🌹বি.এ ইতিহাস মেজর-2: SEMESTER-II: সাজেশন:PART-1(উত্তরসহ)🌹

📚বি.এ ইতিহাস মেজর-2: SEMESTER-II: সাজেশন:PART-1(উত্তরসহ)📚

✍️প্রশ্নমান-২:

 1. সক্রেটিস কে ছিলেন?  
   উত্তর: ইউরোপীয় সভ্যতার আদি প্রাণপুরুষ এবং দর্শনের আদি রূপকার সক্রেটিস খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৬ অব্দে গ্রীসের এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণ করেননি এবং এথেনীয় বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। কিছুদিনের জন্য সরকারে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছিলেন এবং ৬৫ বছর বয়সে কাউন্সিল সদস্যপদ লাভ করেছিলেন। তবে তিনি প্রধানত দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত।

2. সক্রেটিস জ্ঞানের কীরূপ সংজ্ঞা দিয়েছেন?  
   উত্তর: সক্রেটিসকে পাশ্চাত্য রাজনৈতিক দর্শনের পিতামহ এবং নীতিশাস্ত্রের পুরোধা বলা হয়। তাঁর মতে, জ্ঞান দু'প্রকার—আপাত জ্ঞান এবং প্রকৃত জ্ঞান। তিনি বলেন, সকলের কর্তব্য হল সত্য জ্ঞানের সন্ধান করা। এছাড়াও, সদগুণও জ্ঞানের অন্তর্গত এবং এটি দু'প্রকার—মতামত নির্ভর এবং সত্য নির্ভর, যার মধ্যে প্রথমটি ক্ষণস্থায়ী এবং দ্বিতীয়টি চিরস্থায়ী।

3. সক্রেটিসের জীবনদর্শন সম্পর্কে কী জানা যায়?  
   উত্তর: সক্রেটিস নিজস্ব দর্শন সম্পর্কে কোন গ্রন্থ রচনা করেননি। তবে জেনোফোনের 'মেমোরাবিলিয়া' এবং প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ ও ‘ডায়লগ’ থেকে তাঁর জীবনদর্শনের খোঁজ মেলে। তাঁর মতে, আত্মজ্ঞানই দর্শনশাস্ত্রের মূল।

4. সক্রেটিসের শিক্ষা-পদ্ধতি কীরূপ ছিল?  
   উত্তর: সক্রেটিসের শিক্ষা-পদ্ধতি অভিনব ছিল। অন্যান্য দার্শনিকদের মতো নিজ মত প্রচার না করে, প্রথমে অজ্ঞতার ভান করে প্রশ্ন উত্থাপন করতেন এবং তার উত্তরে তথ্য পেলে তর্কের মাধ্যমে ব্যক্তির অজ্ঞতাকে প্রমাণ করতেন। এই পদ্ধতিকে 'সক্রেটিসের শ্লেষ' বলা হয়।

5. সক্রেটিসের কয়েকজন শিষ্যের নাম লেখো।
   উত্তর: সক্রেটিসের আলাপ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রতিভাবান তরুণদের মধ্যে প্লেটো এবং এরিস্টিপ্লাস অন্যতম।

 

 6. সোফিস্ট দর্শনের মূল ত্রুটি কী ছিল?  
   উত্তর: সোফিস্ট দর্শনের প্রধান ত্রুটি ছিল এর সত্যাংশ কুতর্করাজির মধ্যে ঢাকা পড়ে যাওয়া। এই কুতর্কপ্রিয়তা এবং ব্যক্তিগত নৈতিক অবনতির ফলে মানুষ এ দর্শনের সারাৎসার গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া, সোফিস্টরা তাদের দর্শনকে গণমুখী করেননি, যা দর্শনের প্রসারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল।

7. ধর্ম বিষয়ে প্রোটোগোরাসের সিদ্ধান্ত কী ছিল?  
   উত্তর: প্রোটাগোরাস 'On the Gods' নামে একটি সন্দর্ভ রচনা করেন, যার প্রথম বাক্যে তিনি বলেছিলেন—"দেবদেবী আছে কিনা, আমি কিছুই জানি না, কেননা আমাদের জ্ঞানের ও আয়ুর সীমা পরিমিত এবং বিষয়টিও জটিল।" তিনি হয়তো ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, তবে বলতেন ঈশ্বরকে জ্ঞানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়।

8. প্রোডিকাস সম্পর্কে কী জান?  
   উত্তর: প্রোডিকাস ছিলেন একজন নৈরাশ্যবাদী সোফিস্ট দার্শনিক, যিনি মানবজীবন সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক বক্তব্য দিতে পারেননি। তিনি যুবকদের সকলপ্রকার সুখভোগ ও বিলাসবর্জনের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং কামনা-বাসনা পরিহার করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

9. প্রোডিকাসের জন্য এথেনীয়রা ঋণী কেন?  
   উত্তর: প্রোডিকাস এথেন্সে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন কারণ তিনি ব্যাকরণ ও শব্দ-প্রকরণের উপর কাজ করেন। ভাষাতত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্বে তিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং প্রতিশব্দ নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। নৈতিক শিক্ষায়ও তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

10. হিপ্পোক্রেটিস (Hippocrates) সম্পর্কে কী জানা যায়?  
    উত্তর: যুক্তিবাদী ধ্যানধারণা থেকে গ্রীসে নতুন চিকিৎসাবিদ্যার সূত্রপাত করেছিলেন কস নগরের হিপ্পোক্রেটিস। তিনি ও তাঁর শিষ্যরা কুসংস্কার থেকে নিজেদের মুক্ত করেন এবং বলেন যে, ঈশ্বরের রোষে নয়, প্রাকৃতিক কারণে মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম— 'The Sacred Disease'।

11. হিপ্পন (Hippon) কে ছিলেন?  
    উত্তর: সোফিস্ট দার্শনিকদের মধ্যে হিপ্পন ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব।

 

 12. ‘সোফিস্ট' শব্দের অর্থ কী?  
    উত্তর: ‘সোফিস্ট' শব্দটির প্রচলিত অর্থ কুতর্ককারী, কিন্তু ‘এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা’-র মতে এর অর্থ 'Man of Wisdom' বা জ্ঞানী ব্যক্তি। গ্রিক শব্দ *Sophia* (দিব্যজ্ঞান) থেকে ‘সোফিস্ট’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। অধ্যাপক এডামসনের মতে, 'সোফিস্ট' শব্দটির নির্দিষ্ট কোনো ভাব প্রকাশক অর্থ ছিল না এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট দার্শনিক সম্প্রদায়কেও বোঝাত না; বিভিন্ন মতাবলম্বী দার্শনিকদের ‘সোফিস্ট’ বলা হতো।

