✍️সংক্ষিপ্ত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-২):
১. ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ কবে, কী উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
২. সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ কী ছিল?
উত্তর: সিরাজের সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধের কারণ ছিল বাণিজ্য সংক্রান্ত অধিকারের প্রশ্নে মতবিরোধ এবং সিরাজের ক্ষমতা ও সম্পদ দখলের ইংরেজদের আগ্রাসী নীতি।
৩. ‘দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা’ বলতে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি অধিকার লাভের পর থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার প্রশাসনে কোম্পানি ও নবাবের যৌথ শাসন ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়।
৪. ‘কর্নওয়ালিস কোড’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ‘কর্নওয়ালিস কোড’ বলতে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস কর্তৃক প্রবর্তিত আইন ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ব্যবস্থাকে বোঝায়। এটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।
৫. ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর: ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা বলতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে
ভারতবর্ষে গঠিত তিনটি প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্রকে বোঝানো হয়। এই
কেন্দ্রগুলি ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, এবং মাদ্রাজ
প্রেসিডেন্সি।
৬. 'পলাশির লুণ্ঠন' কাকে বলে?
উত্তর: 'পলাশির লুণ্ঠন' বলতে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের পর
বাংলার সম্পদ ও ধন-সম্পদ লুণ্ঠনকে বোঝানো হয়। এই লুণ্ঠনের মাধ্যমে
ইংরেজরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ দখল করে।
৭. কত খ্রিস্টাব্দে কোন্ মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করেছিল?
উত্তর: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেছিল।
৮. কোন্ শাসক স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন এবং কোন্ শাসক ওই নীতির বিরোধিতা করার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন?
উত্তর: হায়দরাবাদের নিজাম স্বেচ্ছায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন। তবে মহীশূরের টিপু সুলতান ওই নীতির বিরোধিতা করার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
৯. কোন্ আইন অনুযায়ী ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোল” তৈরি করা হয়? এই বোর্ডের দায়িত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দের পিটস ইন্ডিয়া আইন অনুযায়ী ‘বোর্ড অফ কন্ট্রোল’ তৈরি করা হয়। এই বোর্ডের দায়িত্ব ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত শাসনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করা।
১০. ঔরঙ্গজেব কে ছিলেন? তিনি কোন্ বছর মারা যান?
উত্তর: ঔরঙ্গজেব ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ সম্রাট এবং আলমগীর নামে পরিচিত। তিনি ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
১১. কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে বক্সারের যুদ্ধ হয়?
উত্তর: ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং মির কাসিম, শুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মধ্যে হয়।
১২. 'অন্ধকূপ হত্যা' কী?
উত্তর: 'অন্ধকূপ হত্যা' বলতে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদের দ্বারা ফোর্ট উইলিয়ামে ব্রিটিশ বন্দিদের একটি ছোট অন্ধকূপে আটকে রাখা এবং সেখানে অনেকের মৃত্যুকে বোঝানো হয়।
১৩. কে, কত খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন?
উত্তর: ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করেন।
১৪. কে, কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর:১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম জোনস কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৫. 'দশসালা বন্দোবস্ত' কবে, কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর: 'দশসালা বন্দোবস্ত' ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী টোডরমল প্রবর্তন করেন।
১৬. ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কত খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়? ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে হন?
উত্তর: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় স্থাপিত হয়। এর প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ইলাইজা ইম্পে।
১৭. কে, কবে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘটান?
উত্তর: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈত শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘটান এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব কোম্পানির হাতে নেন।
১৮. আলিনগরের সন্ধি কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে আলিনগরের সন্ধি নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
১৯. মেকলের প্রতিবেদন বা মিনিটস বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড মেকলে তার মিনিটস বা প্রতিবেদন পেশ করেন, যেখানে তিনি ভারতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা প্রচলনের প্রস্তাব দেন। এর লক্ষ্য ছিল প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া।
২০. আইনের শাসন ও আইনের চোখে সমতা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: আইনের শাসন বলতে আইনের অধীনস্থ শাসন ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়, যেখানে আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আইনের চোখে সমতা বলতে সমাজের সকল ব্যক্তিকে, তাদের পদমর্যাদা বা সম্পদ নির্বিশেষে, আইনের দৃষ্টিতে সমান বিবেচনা করাকে বোঝানো হয়।
২১. ফাররুখশিয়রের ফরমান বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ফাররুখশিয়রের ফরমান বলতে ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রদত্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধাসমূহ বোঝানো হয়। এর মাধ্যমে কোম্পানি বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার পায়।
২২. কে, কী উদ্দেশ্যে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম ছাত্রদের আরবি ও ফারসি ভাষার শিক্ষা প্রদান এবং ইসলামিক আইন ও ধর্মীয় বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া।
২৩. উডের ডেসপ্যাচের দুটি সুপারিশ লেখো।
উত্তর: প্রথমত, ভারতে পশ্চিমী শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার তদারকির জন্য একটি শিক্ষা বিভাগ গঠন করা।
২৪. আলিনগরের সন্ধির ফল কী হয়েছিল?
