📚অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন উত্তরসহ: তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ণ:পার্ট-৩📚
উত্তর: নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলেও এটি ব্যর্থ হয় কয়েকটি কারণে। প্রথমত, আন্দোলনের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছায়নি, ফলে তারা সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, নিম্নশ্রেণির কৃষক ও শ্রমিকদের সংযোগের অভাব ছিল, যা আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। তৃতীয়ত, ব্রিটিশ সরকার কঠোর দমননীতি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমন করে এবং নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ মতভেদ ও আর্থিক সংকটও এর ব্যর্থতায় ভূমিকা রাখে।
2. ‘ইলবার্ট বিল’ কী? এই বিলের বিরুদ্ধে কারা আন্দোলন করেন?
উত্তর: ‘ইলবার্ট বিল’ ১৮৮৩ সালে লর্ড রিপনের উদ্যোগে প্রস্তাবিত একটি আইন ছিল, যা ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের বিচার করার ক্ষমতা প্রদান করত। এটি ভারতীয়দের আইনি সমানাধিকারের প্রচেষ্টা ছিল। তবে ইউরোপীয়রা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করে, কারণ তারা মনে করত ভারতীয় বিচারকদের দক্ষতা যথেষ্ট নয়। তাদের প্রতিবাদের কারণে বিলটি সংশোধন করা হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের বৈষম্যমূলক নীতির প্রমাণ দেয়।
3. জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৯০৭ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে নরমপন্থী ও উগ্রপন্থীদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে। এর ফলে কংগ্রেস দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি ও কৌশলে গভীর প্রভাব ফেলে। এই বিভাজন নরমপন্থীদের সংযত পদক্ষেপ এবং উগ্রপন্থীদের শক্তিশালী কার্যক্রমকে আলাদা করে তোলে। সুরাট অধিবেশন কংগ্রেসের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে পরিগণিত হয়।
4. টীকা লেখো: জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড।
উত্তর: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরে ঘটে। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে একত্রিত হওয়া নিরস্ত্র জনতার উপর জেনারেল ডায়ার বিনা নোটিশে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। এই নির্মম ঘটনায় প্রায় ১০০০ মানুষ নিহত এবং বহু আহত হয়। এই হত্যাকাণ্ড ভারতের জনগণের মনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন উদ্দীপনা যোগায়। এটি ব্রিটিশ শাসনের নিষ্ঠুরতার একটি দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।
5. মাস্টারদা সূর্য সেন বিখ্যাত কেন?
উত্তর: মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সাহসী নেতা, যিনি ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুট অভিযানের জন্য বিখ্যাত। তার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ব্রিটিশ অস্ত্রাগার দখল করে টেলিগ্রাফ ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের পতন ঘোষণা করেন। তিনি কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং ভারতের স্বাধীনতার আহ্বান জানান। সূর্য সেনের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।
উত্তর: সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল ব্রিটিশ শাসন এবং জমিদারি প্রথার শোষণ। জমিদার এবং মহাজনের মাধ্যমে সাঁওতালদের উপর অত্যধিক কর আরোপ এবং ঋণের মাধ্যমে শোষণ চালানো হত। ব্রিটিশ সরকার সাঁওতালদের জমি দখল করে তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায়। মহাজনের অত্যাচার এবং উচ্চ সুদের হার তাদের আর্থিক সংকটে ফেলেছিল। এই শোষণ ও অবিচারের ফলে সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা ১৮৫৫ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
7.1905 সালে বাংলা বিভাজন কেন করা হয়েছিল?
উত্তর: 1905 সালে ব্রিটিশ শাসকরা বাংলার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য বাংলা বিভাজন করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে "বিভাগ কৌশল" (Divide and Rule) প্রয়োগ করা। তারা বাংলাকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু প্রধান এবং পূর্ববঙ্গে মুসলিম প্রধান অঞ্চল গঠন করে। ব্রিটিশরা ধারণা করেছিল, এর ফলে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন দুর্বল হবে। বাংলা বিভাজন ভারতীয় জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ সৃষ্টি করে এবং এটি পরবর্তীতে 1911 সালে প্রত্যাহার করা হয়।
8.নারী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর: পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৮৫৪ সালে তিনি কলকাতায় প্রথম নারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা মেয়েদের শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে। বিদ্যাসাগর নারীদের জন্য বিভিন্ন পাঠ্যবইও রচনা করেন এবং তাদের শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি হিন্দু সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নারীদের শিক্ষা ও উন্নতির পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। তার এই প্রচেষ্টার ফলে নারী শিক্ষা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নারীদের অবস্থা পরিবর্তনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।
9.আলীগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তর: আলীগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সমাজের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন। স্যার সায়দ আহমদ খান ১৮৭৫ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষা প্রচারের প্রচেষ্টা শুরু করেন। তিনি মুসলিম যুবকদের ইংরেজি, বিজ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষায় দক্ষ করে তোলার জন্য গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে শিক্ষা ও সংস্কৃতির জাগরণ ঘটানো এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য ছিল। সায়দ আহমদ খান হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠারও পক্ষে ছিলেন।
10.ভারতবর্ষকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলার তাৎপর্য কি?
