🌹বি.এ(সেমিস্টার-৩):: ইতিহাস মেজর-৩(পেপার-১):: সাজেশন(পার্ট-২)🌹

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-৫:

১. ষোড়শ মহাজনপদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। 

উত্তর:

ভূমিকা:

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারত জুড়ে বহু রাজ্য গঠিত হয়, যাদের মধ্যে ষোড়শ মহাজনপদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগুলো ছিল শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র, যা পরবর্তী সময়ে বৃহৎ সাম্রাজ্যের ভিত্তি তৈরি করেছিল।

ষোড়শ মহাজনপদের পরিচয়:

ষোড়শ মহাজনপদ বলতে ১৬টি স্বাধীন বা আধা-স্বাধীন রাষ্ট্রকে বোঝানো হয়, যা প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত ছিল। মহাজনপদগুলোর মধ্যে কিছু ছিল রাজতান্ত্রিক (যেমন কোশল ও মগধ), আর কিছু গণতান্ত্রিক (যেমন বৃজি ও মল্ল)।

প্রধান মহাজনপদসমূহ:

১. অঙ্গ – বর্তমান বিহারে অবস্থিত, এর রাজধানী ছিল চম্পা।
২. মগধ – বুদ্ধ ও মহাবীরের জন্মের সময়ে অত্যন্ত শক্তিশালী রাজ্য।
৩. কোশল – শ্রাবস্তী ছিল এর রাজধানী।
৪. বৎস – রাজধানী কৈশম্ভী।
৫. অবন্তী – দুটি অংশে বিভক্ত, উত্তরে উজ্জয়িনী ও দক্ষিণে মহিষ্মতী।
৬. গান্ধার – বর্তমান পাকিস্তানের অংশ, রাজধানী ছিল তক্ষশিলা।
৭. কুরু – রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ।
৮. পাঞ্চাল – বর্তমান উত্তর প্রদেশের অংশ, রাজধানী আহিচ্ছত্র।
৯. শূরসেন – রাজধানী ছিল মথুরা।
১০. বৃজি – একটি গণতান্ত্রিক রাজ্য, যার রাজধানী বৈশালী।
১১. মল্ল – গণতান্ত্রিক রাজ্য, কুশীনগর ও পাৱা ছিল প্রধান কেন্দ্র।
১২. চেদি – বর্তমান মধ্যপ্রদেশ, রাজধানী শুক্তিমতী।
১৩. কম্বোজ – বর্তমান আফগানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের অংশ।
১৪. অশ্মক – বর্তমান মহারাষ্ট্র, রাজধানী ছিল পৈঠান।
১৫. কাশী – বারাণসী ছিল এর রাজধানী।
১৬. মৎস্য – বর্তমান রাজস্থানের অন্তর্গত, রাজধানী ছিল বিরাটনগর।

উপসংহার:

ষোড়শ মহাজনপদের মধ্য থেকে মগধ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে সমগ্র উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার করে। এই মহাজনপদগুলোর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ পরবর্তী মউর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করে।

২. আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণের ফলাফল সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তর:

ভূমিকা:

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার (সিকান্দার) ভারত আক্রমণ করেন। তার সেনাবাহিনী পাঞ্জাব অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং রাজা পুরুর (পোরাস) সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যদিও তিনি ভারত জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু কিছু কারণবশত তাকে ফিরে যেতে হয়।

আক্রমণের ফলাফল:

১. রাজনৈতিক প্রভাব – আলেকজান্ডারের আক্রমণে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ছোট ছোট রাজ্যগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে মগধের চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পরবর্তী সময়ে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

২. গ্রিক-ভারতীয় সাংস্কৃতিক সংযোগ – গ্রিক সভ্যতার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার মেলবন্ধন ঘটে। অলিন্দ স্থাপত্য, মূর্তিশিল্প ও মুদ্রার নকশায় গ্রিক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

৩. বাণিজ্য ও যোগাযোগের বিকাশ – ভারত ও গ্রিসের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত হয়। তক্ষশিলার মতো শহরগুলি জ্ঞান ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ হয়।

৪. রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি – আলেকজান্ডারের প্রত্যাবর্তনের পর উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থানে সহায়ক হয়।