13. সোফিস্টদের দর্শন কিরূপ ছিল?  
    উত্তর: ‘সোফিস্ট' শব্দের অর্থ ‘জ্ঞানী বুদ্ধিমান’। সোফিস্টরা প্রাচীন গ্রীসের আদি দার্শনিকদের একটি স্বাধীন গোষ্ঠী ছিলেন। তাঁরা মানুষকেই তাদের শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু বলে মানতেন এবং মানুষকে রাজনৈতিক জীব বলে বিবেচনা করতেন। তবে সোফিস্টদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ক ছিল প্রচুর।

14. সোফিস্টরা কীরূপ কাজকর্ম করতেন?  
    উত্তর: সোফিস্টরা অধিকাংশই সর্বশাস্ত্র বিশারদ ছিলেন, কিন্তু সবাই তেমন প্রতিভাসম্পন্ন না হওয়ায় অনেকেই কুতর্ককারী নামে পরিচিত ছিলেন। তারা ভ্রাম্যমাণ শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন এবং নগদ অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের নানান বিষয়ে কৃতবিদ্যা করে তুলতেন। সোফিস্টদের মধ্যে অনেকে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।

15. সোফিস্টদের শিক্ষাদান পদ্ধতি কেমন ছিল?  
    উত্তর: সোফিস্টরা দুটি শিক্ষাদান পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন—(১) সংলাপধর্মী আলোচনা ও বিতর্কের পদ্ধতি, যা ন্যায়-নীতির প্রশ্নে সকল অস্পষ্ট বিমূর্ত নীতির বিরোধিতা করত। (২) সত্য বা Truth সম্পর্কে তাঁদের কোনো চূড়ান্ত সার্বজনীন ধারণা ছিল না; তাঁদের কাছে মানুষই ছিল সবচেয়ে বড় সত্য।

16. সোফিস্ট দার্শনিকদের কী বাস্তববাদী বলা যায়?  
    উত্তর: সোফিস্ট দর্শনের মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের মঙ্গলের জন্য চিন্তাভাবনা করা। তাঁরা ছিলেন বাস্তববাদী এবং জীবনের সৌন্দর্য ও সুশাসন নিশ্চিত করা ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য।

 

 17. ডেলফির পাইথিয়ান ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কখন শুরু হয়েছিল?  
    উত্তর: ডেলফির পাইথিয়ান খেলাধুলার সূচনা হয়েছিল ৫৮২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যাপোলোর সম্মানার্থে। ডেলফিতে অলিম্পিয়ার অনুরূপ অনুষ্ঠানসূচী চালু করা হয়েছিল, তবে এ প্রতিযোগিতার মূল বিশেষত্ব ছিল সঙ্গীতের প্রতিযোগিতা। পুরস্কার হিসেবে ডেলফিতে দেওয়া হত সাদাসিধে পাতার মালা।

18. গ্রীসে খেলাধুলার প্রভাব কিরূপ ছিল?  
    উত্তর: গ্রীসে খেলাধুলা ধর্মের চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। খেলাধুলা গ্রীসে ঐক্যবদ্ধতা আনতে এবং রণক্ষেত্রের দ্বেষ, হিংসা ও প্রতিশোধের স্পৃহা দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। প্রতিযোগীরা খেলাধুলার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হয়েছিল।

19. গ্রীক দর্শনের উৎপত্তি কখন কোথায় হয়েছিল?  
    উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এশিয়া মাইনরের উপকূলবর্তী আয়োনীয় নগররাষ্ট্র মাইলোটাস বাণিজ্যিক এলাকায় গ্রীক দর্শনের উৎপত্তি হয়। এখানে মিলেশিয়ান স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন থালেস, যিনি প্রচার করেন যে সকল সৃষ্ট জীবে আর্দ্রতা থাকে এবং সে হিসেবে জলই আদি ও অকৃত্রিম বস্তু।

20. অ্যানাক্রিমেন্স কে ছিলেন?  
    উত্তর: অ্যানাক্রিমেন্স ছিলেন মিলেশিয়া স্কুলের তৃতীয় প্রবক্তা। তাঁর মতে, বিশ্বের সব কিছুর মূলে রয়েছে বায়ু, কারণ বায়ুই সকল জীবের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে। তাঁর মতবাদ আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও এর গুরুত্ব ছিল ব্যাপক।

21. পিথাগোরাস কে ছিলেন?  
    উত্তর: পিথাগোরাস খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগে বিদ্যমান ছিলেন। তাঁর দর্শনে সংখ্যা (Number) জাগতিক বস্তুসমূহের প্রকৃত স্বরূপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

 22. অলিম্পিক কখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?  
    উত্তর: বারোশো বছর ধরে মোট ২৯৩টি অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে নানা কারণে ৩৯৪ খ্রিস্টাব্দে রোম সম্রাট থিয়োডোসিয়াসের শাসনামলে আইন করে অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

23. পাইথিয়ান ক্রীড়া উৎসব কী?  
    উত্তর: পাইথিয়ান উৎসব ছিল দেবতা অ্যাপোলোর প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। প্রথমদিকে এই উৎসবের একমাত্র বিষয় ছিল সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। পরবর্তীকালে অ্যাথলেটিকস, অশ্বারোহন, রথচালনা, এবং চিত্রাঙ্কনও এর অন্তর্ভুক্ত হয়। বিজয়ীদের পাতার মুকুট পরিয়ে সম্মান জানানো হত এবং এই প্রতিযোগিতা চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হত।

24. স্পার্টার ক্রীড়া জগত কেমন ছিল?  
    উত্তর: স্পার্টায় আচ্ছাদনহীন মাঠে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে খেলাধুলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। শিশুদের পায়ের পেশী শক্ত করার জন্য দৌড়-ঝাঁপ শেখানো হত। সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত বল খেলা বাধ্যতামূলক ছিল এবং পরবর্তীকালে বর্শা নিক্ষেপ, মুষ্টিযুদ্ধ, কুস্তি ইত্যাদি শেখানো হত। প্যানক্রোসিয়ামের বিভৎসতা ও শিকারের উম্মাদনা শেখানোর বিষয়বস্তু ছিল।

25. স্পার্টার নারীরা কীভাবে ক্রীড়া জগতে অংশগ্রহণ করত?  
    উত্তর: স্পার্টার নারীদের সঙ্গীতের পাশাপাশি জিমনাস্টিক, দৌড়-ঝাঁপ, বর্শা ও ডিসকাস নিক্ষেপ, অশ্বারোহণ ইত্যাদি শেখানো হত। এছাড়া তারা সাঁতার ও কুস্তিতেও অংশ নিত। বোর্ডিং বা ব্যারাক নয়, গৃহই ছিল তাদের শিক্ষাঙ্গন। তবে বিবাহিত নারীরা কোনো শারীরিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করত না।