উত্তর: ভারতবর্ষকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলা মানে হল যে, ভারতের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করে। গণতন্ত্রে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিকে নির্বাচন করে এবং তারা দেশের নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ করতে পারে। "প্রজাতন্ত্র" শব্দটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান এবং তিনি নির্বাচিত, কোনো বংশগত শাসক নয়। ভারতীয় সংবিধান নাগরিকদের সমান অধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ভারত তার রাজনৈতিক ক্ষমতা জনগণের হাতে দিয়ে একটি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।
11.সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি কেমন ছিল?
উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক বিশাল আঞ্চলিক বিদ্রোহ ছিল। এটি মূলত ভারতীয় সিপাহীদের (সেনাদের) দ্বারা সংঘটিত হয়, যারা ব্রিটিশদের শোষণ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিদ্রোহটি বিচ্ছিন্ন এবং আঞ্চলিক ছিল, কারণ এটি বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শুরু হয়েছিল। সিপাহী বিদ্রোহ ছিল একটি সামরিক বিদ্রোহ, তবে এর সাথে সাধারণ জনগণ, জমিদার, এবং রাজা-রাজ্যরা ও যুক্ত হন। যদিও বিদ্রোহটি পরাজিত হয়, এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়।
উত্তর:
১. বিদ্রোহীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল, কারণ তারা বিভিন্ন ধর্ম, জাতি এবং শ্রেণির মানুষ ছিল।
২. ব্রিটিশরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
৩. বিদ্রোহীদের মধ্যে শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাব ছিল, ফলে সমন্বিতভাবে লড়াই করা সম্ভব হয়নি।
উত্তর: ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশন মুসলিম লীগের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। এই অধিবেশনে "পাকিস্তান প্রস্তাব" পাস করা হয়, যা মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের ধারণা উত্থাপন করেন, যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে। লাহোর অধিবেশনটি মুসলিম লীগের জাতীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র বিতর্কের সূচনা করে। এটি পরবর্তীতে ভারত-বিভাগ এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উত্তর:
- রাজা রামমোহন রায় ১৮শ শতাব্দীতে ভারতের সমাজসংস্কারক আন্দোলনের অগ্রপথিক ছিলেন।
- তিনি সতি প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য ব্রিটিশ সরকারকে প্রভাবিত করেন এবং ১৮২৯ সালে সতি প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।
- নারী শিক্ষার প্রচারের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন এবং নারী অধিকার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেন।
- ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তিনি হিন্দু ধর্মে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং মূর্তিপূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
- তিনি ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন।
- রামমোহন রায় আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তির গুরুত্ব দেন এবং পশ্চিমা শিক্ষা গ্রহণের পক্ষে ছিলেন।
- তিনি নারী অধিকার, সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নতির জন্য কাজ করেন।
- তার আন্দোলন ভারতীয় সমাজে প্রগতির পথে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
উত্তর:
সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের মুক্তি সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রথমে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৪০ সালে তিনি জার্মানি এবং জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা শুরু করেন এবং আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালায় এবং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়। সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন এবং "জয় হিন্দ" স্লোগানটি প্রচলিত করেন। তার নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, যারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু ভারতীয় জাতীয়তাবাদী চেতনা এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার সাহসী নেতৃত্ব ভারতীয় জনগণের মধ্যে মুক্তির অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করে। সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
3. নৌবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর:
