🌹বি.এ(সেমিস্টার-৩):: ইতিহাস মেজর-৩(পেপার-১):: সাজেশন(পার্ট-১)🌹

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-২:

১. কুষাণ যুগের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব আলোচনা করো।
উঃ কুষাণ যুগ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক অতি সৃজনশীল যুগ ছিল। কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কৃত ভাষায় কিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচিত হয়। নাগার্জুন ও অশ্বঘোষ সংস্কৃত ভাষা তথা সাহিত্যকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। চরক সংহিতা ও সুশ্রুত সংহিতা সে যুগের ভেষজ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পরিচয় বহন করে।
২. গান্ধার শিল্প কী?
উঃ খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে গান্ধার শিল্পের চর্চা শুরু হয় এবং কুষাণ বংশের রাজত্বকালে বিকাশ লাভ করে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের রোমান-গ্রীক ও ভারতীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে যে নতুন শিল্প ভাস্কর্যের জন্ম হয়েছিল, তাই গান্ধার শিল্প নামে পরিচিতি লাভ করে।
৩. গান্ধার শিল্পের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উঃ গ্রীক দেবতা জিউস, ব্যাকাস প্রভৃতির অনুকরণে যক্ষ, গরুড় প্রভৃতি মূর্তি তৈরি করা হত, প্রস্তরের সাহায্যে বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হয়। পাথর, চুন, বালি বা প্লাস্টার অব প্যারিস, পোড়ামাটি ও মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরি করা হত।
৪. গান্ধার শিল্প কোথায় বিকাশ লাভ করেছিল?
উঃ আফগানিস্তানের অন্তর্গত জালালাবাদ, হাদ্ধা ও বামিয়ান অঞ্চলে বিকাশ লাভ করেছিল। সোয়াত উপত্যকা, তক্ষশিলা, বালাহিসসার, চারসাদ্দা, গাজধেরী প্রভৃতি অঞ্চলে এই শিল্পধারার বিস্তার ঘটে।
৫. কুষাণ যুগে কোন কোন শিল্পধারা গড়ে উঠেছিল?
উঃ কুষাণ যুগে গান্ধার, অমরাবতী, সারনাথ ও মথুরা প্রভৃতি শিল্পধারা গড়ে উঠেছিল।
৬. মথুরা শিল্প কী? এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উঃ শক-কুষাণ আমলে মথুরাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় শিল্পরীতি অনুসরণে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে যে শিল্পকলা বিকাশ লাভ করেছিল, তা মথুরা শিল্প নামে খ্যাত। এই শিল্পকলার দুটি বৈশিষ্ট্য হল – বুদ্ধ বা বোধিসত্ত্বের মূর্তিগুলিতে অতি সূক্ষ্ম নকশার কাজ লক্ষ্য করা যায়। লাল বেলে পাথরের ব্যবহার মথুরা শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৭. কুষাণ কারা?
উঃ খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধে শুং নু নামক এক উপজাতি তাদের প্রতিবেশী ইউ চি নামক অপর এক উপজাতিকে পরাজিত করেছিল। দীর্ঘ সংঘাতের পর ইউ চি উপজাতি পশ্চিমদিকে সরে গিয়েছিল। ইউ চি উপজাতির নেতা কিউ-সিউ-কিও বাকি চার নেতাকে হত্যা করে সমগ্র উপজাতির প্রধান হয়ে বসেছিলেন। তাঁর নাম থেকেই এই বংশের নাম হয় কিউই শাং বা কুষাণ।
৮. নাগার্জুন কে ছিলেন?
উঃ নাগার্জুন জন্মসূত্রে ছিলেন ব্রাহ্মণ, পরে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। ক্রমশ তিনি বৌদ্ধ দর্শনশাস্ত্রের টীকাকার ও অন্যতম রচয়িতা হয়ে ওঠেন। কুষাণরাজ কণিষ্কের অন্যতম সভাপণ্ডিত ছিলেন নাগার্জুন।

