🌹বি.এ দর্শন মেজর-২: সেমিস্টার-২:সাজেশন(উত্তরসহ):পার্ট-২🌹

 📚বি.এ দর্শন মেজর-২: সেমিস্টার-২:সাজেশন(উত্তরসহ):পার্ট-২📚

✍️প্রশ্নমান-৫:

১.সংযোগ ও সমবায় সন্নিকর্ষের পার্থক্য লেখ।

উত্তর ঃ ন্যায় মতে ছয় প্রকার লৌকিক সন্নিকর্ষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সন্নিকর্ষ হল সংযোগ ও সমবায় সন্নিকর্ষ। ন্যায় মতে দ্রব্য প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয় তা হল সংযোগ সন্নিকর্ষ। দ্রব্যের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সম্পর্ক হল সংযোগ সন্নিকর্ষ। যেমন চক্ষুর সম্মুখস্থিত ঘটের সঙ্গে চক্ষুর সম্পর্ক হল সংযোগ সন্নিকর্ষ। কর্ণ ইন্দ্রিয় দ্বারা শব্দ গুণ প্রত্যক্ষে যে সন্নিকর্ষ হয় তা হল সমবায় সন্নিকর্ষ। শব্দের সঙ্গে শ্রবণ ইন্দ্রিয় কর্ণের সম্পর্ক হল সমবায় সন্নিকর্ষ। উভয়ের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি রয়েছে।

(১) সংযোগ সন্নিকর্ষ হয় দ্রব্য প্রত্যক্ষে। আর সমবায় সন্নিকর্ষ হয় শব্দ প্রত্যক্ষে।

(২) সংযোগ সন্নিকর্মের বিষয় হল দ্রব্য কিন্তু সমবায় সন্নিকর্ষের বিষয় হল গুণ,যেহেতু শব্দ হল গুণ বিশেষ।

(৩) সংযোগ সম্পর্ক হল অনিত্য সম্পর্ক কিন্তু সমবায় সম্পর্ক হল নিত্য সম্পর্ক।

(৪) সংযোগ সন্নিকর্ষে চক্ষু, নাসিকা, ত্বক, জিহ্বা (বাহ্য ইন্দ্রিয়) ও মন-এর সঙ্গে সম্পর্ক হয়, কিন্তু সমবায় সন্নিকর্ষে কেবল কর্ণ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়।

২. নির্বিকল্পক ও সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পার্থক্য কর।

উত্তর : ন্যায় দর্শনে লৌকিক প্রত্যক্ষকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।যথা—নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ, সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ও প্রত্যভিজ্ঞা। যে জ্ঞানে কোন প্রকার বা বিশেষণ বিষয় হয় না, তাকে নির্বিকল্পক জ্ঞান বলে। যে জ্ঞানে বিশেষণ-বিশেষ্য -এর

মধ্যে সম্বন্ধের জ্ঞান হয় হয় না, তাই হল নির্বিকল্পক জ্ঞান। আর যে লৌকিক প্রত্যক্ষে

কোন একটি বস্তুকে গুণযুক্ত হিসেবে প্রত্যক্ষ করা হয় তাকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষণ বলে।

বিকল্প বা বিশেষণযুক্ত প্রত্যক্ষজ্ঞান হল সবিকল্পক প্রত্যক্ষ জ্ঞান। এদের মধ্যে পার্থক্যগুলি সংক্ষেপে নিম্নরূপ।

(১) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষণ হল প্রত্যক্ষের প্রাথমিক স্তর। কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষণ হল প্রত্যক্ষের দ্বিতীয় স্তর।

(২) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষণ কোন বচনের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। অন্যদিকে

সবিকল্পক প্রত্যক্ষণকে বচনের দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

(৩) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষণ জ্ঞানের প্রাথমিক স্তর হলেও স্ফূটজ্ঞান নয়। কিন্তু

সবিকল্পক প্রত্যক্ষ ব্যবসায়াত্মক বা সুস্পষ্ট জ্ঞান।

(৪) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষকে অনুমানের দ্বারা জানা যায়। কিন্তু সবিকল্পক প্ৰত্যক্ষকে অনুব্যবসায় রূপ মানসপ্রত্যক্ষের দ্বারা জানা যায়।

(৫) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধ বর্জিত।অন্যদিকে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ নাম, জাতি, গুণ অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ সম্বন্ধযুক্ত।

(৬) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে কেবলমাত্র কোন বস্তুর অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ হয়, বস্তুটি কী তা জানা যায় না। সবিকল্পক প্রত্যক্ষে গুণ সমন্বিত বস্তুকে জানা যায়।

(৭) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ সবিকল্পক প্রত্যক্ষের পূর্বে হয়, অর্থাৎ নির্বিকল্পক প্ৰত্যক্ষ সবিকল্পক প্রত্যক্ষের উপর নির্ভরশীল নয় কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের উপর নির্ভরশীল।

(৮) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রমা বা অপ্রমা হয় না, কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ প্রমা বা অপ্রমা হয়।

(৯) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ হল ইন্দ্রিয়বৃত্তি, কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষ হল ইন্দ্রিয়বৃত্তি ও মানসবৃত্তি।

(১০) নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষের জ্ঞান বিশিষ্ট না হওয়ায় তা প্রবৃত্তির কারণ হয় না, কিন্তু সবিকল্পক প্রত্যক্ষের জ্ঞান বিশিষ্ট হওয়ায় তা প্রবৃত্তির কারণ হয়।

৩.নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ স্বীকারের যুক্তি কী?