উত্তর: আলিনগরের সন্ধির ফলে ইংরেজরা কলকাতা ও তার বাণিজ্য কেন্দ্রগুলি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও, ইংরেজরা বাংলায় তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম বিনাশুল্কে চালানোর অধিকার পায়।
✍️সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নগুলির উত্তর দাও(প্রশ্নের মান-৩):
১. পলাশির লুণ্ঠন কাকে বলে ?
উত্তর: পলাশির লুণ্ঠন বলতে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের দ্বারা বাংলার সম্পদ লুটপাট ও অপব্যবহারকে বোঝানো হয়। এই লুণ্ঠনের ফলে বাংলার নবাবি ধনভাণ্ডার থেকে বিপুল সম্পদ ইংরেজদের হাতে চলে যায়। বাংলার সাধারণ জনগণ এই লুণ্ঠনের শিকার হয় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইংরেজরা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে সম্পদ আহরণ করতে থাকে এবং বাংলার অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। পলাশির লুণ্ঠন ছিল উপনিবেশিক শোষণের এক করুণ উদাহরণ।
২. কর্নওয়ালিশ কোড টীকা লেখো।
উত্তর: কর্নওয়ালিশ কোড হলো লর্ড কর্নওয়ালিসের শাসনামলে (১৭৮৬-১৭৯৩) প্রবর্তিত প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কারমূলক নীতিমালা। এটি রাজস্ব, পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। কর্নওয়ালিশ কোডের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে সিভিল ও ক্রিমিনাল দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ করা হয়। এই কোডের ফলে প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থায় আধুনিকতার সূচনা ঘটে।
৩. টীকা লেখো : ফাররুখশিয়র-এর ফরমান।
উত্তর: ফাররুখশিয়র-এর ফরমান বলতে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়র কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ১৭১৭ সালে প্রদত্ত বিশেষ অধিকারগুলিকে বোঝানো হয়। এই ফরমানের মাধ্যমে কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম সহজতর করার জন্য এই ফরমান প্রদান করা হয়। এটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধির পথ সুগম করে।
৪. টীকা লেখ-উডের প্রতিবেদন।
উত্তর: উডের প্রতিবেদন ১৮৫৪ সালে স্যার চার্লস উড কর্তৃক প্রণীত শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন। এটি ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও বিস্তারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করে। উডের প্রতিবেদনে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার বিস্তার ও উন্নতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
৫. আমলাতন্ত্র সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর: আমলাতন্ত্র হলো একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যেখানে সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও বিধি অনুযায়ী প্রশিক্ষিত কর্মচারীদের দ্বারা সম্পন্ন হয়। এটি সাধারণত সরকারি প্রশাসন, নীতি-নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আমলাতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সাংগঠনিক কাঠামো, ক্ষমতার বিভাজন, দায়িত্বের নির্দিষ্টতা এবং নিয়মের কঠোরতা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যসম্পাদনের দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।
৬. স্বত্ববিলোপ নীতি সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর: স্বত্ববিলোপ নীতি ছিল লর্ড ডালহৌসির প্রবর্তিত একটি নীতি, যা ১৮৪৮ থেকে ১৮৫৬ সালের মধ্যে কার্যকর করা হয়। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষ উত্তরাধিকারীহীন দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা। দত্তকপুত্রের উত্তরাধিকার স্বীকার করা হতো না, যা ভারতীয় শাসকদের মধ্যে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই নীতির ফলে সাতারা, নাগপুর, ঝাঁসি, সাম্বলপুরসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। স্বত্ববিলোপ নীতির কারণে ভারতের অনেক দেশীয় শাসক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
৭. ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ১৭৬৫ সালে আলাহাবাদ চুক্তির মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি অধিকার লাভ করে। দেওয়ানি লাভের মাধ্যমে কোম্পানি রাজস্ব আদায় ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা অর্জন করে। এর ফলে কোম্পানি ভারতের বিশাল অর্থনৈতিক সম্পদ ব্যবহার করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বিস্তার করতে সক্ষম হয়। দেওয়ানি লাভের ফলে কোম্পানি সরাসরি রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারায় তারা শাসন ব্যবস্থার উপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এটি ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি মজবুত করে এবং ভারতের রাজনীতিতে কোম্পানির প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
৮. পলাশির যুদ্ধের কারণ লেখ।
উত্তর: পলাশির যুদ্ধের (১৭৫৭) প্রধান কারণ ছিল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিরোধ। কোম্পানির পক্ষ থেকে কেলকাতা দুর্গে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং নবাবের নির্দেশ অমান্য করা সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল। এছাড়া কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থে হস্তক্ষেপ এবং মীর জাফরের মতো বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্রও যুদ্ধের কারণ হিসেবে কাজ করে। ইংরেজরা এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বিস্তার করে। যুদ্ধের ফলাফল ছিল সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যুবরণ।