৯. ভারতের অভ্যন্তরে কণিষ্কের রাজ্যসীমা কতদূর বিস্তৃত ছিল?
উঃ ভারতের অভ্যন্তরে উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে সাঁচী এবং পূর্বে বারাণসী থেকে পশ্চিমে সিন্ধুনদ পর্যন্ত কণিষ্কের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। বিহার তার সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল কিনা- সে সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
১০. কণিষ্কের শ্রেষ্ঠ শিল্পকীর্তি কোনটি? কোন কুষাণ সম্রাট 'কাইজার' উপাধি গ্রহণ করেন?
উঃ কণিষ্কের আমলের শ্রেষ্ঠ শিল্পকীর্তি হল পেশোয়ারে নির্মিত ৬৩৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বৌদ্ধমন্দির। কুষাণ সম্রাট দ্বিতীয় কণিষ্ক কাইজার উপাধি গ্রহণ করেন।
১১. কুষাণদের মধ্যে কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়?
উঃ কুষাণরা বিদেশি হওয়ায় ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের কোন আইনগত ভিত্তি তাদের ছিল না। কুষাণরা এক নতুন ধরনের উপাধি ধারণ করতে শুরু করেছিলেন—দেবপুত্র, দেবমানব প্রভৃতি। তারা এই উপাধির মাধ্যমে নিজেদের দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছিলেন এবং এর মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে আইনগত স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলেন।
১২. কুষাণদের রাজনীতির উপর অর্থনীতির কী প্রভাব পড়েছিল?
উঃ ঐতিহাসিক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, কুষাণ জাতি নিছক রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেননি। তাদের ভারতীয় সাম্রাজ্য ছিল মধ্যএশীয় সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ মাত্র। কারণ তখন সিন্ধুনদের সমৃদ্ধ বাণিজ্যপথ ও বন্দর হস্তগত করে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যেই তারা ঐ অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল।
১৩. কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উঃ কণিষ্কের আমলে কুষাণ সাম্রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে আরোহণের পর তাঁর পরবর্তী উত্তরাধিকারীদের আমলে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। কুষাণ বংশের পতনের পশ্চাতে দুটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল- পারস্যে সাসানীয় বংশের উত্থান এবং গুপ্ত সম্রাটদের ক্রমাগত আক্রমণ। কুষাণ রাজাদের দুর্বলতা, প্রাদেশিক কুষাণ শাসকদের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রভৃতি।
১৪. ভারতের ইতিহাসে কুষাণ যুগের অবদান আলোচনা করো।
উঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূর করে কুষাণরা অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সমন্বয়বাদের সূচনা হয়। বাণিজ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তীকালে ভারতীয় সভ্যতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৫. কুষাণদের আদি পরিচয় কী?
উঃ কুষাণরা চীনে বসবাসকারী যাযাবর 'ইউ-চি' নামক জাতির একটি শাখা। ভাগ্যান্বেষণে অগ্রসর হতে হতে তারা ভারত সীমান্তে উপস্থিত হয়। এখানেই ‘ইউ-চি’ জাতি একতা হারিয়ে পাঁচটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই পাঁচটি শাখার মধ্যে একটি শাখাই 'কুষাণ' নামে খ্যাতিলাভ করে।
১৬. 'ইউ-চি' জাতির পাঁচটি শাখার নাম করো।
উঃ ‘ইউ-চি’ জাতির পাঁচটি শাখা হল—হিউ সি, শুয়া সি, কুই শুয়া বা কুষাণ, হি তুন এবং কাত ফু বা তু সি।
১৭. ভারতে কুষাণ শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কে? কুষাণদের শ্রেষ্ঠ রাজা কে?
উঃ ভারতে কুষাণ শাসনের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম কফিসিস বা কুজল কফিসিস্। কুষাণ বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন কণিষ্ক।
১৮. কণিষ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?
উঃ কণিষ্ক পুরুষপুর (পেশোয়ার) নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন। এই স্থান থেকে মধ্যএশিয়া ও ভারতীয় সাম্রাজ্যের উপর দৃষ্টি রাখা সহজসাধ্য ছিল। কণিষ্ক এই শহরটিকে নানাভাবে সুসজ্জিত করেন।
১৯. পাঁচ ভাগে বিভক্ত ইউ-চি' জাতিকে কে ঐক্যবদ্ধ করেন? কণিষ্ক কবে সিংহাসন আরোহণ করেন?
উঃ পাঁচ ভাগে বিভক্ত ইউ-চি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন কুজল কদফিসিস্। কণিষ্ক আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭৮ অব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন।
২০. কণিষ্ক তাঁর লিপি ও মুদ্রায় কী ভাষা ব্যবহার করতেন?
উঃ বহু ভাষাভাষী ও নানা জাতিগোষ্ঠীর লোক নিয়ে গঠিত ছিল কণিষ্কের সুবিশাল সাম্রাজ্য। সকলের কাছে সহজবোধ্য করার জন্য তিনি তাঁর সমস্ত মুদ্রা ও লিপিতে ইরানীয় বা ব্যাকট্রিয় ভাষা ও গ্রীকলিপি ব্যবহার করতেন।
২১. কণিষ্ক কোন ধর্ম গ্রহণ করেন? কুষাণ শাসনকালে কে চীনে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন?
উঃ কণিষ্ক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। কথিত আছে যে আনুমানিক ৬১–৬৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ পণ্ডিত কাশ্যপ মাতঙ্গ চীনে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।
২২. শকাব্দ কবে প্রচলিত হয়? এর এরূপ নামকরণ হয় কেন?
উঃ ৭৮ খ্রিস্টাব্দে কুষাণ রাজ কণিষ্ক প্রবর্তিত অব্দের নাম শকাব্দ হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রচলিত অভিমতগুলি হল—কুষাণরা দীর্ঘকাল শকদের সংস্পর্শে থাকার ফলে তাদের সংস্কৃতির অনেকটাই গ্রহণ করেছিল এবং কুষাণদের শক জাতির ওপর বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই নামকরণ করা হয়।