নৌবিদ্রোহের মূল কারণ ছিল ব্রিটিশ সরকারের অবহেলা এবং নৌসেনাদের প্রতি বৈষম্য। নৌসেনাদের বেতন কমানো, খাবারের মান খারাপ হওয়া, এবং নতুন আইন যা সৈন্যদের অপমানিত করেছিল, এসব বিদ্রোহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ভারতের সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছিল এবং নৌবাহিনীতেও তা প্রবাহিত হয়। ১৯৪৬ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহ মূলত এই কারণেই ঘটে। বিদ্রোহের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশরা কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং বিদ্রোহী নাবিকদের অনেককে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ব্রিটিশ সরকার নৌবাহিনীতে সংস্কার আনে যাতে ভবিষ্যতে আরও বিদ্রোহ না হয়। তবে, এই বিদ্রোহ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন চেতনা সৃষ্টি করে এবং আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে। ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় এবং এই বিদ্রোহ ভারতীয় জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দেয়। বিদ্রোহ দমন হলেও, ব্রিটিশরা ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর, নৌবিদ্রোহ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে পরিচিত হয়।
4.ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি লেখ।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এগুলি নাগরিকদের স্বাধীনতা, সাম্য, মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত।
1. সমতার অধিকার – আইন এবং সুযোগের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার।
2. স্বাধীনতার অধিকার – বাকস্বাধীনতা, চলাচল, বসবাস, এবং জীবিকা নির্বাহের অধিকার।
3. শোষণ থেকে মুক্তির অধিকার– জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ এবং মানব পাচার রোধ।
4. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার– নিজের ধর্ম অনুসরণ, প্রচার ও পালনের অধিকার।
5. শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার – সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি রক্ষা ও শিক্ষার অধিকার।
6. সাংবিধানিক প্রতিকার লাভের অধিকার – মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে আদালতে যাওয়ার অধিকার।
5.ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যসমূহ থেকে যে কোনো ছয়টি লেখ।
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ৫১-ক ধারা অনুযায়ী নাগরিকদের জন্য মৌলিক কর্তব্যগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে যে কোনো ছয়টি হল:
- সংবিধান অনুসরণ করা এবং তার আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
- স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আদর্শ ও ত্যাগকে মূল্যায়ন করা।
- দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষা করা।
- দেশের প্রতিরক্ষা করা এবং প্রয়োজনে জাতির জন্য সেবা করা।
- প্রকৃতি, বনজ সম্পদ, হ্রদ, নদী এবং বন্যপ্রাণ রক্ষা করা।
- বিজ্ঞান, মানবতা ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা চালানো।
এই কর্তব্যগুলি নাগরিকদের সচেতন এবং দায়িত্বশীল করার উদ্দেশ্যে সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে।
6. শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর: পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৯ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যাসাগর মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং কলকাতায় প্রথম মেয়েদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নেও কাজ করেন এবং বাংলা ব্যাকরণের আধুনিকীকরণ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৬ সালে 'হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন' প্রণয়ন করতে সহায়ক হন, যা বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রদান করে। তিনি সমাজের প্রতি অবিচার, শোষণ এবং অন্ধবিশ্বাস দূর করতে সচেষ্ট ছিলেন। বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান ভারতের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি সর্বস্তরের মানুষের জন্য শিক্ষা এবং সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর কাজ সমাজের উন্নতি এবং নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।
7.মহাত্মা গান্ধী যে তিনটি আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন তাদের বিবরণ দাও।
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি ভারতীয় জনগণকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একত্রিত করেছিলেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সত্যাগ্রহ আন্দোলন ছিল:
1. চাম্পারন সত্যাগ্রহ (১৯১৭): চাম্পারন (বর্তমানে বিহার) অঞ্চলের কৃষকরা জমিদারদের অমানবিক শোষণের শিকার ছিলেন। তারা তামাক উৎপাদনে বাধ্য ছিল এবং অত্যধিক কর দিতে হতো। গান্ধী চাম্পারনে এসে এই কৃষকদের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন, যা সফলভাবে জমিদারি প্রথা এবং কৃষকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করার দিকে নিয়ে যায়।
2. কেদারী পট্টি (১৯১৮): গুজরাটের কেদারী পট্টি অঞ্চলের তন্তুবায়ীরা কর পরিশোধে অত্যাচারিত হচ্ছিল। গান্ধী এখানে এসে শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। তার নেতৃত্বে আন্দোলনে বিজয় অর্জিত হয় এবং শ্রমিকদের দুর্দশা কমানো হয়।
