধ্যমে সে নিজের জীবনকে পরিপূর্ণ করতে পারে। পুরুষার্থ শব্দটি “পুরুষ” (মানুষ) এবং “অর্থ” (লক্ষ্য) শব্দের সংযোগে গঠিত, যার অর্থ মানবজীবনের উদ্দেশ্য।

👉 পুরুষার্থের প্রকারভেদ ও ব্যাখ্যা:
ভারতীয় নীতিবিদ্যায় চার প্রকার পুরুষার্থ স্বীকৃত হয়েছে—

১. ধর্ম (নৈতিকতা ও কর্তব্য)

• ধর্ম বলতে সেই নৈতিক আদর্শ বোঝানো হয় যা সমাজ ও ব্যক্তির কল্যাণ নিশ্চিত করে।
• এটি সত্য, ন্যায়, দয়া, কর্তব্য ও শৃঙ্খলার ওপর ভিত্তি করে গঠিত।
• ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ধর্ম পালন করলে সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে।

২. অর্থ (জীবিকার উপার্জন ও সম্পদ সংগ্রহ)

• জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা থাকা জরুরি, তাই অর্থ উপার্জন পুরুষার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
• তবে অর্থ অর্জন অবশ্যই ধর্মের পথে থেকে করা উচিত, অন্যথায় এটি অন্যায় ও ভোগবিলাসিতার কারণ হতে পারে।

৩. কাম (ইচ্ছা ও ভোগবাসনা পূরণ)

• কাম বলতে জীবনের বিভিন্ন বৈধ ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার পূরণ বোঝানো হয়, যেমন—সুখ, প্রেম, পারিবারিক জীবন, শিল্প, সংস্কৃতি ও বিনোদন।
• এটি মানবজীবনের প্রাকৃতিক চাহিদা, তবে এটি নিয়ন্ত্রিত ও নৈতিকভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।

৪. মোক্ষ (চূড়ান্ত মুক্তি বা আত্মজ্ঞান)

• মোক্ষ হল পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি এবং আত্মার চূড়ান্ত মুক্তির অবস্থা।
• এটি পরম শান্তি ও চিরস্থায়ী আনন্দ লাভের মাধ্যম।
• মোক্ষ অর্জনের জন্য জ্ঞান, ভক্তি, যোগ ও কর্মযোগ পালন করা হয়।

👉 উপসংহার:
ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—এই চারটি পুরুষার্থ একসঙ্গে মানবজীবনের সামগ্রিক লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ধর্মের ভিত্তিতে অর্থ ও কাম অর্জন করলে জীবনে ভারসাম্য আসে এবং পরিশেষে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব হয়।

৭। পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 পুরুষার্থ হিসেবে মোক্ষের ধারণা:
ভারতীয় দর্শনে পুরুষার্থ বলতে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বোঝানো হয়। চারটি প্রধান পুরুষার্থ হলো— ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ। এর মধ্যে মোক্ষ সর্বোচ্চ পুরুষার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি জীবের চূড়ান্ত মুক্তি ও আত্মজ্ঞান লাভের লক্ষ্যে উপনীত হয়।

👉 মোক্ষের ব্যাখ্যা:
মোক্ষ হল পুনর্জন্মের চক্র (সংশার) থেকে মুক্তি পাওয়া এবং চিরস্থায়ী আনন্দ বা শাশ্বত সত্যের উপলব্ধি করা। এটি আত্মার পরম অবস্থান এবং ভৌতিক বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তির নাম।

👉 মোক্ষের বৈশিষ্ট্য:

১. পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি:

• হিন্দু দর্শন মতে, কর্মফল অনুসারে জীব পুনর্জন্ম লাভ করে, কিন্তু মোক্ষ প্রাপ্ত হলে এই চক্র শেষ হয়।

২. আত্মজ্ঞানের উপলব্ধি:

• মোক্ষ অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি ব্রহ্ম বা চূড়ান্ত বাস্তবতার সঙ্গে একাত্ম হয়।
• উপনিষদে বলা হয়েছে: “অহং ব্রহ্মাস্মি” (আমি ব্রহ্ম)।

৩. সকল ভোগ-আসক্তির পরিত্যাগ:

• মোক্ষপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইন্দ্রিয়সুখ, কামনা ও ভোগবিলাস থেকে মুক্ত হয়ে চিরস্থায়ী শান্তি লাভ করে।

৪. শান্তি ও আনন্দের অবস্থা:

• এটি এমন এক অবস্থা যেখানে দুঃখ, মোহ, অহংকার, লোভ ও দ্বন্দ্ব থাকে না।

👉 বিভিন্ন ভারতীয় দর্শনে মোক্ষ:
১. বৈদান্তিক দর্শন: ব্রহ্মজ্ঞান লাভের মাধ্যমে আত্মার চূড়ান্ত মুক্তিই মোক্ষ।
২. যোগ দর্শন: ধ্যান ও যোগ সাধনার মাধ্যমে চিত্তের স্থিতিশীলতা অর্জন করে মোক্ষ পাওয়া যায়।
৩. ন্যায়-কৈবল্য দর্শন: সঠিক জ্ঞান বা যুক্তি মোক্ষের পথ খুলে দেয়।
৪. বৌদ্ধ দর্শন: নির্বাণই প্রকৃত মুক্তি, যেখানে সকল তৃষ্ণা ও দুঃখের অবসান ঘটে।
৫. জৈন দর্শন: পুণ্য অর্জন ও অশুভ কর্মের বিনাশের মাধ্যমে আত্মার মুক্তিই মোক্ষ।

👉 উপসংহার:
মোক্ষ হল মানবজীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য, যা আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এটি পার্থিব বন্ধন ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে চূড়ান্ত মুক্তি, যেখানে শুধু শান্তি, জ্ঞান ও আনন্দ বিরাজ করে।

৮। ভারতীয় দর্শনে কর্মের গুরুত্ব কী?

উত্তর:
👉 ভারতীয় দর্শনে কর্মের গুরুত্ব:
ভারতীয় দর্শনে কর্ম (কাজ বা ক্রিয়া) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। কর্ম শুধু মানবজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, বরং এটি ব্যক্তির ভবিষ্যৎ ও মোক্ষলাভের পথ নির্ধারণ করে। বিভিন্ন ভারতীয় দার্শনিক মতবাদ কর্মের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছে।

👉 ভারতীয় দর্শনে কর্মের গুরুত্বের দিকগুলো:

১. কর্ম ও পুনর্জন্ম:

• হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন অনুসারে, কর্মের ফল পুনর্জন্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
• পূর্বজন্মের কর্ম বর্তমান জীবনে সুখ-দুঃখের কারণ এবং বর্তমান কর্ম ভবিষ্যতের ভাগ্য নির্ধারণ করে।

২. কর্মযোগ ও মোক্ষ:

• গীতায় নিষ্কাম কর্মযোগের মাধ্যমে মোক্ষ লাভের কথা বলা হয়েছে।
• কর্মফল ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে বন্ধনমুক্তি সম্ভব।

৩. সামাজিক দায়িত্ব:

• কর্ম শুধু আত্মউন্নতির মাধ্যম নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণেও গুরুত্বপূর্ণ।
• ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত কর্মধর্ম অনুসারে ব্যক্তি তার অবস্থান অনুযায়ী কর্তব্য পালন করলে সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে।

৪. নৈতিকতা ও ধর্ম:

• সৎ কর্ম ব্যক্তি ও সমাজকে উন্নতির পথে পরিচালিত করে।
• কর্মই মানুষের প্রকৃত ধর্ম (স্বধর্ম) নির্ধারণ করে।

৫. বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে কর্মের ব্যাখ্যা:

• বৌদ্ধ ধর্ম মতে, কর্মই দুঃখ ও তার মুক্তির কারণ।
• জৈন দর্শনে বলা হয়েছে, পুণ্য ও পাপ কর্মের ফলাফল অনুযায়ী জীবের গতি নির্ধারিত হয়।

👉 উপসংহার:
ভারতীয় দর্শনে কর্ম কেবল দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি জীবনের মূল ভিত্তি। কর্মের দ্বারা মানুষ নিজের ভাগ্য গঠন করতে পারে, সমাজের উন্নতি সাধন করতে পারে এবং পরিশেষে মোক্ষ বা চরম মুক্তি অর্জন করতে পারে।