৫. অভিযানের সীমাবদ্ধতা – আলেকজান্ডারের সৈন্যরা ব্যাস নদীর পরে এগোতে অস্বীকৃতি জানায়, ফলে তিনি গঙ্গার সমতলভূমি জয় করতে পারেননি।

উপসংহার:

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ সরাসরি ভারত জয় করতে না পারলেও এটি ভারতীয় ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। এর ফলে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হয় এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।

৩. মৌর্য সম্রাট অশোকের কলিঙ্গ বিজয়ের গুরুত্ব আলোচনা কর। 

উত্তর:

ভূমিকা:

মৌর্য সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে কলিঙ্গ (বর্তমান ওডিশা) বিজয় করেন। এটি তার শাসনামলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা তার ব্যক্তিগত জীবন এবং প্রশাসনিক নীতিতে বিরাট পরিবর্তন আনে।

কলিঙ্গ বিজয়ের গুরুত্ব:

১. ভয়াবহ যুদ্ধ ও পরিবর্তন – কলিঙ্গ যুদ্ধ ছিল অত্যন্ত রক্তক্ষয়ী। এতে হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ মানুষ নিহত হন। যুদ্ধের নির্মমতা দেখে অশোক গভীরভাবে প্রভাবিত হন এবং তিনি অহিংসার পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন।

২. ধর্মপরায়ণ শাসনে পরিবর্তন – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং দয়া, করুণা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে শাসন চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ‘ধর্ম বিজয়’ নীতির প্রচলন করেন, যা পরবর্তীতে তার শাসনব্যবস্থার মূলভিত্তি হয়ে ওঠে।

৩. প্রশাসনিক পরিবর্তন – যুদ্ধের পর অশোক কলিঙ্গের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেন। তিনি জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড যেমন সড়ক নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করেন।

4. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ধর্ম প্রচার – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক যুদ্ধনীতির পরিবর্তে ধর্ম ও শান্তির প্রচারে মনোযোগ দেন। তিনি শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য দূত পাঠান।শান্তির বার্তা ও শাসননীতি – কলিঙ্গ যুদ্ধ অশোককে সামরিক জয়ের পরিবর্তে ন্যায়, নীতি ও মানবিক শাসনের গুরুত্ব বোঝায়। তার শিলালিপিতে অহিংসা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বার্তা দেওয়া হয়।

উপসংহার:

কলিঙ্গ যুদ্ধ কেবলমাত্র একটি সামরিক বিজয় ছিল না, বরং এটি অশোকের জীবন ও ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছিল। যুদ্ধের পর অশোক সামরিক সম্প্রসারণের পরিবর্তে শান্তি, ন্যায় ও ধর্মের প্রসারকে গুরুত্ব দেন, যা তাকে ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য মহান শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

৪. অশোকের জনহিতকর কার্যাবলীর বিবরণ দাও। 

উত্তর:

ভূমিকা:

মৌর্য সম্রাট অশোক ছিলেন ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম মহান শাসক। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং জনকল্যাণমূলক শাসননীতি অনুসরণ করেন। তার রাজত্বে সাধারণ জনগণের কল্যাণে বহু কার্যক্রম গৃহীত হয়, যা ভারতীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

জনহিতকর কার্যাবলী:

১. ধর্ম ও নৈতিকতা প্রচার – অশোক অহিংসা, সত্যবাদিতা, করুণা ও শীলের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি রাজ্যে ‘ধর্ম মহামাত্র’ নিয়োগ করেন, যারা ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার করতেন।

২. শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশ – তিনি বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, বিশেষ করে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য মঠ ও বিদ্যালয় নির্মাণ করেন। তক্ষশিলা, নালন্দা ও অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্র তার শাসনামলে উন্নত হয়।

৩. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাব্যবস্থা – রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে হাসপাতাল, ওষুধের বাগান ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়। পশুদের চিকিৎসার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

৪. পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন – সারা রাজ্যে সুপরিকল্পিত সড়ক ও বৃক্ষরোপণ প্রকল্প গৃহীত হয়। গুরুত্বপূর্ণ পথের ধারে বিশ্রামাগার ও কূপ নির্মাণ করা হয়।

৫. সামাজিক ন্যায় ও আইনব্যবস্থা – তিনি প্রজাদের প্রতি উদার ও ন্যায়নিষ্ঠ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ প্রদান করেন।

৬. ধর্ম প্রচার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক – অশোক বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে ধর্মদূত পাঠান। তার শাসনকালেই বৌদ্ধধর্ম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।