26. গ্রীক নারীরা ক্রীড়াঙ্গনে কীরকম ভূমিকা পালন করত?  
    উত্তর: গ্রীক নারীরা খেলাধুলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিত। ক্রিটের রাজা মাইনোসের রাজপ্রাসাদের দেওয়ালচিত্রে আক্রমণকারী বৃষের সাথে ক্রীড়ারত নারীদের চিত্র প্রমাণ করে সুপ্রাচীন কাল থেকেই গ্রীক নারীরা খেলাধুলায় যুক্ত ছিল।

 

 27. প্যালেস্ট্রা ও ডিকাসকেলিয়াস কী?  
    উত্তর: প্রাচীন এথেন্সের দুটি শিক্ষাকেন্দ্র ছিল—প্যালেস্ট্রা ও ডিকাসকেলিয়াস। প্যালেস্ট্রায় মূলত শরীর শিক্ষা দেওয়া হত, যেখানে শারীরিক দক্ষতার বিভিন্ন খেলা ও কৌশল শেখানো হত। অন্যদিকে, ডিকাসকেলিয়াসে সাহিত্য, সঙ্গীত, ও গণিতচর্চা হতো।

28. প্যালেস্ট্রাগুলি কেমন ছিল?  
    উত্তর: প্যালেস্ট্রাগুলির চারদিকে ঘর থাকত, আর মাঝখানে খোলা জায়গায় কুস্তি, মুষ্টিযুদ্ধ, এবং বিভিন্ন ধরনের জিমনাস্টিক অনুশীলন হতো। ঘরগুলিতে ছাত্ররা পোশাক পরিবর্তন, তেলমর্দন, ও স্নান করত। কিছু প্যালেস্ট্রায় সাঁতার কাটার জন্য পুকুরও ছিল। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত এবং বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হতো।

29. জিমনাসিয়ামগুলি কেমন ছিল?  
    উত্তর: জিমনাসিয়ামগুলিতে প্রশস্ত মাঠ, স্নানাগার, এবং কয়েকটি মাঝারি ও একটি বড় হলঘর থাকত। সাধারণত, জিমনাসিয়ামগুলি নদীর নির্জন তীরে নির্মিত হত। এথেন্সের তিনটি বিখ্যাত জিমনাসিয়াম ছিল—একাডেমি, লাইসিয়াম, ও সাইনোসারগাস। জিমনাসিয়ামে শরীরচর্চার পাশাপাশি গণিত, দর্শন, সাহিত্যচর্চাও চলত। অশ্বচালনা ও প্যারেড অনুশীলনের ব্যবস্থাও ছিল।

30. এথেন্সের খেলাধুলায় মেয়েরা অংশগ্রহণ করত কী?  
    উত্তর: এথেন্সের খেলাধুলায় মেয়েদের জন্য অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। কেবলমাত্র ক্রীতদাসী নারীরা কখনও কখনও নৃত্য ও অন্যান্য শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে পুরুষদের ভোজসভায় তাদের মনোরঞ্জন করত।

31. প্যান হেলেনিক ক্রীড়ানুষ্ঠান কী?  
    উত্তর: প্রাচীন গ্রীসের ক্রীড়া সংগঠনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথমদিকে খেলাধুলা ব্যক্তিগত বা স্থানীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হত। পরে এটি স্থানীয় পরিসীমা অতিক্রম করে নিখিল গ্রীস বা প্যান হেলেনিক ক্রীড়ানুষ্ঠান রূপে পরিগণিত হয়। এই উৎসবগুলির মধ্যে অলিম্পিক, ইসমিয়ান, পাইথিয়ান, এবং নিমিয়ান উল্লেখযোগ্য। অ্যাথলেটিকসের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এসব উৎসবের প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছিল।

32. Hamara Judgement-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য কী?  
    উত্তর: Hamartia অর্থাৎ "ত্রুটি" বা "বিচ্যুতি," যা প্রধানত তিনভাবে উদ্ভূত হয়—(ক) অজ্ঞতার কারণে, (খ) চিন্তাভাবনা না করে নেওয়া সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, এবং (গ) আবেগের বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে।

33. ইউরিপিদিস কে ছিলেন?  
    উত্তর: ইউরিপিদিস ছিলেন মেলামিসের ভূমিপুত্র এবং গ্রীক ট্র্যাজেডির অন্যতম প্রধান নাট্যকার। তিনি সফোক্লিসের তুলনায় কিছুটা ছোট ছিলেন। তাঁর নাট্যরচনার উপাদান তিনি প্রায়ই গ্রীক মহাকাব্য, স্থানীয় কিংবদন্তি, এবং জনপ্রিয় উপকথা থেকে গ্রহণ করতেন। শোকাবহ বিষয়, মানসিক দ্বন্দ্ব, ভ্রষ্টতা, এবং তারসাথে জড়িত হাহাকার ছিল তাঁর নাটকের প্রিয় বিষয়।

34. ইউরিপিদিস তাঁর নাটকের চরিত্রগুলোকে কিভাবে চিত্রিত করেছেন?  
    উত্তর: ইউরিপিদিস তাঁর নাটকের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সমকালীন সমাজের বিশ্লেষণ করেছিলেন। তিনি নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণভাবে চিত্রায়ণ করেননি, বরং নারী চরিত্রগুলোকে পুরুষদের প্রতিরূপ হিসেবে দেখিয়েছেন।

35. ইউরিপিদিসের রচনাসম্ভার সম্পর্কে কী জানা যায়?  
    উত্তর: প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইউরিপিদিস প্রায় ৮০টি (কিছু সূত্রে ১২টি) নাটক রচনা করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯টি নাটক সংরক্ষিত আছে। তাঁর শ্রেষ্ঠ ট্রাজেডিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—'মেডিয়া', 'হিপোলিটাস', 'হেলেন', 'আন্দ্রোমাচে', 'হেকাবে', 'ওরেস্তেস', এবং 'ইফিগেনিয়া'।

36. গ্রীক দেবতা ডায়োনিসাস-এর উৎসব থেকে কমেডির উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছিল?  
    উত্তর: গ্রীক দেবতা ডায়োনিসাস-এর বসন্তকালীন উৎসব থেকে যেমন ট্র্যাজেডির উদ্ভব হয়েছিল, তেমনি শীতকালীন উৎসব থেকে কমেডির উৎপত্তি হয়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কমেডির বিকাশ লক্ষ করা যায়, যা শুরুতে নির্দিষ্ট কাঠামোতে ছিল না। কমেডির গল্পে সামাজিক ব্যঙ্গবিদ্রূপ এবং সমসাময়িক সমস্যাগুলো তুলে ধরা হত, যা তখনকার সমাজের প্রতিফলন ছিল।