অথবা, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ কেন স্বীকার করা হয়?

উত্তর : যে জ্ঞানে কোন প্রকার বা বিশেষণ বিষয় হয় না, তাকে নির্বিকল্পক জ্ঞান

বলে। নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষজাত জ্ঞান ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, এর কোনও অনুব্যবসায়

হয় না, একে প্রমা বা অপ্রমাও বলা যায় না। তাহলে প্রশ্ন হয় যে, কেনো নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষকে স্বীকার করতে হবে? এর উত্তরে তর্কসংগ্রহদীপিকায় অন্নং ভট্ট বলেছেন যে, নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ স্বীকৃত না হলে সবিকল্পক প্রত্যক্ষ উপত্তিতে অনবস্থা দেখা দেয়, তাই এই অনবস্থা দূর করার জন্যই নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ স্বীকার করা প্রয়োজন। ন্যায় মতে বিশেষণের জ্ঞান হল বিশিষ্ট জ্ঞানের জনক। কারণ সর্বদাই কার্যের পূর্ববর্তী হবে । ‘এটি গরু’- এই জ্ঞানটি হল বিশিষ্ট জ্ঞান ৷ এখানে ‘গোত্ব’ হল বিশেষণ। গোত্বের জ্ঞান না হলে ‘এটি গরু’ (গোত্ববিশিষ্ট গরু), এই বিশিষ্ট জ্ঞান হতে পারে না। যেমন ‘দণ্ড' এই বিশেষণের জ্ঞান না হলে ‘দণ্ডধারী পুরুষ’ এই বিশিষ্ট জ্ঞান জন্মায় না। সুতরাং ‘এটি গরু’ এই বিশিষ্ট জ্ঞানটি ‘গোত্ব’-এই বিশেষণজ্ঞান নির্ভর। এখন এই ‘গোত্ব’-এর প্রত্যক্ষকে যদি সবিকল্পক তথা বিশিষ্ট জ্ঞান বলা হয় তাহলে

এর কারণ হিসেবে এর পশ্চাতে আরও একটি বিশেষণের জ্ঞান স্বীকার করতে হবে। এইভাবে ক্রমান্বয়ে চলতে থাকবে, ফলস্বরূপ অনাবস্থা দোষ দেখা দেবে। এই অনবস্থার অবসানের জন্য স্বীকার করতে হবে যে, ‘গোত্ব'-এর প্রত্যক্ষ বা জ্ঞান হল নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ বা জ্ঞান। তাই ন্যায় মতে বস্তুর সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষের ফলে প্রথম ক্ষণে বিশেষণ, বিশেষ্য এবং উভয়ের সম্বন্ধ পরস্পর নিরপেক্ষভাবে জ্ঞাত হয় এবং পরবর্তী ক্ষণে বিশেষণ ও বিশেষ্যের সম্বন্ধ বিষয়ক জ্ঞান উৎপন্ন হয়। প্রত্যক্ষের দ্বারা ‘এটি গরু’ ইত্যাদি রূপ যে বিশিষ্ট জ্ঞান উৎপন্ন হয়, তার পূর্বক্ষণে বিশেষণ প্রভৃতির জ্ঞানও

প্রত্যক্ষের দ্বারাই উৎপন্ন হয়। প্রথম ক্ষণের ঐ নিষ্প্রকারক জ্ঞানকে নির্বিকল্পক প্ৰত্যক্ষ বলা হয়। নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষে বিশেষণ প্রভৃতির জ্ঞান হলেও এদের বিশেষণতা প্রভৃতি্ধর্ম পরিস্ফুট হয় না। ফলে বিশেষণ জ্ঞানের পূর্বে আর একটি নির্বিকল্পক প্রত্যক্ষ স্বীকারের প্রয়োজন হয় না এবং অনাবস্থা দোষও ঘটে না।

৪.সমব্যাপ্তি ও অসমব্যাপ্তি বা বিষমব্যাপ্তির পার্থক্য কর।

উত্তর : নৈয়ায়িকরা ব্যাপ্তিকে দুইভাগে ভাগ করেছেন—সমব্যাপ্তি ও অসমব্যাপ্তি বা বিষমব্যাপ্তি। হেতু ও সাধ্যের বিস্তৃতি সমান হলে উভয়ের মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ হয় তা সমব্যাপ্তি। যেমন মানুষ বুদ্ধিসম্পন্ন জীব। এখানে মানুষ ও বুদ্ধিসম্পন্ন জীব—দুটোরই বিস্তৃতি বা ব্যাপকতা সমান। এভাবে কার্য ও কারণ, দ্রব্য ও গুণের মধ্যে