উপসংহার:

অশোকের জনহিতকর কার্যাবলী শুধু ভারতেই নয়, সমগ্র বিশ্বে শান্তি, মানবতা ও ধর্মের প্রসার ঘটায়। তার নীতি ও কর্মকাণ্ড আজও বিশ্ব ইতিহাসে মানবকল্যাণের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

৫. কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য আলোচনা কর। 

উত্তর:

ভূমিকা:

খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ সালে মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ (বর্তমান ওডিশা) রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটি ছিল ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ, যা রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

কলিঙ্গ যুদ্ধের তাৎপর্য:

১. রাজনৈতিক তাৎপর্য – কলিঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে মৌর্য সাম্রাজ্যের সীমানা পূর্ব উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এটি সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি ও সম্প্রসারণ নীতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ছিল।

২. সামাজিক ও মানবিক প্রভাব – যুদ্ধ অত্যন্ত বিধ্বংসী ছিল, যাতে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ নিহত এবং বহু লোক বন্দি হয়। ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অশোক গভীরভাবে বিচলিত হন এবং যুদ্ধনীতি থেকে সরে আসেন।

৩. ধর্মীয় পরিবর্তন – কলিঙ্গ যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা অশোককে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি অহিংসা ও ধর্ম প্রচারের পথে এগিয়ে যান এবং ‘ধর্ম বিজয়’ নীতির প্রচলন করেন।

৪. শাসন ও নীতির পরিবর্তন – যুদ্ধের পর অশোক প্রশাসনে মানবিক ও ন্যায়নীতির ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি ‘ধর্ম মহামাত্র’ নিয়োগ করেন এবং জনহিতকর কাজ যেমন হাসপাতাল, রাস্তা, কূপ ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করেন।

৫. আন্তর্জাতিক প্রভাব – কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, মিয়ানমার ও অন্যান্য দেশে দূত পাঠান, যার ফলে বৌদ্ধধর্ম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

উপসংহার:

কলিঙ্গ যুদ্ধ কেবল একটি সামরিক বিজয় নয়, বরং এটি অশোকের জীবন ও শাসননীতিতে গভীর পরিবর্তন এনেছিল। যুদ্ধের ফলে তিনি এক অহিংস, ধর্মপ্রাণ ও জনহিতৈষী শাসক হয়ে ওঠেন, যা ভারতীয় ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে।

৬. অশোকের ‘ধম্ম’ এর মূলনীতি গুলি আলোচনা করো।

উত্তর:

ভূমিকা:

সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং শান্তি, ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধ প্রচারের জন্য ‘ধম্ম’ নীতি অনুসরণ করেন। এটি মূলত একটি নৈতিক ও সামাজিক আদর্শ, যা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবকল্যাণের ওপর গুরুত্ব দেয়।

‘ধম্ম’ এর মূলনীতি:

১. অহিংসা (অবিয়াপাদ) – সব প্রাণীর প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা এবং যুদ্ধ ও সহিংসতা পরিহার করা।

২. সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতা – সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা এবং সবার প্রতি সমান আচরণ করা।

৩. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা – সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রাখা।

৪. জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়ন – হাসপাতাল, বিশ্রামাগার, সড়ক ও কূপ নির্মাণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা।

৫. পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব – পিতামাতা, গুরুজন ও প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা।

৬. প্রাণীদের প্রতি সদয় আচরণ – পশু হত্যা ও বলিদান হ্রাস করা এবং প্রাণীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

৭. নৈতিক শিক্ষা ও সংযম – লোভ, হিংসা ও ক্রোধ পরিহার করা এবং নৈতিক শিক্ষার প্রচার করা।

উপসংহার:

অশোকের ‘ধম্ম’ সাম্রাজ্যের জনগণের মধ্যে শান্তি ও নৈতিকতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এটি ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে মুক্ত একটি নীতিগত জীবনধারা ছিল, যা পরবর্তীতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

৭. মৌর্য যুগের শিল্পকলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

উত্তর:

ভূমিকা:

মৌর্য যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-১৮৫) ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ে ভারতীয় শিল্পকলার ব্যাপক বিকাশ ঘটে, যা মূলত রাজশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা, ধর্মীয় অনুপ্রেরণা ও কারিগরি উৎকর্ষের মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