৯. বক্সারের যুদ্ধের (১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দ) গুরুত্ব লেখ।
উত্তর: বক্সারের যুদ্ধ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও বাংলার মীর কাসিম, अवधের নবাব শুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট শাহ আলমের মধ্যে সংঘটিত একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কোম্পানির বিজয়ের ফলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি অধিকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভ করে। দেওয়ানি অধিকার পাওয়ার মাধ্যমে কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহ ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্জন করে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে কোম্পানি ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পথে অনেক দূর এগিয়ে যায়। বক্সারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা ছিল।
১০. আইনের শাসন ও আইনের চোখে সমতা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: আইনের শাসন হলো এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইনের অধীনে থাকে এবং আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনের শাসনের মূল নীতি হলো ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আইনের চোখে সমতা বলতে বোঝানো হয় যে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা আর্থিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। এটি সমাজে ন্যায়পরায়ণতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আইনের শাসন এবং আইনের চোখে সমতা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
১১. ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের কাজ কী ছিল ?
উত্তর: ব্রিটিশ রেসিডেন্টরা ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিনিধি, যাদের কাজ ছিল দেশীয় রাজ্যগুলির প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা। তারা ব্রিটিশ শাসনের স্বার্থ রক্ষা ও দেশীয় শাসকদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়োজিত ছিল। রেসিডেন্টরা প্রায়শই রাজ্যের শাসকদের উপর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি চাপিয়ে দিত। তারা স্থানীয় রাজদরবারে কোম্পানির পক্ষ থেকে পরামর্শদাতা ও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করত। ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে।
১২. টীকা লেখ: অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি।
উত্তর: অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ছিল লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক ১৭৯৮ থেকে ১৮০৫ সালের মধ্যে প্রবর্তিত একটি কূটনৈতিক নীতি। এই নীতির মাধ্যমে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ব্রিটিশ আধিপত্যের অধীনে এনে তাদের সাথে চুক্তি করা হতো। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দেশীয় শাসকরা ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করত এবং তাদের সামরিক ও কূটনৈতিক কার্যক্রম ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকত। বিনিময়ে ব্রিটিশরা তাদের শাসনের সুরক্ষা প্রদান করত। এই নীতির মাধ্যমে অনেক দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং কোম্পানির রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ঘটে।
১৩.মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে একাধিক কারণ দায়ী ছিল। মুঘল সম্রাটদের দুর্বল নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক অদক্ষতা সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। রাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্নীতি সাম্রাজ্যের আর্থিক শক্তিকে ক্রমশ দুর্বল করে তোলে। ক্ষমতা দখলের লড়াই ও রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ কলহ সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করে দেয়। পাশাপাশি, মারাঠা, শিখ, এবং মহীশূরের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান মুঘলদের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। এছাড়া, ইংরেজদের বাণিজ্যিক প্রভাব ও সামরিক শক্তির বৃদ্ধি, এবং স্থানীয় রাজাদের সহযোগিতা লাভ মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
১৪.কোম্পানি শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেলের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর:
১৭৬৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জেমস রেনেলকে ভারতের প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করে। তিনি বাংলার নদীপথ জরিপ করে ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বাংলার নদীগুলোর সঠিক মানচিত্র তৈরি সম্ভব হয়। এই জরিপ কাজ দেওয়ানি লাভের পর জমি চিহ্নিত ও রাজস্ব আদায়ে সহায়ক হয়। জেমস রেনেলের কাজ কোম্পানির প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।
<<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>