37. গ্রীক সমাজে কৃষির গুরুত্ব কতখানি ছিল?  
    উত্তর: জেনোফোনের 'Economicus' গ্রন্থে সক্রেটিসের কৃষি সম্পর্কে মনোভাগের পরিচয় মেলে। তাঁর মতে, কৃষি সবথেকে সম্মানজনক পেশা, কারণ একটি সুনাগরিক গড়ে তুলতে কৃষির ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব। তাই গ্রীসের সমাজ কাঠামোয় অর্থনীতির সহায়তাকারী সমস্ত শিল্পের মধ্যে কৃষিই ছিল সুন্দর ও প্রয়োজনীয়।

38. অ্যাটিকার সবচেয়ে উর্বর জমিগুলি কোথায় ছিল?  
    উত্তর: অ্যাটিকার সবচেয়ে উর্বর জমিগুলি ছিল এলিউসিস সমভূমি, কেফিসাস নদীর উপত্যকা এবং ম্যারাথনের সমভূমি। এই অঞ্চলে প্রধান উৎপাদিত পণ্য ছিল আঙুর। এথেনীয়দের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদিত পণ্য ছিল আঙুর ও সুরা। সুরা দিয়ে তারা আমদানিকৃত শস্যের দাম মেটাত।

39. গ্রীসের অর্থনীতিতে জলপাইয়ের গুরুত্ব আলোচনা করো।  
    উত্তর: অ্যাটিকার সবচেয়ে মূল্যবান শস্য ছিল জলপাই। ভোজ্য তেল হিসাবে, প্রলেপনের কাজে, আলোকিত করার কাজে এবং জ্বালানি হিসাবে জলপাই তেল ব্যবহৃত হত। পেরিক্লিসের আমলে প্রচুর জমিতে জলপাইয়ের চাষ হত, রাষ্ট্র জলপাই রপ্তানি-বাণিজ্যে একচেটিয়া অধিকার স্থাপন করেছিল।

40. গ্রীসে খনিজ শিল্পের বিকাশ কীভাবে হয়েছিল?  
    উত্তর: মাটিকার মাটি লোহা, দস্তা, রূপা, সীসা ও মার্বেল পাথরে সমৃদ্ধ ছিল। ইনসাইলাসের ভাষায়, পরিয়াসের খনি ছিল 'a fountain running silver'! মনিগুলির সম্পূর্ণ মালিকানা ছিল রাষ্ট্রের অধীনে। শুধুমাত্র নাগরিকরাই মনিগুলির লীজ পেত এবং ক্রীতদাসরাই খনিতে কাজ করত।

41. পশুপালন কীভাবে গ্রীসে বিকল্প অর্থনীতির পথ দেখিয়েছিল?  
    উত্তর: শিল্প ছাড়া বিকল্প জীবিকা ছিল পশুপালন। প্রধান পশ্চম ও সুজারল্যের জন্য ছাগল-ভেড়া প্রতিপালন করা হত। এছাড়া দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য ঘোড়া, যাতায়াতের জন্য খচ্চর, গরু, ষাঁড় ও শূকর প্রতিপালিত হত।

42. প্যারাসিয়াস কে ছিলেন?  
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্যারাসিয়াসের আবির্ভাব ঘটেছিল, তিনি ছিলেন এফিসাস অঞ্চলের চিত্রকর। তিনি ইউরোপীয় অঙ্কনবিদ্যা ও চিত্রনশিল্পের খুব কাছাকাছি পৌঁছে ছিলেন। প্যারাসিয়াস যে বর্ণালি নকশাচিত্র রচনা করেছিলেন, তাতে মূর্তির বর্ণবৈচিত্র্যের পরিচয় নির্দেশক নকশা পরিস্ফুট হয়েছে।

43. এ্যাপোলোডোরাস কে ছিলেন?  
উত্তর: এ্যাপোলোডোরাস ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য গ্রীক চিত্রকর। তিনি 'প্রকৃত বস্তু নয়, বরং তার ছায়াময় চিত্র অঙ্কনকারী' ছিলেন (Shadow Painter)। প্লিনী বলেছেন, এ্যাপোলোডোরাস হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বাহ্যরূপের (প্রজাতি) প্রকাশ ঘটিয়ে অঙ্কনবিদ্যাকে তার যথার্থ গৌরবের আসনে আসীন করেছেন। অ্যাপোলোডোরাসের সাদা ক্যানভ্যাসে প্রধান প্রধান বাহ্যিক রেখা দেওয়া নকশাসমেত আধারগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা চমৎকার চোঙায়িত আধার শৈলীর মধ্যে প্যারাসিয়াসের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়।

44. জিউসিস্ কে ছিলেন?  
উত্তর: এ্যাপোলোডোরাসের শিষ্য ছিলেন হেরাক্লিয়ার জিউসিস্। জিউসিস্ তাঁর চিত্রগুলি রাজা এবং নগরকে উপহার হিসাবে দান করেছিলেন। তাঁর চিত্রগুলি এতই মূল্যবান ছিল যে তিনি বিনামূল্যে দান করে চিত্রগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিলেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রগুলি হল 'Runner' এবং 'The People of Athens'। তাঁকেও 'আলো-ছায়ার মেলবন্ধন'-র কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

45. মাইকন কে ছিলেন?  
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের দ্বিতীয় পর্বের প্রধান চিত্রকর হলেন মাইকন। মাইকন ছিলেন এথেনীয়। পৌসানিয়াস এথেন্সে মাইকনের ছবিগুলির বিষয়বস্তুর উল্লেখ করেছেন।

46. পেপলস' কী?  
উত্তর: গ্রীসের প্রথম পর্বের ধ্রুপদী যুগের প্রিয় নারীমূর্তি হচ্ছে 'পেপলস' (Peplos Figure)। এরূপ নামকরণের কারণ হচ্ছে এই মূর্তির পরিধানে ছিল ডোরিক পেপলস। এই শ্রেণীর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্রোঞ্জমূর্তি আজও বর্তমান। ভারি ডোরিক পেপলস পরিচ্ছদে সাদামাটা ভাঁজের প্রবণতা দেখা যায়।

47. বিশ্ব ইউরোপার মূর্তিটি কেমন?  
উত্তর: ইউরোপার মূর্তিটিতে আইওনীয় পরিচ্ছদের প্রতিফলন দেখা যায়, সেখানে পায়ের পাতার চারপাশ ছাড়া সম্প্রসারিত ভাঁজের দ্বারা চিটনটি (Chiton) নির্মিত হয়েছে।

48. গ্রীক স্থাপত্যের প্রধান উপাদান কী কী ছিল?  
উত্তর: (ক) গ্রীক স্থাপত্যের নির্মাণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত স্তম্ভ ও অঙ্গরাজির ব্যবহার হত। (খ) বারান্দা তৈরী করা হত। (গ) সম্মুখভাগের স্তম্ভের ওপর লিনটেল বা সমান্তরাল পাথরখন্ড যা তাদের নির্মাণকে সাহায্য করেছিল। (ঘ) চালু নকশা, (ঙ) লিনটেলের মধ্যভাগে একটি ত্রি-কোনাকার অংশ থাকত।