মৌর্য যুগের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য:

১. স্থাপত্যশিল্প – মৌর্য শাসকরা রাজপ্রাসাদ, স্তূপ, সমাধি ও জনহিতকর স্থাপনা নির্মাণ করেন। অশোকের প্রাসাদ ও সভাগৃহ কাঠ ও পাথরে নির্মিত ছিল।

২. স্তম্ভ নির্মাণ – অশোকের শাসনকালে বিশাল একক শিলা খোদাই করে স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ‘অশোক স্তম্ভ’ গুলি পালিশকৃত এবং উপরে সাধারণত সিংহ, ষাঁড়, হাতি বা ঘোড়া খোদাই করা থাকত। সবচেয়ে বিখ্যাত স্তম্ভ হল সারনাথের সিংহস্তম্ভ, যা বর্তমানে ভারতের জাতীয় প্রতীক।

৩. স্তূপ ও ধর্মীয় স্থাপত্য – বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য অশোক বিভিন্ন স্থানে স্তূপ নির্মাণ করেন। বিখ্যাত স্তূপগুলোর মধ্যে সাঁচি স্তূপ অন্যতম, যেখানে বৌদ্ধ স্থাপত্যের উৎকর্ষ দেখা যায়।

৪. মূর্তিশিল্প ও খোদাই কাজ – মৌর্য যুগে মূর্তি ও শিলালিপি খোদাই শিল্পের প্রচলন ঘটে। পালিশকৃত শিলা ব্যবহার করে নান্দনিক মূর্তি ও শিলালিপি তৈরি করা হতো।

৫. ধাতব শিল্প – ব্রোঞ্জ ও লৌহশিল্পের বিকাশ ঘটে। টাকশালা ও অন্যান্য শহরে উন্নত ধাতব কারুকার্যের নিদর্শন পাওয়া যায়।

উপসংহার:

মৌর্য যুগের শিল্পকলা ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বিশেষত, অশোকের স্তম্ভ ও স্তূপ নির্মাণের মাধ্যমে ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য ধারা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে গুপ্ত ও অন্যান্য রাজবংশের শাসনামলে আরও বিকশিত হয়।

৮. গান্ধার শিল্পরীতি সম্পর্কে টীকা লেখ। 

উত্তর:

ভূমিকা:

গান্ধার শিল্পরীতি প্রাচীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পধারা, যা মূলত কুষাণ সাম্রাজ্যের (খ্রিস্টপূর্ব ১ম থেকে খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী) সময় বিকশিত হয়। এটি গ্রিক, পারস্য এবং ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে এবং প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

গান্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য:

১. গ্রিক ও রোমান প্রভাব – গান্ধার শিল্পরীতিতে গ্রিক এবং রোমান স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়, যেমন নিখুঁত শরীরবিন্যাস, ভাঁজযুক্ত বসন, এবং বাস্তবধর্মী অভিব্যক্তি।

২. বুদ্ধ মূর্তির বিকাশ – প্রথমবারের মতো বুদ্ধের মানবমূর্তি গান্ধার শিল্পধারায় গড়ে ওঠে। মূর্তিগুলিতে বুদ্ধের প্রশান্ত মুখাবয়ব, কেশবিন্যাস, কাঁধে চাদর ও ত্রিভঙ্গ মুদ্রার বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়।

৩. শৈল্পিক বিশদ বর্ণনা – এই শিল্পশৈলীতে প্রতিটি মূর্তির শরীরবিন্যাস অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা হতো, যা বিশেষত বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আখ্যানকে জীবন্ত করে তুলত।

৪. স্তূপ ও বিহার নির্মাণ – গান্ধার অঞ্চলে বৌদ্ধ স্তূপ ও বিহারের চারপাশে বিভিন্ন বুদ্ধমূর্তি ও ধর্মীয় দৃশ্য খোদাই করা হতো। বিখ্যাত স্তূপগুলোর মধ্যে তক্ষশিলা ও জালিয়ান স্তূপ অন্যতম।

৫. প্রধান কেন্দ্রসমূহ – গান্ধার শিল্পধারার মূল কেন্দ্র ছিল তক্ষশিলা, পুরুষপুর (বর্তমান পেশোয়ার) ও কপিসা (আফগানিস্তান)।

উপসংহার:

গান্ধার শিল্পরীতি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের নিদর্শন। এটি ভারতীয়, গ্রিক ও পারস্যের শৈল্পিক ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় শিল্পের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল, যা পরবর্তীকালে গুপ্ত শিল্পরীতিতেও প্রভাব বিস্তার করে।

৯. গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির পরিচয় দাও। উত্তর:

ভূমিকা:

গুপ্ত যুগ (খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতাব্দী) ভারতীয় ইতিহাসের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়। বিশেষত গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ধাতুবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা যায়।

গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নতি:

১. গণিত –

• আর্যভট্ট তাঁর গ্রন্থ আর্যভটীয় তে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ব্যাখ্যা দেন এবং শূন্যের ব্যবহার প্রথম উল্লেখ করেন।
• তিনি π (পাই)-এর মান নির্ণয় করেন এবং বৃত্তের পরিধির হিসাব প্রদান করেন।
• ব্রহ্মগুপ্ত শূন্য ও ঋণাত্মক সংখ্যার ধারণা উপস্থাপন করেন।

২. জ্যোতির্বিজ্ঞান –

• আর্যভট্ট প্রথম সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দেন এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন।
• বরাহমিহির তাঁর বৃহৎ সংহিতা ও পঞ্চসিদ্ধান্তিকা গ্রন্থে গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
• বরাহমিহির আবহাওয়া ও খনিজবিদ্যায়ও বিশেষ অবদান রাখেন।

৩. চিকিৎসাবিজ্ঞান –

• গুপ্ত যুগে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। চরক ও সুস্রুতের গ্রন্থগুলোর পুনর্লিখন ও পরিমার্জন হয়।
• প্লাস্টিক সার্জারি ও শল্যচিকিৎসার উন্নয়ন ঘটে।
• ধাতব অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়।

৪. ধাতুবিদ্যা ও প্রকৌশল –

• গুপ্ত যুগে ধাতুবিদ্যায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়।
• দিল্লির কুতুব মিনারের প্রাঙ্গণে অবস্থিত লোহার স্তম্ভ (Iron Pillar of Delhi) গুপ্ত যুগের ধাতুবিদ্যার উৎকর্ষতার অন্যতম উদাহরণ, যা আজও মরিচা ধরে নি।

উপসংহার:

গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি সাধিত হয়, যা পরবর্তী যুগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করে। বিশেষত গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই সময়ের অগ্রগতি ভারতীয় সভ্যতাকে এক উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছিল।

১০. চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েনের ভারত পরিক্রমা বিষয়ে একটি টীকা লেখ। 

উত্তর:

ভূমিকা:

ফা-হিয়েন ছিলেন চীনের একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও পরিব্রাজক, যিনি গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যের (খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৫ম শতাব্দী) শাসনকালে ভারত ভ্রমণ করেন। তিনি মূলত বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহ এবং বৌদ্ধধর্মের প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এই পরিক্রমা করেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনী ফো-গুয়ো-জি (A Record of Buddhist Kingdoms) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

ফা-হিয়েনের ভারত পরিক্রমা:

1. ভ্রমণের পথ – ফা-হিয়েন চীন থেকে যাত্রা করে মধ্য এশিয়ার পথে গান্ধার, তক্ষশিলা, মথুরা, কনৌজ, কৌশাম্বী, পাটলিপুত্র, বোধগয়া ও নালন্দা ভ্রমণ করেন। পরে তিনি বঙ্গ ও তাম্রলিপ্ত হয়ে জলপথে চীনে প্রত্যাবর্তন করেন।

2. গুপ্ত যুগের সমাজ ও প্রশাসন – তাঁর বিবরণ থেকে জানা যায় যে গুপ্ত শাসনকালে ভারত সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ছিল। অপরাধ কম ছিল এবং রাজ্য শাসন ছিল সংগঠিত।

3. বৌদ্ধ ধর্মের অবস্থা – তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের প্রসার লক্ষ্য করেন। নালন্দা ও অন্যান্য বিহারে বৌদ্ধ ধর্মচর্চার উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পান।

4. হিন্দু ধর্ম ও সমাজব্যবস্থা – ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং জাতিভেদ প্রথা বিদ্যমান ছিল। তিনি ‘চণ্ডাল’ সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কথা উল্লেখ করেছেন।