যে ব্যাপ্তি তা হল সমব্যাপ্তি। অন্যদিকে ব্যাপ্য ও ব্যাপক অর্থাৎ হেতু ও সাধ্যের বিস্তৃতি যদি সমান না হয় তাহলে তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সম্বন্ধকে বলা হয় অসমব্যাপ্তি বা

বিষমব্যাপ্তি। যেমন ধূম ও বহ্নির বিস্তৃতি সমান না হওয়ায় যেখানে যেখানে ধূম থাকে সেখানে সেখানে বহ্নি থাকলেও যেখানে যেখানে বহ্নি তাকে সেখানে সেখানে ধূম থাকে না। এরূপ ব্যাপ্তি বিষমব্যাপ্তির দৃষ্টান্ত। উভয় প্রকার ব্যাপ্তির মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি বর্তমান 

(১) সমব্যাপ্তিতে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের বা হেতু ও সাধ্যের বিস্তৃতি সমান হয়, কিন্তু অসমব্যাপ্তিতে ব্যাপ্য ও ব্যাপকের বা হেতু ও সাধ্যের বিস্তৃতি সমান হয় না। অর্থাৎ

সমব্যাপ্তিতে যে দুটি বিষয় থাকে তারা সমব্যাপক হয়, এ হল ব্যাপ্য-ব্যাপক সম্বন্ধ। কিন্তু অসমব্যাপ্তিতে যে দুটি বিষয় থাকে তারা সমব্যাপক হয় না, এ হল ব্যাপ্য-ব্যাপক সম্বন্ধ ।

(২) সমব্যাপ্তিতে হেতু ও সাধ্যের যে কোন একটি থেকে অপরটিকে অনুমান করা যায়। এক্ষেত্রে হেতু থেকে সাধ্যকে, আবার সাধ্য থেকে হেতুকে অনুমান করা যায়।

কিন্তু অসমব্যাপ্তিতে হেতু ও সাধ্যের যে কোন একটি থেকে অপরটিকে অনুমান করা যায় না। এক্ষেত্রে হেতু থেকে সাধ্যমেক অনুমান করা গেলেও সাধ্য থেকে হেতুকে অনুমান করা যায় না।

(৩) সমব্যাপ্তিতে কেবল অন্বয় দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু অসমব্যাপ্তিতে অন্বয় ও ব্যতিরেকী দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।

(৪) সমব্যাপ্তিতে দৃষ্টান্ত সংখ্যা অসমব্যাপ্তির চেয়ে কম। কিন্তু অসমব্যাপ্তির দৃষ্টান্ত সংখ্যা সমব্যাপ্তির চেয়ে বেশ।

৫.স্বার্থানুমান ও পরার্থানুমানের পার্থক্য লেখ।

উত্তর : অভিপ্রায়ের দিক থেকে নৈয়ায়িকগণ অনুমানকে স্বার্থ ও পরার্থ বলেছেন। স্বার্থানুমানের অর্থ হল নিজের জন্য কৃত অনুমিতির করণ। ব্যক্তিগত জ্ঞান লাভের

উদ্দেশ্যে যে অনুমান করা হয় তাকে স্বার্থানুমান বলা হয়। স্বার্থানুমান দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞানকে বলা হয় স্বার্থানুমিতি। অপরপক্ষে অন্যের সাধ্য সংশয় নিবৃত্তি করার জন্য যে

অনুমান করা হয় তাকে পরার্থানুমান বলা হয়।পরার্থানুমানের দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞানকে বলা হয় পরার্থানুমিতি।স্বার্থানুমান ও পরার্থানুমানের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি বর্তমান--

(১) স্বার্থানুমানের অর্থ হল নিজের জন্য কৃত অনুমিতির করণ। আর পরার্থানুমানের অর্থ হল অপরের জন্য কৃত অনুমিতির করণ।

(২) স্বার্থানুমানের উদ্দেশ্য হল নিজ সাধ্যসংশয় নিবৃত্তি। আর পরার্থানুমানের উদ্দেশ্য হল অপরের সাধ্যসংশয় নিবৃত্তি।

(৩) স্বার্থানুমানের দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞান হল স্বার্থানুমিতি। পরার্থানুমানের দ্বারা উৎপন্ন জ্ঞান হল পরার্থানুমিতি ।

(৪) স্বার্থানুমান পরার্থানুমানের পূর্বে উৎপন্ন হয়। আর পরার্থানুমান স্বার্থানুমানের পরে উৎপন্ন হয়।

(৫) স্বার্থানুমান হল ত্রিবয়ব বিশিষ্ট। কিন্তু পরার্থানুমান হল অবয়ব বিশিষ্ট।

(৬) স্বার্থানুমান মানসিক হওয়ায় তাকে প্রকাশ করার জন্য ভাষা প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু পরার্থানুমান বাচিক, তাকে প্রকাশ করার জন্য ভাষা প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়।

(৭) ন্যায় দর্শনে ‘ন্যায়' বলতে বোঝানো হয় পরার্থানুমান, স্বার্থানুমানকে নয় অর্থাৎ ন্যায় দর্শনে স্বার্থানুমানের তুলনায় পরার্থানুমানের গুরুত্ব অনেক বেশী।