49. গ্রীক মুদ্রাগুলি কেমন ছিল?  
উত্তর: গ্রীক মুদ্রাগুলিতে ভাস্কর্যের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। সুন্দর দেবদেবীর মাথা (আরেজা, আর্টেমিস ইত্যাদি), ডলফিনের মতো জন্তু জানোয়ারের প্রতিকৃতি মুদ্রায় বোদিত হয়েছিল।

50. গ্রীক ভাস্কর্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী ছিল?  
উত্তর: গ্রীক ভাস্কর্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মানবমূর্তি। গ্রীক ভাস্কর্যের উৎকর্ষতা হল সুন্দর সুন্দর নরনারীর আদর্শ সুন্দর দেহ কল্পনা করে তা কাঠ, ব্রোঞ্জ বা পাথরে ফুটিয়ে তোলা। গ্রীকরা ফোটোগ্রাফিক মূর্তি তৈরী করেই বেশি সুখ্যাতি অর্জন করেছিল।

51. গ্রীক ভাস্কর্যে রঙের ব্যবহার করা হত কেন?
উত্তর: গ্রীক মূর্তি-ভাস্কর্য ধবধবে শ্বেত পাথরে খোদাই করা হত, যে পাথরের শির বা অন্য রঙের আঁশ খুব কম। যার ফলে ত্বক, পেশী, গায়ের সুডোল গড়ন বড় বেশী কোমল। অনেকটা মাখনের মতো দেখায়। পাথরের নিজস্ব গঠনগত বৈশিষ্ট্য ও বর্ণ বৈচিত্র্যের অভাবে মূর্তির ব্যঞ্জনা একটু ব্যাহত হয়। এই অভাব মেটানোর জন্য গ্রীক ভাস্কর্যে রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

52. গ্রীক ভাস্কর্যের একটি সীমাবদ্ধতা লেখ।  
উত্তর: গ্রীসের অধিকাংশ মূর্তিগুলির মুখে বিশেষ কিছু অভিব্যক্তি নেই—স্থির অপলক, অভিব্যক্তিহীন, নিশ্চল, কিছুটা উদাসীন। মিশর, পশ্চিম এশিয়া, নিচেরান, ভারত সাইক্লাতিক ভাস্কর্যের মতো অপরূপ মনের অভিব্যক্তি, আকুতি, বেদনা, অভিলাষ যেন তেমন ফুটে নি ওঠে।

53. গ্রীক ভাস্কর্যে বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণ কতখানি ঘটেছিল?  
উত্তর: গ্রীক ভাস্কর্যে বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণ ঘটেছিল। গ্রীক ভাস্কর্যে যেমন বাস্তবজীবনের মানবমূর্তি, জন্তু-জানোয়ার গাছপালার চিত্র ইত্যাদি দেখা যায়। তেমনি কল্পনা জগতের দেবদেবী, দানব ইত্যাদিরও মূর্তি ভাস্কর্যে স্থান পেয়েছে।

42. প্লেটোর সুবিচারের তত্ত্বকে কিভাবে সমালোচনা করা হয়েছে?  
উত্তর: প্লেটোর সুবিচারের সংক্রান্ত তত্ত্বটি বহু সমালোচিত। তাঁর তত্ত্ব যেহেতু নৈতিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তাই এর প্রয়োগে অসুবিধা হয়েছিল। তিনি সুবিচারের দোহাই দিয়ে শাসকশ্রেণির প্রভুত্ত ও বৈষম্যমূলক সামাজিক শ্রেণিবিভাগকে স্থায়ী করেছিলেন বলে অনেকের মতে হয়।

43. প্লেটোর রাষ্ট্রতন্ত্রের ভিত্তিভূমি কী ছিল?  
উত্তর: প্লেটোর রাষ্ট্রতন্ত্রের ভিত্তিভূমি ছিল আইন জীবন, জনমতবিহীন জ্ঞান ও নাম বিচারের দ্বারা পরিচালিত একটি শ্রেণি সমন্বিত সমাজ।

44. অ্যারিস্টটলের Politics গ্রন্থের বিষয়বস্তু কী?
উত্তর: অ্যারিস্টটলের Politics গ্রন্থে তৎকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, দাসব্যবস্থা, পরিবার, সম্পত্তি, রাষ্ট্রের প্রশাসন, সংবিধান ইত্যাদি বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। এই গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের ধারণা, গণতন্ত্র, সংকীর্ণ গোষ্ঠীতন্ত্রের পতনের কারণ ও স্থায়িত্বের উপায়, রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও নাগরিকদের প্রসঙ্গ নিখুঁতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

45. রাষ্ট্রের উৎস সম্পর্ক অ্যারিস্টটলের ধারণা কী?  
উত্তর: অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রের উৎসকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন–(১) বিভিন্ন ধরনের ঐক্যের দ্বারা রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে, (২) শাসক ও শাসিতের মধ্যে গড়ে ওঠা ঐক্য রাষ্ট্রসৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। তাঁর মতে, মানুষ সমাজবদ্ধ জীবন, তাই সমাজের বাইরে যে বাঁচতে পারে না।

46. প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের দর্শন চিন্তার বৈসাদৃশ্য কী ছিল?  
উত্তর: প্লেটো ও তাঁর প্রিয় শিষ্য অ্যারিস্টটলের দর্শন চিন্তায় বিস্তর বৈসাদৃশ্য বর্তমান-(১) প্লেটো রোমান্টিকতার পূজারী হলেও অ্যারিস্টটল ছিলেন বাস্তববাদী, (২) অ্যারিস্টটল, প্লেটোর কল্পিত সাম্যবাদ-র ধারণাকে গ্রহণ করেননি। (৩) প্লেটো ‘অতি ঐক্য' (Excessive Unity) তে বিশ্বাসী হলেও অ্যারিস্টটল একে রাষ্ট্রের ধ্বংসের কারণ বলেছেন, (৪) সর্বোপরি প্লেটো ছিলেন দৃষ্টা কিন্তু অ্যারিস্টটল ছিলেন অতীত দ্রষ্টা।

48. প্রেমিমেকাস এর পরিচয় দাও।  
উত্তর: প্রেমিমেকাস একজন সোফিস্ট দার্শনিক, যিনি ব্যক্তি অপেক্ষা গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, সমাজ ব্যক্তি থেকে বড়। প্রেমিমেকাস বিশ্বাস করতেন, জ্ঞানী মানুষ প্রকৃতপক্ষে অবিবেচক, এবং বাহুবলই প্রকৃত ন্যায়। তাঁর ধারণায়, উচ্চতম শ্রেণির স্বার্থই জাগতিক ন্যায়নীতি পরিচালিত করে। আইন ও সমাজের প্রচলিত ধারা সমাজের শক্তির উৎস এবং এগুলি চতুর মানুষের সুবিধার্থে তৈরি।