৯। গীতায় বর্ণিত নিষ্কাম কর্মতত্ত্ব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 নিষ্কাম কর্মতত্ত্ব:
নিষ্কাম কর্মতত্ত্ব হল শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতায় বর্ণিত এক গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক মতবাদ, যা কর্মের প্রতি আসক্তি ত্যাগ করে নির্লিপ্তভাবে কর্ম সম্পাদনের উপদেশ দেয়। গীতায় বলা হয়েছে, ফলের প্রতি আকাঙ্ক্ষা না রেখে শুধুমাত্র কর্তব্যপরায়ণ হয়ে কর্ম করাই প্রকৃত ধর্ম।

👉 গীতায় নিষ্কাম কর্মতত্ত্বের মূল বিষয়বস্তু:

১. কর্ম করার অধিকার, কিন্তু ফলের অধিকার নেই

• গীতায় (২.৪৭) বলা হয়েছে:
  "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।"
  অর্থাৎ, মানুষের কর্ম করার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মের ফলের ওপর তার কোনো অধিকার নেই।

2. ফলপ্রত্যাশা না রেখে কর্ম করা

   • গীতার মতে, কর্ম করতে হবে, কিন্তু তার ফলের প্রতি আসক্ত থাকা যাবে না।
   • আসক্তি মুক্ত হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্ম সম্পাদন করাই প্রকৃত কর্মযোগ।

3. কর্মফল ঈশ্বরের হাতে সমর্পণ করা

   • কর্মের ফলের চিন্তা না করে সেটিকে ঈশ্বরের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে।
   • এইভাবে কর্ম করলে মানুষ দুঃখ ও বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে পারে।

4. স্বার্থহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ কর্ম

   • স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা ছাড়া কর্ম করলে তা মুক্তির পথ সুগম করে।
   • অহংকার, লোভ ও মোহ পরিহার করে কর্ম করতে হবে।

👉 উপসংহার:
নিষ্কাম কর্মতত্ত্বের মূল শিক্ষা হল, কর্ম করতেই হবে, কিন্তু ফলের প্রতি আসক্তি না রেখে তা নির্লিপ্তভাবে সম্পাদন করা উচিত। এই দর্শন অনুসরণ করলে ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করতে পারে এবং জীবনে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখতে পারে।

১০। আর্যসত্য কী? বৌদ্ধ দর্শনে চারটি আর্যসত্য কী কী? এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করো।

উত্তর:
👉 আর্যসত্য:
আর্যসত্য হল গৌতম বুদ্ধ প্রদত্ত চারটি মৌলিক সত্য, যা বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি গঠন করে। এই সত্যগুলির মাধ্যমে জীবনের দুঃখ ও তার নিরসনের পথ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

👉 চারটি আর্যসত্যের বিস্তারিত আলোচনা:

১. দুঃখ (জীবন দুঃখময়)

• বুদ্ধ বলেছেন, জন্ম, বার্ধক্য, রোগ, মৃত্যু, বিচ্ছেদ, আকাঙ্ক্ষার অপূর্ণতা ইত্যাদি সবই দুঃখের কারণ।
• জীবনে দুঃখ অনিবার্য এবং এটি প্রত্যেক মানুষের অভিজ্ঞতার অংশ।

২. দুঃখসমুদয় (দুঃখের কারণ)

• দুঃখের মূল কারণ হল তৃষ্ণা বা আকাঙ্ক্ষা (তৃষ্ণা তিন প্রকার—কামতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা, বিভবতৃষ্ণা)।
• লোভ, আসক্তি, অজ্ঞতা ও কামনা দুঃখকে বৃদ্ধি করে এবং পুনর্জন্মের কারণ হয়।

৩. দুঃখনিরোধ (দুঃখের নিরসন সম্ভব)

• যদি তৃষ্ণা ও আসক্তি নষ্ট করা যায়, তবে দুঃখের চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
• নির্বাণ বা মোক্ষ অর্জন করলে মানুষ সম্পূর্ণভাবে দুঃখমুক্ত হতে পারে।

৪. দুঃখনিরোধগামিনী প্রতিপদ (দুঃখ নিরসনের পথ)

• দুঃখ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ অনুসরণ করা।
• এই আটটি পথ অনুসরণ করলে মানুষ আত্মশুদ্ধি ও নির্বাণ লাভ করতে পারে।