২৩. ইন্দো-রোমান বাণিজ্য সংক্রান্ত দুটি সাহিত্যিক উপাদান উল্লেখ করো।
উঃ ইন্দো-রোমান বাণিজ্য সংক্রান্ত দুটি সাহিত্যিক উপাদান হল—হৌ-হান-ও-ফ্যান-ই এবং জিওগ্রাফিকে হিউফোজোসিস বা টলেমির ভূগোল।
২৪. সাতবাহন যুগের দুটি বাণিজ্য কেন্দ্র ও দুটি বন্দরের নাম করো।
উঃ সাতবাহন যুগে উজ্জ্বয়িনী ও মহীশূরের বনবাসী ছিল দুটি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র এবং ভৃগুচ্ছ বা ব্রোচ ও সোপারা ছিল দুটি বিখ্যাত সমুদ্র বন্দর।
২৫. রুদ্রদামনের জুনাগড় লেখতে এবং নাসিক প্রশস্তিতে 'আকর' বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে?
উঃ ‘আকর’ বলতে পূর্ব মালবকে বোঝানো হয়েছে। অধ্যাপক ব্রতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, পূর্ব মালবে হীরক খনি থাকার জন্য এই অঞ্চলের নাম ‘আকর’ রাখা হয়েছিল।
২৬. কে, কখন রাজরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?
উঃ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী ক্ষহরত শকরাজা নহপানকে পরাজিত করে ‘রাজরাজ’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
২৭. সাতবাহনদের রাজত্বকালে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন হওয়া দুটি বিদেশি রাষ্ট্রের নাম লেখো।
উঃ সাতবাহনদের রাজত্বকালে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন হওয়া দুটি বিদেশি রাষ্ট্র হল রোম এবং পারস্য।
২৮. সাতবাহনদের সময় সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উঃ সাতবাহনদের সময় সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুটি গ্রন্থ হল—বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’ এবং শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’।
২৯. সাতবাহনদের সময় নির্মিত একটি স্তূপ ও চৈত্যের নাম করো।
উঃ সাতবাহনদের সময়ে নির্মিত স্তূপ হল অমরাবতী স্তূপ এবং চৈত্য হল কার্লের চৈত্য।
৩০. 'বৃহৎকথা' ও 'কাতন্ত্র' কে রচনা করেন?
উঃ পৈশাচী প্রাকৃতে ‘বৃহৎকথা’ রচনা করেন গুণাঢ্য এবং সংস্কৃতে ‘কাতন্ত্র’ রচনা করেন সর্ববর্মা।
৩১. সাতবাহন সময়ে নির্মিত স্তূপ ও চৈত্যের নাম করো।
উঃ অমরাবতী, ঘণ্টকশাল, নাগার্জুনকোন্ডা প্রভৃতি স্থানে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ স্তূপ নির্মিত হয়। ভাজা, নাসিক ও কার্লের চৈত্যগুলি এ যুগের বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