49. অ্যান্টিফোন সম্পর্কে কী জানা যায়?  
উত্তর: অ্যান্টিফোন ছিলেন একজন সাম্যবাদী সোফিস্ট দার্শনিক। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতির রাজ্যে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। তিনি অভিজাত ও সাধারণের শ্রেণি বৈষম্যকে অসঙ্গত বলে মনে করতেন। তাঁর *On Truth* গ্রন্থে, অ্যান্টিফোন আইন ব্যবস্থাকে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন, কেবল একটি প্রথাগত ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করেছেন।

50. ডেমোক্রিটাস কে ছিলেন?  
উত্তর: ডেমোক্রিটাস একজন গ্রীক সোফিস্ট পণ্ডিত ছিলেন, যিনি নিরীশ্বরবাদ ও বস্তুবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি পরমাণুবাদের প্রবক্তা এবং জ্যামিতিচর্চায় পারদর্শী ছিলেন। পিরামিডগুলির জ্যামিতিক গণনার প্রথম সফল ব্যক্তি হিসেবে ডেমোক্রিটাস পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম *The Great Year*। পদার্থবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যার পাশাপাশি তিনি মনোবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র, সঙ্গীত এবং কবিতার চর্চাও করেছিলেন।

51. থ্রাসিম্যাকাস কিভাবে সোফিস্ট দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন?  
উত্তর: থ্রাসিম্যাকাস এথেন্সের সমকালীন বিচার ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন এবং মনে করতেন, ন্যায়বিচার কেবল শক্তিশালীর স্বার্থ রক্ষার জন্য। তাঁর মতে, প্রত্যেক রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণি তাদের স্বার্থের পরিপূরক আইনই রচনা করেন। থ্রাসিম্যাকাস বিশ্বাস করতেন, প্রকৃতিতে অধিকারের আইন নেই, বরং সেখানে শক্তিশালীর আইনই বিদ্যমান।

52. লাইক্রোফ্রন কে ছিলেন?  
উত্তর: লাইক্রোফ্রন দ্বিতীয় প্রজন্মের একজন সোফিস্ট এবং জর্জিয়াসের ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রকৃতিকে অহংবাদের সাথে একাত্ম করে দেখিয়েছেন এবং গ্রীসের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করার কাজ করেছেন।

53. পিথাগোরিয়াণ দর্শনতত্ত্বের পরিণতি কী ছিল?
উত্তর: পিথাগোরিয়াণ দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল সংখ্যাবাদ। এই তত্ত্ব পরিশেষে সংকীর্ণ সঙ্কেতবাদে (Symbolism) পরিণত হয়েছিল। পিথাগোরিয়ানরা বিশ্বাস করতেন যে সংখ্যা কেবল গাণিতিক মান নয়, বস্তুস্বরূপও। আত্মা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি ধারণাকেও তারা সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। তাদের দর্শনের আরেকটি দিক ছিল আত্মসংযম এবং পবিত্র জীবনযাপন, যা তারা সক্রিয়ভাবে চর্চা করতেন।

54. ইলিয়াটিক দর্শন কী?  
উত্তর: পিথাগোরাসের পরে গ্রীক-দর্শন জগতে ইলিয়াটিক দর্শনের উদ্ভব ঘটে। এই মতবাদের জনক ছিলেন কলোফন নগরবাসী দার্শনিক জেনোফেনিস। যেহেতু তিনি ইলীয়া নগরে বাস করতেন, তাই এই দর্শনের নাম ইলিয়াটিক।

55. ইলিয়াটিক দর্শনের মূল তত্ত্বটি কী?  
উত্তর: ইলিয়াটিক দার্শনিকদের মতে, জগতে একমাত্র ‘সৎ’ (reality) বিদ্যমান, আর ‘অসৎ’ (unreality) অস্তিত্বহীন। তাদের মতে, সৎ নিরুপাধি, নির্বিকার, অখণ্ড ও অদ্বিতীয়; এর বিকাশ নেই—শুধু অস্তিত্ব আছে। এই তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষে অদ্বৈতবাদ হলেও তা সম্পূর্ণরূপে দ্বৈতবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।

56. পারমিনাইডিস কে ছিলেন?  
উত্তর: পারমিনাইডিস ইলিয়াটিক দর্শনের একজন বিশিষ্ট দার্শনিক ছিলেন, যিনি জেনোফেনিসের তত্ত্বকে উন্নত করেন। তাঁর মতে, সৎ উৎপত্তি-বিনাশহীন, অখণ্ড, সর্বস্থান ও সর্বকালব্যাপী এবং স্বপ্রকাশ। সৎ চৈতন্যের প্রতিরূপ। তাই বলা যায়, সৎ ও সম্বিতে কোন প্রকার ভেদ নেই।

57. হেরাক্লাইটাসের মতে, ইলিয়াটিক দর্শনের ত্রুটি কী ছিল?  
উত্তর: এফিসাসবাসী দার্শনিক হেরাক্লাইটাস ইলিয়াটিক দর্শনকে অবাস্তব বলে অভিহিত করেন। তিনি তাঁর *On Nature* গ্রন্থে নিজের বিকাশবাদ (The doctrine of becoming) তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। হেরাক্লাইটাসের মতে, জগতে স্থায়িত্ব একটি ভ্রম মাত্র; সবকিছু নিরন্তর পরিবর্তনশীল। তাঁর মতে, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর নতুন জন্ম—এটাই প্রকৃতির নিয়ম, যা সর্বদা ঘটে চলছে।

58. এথেনীয় নাগরিকদের কোন কোন দায়িত্ব পালন করতে হত?  
উত্তর: এথেনীয় নাগরিকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হত, যেমন: আইনসভা বা এক্লেজিয়ার বিতর্কে অংশগ্রহণ করা, ভোট প্রদান করা, জুরি হিসাবে কাজ করা, রাষ্ট্রকে কর প্রদান করা, এবং যুদ্ধের কাজে অংশগ্রহণ করা। এসব দায়িত্ব নাগরিকদের এথেনীয় সমাজে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ নিশ্চিত করত।

59. এথেনীয় নাগরিকরা কী কী অধিকার ভোগ করতেন?  
উত্তর: এথেনীয় নাগরিকরা জমির মালিকানা ও রাজনৈতিক অধিকারের ওপর একচেটিয়া অধিকার ভোগ করতেন। ২০ বছর বয়স্ক যে কোনও পুরুষ আইনসভা বা এক্লেসিয়ায় অংশ নিতে পারত। এছাড়া রূপার খনির লভ্যাংশে এথেনীয় নাগরিকদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। লটারি পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকরা 'Council of Four Hundred'-এর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে পারতেন।