এই চারটি আর্যসত্য বৌদ্ধ দর্শনের মৌলিক ভিত্তি, যা জীবনের প্রকৃত সত্য উপলব্ধি ও দুঃখমুক্তির পথ নির্দেশ করে।

১১। দ্বাদশনিদান বা ভবচক্র কী? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 দ্বাদশনিদান বা ভবচক্র:
দ্বাদশনিদান (১২টি নির্গমন কারণ) হল বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, যা প্রতীত্যসমুৎপাদ বা পরস্পরনির্ভর উৎপত্তির সূত্র অনুসারে জীবন ও পুনর্জন্মের চক্র ব্যাখ্যা করে। এটি ভবচক্র বা অস্তিত্বের চক্র নামে পরিচিত।

👉 দ্বাদশনিদানের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:

১. অবিদ্যা (অজ্ঞতা) – প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অজ্ঞানতা।
2. সংস্কার (প্রবৃত্তি) – পূর্বকর্ম ও মানসিক গঠন।
3. বিজ্ঞান (চেতনা) – নতুন জীবনের সূচনা।
4. নামরূপ (মন ও শরীর) – শারীরিক ও মানসিক গঠন।
5. ষড়ায়তন (ষড়েন্দ্রিয়) – ছয় ইন্দ্রিয় (চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, দেহ, মন)।
6. স্পর্শ (সংযোগ) – ইন্দ্রিয় ও বাইরের বিশ্বের সংযোগ।
7. বেদনা (অনুভূতি) – সুখ-দুঃখের অনুভূতি।
8. তৃষ্ণা (আসক্তি) – সুখের আকাঙ্ক্ষা ও কামনা।
9. উপাদান (আসক্তি বৃদ্ধি) – প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও আসক্তি।
10. ভাব (হওয়া) – পুনর্জন্মের পূর্ব প্রস্তুতি।
11. জাতি (জন্ম) – নতুন জন্ম গ্রহণ।
12. জরা-মরণ (বার্ধক্য ও মৃত্যু) – জীবনের পরিণতি ও পুনর্জন্মের চক্র।

এই চক্রটি জীবন, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের কারণ ব্যাখ্যা করে এবং বুদ্ধের মতে, নির্বাণ লাভের মাধ্যমে এই চক্র থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।

১২। অষ্টাঙ্গিক মার্গ কী? এটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
👉 অষ্টাঙ্গিক মার্গ:
অষ্টাঙ্গিক মার্গ হল বৌদ্ধ ধর্মের একটি মৌলিক শিক্ষা, যা গৌতম বুদ্ধ প্রদত্ত চতুরার্য সত্যের অন্তর্ভুক্ত। এটি মোক্ষ বা নির্বাণ লাভের জন্য অনুসরণীয় আটটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পথ নির্দেশ করে।

👉 অষ্টাঙ্গিক মার্গের ব্যাখ্যা:

১. সম্যক দৃষ্টি (সঠিক দৃষ্টি): জীবনের বাস্তবতা ও চতুরার্য সত্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।
২. সম্যক সংকল্প (সঠিক সংকল্প): অহিংসা, দয়া ও অসক্তিহীনতার মাধ্যমে চিন্তা করা।
৩. সম্যক বাক্য (সঠিক বাক্য): মিথ্যা, অশ্লীল ও কটু বাক্য পরিহার করে সত্য ও সদ্ভাবপূর্ণ কথা বলা।
৪. সম্যক কর্ম (সঠিক কাজ): হত্যা, চুরি, অসদাচরণ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
৫. সম্যক আজীবিকা (সঠিক জীবনযাপন): নৈতিকভাবে সৎ উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করা।
৬. সম্যক প্রচেষ্টা (সঠিক চেষ্টা): পাপ ও খারাপ চিন্তা দূর করে সৎ কাজের জন্য চেষ্টা করা।
৭. সম্যক স্মৃতি (সঠিক মনোনিবেশ): দেহ, মন ও চিন্তাধারার প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন থাকা।
৮. সম্যক সমাধি (সঠিক ধ্যান): একাগ্রতা ও ধ্যানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি সাধন করা।

এই আটটি পথ অনুসরণ করলে ব্যক্তি মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করতে পারে এবং জীবনের দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

 

<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>>>