৩২. কাকে 'শক-যবন-পহ্লব-নিসূদন' আখ্যা দেওয়া হয়েছে? গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী কোন শক্তিশালী শক্ষত্রপকে পরাজিত করেন?
উত্তর: গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীকে নাসিক প্রশস্তিতে 'শক-যবন-পহ্লব-নিসূদন' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী মহারাষ্ট্রের প্রবল পরাক্রান্ত শক্ষত্রপ নহপানকে পরাজিত করেন।

৩৩. কোন্ শকরাজার কন্যার সাথে কোন সাতবাহন রাজার বিবাহ হয়েছিল?
উত্তর: শকরাজা রুদ্রদামনের কন্যার সাথে সাতবাহন রাজ বশিষ্ঠীপুত্র পুলমায়ীর বিবাহ হয়েছিল।

৩৪. সাতবাহন বংশের রাজপুত্রদের কী আখ্যা দেওয়া হত? এই বংশের শেষ উল্লেখযোগ্য নৃপতি কে ছিলেন?
উত্তর: সাতবাহন বংশের রাজপুত্রদের কুমার আখ্যা দেওয়া হত। এই বংশের শেষ উল্লেখযোগ্য নৃপতি ছিলেন যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী।

৩৫. কে পশ্চিমা অঞ্চলের 'প্রভু' নামে পরিচিত? কে, কোন ঘটনার পর ‘দক্ষিণাপথপতি' উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: প্রথম সাতকর্ণী পশ্চিমাঞ্চলের ‘প্রভু' নামে পরিচিত ছিলেন। ‘নানঘাট’ লেখ থেকে জানা যায় প্রথম সাতকর্ণী গোদাবরী উপত্যকা জয় করার পর ‘দক্ষিণাপথপতি’ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।

৩৬. সাতবাহনবংশীয় কোন রাজা কেন অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করেন?
উত্তর: সাতবাহনবংশীয় রাজা প্রথম সাতকর্ণী শুঙ্গ শক্তিকে ধ্বংস করেন এবং সমগ্র দক্ষিণ ভারতের ওপর আধিপত্য স্থাপনের ঘটনা উৎযাপন করার জন্য দুটি অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পাদন করেন।

৩৭. সাতবাহন রাজাদের ধর্মমত কী ছিল?
উত্তর: সাতবাহন রাজারা বৈদিক হিন্দুধর্মের অনুরাগী ছিলেন। তাঁরা ব্রাহ্মণদের অর্থ-ভূমি প্রভৃতি দান করতেন। সূর্য, চন্দ্র, ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের প্রমুখ ছিলেন তাঁদের উপাস্য। শিবপূজা ও মাতৃপূজাও প্রচলিত ছিল। সাতবাহন রাজারা বৌদ্ধধর্মেরও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ফলে তাঁদের রাজ্যে বৌদ্ধধর্ম যথেষ্ট বিস্তারলাভ করেছিল। সাতবাহন রাজারা পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন।

৩৮. কার্লেগুহা কোন রাজবংশের আমলে খোদিত হয়?
উত্তর: সাতবাহন বংশের রাজত্বকালে কার্লেগুহা খোদিত হয়। পাহাড়ের গায়ে ১২৪ ফুট গর্ত কেটে এই চৈত্যটি নির্মিত হয়। গুহার ছাদগুলি ধরে রাখার জন্য পাথরের স্তম্ভ ছিল। স্তম্ভগুলির গায়ে পাথর খোদাই করে অলঙ্করণ করা হয়েছিল।

৩৯. সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকের নাম কী?
উত্তর: সিমুক কাণ্বরাজ সুশর্মাকে পরাজিত করে সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী।