60. এথেনীয় সমাজ কীভাবে মেটিকদের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছিল?  
উত্তর: এথেনীয় সমাজ মেটিকদের থেকে দু’ভাবে উপকৃত হয়েছিল: (১) কর আদায়ের মাধ্যমে—২৪ হাজার মেটিকের কাছ থেকে বাৎসরিক প্রায় ৪৫ ট্যালেন্ট কর আদায় হত, যা রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধি করত। (২) যুদ্ধে মেটিকদের সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করে সমাজ সামরিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করত।

61. খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্র বন্দরের নাম করো।  
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসের উল্লেখযোগ্য সমুদ্র বন্দরগুলোর মধ্যে পাইরিয়াস ছিল প্রধান, তবে এর পাশাপাশি এথেন্সের পশ্চিমে অবস্থিত কাম্বারস (Kantharos), পূর্ব দিকে অবস্থিত ষদেয়া (Sdeia) এবং মৌনিথিয়া (Mounikhia) ছিল আলোচিত সময়ের উল্লেখযোগ্য বন্দর।

62. প্রাচীন গ্রীসে মেটিকদের বাণিজ্যিক কার্যকলাপ কেমন ছিল?  
উত্তর: মেটিকরা গ্রীসের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তারা ব্যবসায়িক দক্ষতা, উদ্যোগ, এবং বিদেশি যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানী-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করে। মেটিকরা জাহাজ ব্যবসা এবং ব্যাংকিং বাণিজ্যেও সক্রিয় ছিল, এবং তারা এথেন্সের নৌবহরের অধীশ্বর হিসাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে তুলেছিল।

63. পলিসের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য লেখ।  
উত্তর: পলিসের প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য হল –  
(১) পলিসগুলি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
(২) পলিসের আয়তন ছিল ক্ষুদ্র।  
(৩) পলিসগুলি ছিল ঐক্যবদ্ধ।  
(৪) পলিসগুলিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্বাধীনতা বর্তমান ছিল।  

64. পোলিসগুলির উত্থানে কিরূপ ভৌগোলিক পরিস্থিতি দায়ী ছিল?  
উত্তর: গ্রীসের চারপাশে ছিল পাহাড় ও ছোট ছোট উপত্যকা, যা পোলিসগুলিকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রদান করত। গ্রীকরা এই পাহাড়বেষ্টিত সমভূমি এবং দ্বীপগুলোকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ছোট ছোট পলিস গড়ে তুলেছিল, যা তাদের রক্ষা করত এবং পৃথক পরিচয় বজায় রাখতে সাহায্য করত।  

65. পলিসের উদ্ভব সম্পর্কে Glotz-এর মত কী?
উত্তর: বিশিষ্ট পণ্ডিত Glotz-এর মতে, গ্রীসে সমুদ্র ও ছোট ছোট পাহাড়গুলোর ভৌগোলিক প্রভাবের কারণে পলিসগুলোর উদ্ভব ঘটেছিল। তাঁর মতে, সমুদ্র ছিল পলিসে প্রবেশের মূল পথ। Glotz পলিসের উদ্ভবের পশ্চাতে ভৌগোলিক কারণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।  

66. পলিসকে কী মুখোমুখি সমাজ বলা চলে?  
উত্তর: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গ্রীক সমাজের ক্ষুদ্রায়তন, ক্ষুদ্র জনসমষ্টি, পারস্পরিক সম্পর্ক, এবং গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজের বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকিয়ে পলিসকে মুখোমুখি সমাজ বলেছেন। তবে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন পলিসের গ্রামীণ ও শহুরে জীবনের পার্থক্য এবং সামাজিক মর্যাদার বৈষম্যের কারণে পলিসকে মুখোমুখি সমাজ বলা সঠিক নয়।  

67. পলিসগুলির উত্থানে সামরিক কারণ কী ভূমিকা পালন করেছিল?  
উত্তর: পলিসগুলির উত্থানের পিছনে সামরিক কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ডোরীয়দের আক্রমণ ও বিজয়ে গ্রীক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। এই বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গ্রীকরা স্থানীয় সুরক্ষিত সামরিক ঘাঁটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যার ফলশ্রুতি ছিল পলিসের উদ্ভব।  

68. পলিসের উদ্ভবের পশ্চাতে কীরূপ অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত সক্রিয় ছিল?  
উত্তর: পলিসগুলির অর্থনীতি প্রথমে নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত শস্য দ্বারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারত। পরবর্তীতে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বাণিজ্যের প্রলোভনে গ্রীকরা দূর-দূরান্তে উপনিবেশ স্থাপন করে, যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।

69. প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার বিকাশ কোথায় প্রথম ঘটেছিল?  
উত্তর: প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার বিকাশ প্রথম ক্রিট দ্বীপে ঘটেছিল, যেখানে মিনোয়ান সভ্যতা গড়ে ওঠে।

70. প্রাচীন গ্রীসে মিনোয়ান সভ্যতার বিকাশ কখন ঘটেছিল?  
উত্তর: প্রাচীন গ্রীসে মিনোয়ান সভ্যতার বিকাশ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে ঘটে। এই সভ্যতার নামকরণ করা হয়েছিল কিংবদন্তি রাজা মিনোসের নামে, যিনি ক্রিটের রাজধানী নোসস (Knossos) থেকে শাসন করতেন।

71. মাইসিনীয় সভ্যতার বিকাশ কখন হয়েছিল?  
উত্তর: আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মাইসিনীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে। তারা ক্রিট দ্বীপ দখল করে নেয় এবং একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। মাইসিনীয় সভ্যতার প্রধান শহর ছিল মাইসিন, যা পেলোপনিসের (Peloponnese) ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত ছিল।

72. মাইসিনীয় সভ্যতার পতন কখন সূচিত হয়েছিল?  
উত্তর: মাইসিনীয় সভ্যতার পতন খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দ নাগাদ সূচিত হয়েছিল। প্রাসাদগুলো ধ্বংস হয়েছিল, সম্ভবত আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ বা বৈদেশিক আক্রমণের কারণে। এরপর গ্রীক ইতিহাসে একটি দীর্ঘ 'অন্ধকার যুগ' (Dark Age) শুরু হয়, যা অত্যন্ত বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিত।

73. পলিস বলতে কী বোঝ?  
উত্তর: পলিস বলতে প্রাচীন গ্রীসে গড়ে ওঠা ছোট ছোট নগররাষ্ট্রকে বোঝায়, যা ষষ্ঠ শতকের মাঝে প্রায় ১৫০০টির মতো ছিল। এথেন্স, স্পার্টা, করিন্থ, থিবস, আর্গস, রোডস প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য পলিস। পশ্চিম এশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগের ফলে সম্পদের বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ফলে এই পলিসগুলির উদ্ভব ঘটে।