5. অর্থনীতি ও বাণিজ্য – তিনি ভারতীয় বাণিজ্য ও কৃষির উন্নতি সম্পর্কে বর্ণনা দেন। মুদ্রা ব্যবস্থা উন্নত ছিল এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল।

উপসংহার:

ফা-হিয়েনের বিবরণ গুপ্ত যুগের ভারতের সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য দলিল। তাঁর লেখা থেকে বোঝা যায় যে এই সময়ে ভারত ছিল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং বৌদ্ধধর্মের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

১১. লিচ্ছবী রাজকুমারীর সঙ্গে প্রথম চন্দ্রগুপ্তের বিবাহের গুরুত্ব আলোচনা কর।

উত্তর:

ভূমিকা:

প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা (খ্রিস্টীয় ৩২০-৩৩৫)। তাঁর অন্যতম কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল লিচ্ছবী রাজকুমারীর সঙ্গে বিবাহ, যা রাজনৈতিক ও সাম্রাজ্য বিস্তারের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বিবাহের গুরুত্ব:

১. রাজনৈতিক জোট ও শক্তিবৃদ্ধি – লিচ্ছবীরা বৈশালী অঞ্চলের শক্তিশালী গণরাজ্যের শাসক ছিলেন। এই বিবাহের মাধ্যমে গুপ্তরা লিচ্ছবীদের সমর্থন লাভ করে এবং নিজেদের রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করে।

২. সাম্রাজ্য বিস্তারের সুবিধা – লিচ্ছবী বংশের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ফলে গুপ্তদের উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের পথ সুগম হয়।

৩. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি – লিচ্ছবী রাজ্যের অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে। এই বিবাহের ফলে গুপ্তরা সেই বাণিজ্যপথের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়, যা তাদের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে।

৪. গুপ্ত বংশের মর্যাদা বৃদ্ধি – লিচ্ছবী বংশের সঙ্গে আত্মীয়তার কারণে গুপ্ত বংশ রাজকীয় মর্যাদা লাভ করে, যা তাদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।

৫. পরবর্তী শাসকদের উত্তরাধিকারের ভিত্তি – ঐতিহাসিকদের মতে, প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও লিচ্ছবী রাজকুমারীর পুত্র ছিলেন সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত, যিনি গুপ্ত সাম্রাজ্যকে আরও শক্তিশালী করেন।

উপসংহার:

প্রথম চন্দ্রগুপ্তের লিচ্ছবী রাজকুমারীর সঙ্গে বিবাহ ছিল কৌশলগত ও দূরদর্শী পদক্ষেপ, যা গুপ্ত সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামরিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

১২. সাতবাহন সমাজ ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

উত্তর:

ভূমিকা:

সাতবাহন রাজবংশ (খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দী BCE – ৩য় শতাব্দী CE) দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ছিল। তারা আন্দ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শাসন করত। তাদের শাসনামলে সমাজব্যবস্থায় বৈদিক ও স্থানীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ দেখা যায়।

সাতবাহন সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:

১. বর্ণব্যবস্থা – সাতবাহন সমাজে বর্ণভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস ছিল। ব্রাহ্মণরা উচ্চ মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের মধ্যে পার্থক্য বজায় ছিল।

২. মাতৃপ্রধান সমাজ – সাতবাহনরা মাতৃপ্রধান (Matriarchal) সমাজের অনুসারী ছিলেন। শাসকদের নামের সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করা হত, যেমন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।

৩. নারীদের অবস্থান – নারীরা উচ্চ সম্মান পেতেন এবং ধর্মীয় ও দানমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতেন। অনেক রানী ও রাজমাতা গুরুত্বপূর্ণ দানপত্রে নাম রেখেছেন।

৪. ধর্মীয় বৈচিত্র্য – ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম উভয়ের প্রচলন ছিল। বৌদ্ধ বিহার ও স্তূপ নির্মাণ করা হতো এবং ব্রাহ্মণদেরও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।

৫. বৈশ্য ও বণিক শ্রেণি – বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বৈশ্য ও বণিক শ্রেণির গুরুত্ব ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

৬. শ্রমজীবী শ্রেণি – কৃষক, কুম্ভকার, কারিগর, তাঁতি ও অন্যান্য শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

উপসংহার:

সাতবাহন সমাজব্যবস্থা ছিল ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। এখানে নারীদের উচ্চ মর্যাদা ছিল এবং সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান দেখা যেত।

<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>>