3. আহমেদাবাদ মিল শ্রমিক আন্দোলন (১৯১৮): আহমেদাবাদ শহরে মিল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় তারা ধর্মঘট শুরু করেছিল। গান্ধী তাদের নেতৃত্ব দেন এবং মিল মালিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়।
এই আন্দোলনগুলোর মাধ্যমে গান্ধী ভারতীয় জনগণের মধ্যে অহিংস আন্দোলন চালানোর ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে ওঠে।
8.ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চরমপন্থী মতবাদের উদ্ভবের কারণ গুলি আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে চরমপন্থী মতবাদের উদ্ভবের পেছনে একাধিক কারণ ছিল। প্রথমত, ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয় জনগণের প্রতি শোষণ, নিপীড়ন এবং অবিচারের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশদের নীতি, যেমন ভারতীয়দের অধিকার হরণ, এবং অর্থনৈতিক শোষণ চরমপন্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল। তৃতীয়ত, মধ্যপন্থী আন্দোলন যেমন অহিংস পন্থা এবং সমঝোতা ব্রিটিশ শাসকদের কাছ থেকে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া লাভ করতে পারেনি, যার ফলে চরমপন্থী আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
চতুর্থত, বঙ্গবিভাগের ফলে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় একতা ক্ষুণ্ণ হয়, যা চরমপন্থীদের বিপ্লবী মনোভাবকে উৎসাহিত করে। পঞ্চমত, সিপাহী বিদ্রোহের পর ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি বিরোধিতা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ষষ্ঠত, ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে শিক্ষা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ায়, যা স্বাধীনতার জন্য চরমপন্থী আন্দোলনকে সহায়তা করেছিল। সপ্তমত, সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধ চরমপন্থী নেতাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।
অষ্টমত, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ ও আন্দোলনের মাধ্যমে চরমপন্থীরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সহিংস পথ অবলম্বন করতে শুরু করেন। নবমত, বিপ্লবী সংগঠনগুলির মাধ্যমে সহিংস কর্মসূচি, যেমন ব্রিটিশ আধিকারিকদের হত্যা, আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। দশমত, এই সমস্ত কারণ মিলিয়ে চরমপন্থী মতবাদ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি শক্তিশালী আন্দোলন হিসেবে উদ্ভূত হয়।
9.সাইমন কমিশন কেন গঠন করা হয়েছিল এবং সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কেন আন্দোলন করেছিল?
উত্তর: সাইমন কমিশন ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং সংবিধান সংশোধন করার জন্য গঠন করেছিল। কমিশনটি নেতৃত্ব দেয় ইংরেজি আইনজ্ঞ স্যার জন সাইমন, এবং এটি মূলত ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া গঠিত হয়েছিল। ভারতীয়রা মনে করেছিল, এটি তাদের অধিকার ও মতামত উপেক্ষা করে গঠিত এবং এজন্য তারা এই কমিশনের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।
সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রধান কারণ ছিল ভারতীয়দের কোনো প্রতিনিধি না থাকা, যা ভারতীয়দের জন্য অশ্রদ্ধা হিসেবে দেখা হয়েছিল। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশন ভারতে এলে, তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন লালালাজপত রায়। এই আন্দোলনে "সাইমন গো ব্যাক" স্লোগান ওঠে। পুলিশি আক্রমণে লালালাজপত রায় আহত হন এবং পরে মারা যান, যা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। এই আন্দোলন ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে গণ্য হয়।
10.ভারতীয় মুসলিমদের সংস্কার সাধনে স্যার সৈয়দ আহমদ খান এর ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদ খান ভারতীয় মুসলিম সমাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। তিনি মুসলিমদের আধুনিক শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং ইংরেজি শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রতি তাদের আগ্রহী করতে সচেষ্ট ছিলেন। তার উদ্যোগে আলিগড় মুভমেন্ট গড়ে ওঠে, যার মাধ্যমে মুসলিমদের শিক্ষায় উন্নতি ঘটানো হয়। তিনি 'তহযিব-উল-আখলাক' পত্রিকা প্রকাশ করেন, যা মুসলিমদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারের বার্তা পৌঁছানোর জন্য ছিল। স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিমদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নতি এবং জাতীয় ঐক্যের গুরুত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মুসলিম সমাজে আধুনিকতা এবং পশ্চিমী শিক্ষা প্রচার করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় মুসলিম সমাজে সামাজিক পরিবর্তন আসে, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেও ভূমিকা রাখে। স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সংস্কারমূলক কাজ মুসলিম সমাজের উন্নতির পথ সুগম করে।
<<<<<<<<<<<<<🌹 সমাপ্ত 🌹>>>>>>>>>>>>
👉For pdf whatsapp-8250978714