74. গ্রীকরা সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল কেন?  
উত্তর: গ্রীসদেশে খাদ্যের অভাব ছিল একটি প্রধান কারণ, যা বহু গ্রীককে সমুদ্র পাড়ি দিতে বাধ্য করেছিল।

75. নিকিয়াস কে ছিলেন?  
উত্তর: নিকিয়াস ছিলেন ক্লিয়নের মৃত্যুর পর এথেন্সের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। তিনি ধনী ও রক্ষণশীল ছিলেন এবং শান্তির বড় প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিকিয়াস মনে করতেন যে এথেন্স ও স্পার্টা যদি নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব ভাগাভাগি করে নেয়, তাহলে গ্রীক দুনিয়ায় শান্তি রক্ষা সম্ভব হবে। তবে এথেন্সে তার এই নীতি নিয়ে প্রচুর সমালোচকও ছিলেন।

76. সিসিলি অভিযানের ঘটনা কখন ঘটেছিল?
উত্তর: সিসিলি অভিযান ছিল পেলোপনেসীয় যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এটি ৪১৫-৪১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত হয়েছিল। যদিও সিসিলিতে অভিযান করার প্রকৃত কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একমত হওয়া সম্ভব হয়নি, তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, এথেনীয়দের বিশুদ্ধ ভাবাবেগই প্রধান কারণ ছিল।

77. সিসিলি অভিযানের পূর্বে সেজেস্টা কেন এথেন্সের সাহায্য চেয়েছিল?  
উত্তর: উত্তর-পশ্চিম সিসিলিতে অবস্থিত সেজেস্টা ছিল এথেন্সপন্থী। তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্র সেলিনাসের বিরুদ্ধে এথেন্সের সহযোগিতা কামনা করেছিল। তাই সিসিলি অভিযানের প্রাক্কালে, সেজেস্টা এথেন্সের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিল।

78. সিসিলি অভিযানের পশ্চাতে এথেন্সের বাণিজ্যিক কারণ কী ছিল?  
উত্তর: এথেন্সের পশ্চিমাভিমুখী সম্প্রসারণ নীতি নতুন কিছু ছিল না, তবে সিসিলি আক্রমণের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো কার্যকর ছিল। এথেন্সের সাথে সিসিলির বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকটা দৃঢ় হয়ে উঠেছিল। সাইরাকিউজ নগররাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক সমৃদ্ধির খবর এথেন্সে পৌঁছেছিল, যা তাদের এই অভিযানে উত্সাহিত করেছিল।

79. সিসিলি অভিযান সম্পর্কে গবেষণা করেছেন এমন দু'জন ঐতিহাসিকের নাম কর।  
উত্তর: সিসিলি অভিযান সম্পর্কে গবেষণা করেছেন এমন দু'জন ঐতিহাসিক হলেন ফাইন (Fine) এবং কাগান (Kagan)।

88. মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় কেন?  
উত্তর: মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় কারণ নীলনদ মিশরের জীবনধারাকে সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছিল। এটি মিশরকে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল—এই দুই ভাগে ভাগ করত এবং নদীর বন্যার কারণে উর্বর পলিমাটি জমে কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধি করত। নীলনদই মিশরের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির মূল উৎস ছিল, যা একমাত্র নদীপথের মাধ্যমেই সম্ভবপর হয়েছিল। নীলনদ ছাড়া মিশর একটি ঊষর অঞ্চলে পরিণত হত, তাই মিশরকে ‘নীলনদের দান’ বলা হয়।

89. মেনেস কে ছিলেন?  
উত্তর: প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে, মেনেস ছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দে উত্তর ও দক্ষিণ মিশরকে একত্রিতকারী এক শক্তিশালী সামন্তশাসক। তিনি মিশরের প্রথম বৃহৎ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং মেমফিস শহরে প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন, যা পরবর্তীকালে থিবস শহরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। মেনেস মিশরের প্রথম ‘ফ্যারাও’ ছিলেন।

90. মিশরের প্রাচীন ইতিহাসকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?  
উত্তর: মিশরের প্রাচীন ইতিহাসকে ঐতিহাসিকরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন— (১) প্রাক্-রাজবংশীয় যুগ, (২) প্রাচীন রাজত্বের যুগ, (৩) মধ্য রাজত্বের যুগ, (৪) বৈদেশিক হিক্সকদের কালপর্ব এবং (৫) নতুন রাজত্বের যুগ।

91. মিশরে প্রাচীন রাজবংশ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?  
উত্তর: আনুমানিক ২৭৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফ্যারাও জোসারের নেতৃত্বে মিশরে প্রাচীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জোসারই প্রথম মিশরে একটি শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেন এবং মিশরের সুদৃঢ় ভিত স্থাপন করেন।

92. পিরামিড যুগ কী?  
উত্তর: প্রাচীন রাজবংশের শাসনকালে ফ্যারাও জোসার কর্তৃক প্রথম পিরামিড নির্মিত হয়। এই কালপর্বেই মিশরে প্রধান প্রধান পিরামিডগুলো নির্মিত হয়েছিল। তাই মিশরের ইতিহাসে প্রাচীন রাজবংশের শাসনকালকে বলা হয় ‘পিরামিড যুগ’।

93. মিশরীয় সমাজ কয়টি ভাগে বিভক্ত?  
উত্তর: মিশরীয় সমাজ বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত ছিল এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে শ্রেণীগত প্রভেদ ছিল। মিশরীয় সমাজের শ্রেণিবিন্যাস ছিল: (১) শাসকগোষ্ঠী তথা ফ্যারাও, (২) অভিজাত শ্রেণী, (৩) পুরোহিত বর্গ, (৪) মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যেমন লেখক, বণিক, স্থপতি, কারিগর, শিল্পী, এবং (৫) কৃষক ও ভূমিদাস। সাম্রাজ্যের যুগে সৈন্যরাও একটি শ্রেণী হিসেবে যুক্ত হয়েছিল।

94. ফ্যারাও শব্দের অর্থ কী?  
উত্তর: মিশরের রাজাকে 'ফ্যারাও' বলা হত। এই শব্দটি 'পেয়ো' থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ ‘যে ব্যক্তি বড় বাড়িতে বাস করেন’। ফ্যারাও ছিলেন সর্বময় কর্তা এবং তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ শাসক, বিচারক ও আইন প্রণেতা। ফ্যারাওদের জীবনধারা ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ।

95. অভিজাত শ্রেণী কারা ছিলেন?  
উত্তর: মিশরীয় সমাজে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা ছিল শাসনকার্য পরিচালনায় দক্ষ ও কর্মতৎপর। তারা সমাজে সর্বাধিক মর্যাদা এবং নানা সুবিধা ভোগ করত। এই শ্রেণীর লোকেরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করত এবং তাদের খাদ্য ও পানীয়ও ছিল উন্নত।

 

To be continued........