৪০. সাতবাহনদের রাজধানী কোথায় ছিল? নাসিক প্রশস্তিতে কার কীর্তি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে?
উত্তর: সাতবাহন রাজাদের আদি রাজধানী ছিল মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদ জেলার নিকটবর্তী পৈঠান বা প্রতিষ্ঠান। নাসিক প্রশস্তিতে সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কীর্তি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

৪১. ‘অন্ধ্র সাতবাহন' কথার তাৎপর্য কী?
উত্তর: আধুনিক পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকদের মতে যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণীর পরবর্তীকালে সাতবাহনদের শাসন কেবল অন্ধ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সম্ভবত সেজন্যই তাদের ‘অন্ধ্র সাতবাহন' নামে অভিহিত করা হয়।

৪২. গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর সম্পর্কে কোন প্রশস্তি থেকে জানা যায়? এই প্রশস্তি কে রচনা করেন? (গৌতমী বলশ্রী কে ছিলেন?)
উত্তর: ‘নাসিক প্রশস্তি' থেকে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর সম্বন্ধে জানা যায়। এতে তাঁর রাজত্বকালের বিভিন্ন ঘটনা, বিজয়কাহিনী, চরিত্র ও কৃতিত্বের বিস্তৃত বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে। গৌতমীপুত্রের মৃত্যুর ১৯ বছর পর তাঁর মা গৌতমী বলশ্রী তাঁর কীর্তিমান পুত্রের যশ ও গৌরবের বিবরণ দিয়ে এই প্রশস্তি রচনা করেন।

৪৩. প্রথম সাতকর্ণীর সময় কলিঙ্গের শাসক কে ছিলেন? প্রথম সাতকর্ণীর স্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: সাতবাহনরাজ প্রথম সাতকর্ণীর সময়ে কলিঙ্গের শাসক ছিলেন খারবেল। প্রথম সাতকর্ণীর স্ত্রী ছিলেন অন্তিয়বংশীয়া নায়নিকা।

৪৪. কোন রাজাকে ‘সাতবাহন কুল-যশঃ প্রতিষ্ঠানকর' এবং কোন প্রশস্তিতে শাতবাহনগণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীকে ‘সাতবাহন কুল-যশঃ প্রতিষ্ঠানকর' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ‘নাসিক প্রশস্তি'তে শাতবাহনগণ বলা হয়েছে।

৪৫. পশ্চিম ভারতের শক ক্ষত্রপরা কী কী শাখায় বিভক্ত ছিল?
উত্তর: পশ্চিম ভারতের শক ক্ষত্রপরা কাদমক ও ক্ষহরত এই দুটি শাখায় বিভক্ত ছিল।

৪৬. কে ক্ষহরত বংশের সূচনা করেছিলেন? তাঁদের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর: পশ্চিম ভারতের ক্ষহরত বংশের সূচনা করেছিলেন ভূমক। ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সী' নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় ক্ষহরত বংশের রাজধানী ছিল মীননগরে।

৪৭. মহাক্ষত্রপ উপাধি কে প্রথম গ্রহণ করেন? ক্ষহরত শাখায় শ্রেষ্ঠ শকরাজা কে?
উত্তর: ক্ষহরত শাখায় নহপান প্রথম ‘মহাক্ষত্রপ’ উপাধি গ্রহণ করেন। নহপান হলেন ক্ষহরত শাখার শ্রেষ্ঠ শকরাজা।

৪৮. ভূমকের পর কোন শকরাজা সিংহাসনে বসেন? কাদমক বংশের শ্রেষ্ঠ শক রাজা কে?
উত্তর: ভূমকের পর শকরাজ নহপান সিংহাসনে বসেন। কাদমক বংশের শ্রেষ্ঠ শক রাজা হলেন রুদ্রদামন।

৪৯. কাদমক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে? কাদমক সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর: কাদমক ক্ষত্রপ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন চষ্টন। উজ্জয়িনী ছিল কাদমক সাম্রাজ্যের রাজধানী।

৫০. রুদ্রদামন কে ছিলেন?
উত্তর: জুনাগড় শিলালিপিতে রাজা রুদ্রদামনের কথা লিখিত আছে। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে পশ্চিম ভারতে রাজধানী উজ্জয়িনীকে কেন্দ্র করে যে শকরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, রুদ্রদামন সেই রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি।

 To be continued..............